সোমবার সকালে চট্টগ্রাম নগরীর লালখান বাজারে ইজাহারের মাদ্রাসায় বিস্ফোরণের পর সেখানে অভিযান চালিয়ে হ্যান্ড গ্রেনেড এবং অ্যাসিডসহ বিস্ফোরকের মজুদ পায় পুলিশ।
তবে পালিয়ে যান নেজামে ইসলাম পার্টির চেয়ারম্যান মুফতি ইজাহার ও তার ছেলে হারুন ইজাহার। তাদের পালানোর ক্ষেত্রে পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
জামেয়াতুল উলুম আল ইসলামিয়া নামের ওই মাদ্রাসায় গ্রেনেড ও বিস্ফোরক তৈরির সরঞ্জাম উদ্ধারের পর তা নিয়ে তদন্ত চালাচ্ছে পুলিশ।
চট্টগ্রাম নগর পুলিশের (সিএমপি) কমিশনার মোহাং শফিকুল ইসলাম মঙ্গলবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন,“প্রাথমিক তদন্তে আমরা নিশ্চিত হয়েছি, সরকারবিরোধী আন্দোলনে ব্যবহারের জন্য এসব গ্রেনেড বানানো হচ্ছিল।
আর এর লক্ষ্য ছিল পুলিশ। ”
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চট্টগ্রাম সফরের পাঁচ দিন আগে চট্টগ্রামের হেফাজতে ইসলাম নিয়ন্ত্রিত এই মাদ্রাসায় গ্রেনেড ও বিস্ফোরক উদ্ধার হল।
সফরকালে ১২ অক্টোবর সকালে নগরীর জমিয়াতুল ফালাহ জাতীয় মসজিদ প্রাঙ্গণে এক সুধী সমাবেশে প্রধানমন্ত্রীর অংশ নেয়ার কথা। ওই মসজিদের আধা কিলোমিটারের মধ্যে মুফতি ইজাহারের মাদ্রাসাটি অবস্থিত।
পুলিশ কমিশনার শফিকুল বলেন, “প্রধানমন্ত্রীর সফরের আগে এ ধরনের বোমা তৈরির ঘটনা এবং বিস্ফোরণ অত্যন্ত উদ্বেগের।
”
সোমবার ওই মাদ্রাসার একটি ছাত্রাবাসে বিস্ফোরণের পর মুফতি ইজাহার একে ল্যাপটপ বিস্ফোরণের ঘটনা বলে চালাতে চেয়েছিলেন।
তবে পরে পুলিশের তদন্তে বিস্ফোরণস্থলে বিস্ফোরকের উপস্থিতি পাওয়া যায়। অভিযানে চারটি হ্যান্ড গ্রেনেড পাওয়া যায়, মুফতি ইজাহারের কার্যালয় থেকে পাওয়া যায় ১৮ বোতল পিকরিক অ্যাসিড।
বিস্ফোরণে আহতদের নিয়েও লুকোচুরি হয়েছিল। আহত অবস্থায় চার যুবককে আটক করে পুলিশ।
এর মধ্যে হাবীব নামে একজন মঙ্গলবার ভোরে মারা যান।
বিস্ফোরণে আহত নুরুন্নবীকে পুলিশ নগরীর একটি বেসরকারি ক্লিনিক থেকে গ্রেপ্তার করে। পরে তাকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে ভর্তির উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়।
পুলিশ কমিশনার শফিকুল ইসলাম বলেন,“প্রাথমিক তদন্তে আমাদের ধারণা, ওই কক্ষে বোমা তৈরির কারিগর ছিলেন নুরুন্নবী। সে পলিটেকনিক ইন্সটিটিউট থেকে পাস করা ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার।
“তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা গেলে বোমা তৈরি এবং এ বিষয়ে বিস্তারিত জানা যাবে। ”
এর আগে জেএমবিসহ জঙ্গি সংগঠনগুলোর বোমা তৈরিতে বিভিন্ন পলিটেকনিকের বেশ কয়েকজন ছাত্রের জড়িত থাকার তথ্য মিলেছিল।
ওই মাদ্রাসার একাধিক ছাত্র বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, বিস্ফোরণ ঘটা চারতলা ছাত্রাবাস ভবনে মাত্র ৫০ জন ছাত্র থাকেন। বিস্ফোরণের পাশের কক্ষটিতে থাকেন মুফতি ইজাহারের ছেলে হেফাজতের নেতা হারুন ইজাহার।
ছাত্রাবাসটি পরিচালনার দায়িত্বও হারুনের।
ওই ছাত্রাবাসে প্রায় সময় বাইরে থেকে লোকজন এসে শিক্ষার্থীদের বন্ধু পরিচয়ে থাকত বলেও মাদ্রাসার ছাত্ররা জানায়।
বিস্ফোরণের পর সোমবার রাতে মাদ্রাসায় তল্লাশি চালিয়ে পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। এর মধ্যে তিনজন ওই মাদ্রাসার শিক্ষক।
