বাংলাদেশ নিয়ে ভাবনা, প্রত্যাশা ও সম্ভাবনার সংগ্রহমালা
সবাইকে স্বাগত ছুটির দিনের নিয়মিত কড়চায়। আজকের বিষয় শিক্ষকতা। শিক্ষকতার ব্যাপারে আমার এক ধরণের বিশেষ দূর্বলতা আছে। একসময় স্বপ্ন দেখতাম, বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করব। পড়ব, লিখব আর পড়াব।
হয়তোবা শিক্ষকতার প্রতি দূর্বলতা এসেছিল নিজের জীবণে শিক্ষকদের চমৎকার সাহচর্যের কারণে। আমার নিজের পরিবারেও মাথা গুণে শিক্ষকদের সংখ্যাটা একটু বেশী বলে পেশা হিসেবে শিক্ষকতা একটু বেশী রোমাঞ্চকর ও সম্মানজনক মনে হতো। সে যাক। জীবণে টুকটাক্ শিক্ষকতা করলেও শিক্ষকতা পেশায় যোগ দেইনি। বিশ্ববিদ্যালয়ে মাস্টার হিসেবে যোগ দেয়ার জন্য কখনও চেস্টা তদবিরও করিনি এবং সে ব্যাপারে বিন্দুমাএ দু:খও নেই।
কারণ, আঙ্গুল ফল অনেকের জন্যই খুব টক। সে কথা অন্য কোন সময়।
তার চেয়ে চলুন আমার প্রথম শিক্ষকতার গল্প বলি। ছোটবেলায় গরমের ছুটিতে আমরা সবাই গ্রামের বাড়ীতে বেড়াতে যেতাম। এই গরমের ছুটির জন্য সারা বছর ধরে অপেক্ষায় থাকতাম।
মিস্টি আম, নানান ধরণের নাস্তা আর খাবার, পুকুরে সারাক্ষণ ডুবাডুবি, সকল নিয়মের বাইরে ছুটাছুটি- খুব উপভোগ করতাম। সন্ধ্যার পর গ্রামের বাড়ীতে হারিকেনের আলোয় উচ্চস্বরে লেখাপড়ার সংগীত ভালই লাগত। ঘটনাটা ঘটে যখন আমি ক্লাশ সেভেনে পড়ি। সেবারও আমরা গরমের ছুটি কাটানোর জন্য সবাই গ্রামের বাড়ীতে। শহরের ছেলে গ্রামে গেলে খুব দাম দেয়।
এখন আর দেয় না, বরং দৌড়ায়...। তাই, সন্ধ্যার সময় চাচী বললো, আমার চাচাতো বোনকে পড়াতে। বললাম, "উঠানে গিয়ে পাটি বিছাও। ইংরেজী বই নিয়ে যাও। তোমাদের আমি ইংরেজী পড়াব"।
ছোট বোনের সই (পাশের বাড়ীর) মেয়েটিও বই হাতে নিয়ে পাটিতে বসে পড়ছে। সম্ভবত: এরা দু'জনই ক্লাশ ফোরে পড়ে। পাটিতে বসে এরা পড়ছে আর আমি তদারকী করছি। হাতে বাঁশের বেত। হাতে বেত না থাকলে শিক্ষক হিসেবে মানায় না।
তাই, বেশ খেটেখুটে পড়ানোর চেস্টা করছি। কুপির অনুজ্জল আলোতে এরা পড়ছে। কি ভেবে আমি কুপির কালো ধোঁয়ার উপর বেতটা ধরে রেখে কখন যে কালো করে ফেলেছি তা নিজেও জানি না। এতে কোন সমস্যা নেই। কিন্তু সমস্যা হলো তার মিনিট কয়েক পরে।
কারণ, চাচাতো বোনের বান্ধবীটি বেশ অমনোযোগী। ঠিক মতো পড়া পাঠে গা লাগাচ্ছে না। এ পর্যায়ে আমি একটু বিরক্ত। ছাএ-ছাএীরা অমনোযোগী হলে শিক্ষকদের ইগোতে খুব লাগে। ভূক্তভোগীরা তা খুব ভালভাবেই জানেন।
তাই আমি অমনোযোগী ছাএীটির মুখে বেত দিয়ে গুতা দিয়ে বললাম, "এই তুই ঠিকমতো পড়িস্ না কেন"? মেয়েটির ফর্সা মুখে কুপির আলোতে কালো হওয়া বেতের খোঁচায় কালো দাগ পড়ে গেল। শুরু হয়ে গেল তাৎক্ষণিকভাবে ফুঁপিয়ে কান্না। এ দেখি মহা মুসীবত। বাপে যদি এই সময় উঠানে এসে ঘটনা দেখে তাহলে শরীরের হাড্ডি একটাও আস্ত থাকবে না। আর ব্যাপারটা বেশী গড়ালে তো গ্রাম্য সালিশীও বসতে পারে।
এধরণের চিন্তায় ক্লাশ সেভেনে পড়া বুকটা হিম হয়ে গেল। কিন্তু যাই বলি এই মেয়ের কান্না তো আর থামে না। একবার ভাবলাম, দৌড় দিয়ে পালাই। কাচারী ঘরের দিকে চলে যাই। ঠিক এমনি সময় কোলাহল আঁচ করে আমার বড়ো বোন হাজির।
ঘটনার বিবরণ শুনে মহা ক্ষ্যাপা। সে ওড়না দিয়ে মেয়েটির মুখের কালো দাগ মুছতে ব্যস্ত। আর আমাকে ভীষণ বকা। শিক্ষক হিসেবে নিজের ইগোতে খুব লাগল।
রাতের বেলা খাওয়ার সময় ব্যস্ত চাচী শুধু জিগ্যেস করল, "ওরা পড়েছে"? উওরে বললাম, "পড়েছে মানে, পুরো বই শেষ করে দিয়েছি।
আর ওদেরকে আমার কাছে পড়তে আসতে হবে না"। সামনে বসা চাচাতো বোন শুধু মাথা নেড়ে সম্মতি দিল আমার কথায়। চাচী খুশীতে গদগদ হয়ে মুরগীর আরেকটি ঠ্যাং আমার পাতে তুলে দিল। আমি একান্ত নীরবে কথা না বাড়িয়ে খেতে থাকলাম...(ক্লোজআপহাসি)
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।