নিজেকে হয় নাই চেনা
রমনা পার্কের নির্জন স্থানে ঝোপের আড়ালে বসে থাকা কপোত কপোতির উভয়েই জানে যে তারা ধর্মীয় ও সামাজিক উভয় দৃষ্টিকোন থেকেই পাপাচারে লিপ্ত। যার কারনে তারা গোপনে মিলিত হয় যেন বাবা-মা ও পরিচিত জন টের না পায়। যদি ওটা ভালো কাজ হতো তাহলেতো এত্ত গোপনীয়তা রক্ষা করার দরকারই হতো না। শুধু তাই নয়, এই পাপাচারের গভীরতা সম্পর্কেও এদের বিস্তর জানাশোনা আছে। কিন্তু তার পরও কেন ওরা এভাবে মিলিত হয়?
এদিকে প্রতিটি মুসলমান মাত্রই জানে উম্মতের হারিয়ে ফেলা জৌলুস ফিরেপেতে দরকার এক দল সাচ্চা ইমানের অধীকারি যুবকের, যাদের জ্ঞান, চরিত্র, মাধুর্য, মেধা ও যোগ্যতা সবই থাকবে ইর্ষনীয় পর্যায়ের।
জোয়ান বুড়ো সবাই এমনকি যে যুবকটি ইতিমধ্যেই তার চরিত্র হারিয়েছে সেও জানে বিষয়টি। যার কারনেই তারা ইসলামের নামে আন্দোলনরত কোন যুবক কে এমন চরিত্রহারার ভুমিকায় দেখতে চায় না । এরা এত কিছু বুঝেও কেন নিজের চরিত্রকে টিকিয়ে রাখতে ব্যার্থ হয়?
তিল তিল করে মানোন্নয়ন, চরিত্র গঠনের পরিক্ষিত প্রক্রিয়া সমুহ পার হয়ে নিজেকে সুন্দর আদর্শের ছায়ায় গড়েতুলে যখনি নেতৃত্বের উচ্চাসনে অধিষ্ঠিত হতে যাচ্ছে একটি যুবক, তখনি হঠাৎ করেই অবৈধ সম্পর্কের কারনে সম্পুর্ন ছিটকে পড়ার ঘটনা ঘটছে অহরহ। এত সাধনা, এত ত্যাগ ও শপথের দেয়ালের পরও যে যুবকটি ধধংশের অতলে হারিয়ে গেল তার কারন কি?
বিভিন্ন মাদ্রাসার বিগগ্ধ আলেম ওলামার কাছে শিক্ষা নিয়ে, খোদ কোরআন ও হাদীসের থেকে শিক্ষা নেয়ার পরও কত যুবক ছাত্রকে বলৎকারের অপরাধ মাথায় নিয়ে বিতাড়িত হতে হয় তার ইয়ত্তা নেই, কিন্তু কেন?