মুফতি ইজাহার হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় কমিটির নায়েবে আমির ও নেজামে ইসলাম পার্টির কেন্দ্রীয় সভাপতি। হারুন ইজাহার তার বাবার মাদ্রাসায় শিক্ষকতা করেন।
এই মাদ্রাসাকে কেন্দ্র করে নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন হরকাতুল জিহাদ আল ইসলামীর (হুজি) কার্যক্রম চালানোর অভিযোগও উঠেছিল।
২০১০ সালের ১৫ ডিসেম্বর জঙ্গি সম্পৃক্ততার অভিযোগে লালখান বাজার মাদ্রাসা থেকেই মুফতি ইজাহারকে গ্রেপ্তার করেছিল র্যাব। পরে তিনি ছাড়া পান।
শিবির ও হেফাজতের বোমায় সাদৃশ্য
চলতি বছর ও ২০১০ সালে পৃথক দুটি অভিযানে উদ্ধার হওয়া হাতবোমার সঙ্গে সোমবার লালখান বাজার মাদ্রাসা থেকে উদ্ধার বোমার মিল আছে বলে জানান নগর পুলিশের (সিএমপি) ঊর্ধতন কর্মকর্তারা।
তবে ওই ঘটনা দুটিতে গ্রেপ্তার হওয়ারা ইসলামী ছাত্রশিবির ও অন্য জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত ছিল।
এ বছরের ৩১ অগাস্ট সন্ধ্যায় নগরীর পুরাতন রেল স্টেশন এলাকায় ফরিদ উদ্দিন (২৪) নামের এক শিবিরকর্মীকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
তার কাছ থেকে গ্রেনেড সদৃশ তিনটি হাতবোমা ও ১২টি রকেট ফ্লেয়ার জব্দ করা হয়।
গ্রেপ্তারের পর শিবির কর্মী ফরিদ সাংবাদিকদের বলেছিলেন, লালখান বাজার এলাকার আবদুল্লাহ নামের এক ব্যক্তি তাকে বোমা ও ফ্লেয়ারগুলো দিয়ে স্টেশনে যেতে বলে।
ওই সময় চট্টগ্রাম নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (এডিসি) মোস্তাক আহমেদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেছিলেন, রেল স্টেশন এলাকায় নাশকতার জন্যই বোমা নিয়ে ফরিদ স্টেশনে যায়।
এদিকে সোমবার লালখান বাজার মাদ্রাসায় আহতদের একজনের নামও আবদুল্লাহ।
বিস্ফোরণে আহত চার জনকে পুলিশ গ্রেপ্তার করলেও আবদুল্লাহকে মঙ্গলবার সন্ধ্যা পর্যন্ত খুঁজে পায়নি পুলিশ।
লালখান বাজার ও আবদুল্লাহ এই দুই বিষয় মিলে যাওয়ায় এই সূত্র ধরেও তদন্ত এগুচ্ছে পুলিশের।
এ বিষয়ে নগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (অপরাধ ও অভিযান) বনজ কুমার মজুমদার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “রেলস্টেশন ও মাদ্রাসা থেকে উদ্ধার হওয়া গ্রেনেডে সাদৃশ্য পাওয়া গেছে। এসব গ্রেনেড একই কি না তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ”
এর আগে ২০১০ সালের ২৬ ডিসেম্বর হাটহাজারী উপজেলার আলীপুর এলাকা থেকে চারটি হাতবোমাসহ শামীম হাসান নামের সন্দেহভাজন এক জঙ্গিকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
ওই অভিযানে পুলিশকে লক্ষ্য করে বোমা ছুড়ে পালিয়ে যায় আরও তিন জঙ্গি।
তখন উদ্ধার হওয়া বোমার সঙ্গে ইজাহারের মাদ্রাসায় উদ্ধার বোমার মিল আছে বলে জানান পুলিশের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেক পুলিশ কর্মকর্তা।
প্রাথমিক তদন্ত শেষে পুলিশের ধারণা, সরকারের শেষ সময়কে বিবেচনায় রেখে বড় কোনো নাশকতার লক্ষ্য সামনে রেখেই ইজাহারের মাদ্রাসায় বিপুল পরিমাণ বোমা তৈরির পরিকল্পনা ছিল।
আগামী ১২ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রীর চট্টগ্রাম সফর ও ২৫ অক্টোবর সরকারের মেয়াদের শেষদিকে বড় কোনো নাশকতার লক্ষ্যে বিপুল পরিমাণ বোমা তৈরি হচ্ছিল কি না তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানান পুলিশ কর্মকর্তা বনজ কুমার।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।