আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

পোশাক খাতের সার্বিক তত্ত্বাবধানে কেউ নেই

দেশের রপ্তানি আয়ের বেশির ভাগ পোশাক খাত থেকে এলেও খাতটির সার্বিক তত্ত্বাবধানে কেউ নেই। প্রাকৃতিক বা মানবিক—যেকোনো বিপর্যয় তৈরি হলে যথাযথ দায়িত্ব পালন ও পদক্ষেপ গ্রহণে কাউকে পাওয়া যায় না।
অযাচিতভাবে অনেক সময় অন্য মন্ত্রণালয়ও এই খাতের কর্মকাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত হয়ে পড়ে। যেমন মজুরি বৃদ্ধির দাবিতে পোশাক কারখানার শ্রমিকেরা
আন্দোলন করলে সম্প্রতি জড়িয়ে যায় নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়। পোশাক খাতের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত মূলত বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এবং শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়।


বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের বক্তব্য হচ্ছে—কার্যপ্রণালি বিধি অনুযায়ী (রুলস অব বিজনেস) অনুযায়ী পোশাক খাতের সবকিছুই এ মন্ত্রণালয়ের আওতাভুক্ত থাকার কথা। কিন্তু বাস্তবে তা নেই। আর বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বলছে, তারা শুধু রপ্তানির বিষয়টি দেখে থাকে। অন্য কিছু তাদের এখতিয়ারের বাইরে। অন্যদিকে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের দাবি, তাদের দেখার দায়িত্ব শুধু শ্রমিকদের শ্রম ও কর্মসংস্থানের দিক, এর বাইরের কিছু নয়।


গত সোমবার সচিবালয়ে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান কিভাবে তৈরি পোশাক খাতের সঙ্গে জড়িত হলেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, শ্রমমন্ত্রী রাজিউদ্দিন আহমেদ এ ব্যাপারে তাঁকে দায়িত্ব দিয়ে বিদেশে গেছেন। যদিও শ্রম প্রতিমন্ত্রী মন্নুজান সুফিয়ান দেশে রয়েছেন।
তৈরি পোশাক খাতের সার্বিক দেখভালের জন্য আলাদা একটি কর্তৃপক্ষ দরকার, ২৪ বছর আগেই তা মনে করেছিল তৎকালীন সরকার। ১৯৮৯ সালের জানুয়ারিতে মন্ত্রিসভায় অনুমোদন করা হয়েছিল ‘অ্যাপারেল বোর্ড’ গঠনের খসড়া। এরপর অনেক সরকার এলেও বিষয়টি আর এগোয়নি।

নেপথ্য কারণ হিসেবে মন্ত্রণালয়গুলোর হীনম্মন্যতার পাশাপাশি কারখানার মালিকদের বিরোধিতাও রয়েছে বলে জানিয়েছেন এ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা।
বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী আবদুল লতিফ সিদ্দিকী এর আগে প্রথম আলোকে বলেছিলেন, কাজটি করতে তিনি চূড়ান্ত অর্থেই ব্যর্থ হয়েছেন। তাঁর মতে, এই বোর্ড গঠিত হলে কারখানার কর্মপরিবেশ ভালো হবে, শ্রমিকের মজুরি নিশ্চিত হবে এবং বিদেশি ক্রেতারা কম মূল্যে পোশাক কিনতে পারবেন না। ফলে শ্রমিকদের ঠকাতেও পারবেন না মালিকেরা।
বাণিজ্যমন্ত্রী গোলাম মোহাম্মদ কাদের গত মঙ্গলবার প্রথম আলোকে বলেন, ‘গোটা পোশাক খাতের দেখভালের জন্য উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন একটি কর্তৃপক্ষ গঠিত হলে খারাপ হবে না।

তখন এক জায়গা থেকে এ খাতের যেকোনো সমস্যা দূর করার উদ্যোগ নেওয়া যাবে। ’
১০ বছর পর ১৯৯৯ সালের অক্টোবরে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার বৈঠকে আবারও উপস্থাপন করা হয় স্বায়ত্তশাসিত অ্যাপারেল বোর্ড গঠনের প্রস্তাব। এতে বলা হয়, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) বস্ত্রসেল তৈরি পোশাকের রপ্তানি-সংক্রান্ত কার্যাবলি সম্পাদন করলেও সার্বিক বিষয় তারা সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করতে পারছে না। তবে অর্থ ও তৎকালীন সংস্থাপন মন্ত্রণালয়ের আপত্তির মুখে তা আর হয়নি। ২০০১ সালের সেপ্টেম্বরে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকার উদ্যোগ নিয়েও ‘নির্বাচিত সরকারই অ্যাপারেল বোর্ড গঠন করুক’ বলে পিছিয়ে যায়।

২০০২ সালের আগস্টে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় একটি উদ্যোগ নিলেও এর বিরোধিতা করে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়। এরই মধ্যে ২০০৩ সালের এপ্রিলে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া প্রস্তাবিত বোর্ডের জন্য ২৬৫ জনবলের কাঠামো অনুমোদন করেন।
এরপর ২০১০ সালের জানুয়ারিতে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় ‘বস্ত্র ও পোশাকশিল্প বোর্ড আইন’-এর একটি খসড়া দাঁড় করায়। ২০১১ সালের সেপ্টেম্বরে তা মন্ত্রিসভায় উপস্থাপন করা হলেও অনুমোদন পায়নি।
এরপর, ২০১২ সালের জানুয়ারিতে বস্ত্র ও পাটমন্ত্রীর সভাপতিত্বে গঠিত কমিটির তৈরি করা আইনের খসড়া প্রকাশ করা হয় ওয়েবসাইটে।

কিন্তু কোনো মতামত পড়েনি এতে। অ্যাপারেল বোর্ড গঠনের বিষয়টিও ওই খানেই আটকে যায়।
বাংলাদেশ নিট পোশাক উৎপাদক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিকেএমইএ) সহসভাপতি মোহাম্মদ হাতেম প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা আগে অ্যাপারেল বোর্ড চাইলেও এখন চাই আলাদা মন্ত্রণালয়। মোট কথা, পোশাক খাতকে একই ছাতার নিচে আনা গেলে মালিক-শ্রমিক সবার জন্যই ভালো হবে। ’
এ সপ্তাহের শুরুতেই ন্যূনতম মজুরি ৮,১১৪ টাকা করার দাবিতে শ্রমিক অসন্তোষ চলছে।

মালিকপক্ষ মজুরি ৬০০ টাকা বাড়িয়ে ৩,৬০০ টাকা করতে চাইলে ফুঁসে ওঠেন শ্রমিকেরা। মজুরি বোর্ডের কিছু সদস্য ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণে অভিজ্ঞতার জন্য বিদেশ সফরে যেতে তৈরি হচ্ছেন। এদিকে, বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় আবারও আইনের খসড়া মন্ত্রিসভায় পাঠানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে।

সোর্স: http://www.prothom-alo.com

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.