রাসুলুল্লাহ (সা) থেকে শুরু করে আজ অবধি, সকল যুগেই যুবকদের কাছ থেকে উম্মাতে মুসলিমাত যে খেদমত পেয়েছে তার তুলনা হয় না। কিন্তু এখন সেই যুবসমাজ উম্মাতের প্রতি তাদের দায়িত্বানুভুতির থেকে বহুদুর পিছিয়ে, যার নির্মম ফলাফল কাফেরদের গোলামী আর চাটুকারিতা।
যদিও যুবকদের এহেন অধপতনের কারন কি তা সবাই জানেন। তথাপিও এই অধপতনের থেকে ফিরে আসতে যত ফরমুলা আবিষ্কৃত হয়েছে তার সবই বিফলে গেছে তাতে আমার বিন্দুমাত্র সন্দেহ নাই।
যখন আপনার ক্ষেতে পার্শবর্তী ক্ষেত থেকে পানি আইল দিয়ে চুইয়ে চুইয়ে আসে তখন আইলের ফুটো কিন্তু যে পাশ থেকে পানি আসছে সে পাশ দিয়ে বন্ধ করতে হয় তা না হলে পানি যে দিক দিয়ে বেরুচ্ছে সে দিক দিয়ে যতই মাটি চাপা দেন না কেন পানি কিন্তু আসতেই থাকবে। এ পর্যন্ত আবিষ্কৃত ফরমুলা গুলো এই ভুল কাজটাই করে আসছিলো। যার কারনে যুবসমাজের অধপতন আরও দ্রুত গাতীতে চলতে শুরু করেছে।
আমাদের কে ফুটোটা বন্ধ করতে হবে ভিতর থেকে, বাইরে থেকে নয়। ধরুন একজন মানুষ ১৫ থেকে ১৬ বছর বয়স থেকে পুর্নাঙ্গ ভাবে সাবালক হয় এবং তখন থেকেই তার যৈবিক চাহিদা তথা ক্ষুধার শুরু হয়। বাস্তব জীবনে সকালে ঘুমথেকে উঠার পর যখন গোসলের জন্য সে বাথরুমে গেল, তখন সাবানের প্যাকেটে লাবন্যময়ী ও মনকাড়া সুন্দরী নারীর রহস্যময় হাসি যুক্ত আবেদনময়ী চাহনি তাকে আকৃষ্ট করে। তার পর সকালের চা হাতে খবরের কাগজে একটা দুটা নয় বিভিন্ন আঙ্গিকের অসংখ্য সুন্দরী নারির আকর্ষনীয় অঙ্গভঙ্গী নিয়ে প্রকাশিত ছবি তাকে কোন সুদুরে নিয়ে যায়? আর তা কিসের ক্ষুধাকে শতগুন বাড়িয়ে দেয়? নাস্তা সেরে কলেজে যেতে যখন সে রাস্তায় নামলো তখন শুধু বড় বড় বিল বোর্ডের আকর্ষনীয়া নারীরাই নয় বরং রাস্তার দুপাশ দিয়ে হেটে যাওয়া জিবন্ত নারিরাও হরেক রকম ক্ষুধা জাগানীয়া পোশাকে তাকে স্বাগত জানায়। এভাবে ক্লাসের মাঝে সহপাঠিনী, টিভির পর্দায় ভেষে ঊঠা শত কিসিমের আরও কত নারীর মনকাড়া উপস্থাপন, আর নাটক সিনেমায় সজতনে প্রাক্টিক্যাল প্রশিক্ষনের পর জেগে উঠা বাঁধ ভাঙ্গা ক্ষুধাকে বাগে রাখা কজনের পক্ষে সম্ভব তাকি বলতে পারেন? যদি সেটা সম্ভব হয়ও, তাহলে কতদিন ঠেকিয়ে রাখা যায় বলুন?
যেই ক্ষুধার শুরু হয় ১৫ থেকে ১৬ বছর বয়সে সেই ক্ষুধার্ত যুবক কে তার বাবা মা বিয়ের পিড়িতে বসাচ্ছেন ৩০ কিংবা তারও পরে।
মাঝখানের এই ১৫টি বছর তার নাকের ডগার সামনে দিয়ে অবিরাম আসছে যাচ্ছে লোভনীয় সব সামগ্রী যা তার জন্য দেখতেও মানা ছুঁতেও মানা খাবিতো সে অনেক পরের কথা!!! আহা এ যেন রাসুলের (স) যুগের কোন এক সাহাবী যারা শত পরিক্ষায়ও উর্তীর্ন হবার ক্ষমতা রাখে!!! অথচ পরম সত্য কথা হলো সে যুগের সাহাবীরাও এমন নাজুক পরিস্থিতির সম্মুখীন হন নি যেমনটি হচ্ছে আমাদের বর্তমান যুবসমাজের ক্ষেত্রে।
আপনি একজন ক্ষুধার্ত মানুষের সামনে দিয়ে সুস্বাধু সব খাবারের আইটেম সাজিয়ে রাখবেন, আর আশা করবেন সে সুযোগ পেলে মূটেও চেখে দেখবে না, তা কি করে হয়?
