অনেক দিন আগের কথা। ম্যানহাটনের রাস্তা দিয়ে হাটছি, সম্ভবত পেন স্টেশনের দিকে, সাবওয়ে ধরবো বলে। হঠাৎ করে বেশ হইচই শব্দে পেছন ফিরে তাকাতেই চোখ দুটো ছানাবড়া। ছাত্রদের বিশাল মিছিল। টিউশন ফি বাড়ানোর প্রতিবাদে।
মিছিলের পুরোটাই তৎকালীন নিউইয়র্ক গভর্নর প্যাটাকির বিরুদ্ধে। পুরুষ মানব দেহের বিশেষ একটা গোপানাঙ্গের ঢাউস সাইজের এক বিশাল ছবি দিয়ে নীচে লিখে দেয়া হয়েছে এটাই গভর্নর প্যাটাকী। একদিকে নিউইয়র্কের মত শহরে ছাত্রছাত্রীদের মিছিল, তার উপরে ষ্টেইটের সরকার প্রধান, স্বয়ং গভর্নরকে এই রকম বিশ্রিভাবে কটাক্ষ করে বিক্ষোভ, নিজের চোখ আর কানকেই যেন বিশ্বাষ হচ্ছিল না। পরে দেখলাম এরকম ঘটনা কানাডা, ইংল্যান্ড সহ বিশ্বের সকল গনতান্ত্রিক দেশেই হয়ে থাকে এবং গনতান্ত্রিক সহনশীলতা, পরমত সহিষ্ণুতার কারনে সরকার প্রধানেরা এগুলো হজমও করে থাকেন। বিক্ষোভকারীরা আইন নিজের হাতে না তুলে নিলে পুলিশ তেমন কোন ব্যবস্হাই নেয় না।
এইতো সেদিন, টরন্টোতে স্বয়ং পুলিশের বিরুদ্ধে বিশাল বিক্ষোভ হয়ে গেল। স্ট্রিট কারে গভীর রাতে সিরীয় বংশদ্ভুত এক যুবককে সামান্য কারনে গুলি করে হত্যা করাটাকে টরন্টোর নাগরিকেরা মেনে নিতে পারে নি। সেখানে পুলিশের বিরুদ্ধে শুধু বিক্ষোভই নয়, যে ভাষায় পোষ্টার, ব্যানার লেখা হয়েছে, গালি দিয়ে শ্লোগান দেয়া হয়েছে তা কল্পনাও করা যায় না। আবার সে মিছিলটা যাচ্ছিল পুলিশ ষ্টেশনের দিকেই।
উপরের কথাগুলো বলছি এজন্য যে বাংলাদেশে সরকার সামান্য সমালোচনাও সহ্য করতে পারে না।
কারনে অকারনে শুধুমাত্র ফেসবুকে দুলাইন লেখার কারনে গ্রেফতার করা হচ্ছে। অথচ সবাই ভাল করেই জানি যে বাংলাদেশে ১৯৭৪ সালে একটা আইন পাশ করা হয়েছিল যার নাম ছিল 'বিশেষ ক্ষমতা আইন-৭৪', সারা দেশে এটাকে সকলেই ইতিহাসের কালো আইন বলেই জানে। আওয়ামী লীগ করেছিল এ আইনটা। মুলত বিরোধী পক্ষকে দমন করতেই করা হয়েছিল। কিন্তু নিয়তির নির্মম পরিহাস তাদের করা এ আইনে তারাই সবচেয়ে বেশী নিগৃহীত হয়েছিলেন, শুধু তাই নয়, তাদেরকেই তাদের চেলা চামুন্ডা, সমর্থক বুদ্ধিজীবিদেরকে এ আইনের বিরুদ্ধেই আবার রক্ত, ঘাম ঝড়াতে রাজপথে নামতে হয়েছিল।
এ প্রসংগে আজ ফেইসবুকে যুক্তরাষ্টের ইলিনয় স্টেইট ইউনিভার্সিটির প্রফেসর ডক্টর আলী রিয়াজ লিখেছেনঃ
"যুক্তরাষ্ট্রের হাউস অব রেপ্রেজেন্টাটিভে এরিজোনা অঙ্গরাজ্য থেকে নির্বাচিত রিপাবলিকান সদস্য ব্রেন্ডা বার্টন ফেসবুকের পাতায় দেয়া স্ট্যাটাসে প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা’কে হিটলারের সঙ্গে তুলনা করেছেন। শুধু তাই নয় ব্রেন্ডা বার্টন একটি সাক্ষাৎকারে তাঁর এই মন্তব্যকে যথাযথ বলেও দাবি করেছেন। এই জন্যে তাকে অনেকে নিন্দা জানাচ্ছেন; তবে তাঁর বিরুদ্ধে কোনো আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবেনা এটা নিশ্চিত। এই মন্তব্যে ব্রেন্ডা বার্টনের রুচিহীনতাই প্রকাশিত হয়েছে। রাষ্ট্রের এবং প্রেসিডেন্টের এই নিয়ে চিন্তিত হবার কোনো কারন নেই।
