কেউ শাব্দিক অর্থ নিয়া টানাটানি কইরেননা। এই পার্ট সেই পার্ট না। এইটা অন্য জিনিস । এই পার্ট শব্দটার সাথে সবাই আমরা কম বেশি পরিচিত। সবাই কম বেশি যেখানে সেখানে আমারা পার্ট নেওয়ার ট্রাই করে থাকি।
তো আজকে আমি বলব আমার এইরকমেরই এক পার্টিশট বন্ধুর কাহিনী।
এটা আমার কলেজ লাইফের ঘটনা। কলেজের প্রথম দিন। প্রথম প্রথম কলেজের গন্ডিতে পা রাখছি। সবই যেন কেমন কেমন লাগতেছে।
সব অচেনা। যার দিকে তাকাই সবাইরেই ভিন্ন গ্রহের প্রাণী বইলা মনে হইতে লাগল। সবাই কেমন যেন একটু ভাব ভাব মাইরা তাকাচ্ছিল,জ্ঞানী জ্ঞানী ভাব নিতেছিল,কেউ তাদের ড্রেসের বাহার দেইখা চলছিল ,আবার বিভিন্নজন বিভিন্ন ভাবে অঙ্গ ভংগি করে যাচ্ছিল একে অপরের সাথে,মানে ঐ আরকি পার্ট নিয়া চলছিল। মেয়েগুলার কথা বাদই দিলাম। তাদের দিকে তাকালে কোন কালেই আমার এই গ্রহের প্রাণী বইলা মনে হয় নাই।
আল্লাহ যেন তাগো অসীম পার্ট নেওয়ার ক্ষ্মমতা দিয়া জন্ম দিছে। যাইহোক আমি আসি ছেলেগুলোর ব্যাপারে। আমি ছিলাম গ্রামের পোলা। এতসব কিছু বুঝতাম না। কমবেশি সবার অমন অবস্থা দেইখা আমারও মনে হইলো এইখানে পড়তে হইলে আমারও এমন কিছু একটা করেই চলতে হবে।
তো প্রথম দিনেই আবার আমার কিছু পরিচিত মুখও দেখতে পাইলাম ঘুরতে ঘুরতে,মানে যাদের সাথে আগে পড়াশুনা করে আসছি। তারাও প্রায় আমার মতই ছিল। এরাও দেখলাম ঘোরাঘুরির পর বুঝে গেছে এখানে কিছু পার্ট নিতেই হইবে। নাইলে টেকা যাবেনা। তো সবাই মিলে ঠিক করলাম আমরা জ্ঞানী পোলাপান মানে ব্রিলিয়্যান্ট পোলাপানের পার্ট নিমু।
যদিও আমরা পড়ালেখার দিক দিয়া সেই মাপের ব্রিলিয়্যান্ট ছিলাম বইলা পরে এই পার্ট লওয়াটা বাদ দিতে হইছে।
আমরা ওইরকমই একটা পার্ট নিয়া এই ক্লাশ সেই ক্লাশ ঘুরে বেড়াতে লাগলাম। এমন সময় হঠাৎ একটা ছেলে আমাদের নজরে পড়ল। তাকে দেখলাম সে সবার থেকে ভিন্ন কিছু একটা নিয়া পার্ট নেওয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছে। আগেই বলেনেই সবার পার্ট নেওয়ার আসল উদ্দেশ্য ছিল ঐসব ভিন্নগ্রহের প্রাণীদের দৃষ্টি আকর্ষণ কিরে তাদের সান্নিধ্য পাওয়া।
আর এই ছেলেটিকে দেখলাম সবার থেকে ভিন্ন কিছু নিয়ে এরই মধ্যে তার চার পাশে অনেকগুযলো ভিনগ্রহের প্রানী জুটিয়ে ফালাইছে। তা যাই হোক তার আসলে পার্ট নেওয়ার বিশেষ বস্তুটি ছিলো একটি ক্যামেরা। তবে ক্যামেরা খান দেখতে খুব দামিই দেখাইলো। আমার বাসায় ফালানো সেই অনেক দিন আগেই কোড্যাকের ফিল্ম ক্যামেরার মত মনে হইলোনা। তারে দেখলাম সবারই ছবি তুলে দিতেছে।
ছেলে মেয়ে সবারই তার কাছে গিয়ে ছবি তোলার জন্য পোজ দিতে লাগলো। সেও হাসি হাসি মুখ আর ভীষণ পার্ট নিয়া সবার ছবি তুলে দিচ্ছে। যদিও তার প্রধান আগ্রহ তার পাশে থাকা ভিনগ্রহের প্রাণীদের প্রতিই মনে হইলো। তবে যাইহোক এরি মধ্যেই কলেজের প্রথম দিনেই সে মোটামুটি হিরো সাইজা বসল তার বিশেষ বস্তুটার কারনে। তার এমন অবস্থা দেইখা আমিও আমার সাথের পপোলাপানরে কইলাম আমার বাসাতেও একটা ক্যামেরা পইরা আছে।
