আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

;';.;কুয়াশায় ঢাকা দিন;..';.

জন্মোপার থেকে পৃথিবী হয়ে অনন্তে >>> ©www.fazleelahi.com

((নাটিকা)) 1. (চায়ের দোকানে নিজের কাজে মশগুল অশিক্ষিত যুবক ইউসুফ মিয়া, ধীরে ধীরে দোকানে প্রবেশ করে বসলেন ইকবাল মাস্টার। ) ইকবাল মাষ্টার ঃ ইউসুফ মিয়া, এক কাপ চা দাও। আর টিভিটা ছাড়ো তো, খবরটা দেখি। দেশের যে কি হয়ে গেল,,,,। (খবরের শব্দ ভেসে আসছে টিভি থেকে...) (আজ সারাদেশের বিভিন্ন স্থানে বোমা হামলায় অন্তত ঃ 10 জনের মৃতু্য এবং আরো প্রায় 70 জন আহত হয়।

59 দলের নেতৃবৃন্দ দেশে ধারাবাহিক বোমাবাজির জন্য সরকার ও ইসলামের ধ্বজ্জাধারীদেরকে দায়ী করে এক মহাসমাবেশ করে। উক্ত সমাবেশে আগামীকাল সকাল-সন্ধ্যা হরতালের আহ্বান জানানো হয়। অন্যদিকে সরকার ও ইসলামী জোট বলেছে, একটি শেকড়বিহীন গোষ্ঠী এদেশে ইসলামকে পুঁজি করে ইসলামের নামে সন্ত্রাস ছড়াচ্ছে এবং এর পেছনে মদদ জোগাচ্ছে। সরকার স্পষ্ট করে না বললেও 59 দলকেই যে ইঙ্গিত করছে, তা পরিস্কার। খবর শেষ হলো।

আমাদের পরবর্তী খবর প্রচারিত হবে. . . . ) ইকবাল মাষ্টার ঃ কি যে হয়ে গেল দেশটার, কোন কিছুই বুঝতে পারছি না। সবকিছু যেন কুয়াশায় ঢাকা। কার কথা বিশ্বাস করবো আর কার করবো না। নাহ্ঃ নাহ্ঃ (বিক্ষিপ্ত মাথা নাড়তে থাকবেন) ইউসুফ ঃ (আশ্চর্য হয়ে এগিয়ে এসে) কি বিড়বিড় করতাছেন মাস্টার চাচা? খবর শেষ অইলেই প্রত্যেকদিন আপনারে আমার একটু পাগল পাগল মনে হয়; হিঃ হিঃ। রাগ কইরেন না মাস্টার চাচা, আমার মনে অইল, তাই কইলাম।

আমি না. . . আবার মনের কতা লুকাইয়া রাখতে পারি না; হিঃ হিঃ হিঃ। ইকবাল মাষ্টার ঃ (ইউসুফের দিকে তন্ময় হয়ে তাকিয়ে থেকে) কি অদ্ভুত সরলতা, আর এই সরলতার সুযোগ নিয়ে কি ঘৃণ্য চক্রান্তই না করে যাচ্ছে ঐ কুচক্রী শয়তানের দল। কবে যে এদের থেকে মুক্তি পাবে এদেশ, এদেশের মানুষ, জানিনা, কিছুই জানিনা। (এমন সময় দু'জন সন্ত্রাসীকে ধরার জন্য র্যাব সদস্যরা দৌড়াতে থাকবে। ইকবাল মাস্টার ও ইউসুফ আশ্চর্য হয়ে দেখতে থাকবে।

) 2. (কেন্দ্রিয় গোপন বৈঠকের জন্য মিলিত হলেন 59 দলের পক্ষথেকে কয়েকজন প্রতিনিধি। ) চশমাওয়ালা খলিল ভাই ঃ বসেন বসেন সবাই। আমিই প্রথম শুরু করি, সকলের মুরুব্বী কিনা? ফ্যাসাদ খান ঃ অবজেকশান, আপনার চাইতে আমার বয়স অধিক হইবার সমূহ সম্ভাবনা রহিয়াছে জনাব। শিকদার চাচা ঃ চাচা বলে কথা, কিন্তু ঐ ঐক্যের স্বার্থে সব সম্মান আজ কুরবাাাাান করে দিলাম। স্বতন্ত্র পেন্নাই ঃ সকলের অবগতির জন্য বলছি, আমাদের জরুরী বৈঠক করা অতীব জরুরী।

