পুরান ঢাকার দর্জি দোকানি বিশ্বজিৎ দাশ হত্যা মামলার রায় ঘোষণা হতে পারে অক্টোবর মাসের মধ্যেই। বহুল আলোচিত এ হত্যা মামলার বিচার কার্যক্রম প্রায় শেষ পর্যায়ে। তাই অক্টোবরের শেষের দিকে রায় ঘোষণা হতে পারে এমন আশা প্রকাশ করেছেন রাষ্ট্রপক্ষের মামলা পরিচালনাকারী বিশেষ কৌঁসুলি এস এম রফিকুল ইসলাম। তিনি বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, এ মামলার গুরুত্বপূর্ণ সব সাক্ষী আদালতে সাক্ষ্য দিয়েছে। শীঘ্রই সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ হবে।
তারপর আসামিদের আত্মপক্ষ সমর্থন, সর্বশেষ ধাপে দুই পক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের পরই রায় ঘোষণা করবেন আদালত।
তবে রায় ঘোষণার আগে এ মামলার পলাতক আসামি ছাত্রলীগ নেতাদের গ্রেফতারের দাবি জানিয়ে রফিকুল বলেন, মামলার কার্যক্রম শেষ হতে চলছে। অথচ বিশ্বজিত্কে হত্যার ১০ মাস পার হয়ে গেলেও ১৩ আসামি এখনো পলাতক। এই আসামিদের ঠিকানা খুঁজে পাচ্ছে না পুলিশ। যদিও আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গুরুতর।
সে ক্ষেত্রে সুবিচার কঠিন হতে পারে। কারণ আসামিরা শক্তিশালী বিধায় মুক্ত থেকে বিচারকাজ প্রভাবিত করার সুযোগ সৃষ্টি করতে পারে। বলা হতে পারে, বিচার সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত কেউ অপরাধী নয়। এ কথা ঠিক। কিন্তু সম্ভাব্য অপরাধীকে আবার অপরাধ সংঘটিত করতে না দেওয়াও পুলিশের দায়িত্ব।
তাই আসামিদের ঠিকানা খুঁজে বের করে দ্রুত গ্রেফতার করা উচিত।
এ ব্যাপারে ঢাকা মহানগর পুলিশের অপরাধ তথ্য ও প্রসিকিউশন বিভাগের অতিরিক্ত উপকমিশনার এবং ঢাকার আদালতের পুলিশপ্রধান আনিসুর রহমান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, বিশ্বজিৎ হত্যা মামলার পলাতক ১৩ আসামিকে গ্রেফতারের জন্য আদালতের আদেশ মোতাবেক গ্রেফতারি পরোয়ানা আসামিদের ঠিকানায় পাঠানো হয়েছে। পাশাপাশি আমরা নিয়মিত সংশি্লষ্ট থানায় খোঁজ খবর চালিয়ে যাচ্ছি। তবে এ আসামিরা এখন ভাসমান। বহু চষ্টো করেও পলাতক আসামিদের সঠিক অবস্থান সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছে না।
এ ছাড়া আসামিরা বারবার তাদের ঠিকানা পরিবর্তন করায় খুঁজে পাওয়া কঠিন হয়ে পড়ছে। এই আসামিদের অবস্থান সম্পর্কে প্রতিবেশীরাও অনেক ক্ষেত্রে তথ্য দিতে ভয় পান। এ ছাড়া নগরীর ভৌগোলিক প্রতিবেশ পরিবর্তনে আসামিদের বাড়িঘর, অবস্থান নির্ণয় করতে পুলিশ অনেক ক্ষেত্রেই বেকায়দায় পড়ে। কারণ নগরীতে আগে যেখানে বসি্ত, নর্দমা, ঝিল ছিল, তা পরিবর্তিত হয়ে আবাসিক এলাকা, বহুতল ভবন, এমনকি পাঁচতারা হোটেল হয়েছে। তাই আসামিদের দ্রুত গ্রেফতার করা যাচ্ছে না।
তবে পলাতক আসমিদের গ্রেফতার করতে সব সময় আন্তরিকভাবে কাজ চালিয়ে যাচ্ছে পুলিশ বিভাগ।