কালকেই আমি ফ্লিম কিন্না সবাইরে ছবি তুইলা দিমু আর অর মত ক্যামেরাটা গলায় ঝুলাইয়া আমিও পার্ট নিমু। আমার কথা শোনার সাথে দেখলাম আমার লগের পোলাপানগুলা হাসাহাসি সুরু করছে। আমি বুঝতে পারলামনা এতে হাসির কি হইল । তখন একজন বলল 'আরে বুদ্ধু তোর ওই এনালগ ক্যামেরা দিয়া পার্ট নিতে আইলে জীবনে ক্যাম্পাসে মুখ দেখাইতে পারবিনা। ওই পোলার হাতে যে ক্যামেরাটা দেখোস ওইটা এক্ষান বিশেষ প্রজাতির জিনিস।
ওইটার নাম হইলো গিউয়া ডি,এস,এল,আর, ক্যামেরা। ওইডার বহুত দাম আর সেইরকম মাল পটানোর এক্ষান জিনিস। 'আমি তার কথা কিছুই বুঝলামনা। আমি তারে কইলাম' ওইটা দিয়াও ছবি তোলা যায় আমারটা দিয়াও যায়। ওইটাতেও লাইট জ্বলে আমারটায় জ্বলে।
খালি দামি হইলে পার্ট নেওয়া যাইব এ কেমন কথা। তাছারা আমার মোবাইলেও ক্যামেরা আছে। এতেও ছবি তোলা যায়। তোদের দরকার হলে আমি মোবাইল দিয়াও ছবি তুইলা দিতে পারি। 'আমার কথা শুইনা আবার তারা হাসতে লাগল।
একজন আবার বলল' তোর এইসব বিষয় নিয়া পার্ট নিতে আসার দরকার নাই। তুই অহনও অনেক ব্যাকডেটেড। দুনিয়া সম্পর্কে তুই কোন খবরই রাখিস না। আর মোবাইলে সবারই ক্যামেরা আছে। কিন্তু ওইটার ললগে এইসব কিছুইনা।
যাইহোক এখন চল ওর কাছে গিয়া আমরাও ফ্রি ছবি তুলে আসি। ফেসবুকে প্রোফাইল পিকচার দিমু ওইডা। '
আমি আর কিছু বললাম না। তাদের দিকে তাকিয়ে বুঝতে পারলা আমি ব্যাপক বেকুপ অলরেডিই বনে গেছি। তাই আর নতুন কিছু বইলা আরও বেকুপ সাজার মানে হয়না।
হইতেই পারে ওই ছেলেটা লেটেস্ট একটা ক্যামেরা কিনছে আর ওরটাতে অনেক ভাল ছবি আসে। তাই আমার পুরান ক্যামেরায় ছবি তুলতে কেউ আগ্রহী হবেনা। আর আমার ফ্রেন্ডের কথাও ঠিকঈ হবে হয়ত। আমিও কয়দিন আগে ফেসবুকে একটা আইডি খুলছি। যদিও আমি তেমন কিছু বুঝিনা আর আমার ফ্রেন্ড সংখ্যাও খুব কম।
যাইহোক মনে মনে নিজের হার স্বীকার করে ওদের সাথে ওই ছেলের কাছে চললাম ছবি তোলার জন্য।
আমরা যখন সেই ছেলেটির কাছে পৌছালাম দেখলাম সে বেশকয়েক সুন্দরীর ছবি তুলতে ব্যস্ত। সুন্দরীদের ছবি তোলা হলে আমাদের কে তার পাশে দেখে বিশাল এক্ষান ভাব নিয়া তাকাইলো। তবে বিরক্ত হইল না খুশি হইলো বুঝতে পারলাম না। এর পরে সে আমাদের সবার সাথে হ্যান্ডসেক করে নিজের পরিচয়খান দিল।
কোথা থেকে সে আসছে,বাপে কি করে এইসব আরকি। আমরাও আমাদের পরিচয় দিলাম। তবে ছেলেটার কথার স্টাইল দেখে বলতেই হবে তার কথা বলাতেও বিশেষ আর্ট আছে। সে আসলেই জানে কিভাবে পার্ট নিতে হয়। আমি তার চেহারার দিকেও লক্ষ করলাম।