(দর্শকদের দিকে চেয়ে) আমি তো স্বতন্ত্র, আমার দাম তো সাড়ে তিন টাকা হলেও কম কি। খলিল ঃ আমি স্মরণ করছি আমাদের সকলের বাবাকে এবং শুরু করছি আজকের দেশের এই ক্রান্তিকালীন জরুরী বৈঠকের। আমরা চাই এই দেশে আমাদের ক্ষমতার বাস্তবায়ন এবং তা যে কোন মূল্যেই। সকলে ঃ (সন্মিলিতভাবে) হঁ্যা, হঁ্যা তাই চাই, যে কোন মূল্যেই। ফ্যাসাদ ঃ আমি স্মরণ করছি আমার আদর্শের জন্মদাতা কার্লমার্কস্কে এবং স্মরণ করছি আমাদের বিগত বৈঠকের সিদ্ধান্তকে, যেখানে আমরা এ ব্যাপারে একমত হয়েছি যে, এদেশের মানুষ ধর্মপ্রাণ।

তাই ধর্মের পোষাক পরেই তাদেরকে প্রতারিত করে আমাদের স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে হবে। আমরা এ ব্যাপারে দায়িত্ব দিয়েছিলাম শিকাদার চাচাকে এবং স্বতন্ত্র পেন্নাইকে। বলুন আপনারা। পেন্নাই ঃ আমি স্মরণ করছি নিখিল ভারতের স্বপ্নদ্রষ্টা, সূর্যসন্তান মহাত্মা গান্ধীজীকে। (একটু থেমে) গতকাল ই- মেইল পেয়েছি।

সেখানে বলা হয়েছে, আমাদের আদর্শিক বাবারা যে কোন মূল্যেই বাংলাদেশে আমাদের ক্ষমতা দখল দেখতে চায়, অন্যথায় দেশকে গৃহ যুদ্ধের দিকে ঠেলে দিতে হবে। এসবের জন্য যত টাকা প্রয়োজন, আমাদের গ্রীন সিগনাল পেলে তার সাপ্লাই খুব শীঘ্রই এসে পেঁৗছবে। এখন আর দেরি না করে এদেশের অন্ত্রে অন্ত্রে আমাদের বিষ প্রয়োগের পালা। তারপর দেখুন........... শিকদার ঃ আমি স্মরণ ছাড়াই শুরু করলাম। আমার উপর দায়িত্ব ছিল এই দুই-তিন জন মোল্লা কিন্না ফালানো।

হেই কামতো আমি সাইরাই ফালাইছি। পরথমে অবশ্য একটু বেঁইক্যা বসেছিল, কিন্তু টেকার অংকটা হুইনা জালে ঠিকই ধরা দিছে। এখন এ্যাকশন শুধু আইজ-কাইলের ব্যাপার। হাঃ হাঃ হাঃ 3. ঘোষক ঃ প্রিয় দেশবাসী এখন আপনাদের সামনে বর্তমান কঠিন পরিস্থিতিতে দেশপ্রেমিক জনগণের কি করণীয় এ ব্যাপারে বক্তব্য রাখবেন বিশিষ্ট ইসলামী ব্যক্তিত্ব জনাব শহীদ স্যার,,, জনাব শহীদ স্যার। শহীদ স্যার ঃ প্রিয় দেশপ্রেমিক ইসলামপ্রিয় ভাইয়েরা।

আমাদের দেশ নিয়ে আজ চলছে এক মহা ভয়ংকর ষড়যন্ত্র। আমরা বুঝতে পেরেও এর প্রতিকার করতে পারছি না। দেশপ্রেমিক মানুষদেরকে আজ সিদ্ধান্ত নিতে হবে দেশের ব্যাপারে। অন্ধকারে আর কতদিন থাকবে এদেশের সহজ-সরল মানুষেরা। সত্যকে উপলদ্ধি করতে হবে তাদের।

বুঝতে হবে কারা এদেশের শত্রু আর কারা মিত্র। ইসলামই এদেশের মানুষের প্রাণের স্পন্দন। এ স্পন্দনকে আরো জাগরিত করুন, তাহলেই আপনাদের কাছে স্পষ্ট হয়ে যাবে কারা ইসলামকে ব্যবহার করে এই দেশের এবং এই দেশে ইসলামের অগ্রযাত্রাকে ধ্বংস করতে গভীর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। আসুন, আমরা বর্তমান কঠিন পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে নিজেদেরকে যোগ্য নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলি। আল্লাহ্ আমাদের সহায় হোন।

(অন্য এক জনসভায়) ঘোষক ঃ এখন বক্তব্য রাখবেন এদেশের কৃতি সন্তান, গরীবের বন্ধু, জন-দরদী,আল-হাজ্জ খলীল ভাই। খলিল ঃ আমাদের পিতার স্বপ্ন ছিল এই দেশে তার দাদার আদর্শ বাস্তবায়ন। তাতেই শান্তি, তাতেই মানুষের মুক্তি। মোল্লারা আজ এদেশের ঘাড়ে চেপে বসে আছে। আরে না না, শুধু ঘাড়ে চেপে বসে নেই, বোমাবাজির মাধ্যমে রক্ত চুষে খাচ্ছে।

