আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বর্বরতা নাকি অজ্ঞতা!

খুব ভাল বর্বরতা নাকি অজ্ঞতা! হেমন্তের এক সকালে বারান্দায় বসে আছি। হেমান্তের প্রকৃতির সেই সকালে এক সুবাসিত বাতাস মন-প্রানটা ভরে দিল। মনটা খুব হালকা মনে হল। মন বলল প্রতিদিন যেন সকালের সেই মনোরম পরিবেশের সুশোভিত বাতাস প্রাণ ভরে গ্রহণ করি। আমি সায় দিলাম যা হোক এরপর চোখ রাখলাম পত্রিকায়।

প্রথম আলো পত্রিকার এক পৃষ্টায় শিরোনাম দেখে আঁতকে উঠলাম সেই হালকা মনটা আবার বিষাদে ভরে গেল। মনে হল ভোরের সেই সুবাসিত বাতাস হঠাৎ বন্ধ হয়ে গেল। নিজের মনই প্রশ্ন ছুড়ে দিল। কোন কুসংস্কারাচ্ছন্ন সমাজে আমরা বসবাস করি? মনকে কোন সদুত্তর দিতে পারিনি কারন, বাস্তবটা কে অস্বীকার করতে পারিনি, প্রতিনিয়তই সেই সব ঘটনা ঘটে চলছে। যা আমাদের নিত্যদিনের বাস্তবতায় পরিনত হয়েছে।

একবার পড়ে দেখুন আমরা আসলে কত কুসংস্কারাচ্ছন্ন সমাজে বাস করি এবং জাতি হিসেবে মন মানসিকতার দিক থেকে কত পিছিয়ে আছি। “সিরাজগঞ্জ জেলার কাজীপুর উপজেলায় স্বামীর বিরুদ্ধে স্ত্রীকে মারধর ও শারিরীক নির্যাতনের অভিযোগ ও বিড়ির আগুনে ছেকা দেওয়ার প্রমাণ। ” এটাই হল প্রথম আলো পত্রিকার শিরোনাম। এই দম্পতির বিবাহ হয়েছে গত পাঁচ বছর আগে। বিয়ের পর প্রথম সন্তান দুনিয়াতে আসে।

সবাই খুশি, কারন নবজাতকের আগমন সবার মাঝে আনন্দের বন্যা বয়ে দিয়ে ছিল। স্বামীর প্রত্যাশা ছিল ছেলে সন্তানের, কিন্তু নবজাতক মেয়ে রূপে ভূমিষ্ট হলেন। তারপর ও সবাই খুশি। সবার প্রত্যাশা পরের সন্তানটি যেন ছেলে হয়। মা-বাবার ও প্রার্থনা পরের সন্তানটি ছেলে হওয়ার জন্য।

নির্দিষ্ট দিনে সবাই অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে। কিন্তু বিধি বাম। আবারও এসেছে মেয়ে নামক তাদের অপ্রত্যাশিত নবজাতক সবাই অসন্তুষ্ট। স্বামী ক্রোধে অগ্নিশর্মা। সবাই গালি গালাজ করছে।

পোড়া-কপালি, বাদর-মুখী এবারও ছেলে সন্তান জন্ম দিতে পারে নি। সামাজিক ধর্মীয়ও পরিবার পরিকল্পনার অভাবে একটার পর একটা সন্তান নিতেই আছে। মহান আল্লাহর কাছে মায়ের আকুল আবেদন আল্লাহ যেন তার গর্ভের সন্তানটিকে ছেলে হিসেবে দুনিয়াতে পাঠায়। কারন মা জানে যদি এইবার নবজাতক সন্তানটি মেয়েরূপে ভূমিষ্ট হয়, তাহলে তাকে হয়ত পৃথিবীতে থাকার অধিকারই হারাতে হবে। মা যা বুঝার তাই বুঝে গেছেন।

কারণ ততদিনে শারিরিক ও মানসিক নির্যাতন চরম আকার ধারন করেছে। স্বামী দ্বিতীয় বিয়ে করেছে। আর প্রথম স্ত্রীকে সহ্য করতে পারছিল না। তার কারন সেই মা ছেলে সন্তান জন্ম দিতে অক্ষম। দিন যায় রাত আসে কিন্তু নির্যাতনের মাত্রা কমে নি।

বিভিন্ন অজুহাতে তাকে নির্যাতন করত। কিন্তু এখনো তার গর্ভে আরেকটি সন্তান আছে। কথায় আছে “কপালের লিখন যায়না খন্ডন। ” যার কপালে দুঃখ আছে তাকে কেউই সুখী করতে পারেনা। বিধি এবারও তার সাথে ছলনা করল।

নবজাতক জন্মগ্রহন করেছে ঠিকই কিন্তু মেয়েরূপী দুর্ভাগী হয়ে। এই মেয়ে জন্ম নেওয়ার পর থেকে মায়ের উপর আমাদের পুরুষরূপী নরপিশাচ যে অমানবিক নির্যাতন চালাত তা পড়তে গেলে বিবেক স্তদ্ধ হয়ে যায়। স্বামী তাকে খুঁটির সাথে বেঁধে পশুর মত মারধর করত। মাঝে মাঝে মেরে নদীতে ভাসিয়ে দেওয়ার কথাও বলত। এখানেই শেষ নই।