সেখানেও বেশ কিছু আলাদা স্টাইল আছে। যেমন সে ক্লিন শেভ করা হলেও নাকের নিচে একটা খানদানি গোফ রেখেছে। যাতে তার চেহারাতেও একটা পার্ট ফুটে উঠতেছে। এ দিয়াই সে বুঝাইয়া দিলো সে আসলে খানদানবংশের পোলা। চুল গুলা সে এলোমেলো কইরা রাখে।
জামাকাপরও দারুন পরিপাটি আর শার্টটাকে সে ইন করে প্যান্টের ভিতর ঢুকিয়ে রাখছে। এতসব বিষয় দেইখা নিজেরে তার কাছে নিতান্তই তুচ্ছ মনে হইলো। যাইহোক আমাদের মধ্যে পরিচয় পর্ব শেষ হলে সে নিজেই জিজ্ঞেস করল আমরা ছবি তুলতে আগ্রহী কিনা?আমরা আনন্দের সহিত তারে বললাম যে আমরা আগ্রহী। তারপর সে আমাদের সবার ছবি একে একে তুলতে লাগল। একেক জনরে এক এক পজিশনে বসাইয়া ছবি তুলল।
ছবি তুলবার মধ্যেও তার আর্ট আছে মানে আরকি পার্ট আছে। সবার ইনডিভিজুয়াল ছবি তোলা হলে সে আমাদের ফ্রেন্ডসদের কয়েকটা গ্রুপ ছবিও তুলে দিল। ছবি তোলা শেষ হলে সে জানতে চাইলো আমাদের ফেসবুক আইডি আছে কিনা। আমরা সবাই বললাম আছে। তারপর সে বলল' আচ্ছা তাইলে তোমাদের ছবিগুলা আমি এডিট কইরা তোমাদের ওয়ালে পোস্ট করে দিবোয়ানে।
তোমরা সবাই আমার আইডিতে ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট পাঠাইও। আমি অন্যদেরও প্রোফাইল পিকচারের জন্য ছবি তুলে দিছি। আর আমি আমাদের কলেজের সবাইরে নিয়া একটা গ্রুপ খুলব। তাই আজকেই আমারে ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট পাঠাইও। অন্যরা এর মধ্যেই অনেকেই পাঠাইছে।
তোমরাও পাঠাইও। 'তারপর সে তার ফেসবুক আইডির নামটা বলল। নামটা তার নিজের নামেই ছিলো। আর তার নামটা শুনলেই বুঝা যায় তার নামেও একটা আভিজাত্যের ছায়া আছে,মানে এতে করে তার ভার্চুয়াল জগতেও তার বিশাল পার্ট আসা করা গেল। এরপর সে তার পাশে বসে থাকা কিছু ছেলে আর মেয়েদের কে ডেকে আমাদের সাথে পরিচয় করাইয়া দিলো।
বুঝতে বাকি রইলো না এরই মধ্যে সে তার চলার পথের চ্যালাও যোগাইয়া ফালাইছে। যাইহোক,তারাও আমাদের সাথে পরিচিত হলাম। তাদের সাথেও আমাদের ফেসবুক আইডির আদান-প্রদান হল। যদিও মেয়েগুলা কেমন যেন একটু বাঁকা চোখে তাকাচ্ছিলো। আমরা অতসব আমলে না নিয়া সেইদিনের মত তাদের কাছ থেকে বিদায় নিলাম।
আর বললা আবার পরে দেখা হবে। যখন তার কাছ থেকে ফিরে আসলাম তখন আমার কেবল একটা কথাই মনে পড়ছিল। আর বিরবির করে তা বলেও ফেললাম ফ্রেন্ডসদের সামনে-'হি ইজ রিয়াললি এ কমপ্লিট প্যাকেজ অব পার্ট। হি ইজ দ্যা পার্ট অব আওয়ার ক্যাম্পাস। ' আমার ফ্রেন্ডসর কথাটা শোনার পর অট্টহাসিতে ফেটে পড়ল।
তারাও তাকে বলতে 'দ্যা পার্ট' নামে ডাকা শুরু করল। আর কেমন করে জানিনা আমাদের দেওয়া এই নামটাই পরে ক্যাম্পাসে ছড়িয়ে পড়ল। আর তাকে সবাই আড়ালে 'দ্যা পার্ট ' নামেই ডাকা শুরু হল। আর সেও কলেজ লাইফের পুরো সময়টাতে বিভিন্ন কাজে তার নামের সার্থকতাটা ধরে রেখেছিলো।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।