তাই আমাদেরকে এই দেশ হাসিল করতে হবে, যে কোন মূল্যেই. . . . (বেফাঁস বলে ফেলা ভুল শুধরাতে ফ্যাসাদ খান ধাক্কা দেবে পাশ থেকে, বুঝতে পেরে গলা খাকারী দিয়ে বলতে শুরু করবে) হঁ্যা, হঁ্যা স্বাধীনতার চেতনায় উজ্জীবীত হয়ে এই দেশ রক্ষার এবারের শ্লোগান হবে- মোল্লা ধর, জবাই কর। (হাঙ্গামায় শেষ হবে) 4. (চা দোকান, সেই চাচা, একইভাবে টিভির সংবাদ হতে থাকবে...) ইকবাল মাস্টার ঃ নাহ্, নাহ্ কিছুই বুঝতে পারছি না, কি হবে সামনে, আমার ভয় করছে, খুউব ভয়.... ইউসুফ ঃ হেঃ হেঃ মাস্টার চাচা আইজও গেছে। চাচা মনে হয় শেষ-মেষ পাগলই অইয়া গেছে। (মজা পেয়ে নাচতে থাকবে। ) ইকবাল মাস্টার ঃ চুপ, চুপ কর।

আমি পাগল হই নাই। কাসেম ঃ (যেন আড়াল থেকে সবকথা শুনে মঞ্চে প্রবেশ করে বলবে) স্যার, তাহলে কি বলব, আপনি বিবেকহীন? ইকবাল মাস্টার ঃ বাবা কাসেম, তুমি! আমাকে বিবেকহীন বলছ কেন বাবা? আমি তো কিছুই বুঝতে পারছি না। কাসেম ঃ স্যার এদেশের মানুষগুলো মূলতঃ তিন শ্রেণীতে বিভক্ত। এক দলে আছেন আপনি, যারা কিছু কিছু বুঝার চেষ্টা করছেন কিন্তু তাদের চারপাশ তা থেকে তাদেরকে ভুলিয়ে দেয়। তাই যার হাতে একদিন মার খেয়ে মান-সম্মান, স্বাস্থ্য-সম্পদ সব হারায়, আবার তারই মিথ্যা কথায় ভুলে গিয়ে কিছুদিন পর তাকেই বানিয়ে নেয় নিজেদের ভাগ্যের লেখক।

আরেক দল হলো ঐ যে, ইউসুফ মিয়াদের। দু'বেলা দু'মুঠো খেতে পেলে আর একটু আনন্দ-স্ফূর্তি করতে পারলেই তাদের জীবন ধন্য। এর বাইরে তাদের কোন ভাবনা নেই, মাথাব্যাথা নেই। পৃথিবীতে তাদের প্রয়োজন আর জীব-জন্তুর প্রয়োজনে চমৎকার মিল। আর তৃতীয় দলে রয়েছে বিবেকবান ও ধূর্তদের পদচারণা।

বিবেকবানরা চায় এই দেশকে সুন্দর ও শান্তির দেশ হিসেবে গড়ে তুলতে। অন্যদিকে দুষ্টবুদ্ধিসমপন্ন বুদ্ধিজীবী ও জীবিকা সর্বস্ব নেতারা তাদের সম্পদ আর ক্ষমতার ক্ষুধা মেটাতে চায় যে কোন মূল্যে। তাতে যদি এই সবুজ মাটিতে বয়ে যায় রক্তের বন্যা, যদি এই দেশ হয় শ্মশান-গোরস্তান, তাতেও তাদের কোন কিছু যায় আসে না। কারণ, তারা এতেই শান্তি পায়; শকুনীরা যেমন লাশের ব্যবচ্ছেদ করে পায়। তাই বলছি স্যার, জেগে উঠুন, এখনো সময় আছে।

এই দেশ আমাদের, আমরা যারা এদেশকে শান্তির দেশ, সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে গড়ে তুলতে চাই। ইকবাল মাস্টার ও ইউসুফ ঃ হঁ্যা, আমরা আজ বুঝতে পেরেছি, কারা এদেশের শত্রু আর কারা বন্ধু। আমরাও বলছি জেগে ওঠো নাগরিক নগরে ডাকাত পড়েছে.....। ডাকাত পড়েছে.........। ডাকাত পড়েছে.......।

(সমাপ্ত) ছবিটির জন্য কৃতজ্ঞ যেখানে ঃ http://gallery.ittefaq.com


এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।