লোভের সংস্কৃতি আমাদের গ্রাস করে ফেলেছে। ফ্ল্যাট, পদ, ক্ষমতার লোভে শিক্ষক, প্রকৌশলী, ডাক্তার সবাই অন্ধ রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েছেন। শুধু রাজনীতিই নয়, দলের লেজুড়বৃত্তি করছেন। কখনো বিবেক সম্পূর্ণ বিসর্জন দিয়ে ক্যাডারের ভূমিকায়। এতে সমাজে এই মহৎ পেশার সম্মানজনক অবস্থান আর থাকছে না।
এখান থেকে বের হওয়ার পথ দরকার। না হলে সমাজ অবক্ষয়ের শেষ সীমায় পৌঁছে যাবে। শনিবার এটিএন নিউজের টকশো 'নিউজ আওয়ার এক্সট্রা '-এ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম এ কথা বলেন। প্রভাষ আমিনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান। মনজুরুল ইসলাম বলেন, আমি যখন শ্রেণীতে গিয়ে প্রকাশ্যে একটা দলীয় অবস্থান নেই তখন ভিন্ন মতের শিক্ষার্থীরা আমার কাছ থেকে সুবিচার পাবে না বলেই ধরে নেয়।
শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে রাজনৈতিক বিবেচনায় সবচেয়ে ভালো প্রার্থীকে বাদ দিয়ে অন্য কাউকে নেওয়া হচ্ছে। তখন শুধু ওই দুজনের প্রতিই অবিচার করা হচ্ছে না, কয়েকটা প্রজন্মকে ওই ভালো শিক্ষক থেকে বঞ্চিত করছি। পুরো দেশ দুটি ভাগে বিভক্ত হয়ে গেছে। এখান থেকে বের হতে হবে। প্রত্যেকের রাজনীতি করার অধিকার আছে।
কিন্তু দলের কাছে বিবেক বন্ধক রেখে দলীয় ক্যাডারের ভূমিকায় নয়। যাদের থেকে সমাজ শিক্ষা নেয় তাদের নৈতিক অবক্ষয় হলে তো সমাজই থাকে না। যে পিতা ঘুষ খান নিজের সন্তানের কাছে তার নৈতিক অবস্থান থাকে না। রাজনীতির বিনিময়ে শিক্ষকদের ভালোবাসা বা পদ হাসিল করাও তো ঘুষ। তিনি বলেন, অপরাজনীতি থেকে দেশকে মুক্ত করতে রাষ্ট্র ও দলকে আলাদা করতে হবে।
দলগুলোকেও নতুন করে ভাবতে হবে, ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে আমরা কোন বাংলাদেশ উপহার দিচ্ছি। প্রধানমন্ত্রীর অফিসে দলীয় অনুষ্ঠান হয়। তাহলে দলের সঙ্গে রাষ্ট্রের পার্থক্য থাকে কীভাবে? প্রধানমন্ত্রী দলের প্রধান হলে একদিকে তার দলের প্রতি আনুগত্য, অন্যদিকে রাষ্ট্রের প্রতি দায়িত্ব- এখানে দ্বান্দ্বিক একটা সম্পর্ক থাকবেই। সবচেয়ে ভালো হতো যদি প্রধানমন্ত্রী দায়িত্ব নেওয়ার পর দলের সব দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি নিয়ে নিরপেক্ষভাবে দেশ চালাতে পারতেন। রাষ্ট্রের কাজ প্রত্যেকেই করেন।
কিন্তু রাষ্ট্রের কাজ করতে গিয়ে কাউকে ওএসডি হতে হয় না। দলের কাজ করতে গিয়ে হয়। এই সংস্কৃতি বদলাতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ে যেসব ক্ষুদ্র দল শিক্ষার পক্ষে কথা বলে তাদের খুব সহজেই বিশ্বাস করা যায়। তারা সামান্য কিছু পুঁজি নিয়ে লিফলেট বের করে কয়লা খনির শ্রমিকদের বাঁচানোর জন্য, সাভার ট্র্যাজেডির বিরুদ্ধে।
যে ইস্যুগুলো আমাদের মনকে নাড়ায় সেগুলো নিয়ে তারা আন্দোলন করেন। বড় দলগুলোর ছাত্র সংগঠন ব্যবহৃত হয় দলের পদাতিক বাহিনী হিসেবে। তাহলে দেশে বড় দলগুলোর ছাত্র সংগঠনের দরকারটা কি?
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।