এত দিন পরও হত্যাকারীদের সবাইকে গ্রেফতার করতে না পারায় ক্ষোভ ও হতাশা ব্যক্ত করে নিহত বিশ্বজিতের বৃদ্ধ বাবা অনন্ত চন্দ্র দাশ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, `ন্যায়বিচার তো আর পাব না। তবে আইনের বিচারটুকু যদি পাই এ জন্যই আদালতে গিয়ে আমি আসামিদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিয়েছি। আমার বিশ্বজিত্ আর কোনো দিন ফিরে আসবে না তা জানি। কিন্তু আর যেন কোনো বাবা-মায়ের সন্তানের পরিণতি বিশ্বজিতের মতো না হয়।
এ ছাড়া এ মামলার পলাতক ১৩ আসামি এখনো গ্রেফতার হয়নি। পলাতক আসামিদের অবস্থান সম্পর্কে সরকার এখনো নিশ্চিত হতে পারেনি। তাই তাদের ভয়ে আমার পরিবার ও আমি নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। আতঙ্কের মধ্যে কাটাতে হচ্ছে আমাদের প্রতিটি দিন। আমার বড় ছেলে উত্তম দাশ ঢাকায় থাকে।
তার নিরাপত্তা নিয়েই আমি এখন বেশি চিনি্তত। '
মামলার নথি সূত্রে জানা গেছে, বিশ্বজিৎ হত্যা মামলার পলাতক আসামিদের বিচারের মুখোমুখি করাতে আদালত থেকে পুলিশ বিভাগকে বারবার তাগিদ দেওয়া হয়েছে। পরে আসামিদের আদালতে হাজির হওয়ার জন্য বহুল প্রচারিত জাতীয় বাংলা দৈনিক পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। এর পরও পলাতক আসামিরা আদালতে হাজির হননি। তাই নিয়ম অনুযায়ী আইনগত প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে আসামিদের পলাতক দেখিয়ে অভিযোগ গঠন করেছেন আদালত।
ফলে এ মামলায় আসামিদের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক বিচার শুরু হয়। এরপর পলাতক এ আসামিদের প্রতিটি ধার্য তারিখে গরহাজির দেখিয়ে মামলার বিচারকাজ চলছে। মামলার পলাতক ১৩ আসামি হলেন রাজন তালুকদার, ইউনুস আলী, ওবায়দুর কাদের তাহসিন, আজিজুর রহমান, আলাউদ্দিন, ইমরান হোসেন, মীর নূরে আলম লিমন, আল-আমিন, রফিকুল ইসলাম, কামরুল হাসান, তারিক বিন জোহর তমাল, মনিরুল হক পাভেল ও মোশাররফ হোসেন। এ ছাড়া কারাগারে মামলার আট আসামি। তারা হলেন রফিকুল ইসলাম শাকিল ওরফে চাপাতি শাকিল, মাহফুজুর রহমান নাহিদ, এমদাদুল হক এমদাদ, জি এম রাশেদুজ্জামান শাওন, এ এইচ এম কিবরিয়া, সাইফুল ইসলাম, কাইয়ুম মিঞা ও গোলাম মোস্তফা।
এদের মধ্যে হত্যায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে ২৩ ডিসেম্বর আসামি শাকিল, শাওন, এমদাদ ও নাহিদ ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন আদালতে।
গত বছরের ৯ ডিসেম্বর বিএনপি-সমর্থিত ১৮ দলীয় জোটের ডাকা অবরোধের সময় পথচারী বিশ্বজিৎ দাশকে কুপিয়ে ও পিটিয়ে জখম করে আসামিরা। পরে হাসপাতালে নেওয়ার পথে বিশ্বজিৎ মারা যান। এ ঘটনায় এ হত্যা মামলা হয়।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।