সেই নরপিশাচ বিড়ির আগুনে তার শরীরের বিভিন্ন জায়গায় ছেকা দিত। বিড়ির আগুনে তার বিভিন্ন জায়গায় কাল দাগ পড়ে ঘা হয়ে গেছে। একবার চিন্তা করে দেখুন যার উপর এত নির্যাতন এত শারিরীক অত্যাচার তার দোষটা কি? নিশ্চয় আপনারা বুঝতে পারছেন। তার কসুরটা কি। কসুরটা হলো সে মহিলা, বউ, মা ছেলে সন্তান জন্ম দিতে পারেনি।

কত বড় নালায়েক, নরপিশাচ, নির্বোধ যে যে ছেলে সন্তানের জন্য দোষটা চাপাচ্ছে মায়ের উপর একবারও সুবুদ্ধির উদয় হয় নাই মায়ের কোন ক্ষমতা নাই ছেলে সন্তান জন্ম দেওয়ার, এই দোষটা মায়ের উপর বর্তানো যায় না। সন্তান ছেলে হবে নাকি মেয়ে হবে তা নির্ভর করে বাবা তথা পিতার উপর। কারন বিজ্ঞানসম্মত ভাবে প্রমানিত, মানুষের ২৩ জোড়া ক্রোমোসোম আছে। ২২ জোড়া সাধারন ক্রোমোসোম। আর একজোড়া হচ্ছে সেক্স ক্রোমোসোম, একজোড়া সেক্স ক্রোমোসোমের মধ্যে ছেলেদের থাকে ঢণ ক্রোমোসোম আর মেয়েদের থাকে ঢঢ ক্রোমোসোম ।

যখনই ছেলেদের ঢ ক্রোমোসোম মিলন ঘটে তখন সন্তান হয় মেয়ে আর ছেলেদের ণ ক্রোমোসোমের সাথে মেয়েদের যে কোন ক্রোমোসোমের মিলন ঘটলে সন্তান হয় ছেলে। ছেলেদের শুক্রানু এবং মেয়েদের ডিম্বানুর মিলনের ফলে প্রজনন তথা বংশ বিস্তার ঘটে। এই তত্ত্বটা আপনারা যারা পাঠক তারা অনেকেই জানেন। কিন্তু যে নরপিশাচ ছেলে সন্তান না হওয়ার জন্য মায়ের উপর দোষ বর্তায়, নানা নির্যাতনেও অত্যাচারের জর্জরিত করে তাকে কি বলে সম্বোধন করব ভেবে পাচ্ছি না। সেইতো জানো না আসলে আপনারা যারা পাঠক তারা একবার চিন্তা করে দেখুন ............ দোষটা কার? দোষটা ঐ পিতার না আবার মায়েরও না।

তাহলে কার? দোষটা হচ্ছে আপনার, আমার, আমাদের অভিভাবকদের, আমাদের পারিবারিক ব্যবস্থার, আমাদের সমাজের আমাদের জাতির, আমাদের অলসতা ও অসামর্থ্যরে কারনে তারা আজ মধ্যযুগীয় কুসংস্কারাচ্ছন্ন সমাজের ন্যায় জীবন যাপন করছে। আজ আমরাই ব্যর্থ কারন তাদেরকে আমরা সচেতন করতে পারছি না। আমরা আজ স্বার্থবাদী তথা স্বার্থপর। কারণ, আমরা নিজেদের প্রয়োজনটাকে সবসময় বড় করে দেখি। কখনো চিন্তা করে দেখি নাই।

আমাদের শিক্ষার আলোর দ্বারা যদি আমরা নিজেরা আলোকিত হতে না পারি, পরিবার, সমাজ গোষ্ঠী, জাতি, দেশ তথা গোটা বিশ্বকে আলোকিত করতে না পারি, তাহলে সেই শিক্ষার উদ্দেশ্যটাই ব্যর্থ। আমরা কি পারিনা, সমাজ থেকে কুসংস্কার দূর করতে? আমরা কি পারিনা যারা অজ্ঞতার কারনে বিভিন্ন অপরাধ করে তাদেরকে জ্ঞানের আলোয় আলোকিত করতে? পারিনা যারা শিক্ষার পথে ঝরে পড়ে তাদের তুলে আনতে? পারিনা যারা স্বপ্ন দেখতে জানেনা তথা ভয় পায় তাদেরকে স্বাপ্ন দেখাতে? পারিনা আমরা নিজে, জাতি, দেশ তথা গোটা বিশ্বেকে শিক্ষার আলোয় আলোকিত করতে? অবশ্যই পারি, এজন্য আমাদের দুটি জিনিসই প্রয়োজন এক প্রবল ইচ্ছাশক্তি দুই সম্মিলিত প্রচেষ্টা। ইনশাআল্লাহ এই দুটি জিনিসকে সামনে রেখে এগিয়ে গেলে আমাদের দ্বারাই সম্ভব এবং আমরা সেভাবেই চেষ্টা করছি। সমাজের উদ্দেশ্য যাতে সফল হয় সেজন্য পাঠক সমাজের কাছে দোয়া প্রার্থনা করে আজ এখানেই ইতি টানলাম। ছোট ভাইেয়র লেখা ........।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।