* দখলদার
মনু রাখাল ,তার পরনে তেল ছিট ছিটে জামা । হাতে কাস্তে ও কাঁচা ,সোনা ঝরা রোদ টিকরে পড়ে সকালের শিশির ভেজা ঘাসে । তার প্রিয় লাল গাইটি কচি নরম
ঘাসে মুখ ডুবিয়ে চিবোয় আর বাছুর টি পাশেই তিরিং বিরিং লাফায় । এই নতুন অথিতি বিচিত্র পৃথিবীর মোহে অন্ধ । নীল আকাশে ঝাকে ঝাকে পাখির ডানায় রুদ্র
ছায়ার খেলা , গুনগুন সুরে গান গেয়ে ঘাস কাটে সে ।
নিরবতা ভেদ করে একটা কণ্ঠ, চমকে উটে মনু। কে আমার ক্ষেতে ঘাস কাটিস এত বড় সাহস , জি চাচা ঘাস ত হগলেই কাটে, চুপ এই জমি এহন আমার । এইহানে আর কেউ ঘাস কাট তে পারবনা বুঝলে । যা এক্ষনি জায়গা ছাইরা চইলা যা । হটাৎ হাতটা ছেপে ধরে গজ গজ করতে করতে বাড়ীর দিকে ছুটে মনু।
উঠানে খেলা করছিল ছোট বোন শিলা । ওকে দেখে দৌড়ে আসে ভাইয়া তোমার হাতে লাল রঙ ,আমারে একটু দাও । উঃ মনেই ছিলনা ওটা রঙ নয় রক্ত কেটে গেছে বুঝলে । ইস মা মা দেখ না ভাইয়ার হাত কেটে ফেলেছে , গনুর মা হালিশা রান্না ঘর থেকে ছুটে আসে কই দেহি,তরে বেবাক সময় কই সাবধান থাকতে তুই হুনস না তুই কি অহন ছুডু । শিলা লতা পাতা খুজে আনে ছেঁচে হাতে লাগায় ,মা ন্যাকড়া দিয়ে বেধে দেয় ।
নদীর নাম কংস। তীরে দাঁড়িয়ে গনু ,দুপুরের রোদ টিকরে পড়ে গাঁয়ে । কত স্মৃতি মনে
জাগে । ইয়ার বন্ধুদের লয়ে মাছ ধরা সাতার কাঁটা গাছের ডালে বসে আপন মনে বাঁশি বাজানো ,দুলির সাথে মাটির পুতুল খেলা আরও কত কি , এখন মরা নদী ।
মনু খেয়াল রাখে কখন পাহারাদার আসে, হুররে হুররে চেচামেচিতে কানে তালা ,
অনেকেইমাছ ধরে , কাদা সরিয়েউবু হয়ে পানি ঠানে ফলে গর্তে প্রচুর টেংরা পুঁটি ও ছোট মাছ জমা হয় ।
হাতের মুট ভরে ভরে যারযার ছোকরায় তুলে । হইরল হইরল সাবধান কণ্ঠ শুনে সবে ত্বরা করে নদী থেকে উটে পড়ে । মনুর ভাগ্য মন্দ হইরল চান্দু এসেই ওর ছোকরা জালি আটক করে , এই নবাবের পুত গাং কি তোর বাপ দাদার ,হু আমার বাপ দাদারই দে আমার ঢেক জালি দে ,না দিমুনা ,। দুজনে হাতাহাতি শুরু হয় ।
মনুর রাগ চরমে উটে একটা ডিল ছুড়ে ও পাহারাদারের কপালে , ডিল টা খেয়ে অজ্ঞান হয়ে ডলে যায় সে , আর মনু ভয়ে কাপতে কাপতে বাড়ীর দিকে ছুটে ।
মা রাহেলা গনুর দিকে তাকিয়ে চমকে উটে তর এই হালত কেন মাছ কিছু পাইছস ,
না তয় এক কাম করছি বিলের হইরল আমার জালি খাইরা নিবার চাইছিল
হেরে এক ঘায় মাটিত হুয়াইয়া ধিছি । সর্বনাশ অহন আমরার কি অইবরে বাজান
উটানে গলা ভেজে রহমত ভাবিছাব ,কি আর অইব ভাতিজা যে কাজ কইরা আইল
নির্ঘাত জেল , হায় আল্লাহু এহন উপায় । পুলিশের তারা আর জেলের ভাত খাইতে না চাইলে গনুরে এক্ষনি বাড়ি থাইকা বাইর কইরা দিতে অইব ।
কান্না ভেজা ধুরু ধুরু বুকে গনুর মা তার দেবরের প্রতি চায় হতাশ হয়ে , হু যা ভালা অয় তাই কর আমি আর কিচ্ছু বুঝিনা ।
গনুর মা চিন্তা কইরনা আমার পরিচিত লোক আছে চাঁদ পুরে ঐখানেই গিয়া থাকুক
ভেজাল শেষ অইলে পরে নিয়া আইমুনে কেমন , কিন্তু যাওয়ার খরছ সাথে ত একটা পয়সাও নাই , তা আমি দেখছি ।
মুখ ভার করে গনু বোবা কান্নায় ভেংগে পড়ে । মা রাহেলাও বোন শিলা কাদে ।
বাড়ী থেকে বের হয় গনু একটা ঝাপসা স্মৃতি ভেসে উটে তার মনে ,এই সেইচাচাজি ঘাস কাঁটার সময় যে ধমক দিছিল ,। তার লাল গাই ও তার বকনা বাছুর
তাকে দেখে হাম্বা হাম্বা ডাকে। দূরে গাছের ছায়ায় দেখে দুলির সেই মিষ্টি
ভরা দুষ্টুমি ছবি ।
গাড়ির হুইসেলে তন্দ্রা কাটে ওর ।
মাসুদ রানা রচনা ২/৭/ ২০১২ ইং সোমবার ঢাকা মির পুর সময় রাত ১১ঘ ,
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।