এই একটি ক্ষেত্র যেখানে এসে হারিয়ে যাচ্ছে আমাদের সম্ভাবনাময় অসংখ্য যুবক, যাদের মাঝ থেকে তৈরী হতে পারতো মুয়াজ বিন জাবাল, সা’দ বিন আবি ওয়াক্কাস, ও খালীদ বিন ওয়ালিদের মত নেতা।
কিন্তু পরিতাপের বিষয় হলো এই দিকে নজর দিচ্ছেন না কেউ। দেখুন সোজা সাপ্টা বলে দেয়াই ভালো। এক্ষেত্র থেকে পরিত্রানের এক মাত্র উপায় হলো early marriage. এট লিস্ট আঠারো বছর বয়সের পর যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ছেলে ও মেয়ে উভয়কেই বিয়ে দিয়ে দেয়ার কোন বিকল্প নেই।
এক্ষেত্রে অনেকে বলেন যার নিজের কোন আয় রোজগার নেই সে কেমনে বউ চালাবে? এই প্রশ্নের উত্তর দেবার আগে বলে রাখি যারা উম্মাতের ভালো কিছু করার স্বপন দেখেন তাদের জন্যই এই পরামর্শ। তার পর আমার উত্তর হলো, রিজিকের মালিক হলেন আল্লাহ, আপনি যদি মনে করেন একজন যুবকের সব চেয়ে বড় সম্পদ “চরিত্র” কে রক্ষার জন্য একটি ভালো কাজ করার কারনে আল্লাহ আপনাকে রিজিক থেকে বঞ্চিত করবেন তাহলে আমার আর কোন কথাই নেই।
১৮ বছরের পর আপনি যত দেরি করেই ছেলে কে বিয়ে করান না কেন পড়া লেখা শেষ করে ছেলের চাকরি পাবার আগ পর্যন্ত তো বাবা হিসেবে আপনিই তার খরচ বহন করবেন। আর মেয়ের বাবাও একই রকম ভাবে তার মেয়ের খানা খরচ বহন করতে থাকবেন যতক্ষন না তিনি তার মেয়েকে বিয়ে দিচ্ছেন। যদি আপনি ছেলের বৌচালানো নিয়ে এতই চিন্তিত থাকেন তাহলেও তো আমি কোন সমস্যা দেখি না।
যতক্ষন না ছেলে বা মেয়ে নিজে আয় করার ব্যাবস্থা না হচ্ছে ততক্ষন তাদের বিয়ে না করালে যেমন বাবা মা খরচ চালাতে তেমনি বিয়ের পরও ছেলের বাবা ছেলের খরচ মেয়ের বাবা মেয়ের খরচ চালাতে থাকুন। তার পরও অদের দ্বারা ব্যভিচারের ও চরিত্র ধধংশের পথটা বন্ধ করে রাখুন। আপনি কি মনে করেন আখিরাতের দিন আমনার বখে যাওয়া ছেলের ব্যাপারে আপনাকে জিজ্ঞাসা করা হবে না?
আসল কথা হল, বিয়ের পর আল্লাহ একটা না একটা ব্যবস্থা করে দেন। এই টা আপনি কতটুকু বিশ্বাস করেন তা আপনার ঈমানের উপর নির্ভরশীল। আমাদের প্রথম টার্গেট হওয়া উচিৎ আমাদের যুবসমাজের অধপতন থেকে রক্ষা করা।
আর দুনিয়াবি জীবনে কিছুটা অভাব অনটনের ঘানি টানাকে যদি মুসলমানেরা ভয় করে তাহলে কি আর চলে?
যদি কেউ সিরিয়াসলি মুসলিম যুবসমাজকে নৈতিক অধপতন থেকে মুক্ত করতে চান তাহলে এরকম একটি সংস্কৃতির প্রচলনের প্রয়োজনীয়তা অস্বীকার করতে পারবেন না বলেই আমার বিশ্বাস।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।