ঋণ শ্রেণীকরণ, প্রভিশনিং (নিরাপত্তা সঞ্চিতি) ও পুনঃ তফসিলের বিধান থেকে কিছুটা পিছু হটেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। প্রভাবশালী কয়েকজন অভ্যস্ত শীর্ষ খেলাপিকে ছাড় দেওয়া ও সরকারের নির্বাচনী বছরে এসে শক্ত অবস্থান ধরে রাখতে পারল না কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
নতুনভাবে জারি করা প্রজ্ঞাপন অনুসারে এখন থেকে কোনো ঋণ মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ার পর দুই মাস পার হলে তার বিপরীতে অতিরিক্ত নিরাপত্তা সঞ্চিতি সংরক্ষণ করতে হবে না। এ ক্ষেত্রে আগের মতো সঞ্চিতি রাখলেই চলবে। অন্যদিকে, পুনঃ তফসিলের পর ঋণ পরিশোধের সময়ও বাড়ানো হয়েছে।
তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর এস কে সুর চৌধুরী একে পিছু হটা মনে করছেন না। সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ-সংক্রান্ত প্রশ্নের জবাবে বলেছেন, ‘পরিস্থিতির সঙ্গে সমন্বয় করা হয়েছে। ’ আর সংবাদ সম্মেলনের শুরুতেই তিনি বলেন, কোনো প্রভাব বা চাপে নয়, বরং দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি, গ্যাস-বিদ্যুত্সহ নানা প্রতিকূলতার কারণে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে কিছুটা শিথিলতা আনতে হয়েছে।
তৃতীয় দফায় নতুন করে ঋণ শ্রেণীকরণ, প্রভিশনিং ও পুনঃ তফসিলীকরণ বিষয়ে আজ বুধবার নতুন দুটি প্রজ্ঞাপন জারি করে বাংলাদেশ ব্যাংক। এ বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে আয়োজন করা হয় সংবাদ সম্মেলনের।
সম্মেলনে নির্বাহী পরিচালক ম মাহফুজুর রহমান, এস এম মনিরুজ্জামান ও মোহাম্মদ নওশাদ আলী চৌধুরী, মহাব্যবস্থাপক এস এম রবিউল হাসান, উপমহাব্যবস্থাপক আনোয়ারুল ইসলাম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
সুর চৌধুরী বলেন, আজ জারি করা বিধানে বিশেষ উল্লেখ হিসাব (এসএমএ বা স্পেশাল মেনশন অ্যাকাউন্ট) ঋণের ক্ষেত্রে ব্যাংকগুলোকে অন্তত ৫০০ কোটি টাকা কম সঞ্চিতি রাখতে হবে, যা তাদের মুনাফায় ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
কোনো ঋণ দুই মাস মেয়াদোত্তীর্ণ হলে তা বিশেষ উল্লেখ হিসাব বা এসএমএ বলে বিবেচিত হয়। আজকের আগের নীতিমালা অনুযায়ী এ ধরনের ঋণের বিপরীতে ৫ শতাংশ হারে সঞ্চিতি সংরক্ষণ করতে হতো। নতুন নীতিমালায় তা শিথিল করে অশ্রেণীকৃত ঋণের হারের সমান করা হয়েছে।
এখন থেকে এ ক্ষেত্রে ক্ষুদ্র ও মাঝারি ঋণের বিপরীতে শূন্য দশমিক ২৫ শতাংশ, ভোক্তা ঋণের বিপরীতে ৫ শতাংশ, গৃহায়ণ ও বিনিয়োগ ব্যাংকের (মার্চেন্ট ব্যাংক, ব্রোকারেজ হাউস, স্টক ডিলার প্রভৃতি) ঋণের বিপরীতে ১ শতাংশ হারে সঞ্চিতি রাখতে হবে।
কোনো ঋণ মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ার পর নির্দিষ্ট হারে এককালীন জমা বা ডাউন পেমেন্ট দিয়ে তা সর্বোচ্চ তিনবার পুনঃ তফসিল করা যায়। নতুন প্রজ্ঞাপনে মেয়াদি ঋণে প্রতিটি পর্যায়ে সময় বাড়ানো হয়েছে। সময় বাড়িয়ে এখন নিম্নমান পর্যায়ের ঋণ পুনঃ তফসিলের ক্ষেত্রে প্রথমবার ৩৬ মাস, দ্বিতীয়বার ২৪ মাস ও তৃতীয়বার ১২ মাসের মধ্যে পুনঃ তফসিল করা অর্থ পরিশোধের সুযোগ দেওয়া হয়েছে। আগে যা ২৪, ১৮ ও নয় মাস সময় ছিল।
এর ফলে শ্রেণীকৃত একটি ঋণ তিন দফায় পুনঃ তফসিল করে তা পরিশোধে মোট ছয় বছর সময় পাবেন গ্রাহক, যা আগে সাড়ে চার বছর ছিল।
সন্দেহজনক ও ক্ষতি বা মন্দ মানের শ্রেণীকৃত ঋণ পুনঃ তফসিলের ক্ষেত্রে প্রথমবার ২৪ মাস, দ্বিতীয়বার ১৮ মাস এবং তৃতীয়বার ১২ মাস করে পুনঃ তফসিলের পর অর্থ পরিশোধের সময় দেওয়া হয়েছে। এর আগে যথাক্রমে যা ছিল ১৮, ১২ ও নয় মাস।
পুঁজিবাজারে পুনঃ অর্থায়ন তহবিল
সরকারের শেষ বছরে এসে শেয়ারবাজারকেও একটা বড় প্রণোদনা দেওয়া হচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংক তার মুনাফার যে অর্থ লভ্যাংশ আকারে সরকারকে দিত, তার মধ্য থেকে নতুন পথ আবিষ্কার করে ৯০০ কোটি টাকার একটি তহবিলও জোগান দিতে যাচ্ছে।
সরকারের অনুমোদন পেলে এই তহবিল পুনঃ অর্থায়ন তহবিল হিসেবে শেয়ারবাজারে মার্চেন্ট ব্যাংকগুলোকে দেওয়া হবে।
তবে সুর চৌধুরী সাংবাদিকদের জানান, এই পুনঃ অর্থায়ন তহবিলের অর্থ আদায় বা অন্য কোনো দায় নেবে না বাংলাদেশ ব্যাংক। আইসিবি এই তহবিল ব্যবস্থাপনা করবে এবং পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি এর তদারকিতে থাকবে।
শেয়ারবাজারে ক্ষতিগ্রস্ত বিনিয়োগকারীদের মার্চেন্ট ব্যাংকের ঋণ হিসারের ৫০ ভাগ সুদ মওকুফ ও বাকি ৫০ ভাগ সুদ ও আসলকে ব্লক হিসাবে রাখা এবং তার ওপর ১০ শতাংশ হারে সুদ ধার্য করতে এই পুনঃ অর্থায়ন তহবিল থেকে অর্থ জোগানো হবে। পুনঃ অর্থায়নের সুদের হারও হবে ১০ শতাংশ।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।