নয়াপল্টনে প্রধান বিরোধী দল বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের স্টাফদের দিনকাল গরিবানা হালে চললেও চেয়ারপারসনের গুলশান কার্যালয়ের কর্মকর্তাদের রাজকীয় অবস্থা।
নয়াপল্টনের অফিস স্টাফদের জীবন চলে সাধারণভাবে, অন্যদিকে আভিজাত্য, অহঙ্কার আর দাম্ভিকতার মাত্রা ছাড়িয়ে যায় দল ক্ষমতায় যাওয়ার আগেই। নয়াপল্টনের অফিসের অনেক স্টাফই এখনো নিয়মিত বাসাভাড়া পরিশোধ করতে পারেন না বাড়ির মালিককে। পরিবারের খরচ চালাতেও খুব কষ্ট হয় অনেকের। আর এর ঠিক উল্টোচিত্র হলো গুলশান কার্যালয়ের।এদিকে নয়াপল্টনে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সব মিলিয়ে ২০ জন কর্মচারীও এখন আর খুঁজে পাওয়া যাবে না। এর মধ্যেও এমন দু-চার জন আছেন যারা বিএনপির জন্মলগ্ন থেকেই দায়িত্ব পালন করছেন। এমনকি বয়সের ভারে ন্যুব্জ হয়ে গেলেও আজো তাদের ভাগ্যের কোনো পরিবর্তন ঘটেনি। বরং বউ-ঝি নিয়ে খেয়ে-পরে দিন কাটানো খুবই কষ্টকর।
দলের দফতরের দায়িত্বে নিয়োজিত একজন যুগ্ম-মহাসচিব বসে বসে এই চিত্র অবলোকন করলেও সমবেদনা প্রকাশ ছাড়া আর কিছুই করতে পারেন না। কারণ যৎসামান্য যে বেতন তাদের মাথাপিছু ধরা হয়েছে তাও সময়মতো পরিশোধ করা সম্ভব হয় না।
গুলশান কার্যালয়ের চিত্র হলো সম্পূর্ণ ভিন্ন। প্রেস উইংয়ের দু-তিন জন ব্যক্তি ছাড়া বেশির ভাগ কর্মীর জীবনযাত্রার মানও 'উন্নত' হয়েছে। এমনও অনেক অফিস কর্মী আছেন যাদের কোনো বেতন লাগে না।
বয়স ২৫ কিংবা ৩০-এর কোঠায় হলেও শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত গাড়িতে যাতায়াত করেন নিয়মিত। বিরোধী দলে থাকলেও মাত্র চার বছরেই বনে গেছেন ক্রোড়পতি। রয়েছে নানা রকমের ব্যবসা-বাণিজ্য। একটুখানি সর্দি-হাঁচি হলেও তারা ঢাকার কোনো হাসপাতালে কিংবা ডাক্তারের কাছে চিকিৎসা করাতে ভরসা পান না। এই তো মাত্র মাসদুয়েক আগের ঘটনা।
অফিস এঙ্িিকউটিভ পদধারী একজন স্টাফ তার বাঁ হাতে মোচর খেয়ে বললেন, ভাই রিস্কটা আর নিলাম না। আগামীকাল দেড়টার ফ্লাইটে ব্যাংকক চলে যাচ্ছি। দোয়া করবেন যেন ভালোভাবে ফিরে আসি। সেখানে আরও কয়েকজন সংবাদকর্মী দাঁড়িয়ে ছিলেন। তারা একে-অন্যের দিকে আড়চোখে তাকিয়ে বললেন, অবশ্যই দোয়া করি।
এই কর্মীর নামে অসংখ্য অভিযোগ রয়েছে দলের খোদ নির্বাহী কমিটির কয়েক ডজন নেতার। মাত্র সাড়ে চার বছর আগে চাকরিতে যোগদানের সময় ভাত খাওয়ার কিংবা সংসার চালাতে টানাটানি অবস্থা থাকলেও এর পর থেকে আর আল্লাহর অশেষ রহমতে তাকে পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি। এখন তিনি দলের স্থায়ী কমিটির সদস্যদেরও নাকি পিয়ন-চাপরাশির মতোই মনে করেন। আর ছাত্রদল-যুবদলের মতো সংগঠন তো তার পকেটে গড়াগড়ি খায়। ছাত্রদলের সারা দেশের নেতাদের নামের তালিকাসংক্রান্ত একটি ডাটাবেজও তৈরি করা হচ্ছে।
লক্ষ্য হলো আগামীতে সরকারে গেলে তার তৈরি করা এ তালিকার বাইরে ছাত্রদলের কোনো নেতা-কর্মী চাকরি পাবেন না। তবে এ তালিকা তৈরির ক্ষেত্রে খরচ বাবদই কোটি টাকার ফান্ড গঠনের মিশন চলছে বলে জানালেও ভবিষ্যৎ বাণিজ্যের কথা এখনই বলা সম্ভব নয় বলে জানান বিএনপির নির্বাহী কমিটির দুজন সদস্য। এমনকি গেল রমজানে খোদ চেয়ারপারসনের ইফতার পার্টিতে পর্যন্তও কমিশন খাওয়া বাদ যায়নি তার। প্লেটপ্রতি ৩০-৪০ টাকা পর্যন্তও দিতে হয়েছে তাকে সরবরাহকারীদের। এ ছাড়া অন্যান্য সরঞ্জামাদি কেনার ক্ষেত্রে পুকুরচুরিরও অভিযোগ শোনা যায় এসব কর্মকর্তার বিরুদ্ধে।
বিশেষ করে নির্বাচন সামনে রেখে যেন কপাল খুলে গেছে তাদের। যে কোনো পর্যবেক্ষণসংক্রান্ত কার্যক্রমে পর্যন্ত দলের আইটিবিষয়ক সম্পাদককে এখন আর স্মরণ করা হয় না। পাঁচটি সিটি নির্বাচনের রাতে সেখানে ফলাফল মনিটরিংয়ের আয়োজন করা হয়েছে বাইরে থেকে অপরিচিত লোক ভাড়া করে এনে। এমনকি রমজানের ইফতার পার্টিতে পর্যন্ত অন্য একটি বিশেষ দলের ছাত্র সংগঠনের কর্মীদের আনা হয় প্রধান ফটক পাহারা দেওয়ার জন্য। সেসব অনুষ্ঠানে ছাত্রদল-যুবদলের অনেক নেতাকে পর্যন্তও ঢুকতে দেওয়া হয়নি সেই অফিস এঙ্িিকউটিভের নির্দেশে।
তবে এর মধ্যেও হাতে গোনা এমন অনেক কর্মকর্তা ও কর্মচারী রয়েছেন সেখানে, যাদের বিরুদ্ধে এ ধরনের অভিযোগ দূরের কথা, বরং নির্লোভ আর নিঃস্বার্থভাবেই কাজ করে যাচ্ছেন বছরের পর বছর দল ও প্রিয় নেত্রীর জন্য। এরা সেই গুলশান কার্যালয়ের দুই শতাধিক স্টাফের মধ্যেও অনেকটাই নিগৃহীত।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।