আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

চোখে চোখ রাখে না কেউ!

‘চোখ মনের আয়না’ অথচ এখন আর চোখে চোখ রেখে মনের কথা বলে না কেউ। সবাই এখন কম্পিউটার, ট্যাবলেট, মোবাইল ফোনে চোখ রাখতেই ব্যস্ত। মার্কিন প্রযুক্তি গবেষকেরা জানিয়েছেন, আমাদের জীবনে প্রযুক্তির প্রভাবে হারিয়ে যেতে বসেছে প্রিয়জনের সান্নিধ্য। হাফিংটন পোস্ট সম্প্রতি এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছেন।

একজন মা প্যাট ক্রিস্টেন, এবং যুক্তরাষ্ট্রে একটি প্রতিষ্ঠানের নির্বাহী পরিচালক হিসেবে কাজ করছেন।

দীর্ঘদিন ধরেই তিনি নানা কাজে ব্যস্ত ছিলেন। হঠাত্ একদিন তিনি বুঝতে পারলেন যে, প্রযুক্তি তাঁকে পরিবার ও সন্তানদের কাছ থেকে অনেক দূরে নিয়ে গেছে। অনেকদিন ধরে তিনি সন্তানদের চোখের দিকে তাকিয়েই দেখেননি!

প্যাট ক্রিস্টেন এ প্রসঙ্গে জানিয়েছেন, স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে থাকতে গিয়ে মানুষের চোখের দিকে তাকানোর বিষয়টি ভুলেই গিয়েছিলাম। আমার কাছে বিষয়টি অনেক কষ্টের মনে হয়েছিল।

ক্রিস্টেনের মতোই অনেকের ক্ষেত্রেই বিষয়টি ঘটছে।

স্ক্রিনের দিকে তাকাতে গিয়ে অনেকেই মানুষের চোখের দিকে তাকাতেই ভুলে যাচ্ছেন। অনেকেই এত দীর্ঘক্ষণ ধরে স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে থাকেন যে, পরে কারও চোখের দিকে তাকিয়ে কথা বলার বিষয়টি তাঁর মনে থাকে না। আমরা যাকে সবচেয়ে কাছের মানুষ বলে করি, যাঁর সবচেয়ে বেশি যত্ন নিই অনেক ক্ষেত্রে তাঁর চোখের দিকে তাকাতেও ভুলে যায়।

দিনের শুরু থেকে অফিসে কাজ করার সময় কম্পিউটরের মনিটর, মোবাইল ফোন বা ট্যাবলেটের মনিটর, টেলিভিশনসহ স্ক্রিনের দিকে তাকাতেই সময় পেরিয়ে যায়। গবেষণায় দেখা গেছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে সময় কাটানোর হার অতীতের তুলনায় অনেক বেড়ে গেছে।

মার্কিনীরা দিনের মধ্যে গড়ে পাঁচ ঘণ্টারও বেশি সময় কম্পিউটার ও মোবাইল ডিভাইসের স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে থাকেন আর গড়ে সাড়ে চার ঘণ্টা করে টেলিভিশন দেখেন। গড়ে প্রতিদিন মোবাইল ফোনের স্ক্রিনের দিকে ১৫০ বার করে তাকান মার্কিন নাগরিকরা। যুক্তরাজ্যের নাগরিকদের নিয়ে সাম্প্রতিক এক গবেষণার দেখা গেছে, এখানে সঙ্গীর চেয়ে মোবাইল ডিভাইসকেই বেশি সময় দেওয়া হচ্ছে। যুক্তরাজ্যের তরুণরা সঙ্গীর সঙ্গে যেখানে দিনের মধ্যে ৯৭ মিনিট কাটান সেখানে মোবাইল ফোনের পেছনে তারা ১১৯ মিনিট সময় দেন।

ওয়ালস্ট্রিট জার্নাল প্রকাশিত ‘জাস্ট লুক মি ইন দ্য আই অলরেডি’ নামের একটি প্রবন্ধে বলা হয়েছে, মানুষের চোখে চোখ রাখার অভ্যাসটি আমাদের সম্পর্ক গড়ে ওঠার জন্য গুরুত্বপূর্ণ।

বর্তমানে চোখে চোখ রাখার অভ্যাসটি আমরা স্ক্রিনে চোখ রাখতে গিয়ে হারিয়ে ফেলছি। টোয়ান্টিফাইড ইমপ্রেশনস নামের যুক্তরাষ্ট্রের একটি প্রতিষ্ঠানের গবেষকেরা বলেন, বয়ষ্কদের মধ্যে সাধারণ আলাপচারিতার সময় ৩০ থেকে ৬০ শতাংশ ক্ষেত্রে  চোখে চোখ রেখে কথা চলে। কিন্তু আবেগঘন কথা-বার্তার ক্ষেত্রে চোখে চোখ রাখার বিষয়টি ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ হতে হয়। অর্থাত্ চোখে চোখ না পড়লে সম্পর্ক গড়ে উঠতে পারেনা।

