আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ফিরে দেখা ৫: গৌড়ের রত্ন - ছোট সোনা মসজিদ

ছোট সোনা মসজিদ (ফিরোজপুর, গৌড়): ১৪৯৩ থেকে ১৫১৯ সালের মধ্যে নির্মিত ছোট সোনা মসজিদ গৌড়ের সবচেয়ে চমৎকার স্থাপত্য নিদর্শন এবং একটি প্রাক মুঘল স্থাপত্যের উৎকৃষ্ট উদাহরণ। সুলতান আলাউদ্দিন হোসেন শাহের রাজত্বের সময়ে জনৈক ওয়ালী মোহাম্মদ মসজিদটি তৈরী করেন বলে ধারণা করা হয়। মসজিদের বাইরের পাশগুলি (বিশেষতঃ গম্বুজগুলি) সোনালী রঙের কাজ করা ছিল এবং স্যার কানিংহাম উল্লেখ করেছেন যে ১৮৮০ সালের দিকেও এই সোনালী কাজগুলি দৃশ্যমান ছিল। মসজিদটি সূর্যের আলোয় জ্বল জ্বল করত; তাই এটি সোনা মসজিদ নামে পরিচিত। মসজিদটি মূলত ইটের তৈরী, যা কালো (ব্যাসল্ট) পাথরে ঢেকে দেওয়া হয়েছে।

এই কালো পাথরের উপরে খোদাই করা অত্যন্ত উচ্চ মানের সূক্ষ কারুকাজ মসজিদটিকে আকর্ষণীয় করেছে। মসজিদের ভিতরের এবং বাইরের উভয় পাশের দেয়াল পাথরের উপর খোদাইকৃত অলংকরণ দ্বারা আচ্ছাদিত। মিহরাব অত্যন্ত সুসজ্জিত, যার অতি অল্পই এখন অবশিষ্ট আছে। মসজিদে মোট ১৫টি গম্বুজ আছে; এর একটি বৈশিষ্ট্য হল যে শুধুমাত্র বাইরের গম্বুজগুলোই দৃশ্যমান। এর আরও একটি লক্ষয়ণীয় বৈশিষ্ট্য হলে সব গম্বুজ অর্ধবৃত্তাকার নয়; বরং মাঝখানে সারির গম্বুজ তিনটি কুঁড়েঘর (চৌচালা) আকৃতির।

মসিজদটিতে মহিলাদের নামাজের পৃথক একটি সুসজ্জিত কক্ষ আছে; অনেকেই মনে করেন স্থানীয় সুলতান অথবা কর্মকর্তাদের জন্য এই কামরাটি তৈরী করা হয়েছিল যাতে তারা নিরাপদে নামাজ আদায় করতে পারেন। মসজিদের সামনে একটি খিলানকরা চমৎকার প্রবেশদ্বার আছে। মসজিদের প্রবেশদ্বারের সামনেই একটি সমাধি ক্ষেত্র রয়েছে; যার মধ্যে দুটি সমাধি মধ্যে বিশেষভাবে লক্ষ্যণীয়। ধারণা করা হয় এই দুটি ওয়ালী মোহাম্মদ এবং তার স্ত্রীর। আসুন নীচের ছবিগুলোর সাথে সময় পরিভ্রমণ করে আসা যাক।