২০০৮ সালে নির্বাচিত হবার পর থেকে রিপাবলিকান দলের কট্টরপন্থী যারা টি পার্টি’র সদস্য বলে পরিচিত, প্রেসিডেন্টওবামা’কে এইভাবে চিত্রিত করে আগেও পোস্টার একেছে এবং তাঁদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। - আমার মনে হল এই খবরটা আজকেই সবার সঙ্গে শেয়ার করি। "
সেখানে উনার একজন ফেইসবুক বন্ধু সাথে সাথে মন্তব্য করেছেন, "স্যার, ওটা তো আমেরিকা, বাংলাদেশ না। এখানে (বাংলাদেশে) আজ যারা এই আইন করছে, আগামিকাল তারাই এটা বাতিলের দাবিতে হাজার মানুষের জীবনকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেবে। "
অন্য একজন বলেছেন, "আমাদের দেশের কথা ভাবলে আমি আতঙ্কিত হই।
কি ভয়ঙ্কর আমাদের রাজনীতিকেরা! এরা পারে না এমন কোনো কাজ নেই। মিথ্যা বলার কোনো জুড়ি নেই। সব ধরণের নৈতিক স্খলন না হলে বোধ হয় এই দেশে রাজনীতিক হওয়া যায় না। সব কিছু নষ্টদের অধিকারে চলে গেছে। কি ভাবে ফিরাব আমার স্বদেশ বাংলাদেশকে আমার কোনো জানা নেই।
"
অপরজন লিখেছেন, "আইজ লীগ সরকার আইসিটি আইন বানাইছে, বিরুদ্ধমত দমনের লক্ষ্যে, কাইল এই আইসিটি আইন লীগের চামচা, গালিবাজদের বিরুদ্ধেই ব্যবহৃত হবে। "
আর এক ফেইসবুকার লিখেছেন, "হবুচন্দ্র রাজার দেশে, আইন কানুন সর্বনেশে। একদিন বিএনপি র্যা ব বানাইছিল। বিরোধীদল দমন পীড়নের উদ্দেশে। সেই র্যা ব লীগ আমলে বিয়েনপিরে খাইছে।
"
এ প্রসংগে মনে পরে ১৯৬৯/৭০ সালের একটা ঘটনা। সারা দেশে তখন আইয়ুব/মোনায়েম/ইয়াহিয়া বিরোধি প্রচন্ড আন্দোলন চলছে। গোয়ালন্দেও তার ঢেউ লেগেছে। এমনি এক সময়ে থানার ওসি ওখানকার জনপ্রিয় এক চা'য়ের দোকানের ততোধিক জনপ্রিয় এক কর্মচারীকে মারধর করেছে, সম্ভবত চা দিতে দেরী হবার কারনে। সাথে সাথে ছাত্রজনতার বিশাল প্রতিবাদ মিছিল বের হলো।
আমিই ছিলাম সম্ভবত সবচেয়ে পিচ্চি প্রতিবাদকারী। আমরা একেবারে থানার ভিতরের খোলা মাঠ দিয়ে মিছিল নিয়ে বাজারের দিকে যাচ্ছি, পুলিশ অস্ত্র তাক করে রেখেছে আমাদের দিকে। যে কোন মুহুর্তে গুলি ছুড়বে ছুড়বে ভাব, আমরা দীপ্ত কণ্ঠে শ্লোগান দিচ্ছি, 'পুলিশের গুন্ডামি চলবে না, চলবে না। "
স্বৈরশাহী আইয়ুবের আমলের কথা, কিন্তু এখনকার পারিবারিক গনতন্ত্রের আমলে থানার ভিতর দিয়ে 'পুলিশের গুন্ডামী চলবে না' শ্লোগান মনে হয় কল্পনাও করা যায় না। সাথে সাথে হয় গুলি না হয় বুটের প্যাদানী!
গার্মেন্টসে আবারও আগুন, শ্রমিকদের নিয়ে রাজনীতি!