প্রথম দেখায় প্রেম, ভালোলাগা।

কী দেখে? উত্তর হচ্ছে-চোখ। পুরুষরা এক ঝলকে নারীর চোখে খুঁজে ফেরে সব সৌন্দর্য। সম্প্রতি যুক্তরাজ্যের পণ্য নির্মাতা মিউরিন আই ড্রপের করা এক জরিপে এ তথ্য ওঠে এসেছে।

গবেষকেরা বলছেন, মাল্টিটাস্কিং, দূরে বসে কাজ করা, মোবাইল ফোনের মাধ্যমে যোগাযোগ প্রভৃতি বিষয়গুলো যুক্ত হওয়ায় আমরা যোগাযোগের বিষয়টি সহজ করে তুলেছি এবং সম্পর্ক স্বাভাবিক করে তুলেছি। তবে, মানুষের সম্পর্কের ভিত শক্ত করতে চোখে চোখে থাকা অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ।

টোয়ান্টিফাইড ইমপ্রেশনসের প্রধান নির্বাহী নোয়া জানডানের পরামর্শ হচ্ছে, মানুষের জীবনে আবেগ গুরুত্বপূর্ণ। চোখে চোখ রাখার মধ্য দিয়ে আবেগ জন্ম নেয়। আবেগের বার্তাবাহী চোখের তৃষ্ণা মেটাতে কিছুটা বাড়তি সময় প্রিয়জনের মুখোমুখি হওয়া এবং কথাবার্তা বলা মানুষের জন্য নানা সুফল বয়ে আনতে পারে।

মিয়ামি বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকেরা চোখে চোখ রাখার গুরুত্ব সম্পর্কে বলেছেন, মানুষ যখন কারও দিকে তাকায় তখন ৪৩ শতাংশ মনোযোগ জুড়ে থাকে চোখ। মানুষের মধ্যে সম্পর্ক তৈরির ক্ষেত্রে সবচেয়ে মোক্ষম ভূমিকা চোখেরই।

এ জেনারেল থিওরি অব লাভের লেখক মনোবিদ থমাস লুই, ফারি আমিনি ও রিচার্ড লেননের মতে, একটি নির্দিষ্ট দুরুত্ব থেকে হলেও চোখে চোখ পড়াটা সম্পর্ক গড়ে ওঠার জন্য কার্যকর।   যখন কেউ কারও নজরে পড়ে যায় তখন দুটি মানুষের স্নায়ুতন্ত্র কাজ শুরু করে দেয় এবং দুজনের চোখের ভাষা বোঝা যায় এবং আরও ঘনিষ্ঠতা বাড়ে। আর এ কারণেই চোখে চোখ পড়ার বিষয়টি কমে যাওয়াটা সংশয়ের। এতে মানুষের মধ্যে সম্পর্কের ব্যবধান বেড়ে যাচ্ছে। মা-বাবার কাছ থেকে সন্তানরা দূরে সরে যাচ্ছে।

বর্তমানে অনেক অভিভাবক অতিরিক্ত স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে থাকার বিষয়টি নিয়ে সচেতন হয়েছেন।

গ্র্যামি জয়ী মার্কিন কমেডিয়ান লুইস সি.কে এ প্রসঙ্গে বলেন, আমি আমার সন্তানদের স্মার্টফোন ব্যবহার করতে নিষেধ করি। আমার কাছে মনে হয়, শিশুগের জন্য এগুলো বিষাক্ত। কারণ, তারা যখন কথা বলে তখন মানুষের দিকে তাকায় না এতে করে মানুষের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে ওঠেনা।

ব্লগার র্যাচেল মার্টিন তাঁর এক ব্লগ পোস্টে লিখেছেন, চোখে চোখ রেখে কথা বললে কথাটির গুরুত্ব বোঝা সহজ হয়।

আমি আমার শিশুদের বলি, তোমাদের মা যখন হেসে হেসে তোমাদের চোখের দিকে তাকিয়ে কথা বলে সে বিষয়টি স্মরণ রাখো। আর আমিও ল্যাপটপ, ফোন, দরকারি কাজ বন্ধ রেখে সন্তানদের সময় দিচ্ছি।

সোর্স: http://www.prothom-alo.com     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.