ইউরোপে তৈরি পোশাক রপ্তানিতে বাংলাদেশ যাতে শুল্কমুক্ত সুবিধা বজায় রাখতে পারে, সে জন্য ইউরোপীয় ইউনিয়ন সব ধরনের সহযোগিতা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। তবে বাংলাদেশকে আইএলওর মধ্যস্থতায় গৃহীত ত্রিপক্ষীয় সমঝোতার বাস্তবায়ন এবং শ্রম আইন সংশোধনে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাণিজ্যবিষয়ক কমিশনার ক্যারেল ডি গুশট এবং বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী দীপু মনির মধ্যে গত মঙ্গলবার রাতে ব্রাসেলসে অনুষ্ঠিত বৈঠকের পর প্রকাশিত যৌথ বিবৃতিতে এসব কথা বলা হয়েছে।
তৈরি পোশাকের আন্তর্জাতিক ক্রেতা, বিশেষত ইউরোপীয় কোম্পানিগুলোকে তাদের সরবরাহ ব্যবস্থা বা সাপ্লাই চেইনে সামাজিক দায়বদ্ধতা উন্নয়নের লক্ষ্যে বাংলাদেশ ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে একযোগে কাজ করারও আহ্বান জানানো হয় বিবৃতিতে।
বিবৃতিতে বলা হয়, সরবরাহ ব্যবস্থায় কীভাবে এই সামাজিক দায়বদ্ধতার বিষয়টি আরও উন্নত করা সম্ভব এবং এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো নিয়ে এই গ্রীষ্মে একটি বৈঠক আয়োজন করা হবে।
ইউরোপীয় বাণিজ্য কমিশনার এবং বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘তৈরি পোশাকশিল্পে স্বাস্থ্য ও পেশাগত নিরাপত্তার মান উন্নয়নে কার্যক্রম জোরদার করার লক্ষ্যে ৪ মে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) মধ্যস্থতায় সরকার, কারখানামালিক এবং শ্রমিকদের যে ত্রিপক্ষীয় যৌথ বিবৃতি গৃহীত হয়েছে, তাকে একটি মূল্যবান সূচনা বলে আমরা মনে করি। ’ তাঁরা আশা করছেন, আইএলওর ‘বেটার ওয়ার্ক প্রোগ্রাম’-এর বাস্তবায়ন শিগগিরই শুরু হবে এবং সরকার শ্রম আইন সংশোধনের যে উদ্যোগ নিয়েছে, তা দেশটির সংসদে দ্রুত সম্পন্ন হবে।
বাণিজ্য ক্ষেত্রে ‘অস্ত্র ছাড়া সবকিছু’ বা ‘এভরিথিং অ্যাক্সেপ্ট আর্মস’ নামে পরিচিত ইউরোপীয় ইউনিয়নের অগ্রাধিকারমূলক ব্যবস্থা ইউরোপকে বাংলাদেশের প্রধান ও শীর্ষ রপ্তানি বাজারে পরিণত করেছে উল্লেখ করে বিবৃতিতে বলা হয়, এর মাধ্যমে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন, কর্মসংস্থান, আয় বৃদ্ধি, বিশেষভাবে নারী অধিকার এবং দারিদ্র্য দূরীকরণে ইউরোপীয় ইউনিয়ন বিশেষ ভূমিকা রেখেছে। সে কারণে বাংলাদেশ যাতে ‘এভরিথিং বাট আর্মস’ বাণিজ্য ব্যবস্থার সুবিধা অব্যাহতভাবে পেতে পারে, সে জন্য তৈরি পোশাকশিল্পে পেশাগত স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তার মান উন্নয়নে ব্যবস্থা নিতে দৃঢ়সংকল্প বলে বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়।
সম্প্রতি সাভারে রানা প্লাজা ধসের ঘটনায় সহস্রাধিক পোশাকশ্রমিকের প্রাণহানির পটভূমিতে ২৩ মে ইউরোপীয় পার্লামেন্টে বাংলাদেশের পোশাকশিল্প এবং দেশটি থেকে ইউরোপে পোশাক আমদানির ক্ষেত্রে দেওয়া শূন্য শুল্কের সুবিধা বিষয়ে একটি প্রস্তাব গৃহীত হওয়ার পটভূমিতে পররাষ্ট্রমন্ত্রী দীপু মনি ব্রাসেলসে ইউরোপীয় কমিশনের সদর দপ্তরে সফরে আসেন।
ইউরোপীয় পার্লামেন্টের ওই প্রস্তাবে পোশাকশিল্পে শ্রমিকদের কাজের পরিবেশ উন্নয়ন ও মজুরি বাড়ানো না হলে শুল্কমুক্ত রপ্তানি সুবিধা জিএসপি (জেনারেলাইজড প্রিফারেন্সিয়াল সিস্টেম) প্রত্যাহারের জন্য কমিশনের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছিল।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাণিজ্যবিষয়ক কমিশনার ক্যারেল ডি গুশট এবং দীপু মনির ওই বৈঠকের পর তাঁরা বলেন, বাংলাদেশের পোশাকশিল্পে শ্রমিকদের কাজের পরিবেশ উন্নত করার লক্ষ্যে তাঁরা যৌথভাবে কাজ করতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। তাঁরা বলেন, এই শিল্পে ন্যায়ভিত্তিক, নৈতিক এবং দায়িত্বশীল সরবরাহ ব্যবস্থাপনার উন্নয়নে বৈশ্বিক পর্যায়ের সরবরাহ ব্যবস্থায় জড়িত সব পক্ষ বৈশ্বিক ক্রেতা কোম্পানিগুলো, ব্র্যান্ড, সরকার ও ভোক্তা—সবার সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করবে। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।