সমাবেশের নামে গার্মেন্ট শ্রমিকদেরকে ডেকে এনে বেতন ৮০০০ টাকা করার দাবী তুলার উস্কানী দিয়ে আবার নিজেই সেই দাবী প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে আদায় করে আনবেন বলে প্রতিশ্রুতি দিলেন কোন এক মন্ত্রী।
প্রকৃত উদ্দেশ্য ছিল সরকার প্রধানকে দেখানো যে তিনি শুধু পরিবহন শ্রমিক নেতাই নন, গার্মেন্টেসরও বটে! আর একটা ছিল হেফাজতিদেরকে খিস্তি খেউর করে আরও একটা বাহবা নেয়া। মূলত সরকারের কাছে নিজেকে আরো গুরুত্বপুর্ন করে তোলা। আফসোস ফল হয়েছে উল্টো। পুরো গার্মেন্টস ইন্ডাস্ট্রিই এখন হুমকির মূখে। এই এক ব্যাক্তির কারনে।
শুধু কি তাই? মন্ত্রীত্বের শপথ নিয়েছেন কারো প্রতি অনুরাগ বা বিরাগের বশবর্তী হয়ে কাজ না করার। দেখা যাচ্ছে, তিনি প্রতি নিয়তই তা ভংগ করছেন। পরিবহন শ্রমিকদের হয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সংগে বারগেইন করছেন, ধর্মঘটের হুমকি দিয়ে ড্রাইভারদের খুন করার লাইসেন্স আদায় করে নিয়েছেন। প্রতিদিন দেশের নিরীহ পাবলিকের অকালে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারানোর কথা বাদ দিলেও আমরা যারা মিশুক মুনীর কিংবা তারেক মাসুদের জন্ম কিংবা মৃত্যুদিবস পালন করে সাময়িক তৃপ্তি খুজি তাদেরকে বলি, সত্যই যদি এদের প্রতি কোন দরদ থেকে থাকে তাহলে প্রথমেই যে কাজটা করা দরকার তা হলো রাস্ট্রীয় সম্পদ, জান মাল রক্ষায় শপথ নিয়ে যিনি এই অন্যায় কাজ গুলো করছেন, যিনি ঐ ঘাতক ড্রাইভারদেরকে বাচাতে বলেন রাস্তায় গরু ছাগল চিনলেই লাইসেন্স দিতে হবে, মানুষ খুন হলেও কোন ড্রাইভারকে ৩০২ ধারায় মামলা করা যাবে না বলে সরকারকে হুমকি দিয়ে দাবী আদায় করেন, তার বিরুদ্ধে যার যা শক্তি আছে তা নিয়ে তাকে প্রতিহত করা। কারন তিনি কোন সরকারের নয়, তিনি দেশ ও জনগনের শত্রু।
তাহলেই একমাত্র মিশুক মুনির কিংবা তারেক মাসুদের প্রতি সত্যিকার শ্রদ্ধা জানানো সম্ভব হবে।
আর বলি হারি সরকার! কি তামাশা। গার্মেন্টস শ্রমিকদের ভোটের দাম আছে কিন্তু তাদের জীবনের পাচ পয়সার মুল্যও নেই। মন্ত্রীসাহেব সরকারী টাকায় তাদেরকে নিয়ে এত বড় শ্রমিক সমাবেশ করলেন, তাদের জানমাল হেফাজতের কোন ব্যবস্হাই করলেন না, আজকেও আগুনে পুড়ে 'সরকারী হিসেবে' দশজন নিহত হলেন। কিছুদিন আগে রানা প্লাজায় কয়েক হাজার মারা গেলেন, পংগু হলেন, তারও আগে তাজরীনে কয়েকশত জীবন্ত পুড়ে কয়লা হলেন।
হায়রে রাজনীতি।
এ বিষয়ে ফেইসবুকে মাহাবুব রশিদ নামে একজন লিখেছেন,
"ঘরে বইসা বইসা আরাম করতেছেন? টক শো দেখতেছেন? বৌয়ের সাথে খুনসুটি করতেছেন? প্রেমিকারে ফোন দিতেছেন? সিনেমা দেখতেছেন? খবরের কাগজের বিনোদন পাতায় বলিউড নায়িকার গসিপ পড়তেছেন? আবার মৃত্যু হানা দিছে গার্মেন্টসে। ১০ জন মরেছে। আরো কত মরবে জানা নাই। প্রত্যেকটা লাশ অভিশাপ দিবে।
আপনাদের সেই দিন মালিকী স্বার্থে গার্মেন্টসে গণহত্যার প্রতিকার করেন নাই, তাই আজো ওরা লাশ হইতেছে। ওরা যাতে লাশ না হয় সেই জন্য আপনারা পথে নামেন নাই। আপনারা বাংলা পরীক্ষা দিতে পথে নামছিলেন, সেই সময় অংক পরীক্ষা দিবেন না বলছিলেন। আমরা মাইনা নিছিলাম। কিন্তু আপনারা মানুষ বাঁচাইতে পথে নাইমা এই মরার কারখানা বন্ধ করার ব্যাবস্থা করেন নাই।
লাশ সকল প্রতিশোধ নেবে। "
আবারও ভোটের সময় সমাগত, চলবে কথার, মিথ্যা প্রতিশ্রুতির ফুলঝুড়ি। গলে যাবে জনগন। একই কায়দায় নব নির্বাচিতরা চালাবে দ্বিগুন বেগে 'তোমরা খাইছ, আমরা খাব'র রাজনীতি। তারপরও আমরা হতাশ নই, কারন জনগন যেদিন জেগে উঠবে সেদিন কারোই রেহাই হবে না।
আইয়ুব, ইয়াহিয়াসহ দেশী বিদেশী কোন স্বৈরশাষকেরই শেষ রক্ষা হয় নাই কিন্তু। খুব খিয়াল কইরা!
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।