১। টাইটেল: View from the south-east of the Chota Sona Masjid or Small Golden Mosque, Gaur আলোকচিত্রী: Joseph David Beglar আলবাম: This is one of a series of photographs taken by Joseph Beglar for the Archaeological Survey of India. সময়কাল/Date: ১৮৭০ টাইটেল: Prayer niche in the interior of the Chota Sona Masjid or Small Golden Mosque, Gaur আলোকচিত্রী: Joseph David Beglar আলবাম: This is one of a series of photographs taken by Joseph Beglar for the Archaeological Survey of India সময়কাল: আনুমানিক ১৮৭০ অলংকৃত কালো ব্যাসল্ট পাথর ঘেরা মিহরাব। অলংকরণের বিষয়বস্তু হল খোদাই করা লিপি, বিভিন্ন ধরণের নকশা এবং লতাপাতা। টাইটেল: Gaur. Small Golden Mosque. East View আলোকচিত্রী: John Henry Ravenshaw আলবাম: one of 45 prints in the album 'Gaur: Its Ruins and Inscriptions'. সময়কাল: আনুমানিক ১৮৬০ টাইটেল: Gaur. Small Golden Mosque আলোকচিত্রী: John Henry Ravenshaw আলবাম: one of 45 prints in the album 'Gaur: Its Ruins and Inscriptions'. সময়কাল: আনুমানিক ১৮৬০ টাইটেল: Details of front arches of the Chota Sona Masjid or Small Golden Mosque, Gaur আলোকচিত্রী: Joseph Beglar আলবাম: This is one of a series of photographs taken by Joseph Beglar for the Archaeological Survey of India in the 1870s. সময়কাল: আনুমানিক ১৮৭০ মসজিদের সামনের দিকের কিছু অংশের ছবি। টাইটেল: Chuta Suna [Chota Sona] Masjid শিল্পী: Henry Gordon Creighton মাধ্যম: Aquatint from a painting সময়কাল: ১৮১৭ মসজিদের গায়ে পাথরের উপর খোদাই করা সূক্ষ্ণ কারুকাজ খুবই স্পষ্টভাবে ফুটে আছে।

ধারণা করা হয় রাজমহল পাহাড় থেকে নিখুঁত এই কালো ব্যাসল্ট পাথরগুলো আনা হয়েছিল। মসজিদের যে কারণে সোনা মসজিদ নামকরণ (সোনালী রঙের গম্বুজগুলো), তা এই ছবিতে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। টাইটেল: 'The small golden mosque at Gour'. শিল্পী: James Moffat after Henry Gordon Creighton মাধ্যম: Aquatint with etching আলবাম: 'The small Golden Mosque at Gaur.' From 'Views at Gaur', six aquatints by James Moffat after Henry Creighton, published by Moffat in Calcutta 1808 সময়কাল: ১৮০৮ টাইটেল: 'The small Golden Mosque at Gaur.' শিল্পী: James Moffat after Henry Gordon Creighton মাধ্যম: Colored aquatint with etching আলবাম: 'The small Golden Mosque at Gaur.' From 'Views at Gaur', six aquatints by James Moffat after Henry Creighton, published by Moffat in Calcutta 1808 সময়কাল: ১৮০৮ ছোট সোনা মসজিদ এখন: সোনা মসজিদ এবং সামনের প্রবেশদ্বার: মসজিদের সামনের দিকের মাঝের প্রবেশদ্বার: মসজিদের সামনে খিলানকরা মূল প্রবেশদ্বার: কালো ব্যাসল্ট পাথরের উপর সূক্ষ্ণ কারুকাজ: মসজিদের সামনের সমাধিক্ষেত্র: আমি ২০০৯ সালের দিকে যখন দেখেছি, তখন পশ্চিম দিকের দেয়ালের অর্ধাংশ প্রায় ধ্বসে পড়েছিল। প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর গৌরে চমৎকার কিছু কাজ করেছে পুরাকীর্তি সংরক্ষণে। ধুনিচক মসজিদ পুরোপুরি পুনঃনির্মাণ করেছে (তবে ডান দিকে মূল যে দেয়ালটুকু অবশিষ্ট ছিল, তা সম্ভবত রাখেনি বা সংরক্ষণের আগেই ধ্বংস হয়ে গেছে)।

দরসবাড়ি মাদ্রাসার ভিত্তি পুনঃনির্মাণ/ সংরক্ষণ করেছে। তবে দরসবাড়ি মসজিদ যে ভাবে আছে, সেভাবেই রাখলে সেটা হবে খুবই চমৎকার। এছাড়া তোহাখানা এবং শাহ নিয়ামতুল্লাহ কমপ্লেক্সের সংরক্ষণ প্রসংসার দাবী রাখে। আমরা আশা করব এই ঐতিহাসিক মসজিদটিও যথাযথভাবে সংরক্ষিত হবে। ছবি এবং তথ্যসূত্র: ব্রিটিশ লাইব্রেরী http://www.europeana.eu ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.