ও পথ মাড়িও না যে পথ তুমি চেননাকো----
কলের গানের বাক্সটির সাথে মাথা ঠেকিয়ে আমি অনুভব করার চেষ্টা করছিলাম ভিতরে কেউ নড়াচড়া করছে কিনা । নাহ ,তেমন কোনও কিছু বোঝা গেলনা । বাক্সের ওপরে একটা চাকতি ঘুরছে , তার মধ্যে বসা একটা কুকুর সেও ঘুরছে । এক দিক দিয়ে একটা প্লাস্টিকের হাত । খুব খেয়াল করে দেখলাম তার মাথায় একটা সুই , ওই সুইটা নিচের ঘোরানো চাকতির মধ্যে কাটা অসংখ্য লাইনের মধ্যে দৌড়াচ্ছে ।
এক সময় সুইটি চাকতির মাঝ বরাবর কুকুরের কাছাকাছি পৌঁছে গেলেই গান বন্ধ হয়ে যায় । তখন লোকটি হাতলটি তুলে একদিকে রেখে দেয় এবং আরেকটি চাকতি পাশ থেকে তুলে চড়িয়ে দেয় ।
বাক্সটির একপাশে আমাদের বাসার সেলাই মেশিনের মতো হাতল আছে । সেটা ধরে খানিকক্ষণ ঘোরায় তারপর সুইওয়ালা হাতলটা খুব সাবধানে চাকতির একেবারে কিনারে প্রথম সারিতে বসিয়ে দেয় , প্রথমে একটু ঘস ঘস আওয়াজ তারপর মেয়েলী কণ্ঠ গান করে এবং বাজনদাররা বাজনা বাজায় ।
চাকতির নাম নাকি রেকর্ড !
আমিই একমাত্র ছেলে যে গানের বাক্সের পাশে বসতে পেরেছি , অন্যরা বাঁশের বেড়ার বাইরে ।
কেনযে কলের গানের লোকটির আমার উপর মায়া হল !
গান বাজছে চোঙ্গা মাইকে , বড়সড় ব্যাটারিতে চলে ।
মাইকের এ প্রান্তটি কলের গানের সাথে রাখা । চারিদিকে সবাই শুনতে পাচ্ছে ।
আমাদের বাড়ির উত্তর পশ্চিম কোনের হিন্দু বাড়িতে পুজো হয় প্রতি বছর । এর আগে দূরে ছাদে দাড়িয়ে দেখতাম , আসার অনুমতি ছিল না ।
এবার পিছনের দেয়ালের গায়ে ইট ধাপে ধাপে বসিয়ে সকাল ১০ টায় যেই আব্বা বাইরে গেলেন অমনি আমিও দেয়াল টপকে আমিও হাজির পুজা মণ্ডপে । কিন্ত যাবার বেলায় কি হবে ? এদিকটায় কোন ইট নেই ।
যাকগে, না হয় গলি ধরে মেইন রোড দিয়ে বাসায় যাবো ।
একের পর এক গান হচ্ছে ,উপরে উচু করে বাধা তাবু । পাশেই আরেক বিশাল তাবুর নিচে দুর্গার দশ হাতি মূর্তি প্রায় শেষ ।
হাত দশটি হলে কি হবে পা মাত্র দুটি । স্তন জোড়ার কাছে এসে চোখ আটকে গেল। আচ্ছা ওদের কি লজ্জা হয়না ? অমন করে ন্যাংটো করে রেখেছে !!
দুদিন পরেই শাড়ি পরালো ,সাথে গহনাগাটি ।
পুজোর ভিড়ে আমি নেই , ভিড়ভাটটা আমার একদম ভালো লাগেনা ।
আমি কলের গান শুনি আর সূর্যটা ঠিক মাথার উপর এলে পিছনের গলির বড় কেউ থাকলে তাকে সলজ্জ হাসি দিয়ে বলি “ দাদা আমাকে একটু ঠেলে দেওয়ালে উঠিয়ে দাওনা” ।
ওরা বেশ যত্নের সাথে উঠিয়ে দিয়ে জিজ্ঞেস করত “ নামবি কি করে” । আমি পাতানো ইটের কথা বললে ওদের সেকি হাসি ।
গান শুনতে শুনতে বিভোর হয়ে আমি ভাবতাম এ গান আমার চেনা , আমি আগেও কোথাও শুনেছি কিন্তু ঠিক কিভাবে কোথায় বলতে পারবনা ।
মানুষের কি পুনর্জন্ম হয় ?
অথবা মায়ের গর্ভে থাকতে গান শোনা যায় ?
কি অদ্ভুত যোগাযোগ !
যারা এতো সুরেলা কণ্ঠে গাইছে না জানি তারা দেখতে কি দুর্গার মতো সুন্দর !
সব চিন্তার জাল ছিঁড়ে দিয়ে পেছনের পাড়ার হিন্দু পরিবারের নেতা গোছের ছেলেটি মুখে একগাল কৌতুক মাখা হাসি নিয়ে বলছে “ এই তোরা দ্যাখ মাওলানার ছেলে পুজোর গান শুনতিছে , এই তোর বাপ জানে “?
আমি মলিন মুখ করে মাথা নেড়ে বলি “ না” । ।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।