বাংলাভাষায় বিজ্ঞানচর্চার গুরুত্ব বলে বোঝানো সম্ভব নয়। শুধু মাতৃভাষার কারনে বিজ্ঞান বুঝতে আমাদের সুবিধা হওয়ার জন্যই নয়; বরং দেশের শিশু-কিশোরদের বিজ্ঞানমুখী করে তোলার জন্য, বিজ্ঞানকে মাতৃভাষায় চিন্তা করার জন্য বাংলায় বিজ্ঞান চর্চা প্রয়োজন। হ্যাঁ, আমরা যখন চিন্তা করি সেটা একটা যেকোন ভাষায় করি। মনে করেন, আমি মাধ্যাকর্ষণ বল নিয়ে চিন্তা করছি, নিউটনের পরীক্ষাকে বাংলায় পড়লে আমি সেটা নিয়ে চিন্তা করলে বাংলাতেই করব। এভাবে চর্চা করতে করতে একসময় একটা অভ্যাস তৈরি হবে।
ফলে পুরো জেনারেশান নিজের ভাষায় বিজ্ঞান চর্চাকে সাবলীলভাবে গ্রহণ করবে, তেমনি বাংলা ভাষায় বিজ্ঞান চর্চাও মিউচুয়ালি বেগবান হবে। আর বিজ্ঞান চর্চার এবং কার্যকরভাবে সম্প্রসারণের সবচেয়ে সহজ কাজটি হল- মজার, গুরুত্বপূর্ণ, সাম্প্রতিক বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার, ঘটনা, মৌলিক বিষয়, চিন্তাভাবনা এসব বাংলায় লিখে ফেলা এবং ছড়িয়ে দেয়া। আবার এখন ছড়িয়ে দেয়াটা সবচেয়ে ভাল হয় সম্ভবত অনলাইন পত্রিকা বা ব্লগগুলি দিয়ে। খুবই গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম।
কিন্তু ঝামেলা বাঁধে আপনি যখন বিজ্ঞান লেখা নিয়ে যথেচ্ছাচার করেন।
বিজ্ঞান এমন বস্তু নয় যে নিজে আধো আধো বুঝে বা নিজের কল্পনা দিয়ে যেকোন কিছু লিখে ফেলবেন। তাতে ঝামেলা যেটা হয় সেটা হল আপনার ভুল খবর বা তথ্য থেকে মানুষ ভুল জানছে। বাংলাদেশের মানুষ এখনও খুব বেশি বিজ্ঞানমুখী হয়নি, বিজ্ঞানের খবরটবরও যা পায় তা কাগজের বা অনলাইন বিভিন্ন পত্রিকা থেকে জানছে। মৌলিক বিজ্ঞান নিবন্ধ বিজ্ঞানীরাই হয়তো বেশি পড়ছেন না, সাধারনের কথা তো ছেড়েই দিলাম। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই যাচাই এর সুযোগ না থাকার কারনে বা যে বিষয় পাঠক পড়ছেন সেবিষয়ে খুব ভাল জ্ঞান না থাকার কারনে পাঠকেরা ভুল লেখাটাকেই সঠিক হিসেবে জেনে নিচ্ছেন।
আশঙ্কাটা আরও বড় হয় যখন শিশু-কিশোর’রা এসব ভুল খবর পড়ে। কোন জিনিস যদি গোড়াতেই ভুল শেখানো হয় তবে শিশু কিশোরেরা পরবর্তীতে যখন সঠিক তথ্য জানবে তখন বিভ্রান্ত হয়ে যাবে। এটা তাদের আত্মবিশ্বাসে দারুন খারাপ প্রভাব ফেলে। আবার সহজে বুঝে ফেলার মত বিষয় লেখক না বুঝে বিভ্রান্তিকরভাবে এবং ভুল তথ্য দিয়ে লিখলে নতুন পাঠক সেটা
বুঝতে না পেরে হতাশায় ভুগতে পারেন, সে বিষয়ে আগ্রহও হারিয়ে ফেলতে পারেন সহজে।
এবার আসি এসব কেন বলছি তাতে।
এখন এত এত অনলাইন খবরের পত্রিকা এমন এমন সব কথা লিখছে (বিজ্ঞান বা অন্য সংবাদ নির্বিশেষে) যে খবরগুলি বা লেখাগুলি নিয়ে সন্দেহ তৈরি হচ্ছে এবং পত্রিকার লেখার বিশ্বস্ততা নিয়ে দ্বিধান্বিত হচ্ছি দিন দিন। বিশেষ করে বিজ্ঞান বিষয়ক লেখাগুলি নিয়ে। অনুবাদ করতে গিয়ে, অথবা সঠিক তথ্য না জেনে, অথবা কত দ্রুত কত লেখা তৈরি করা যায় সেই চাপে পরে অদ্ভুত অদ্ভত খবর আসছে। বেশিরভাগই অনিচ্ছাকৃত ভুল। প্রতিদিনই এত এত বিজ্ঞান নিবন্ধ কেন গণহারে প্রকাশ করতে হবে সেটা বুঝিনা।
জনপ্রিয়তা ধরে রেখে পত্রিকার ব্যাবসায় সুবিধা হয় বলে হয়ত।
আবার এসব পত্রিকার রিভিউ করার ব্যাপারটা কিভাবে কাজ করে জানিনা। অনেকগুলোতেই ভুল ধরিয়ে দিয়েছি, কিন্তু লেখক বা সম্পাদক খবরগুলির সত্যতা ঠিক করে আপডেট করছেন না। লিখে ফেলেই ফেইসবুকে শেয়ার দিতে দিতে দায়িত্ব শেষ করার প্রয়াস।
আমি এখানে নিজের অভিজ্ঞতা শেয়ার করছি একটা পত্রিকার উদাহরণ দিয়ে।
প্রিয়.কম। এদের বিজ্ঞান শাখা আছে একটি, লিংকে গিয়ে উপরের বিজ্ঞান ট্যাব ক্লিক করে দেখে নিতে পারেন। আমি বিভিন্ন সাইটে বিজ্ঞানের লেখাগুলি পড়ি যেখুলো আমার কাছে ইন্টারেষ্টিং মনে হয়। এখান থেকেও পড়ি। তবে, যা পড়েছি তাতেই এমন কিছু ভুল পেয়েছি যেগুলি অগ্রহণযোগ্য।
বলে রাখি, পত্রিকাটিকে আক্রমণ করার জন্য আমি এসব লিখছিনা। বেশ কয়েকটি পোষ্ট এর ফেইসবুক থেকে কমেন্ট করে আমি ভুল ধরিয়ে শুধরাতে বলছি গত দুইমাস ধরে। কেউ কর্ণপাত করছেন না। আজকে চিকিৎসাবিদ্যায় নোবেল পুরষ্কার দেয়া নিয়ে যখন মনের মাধুরী মিশিয়ে লেখা ছাপালো তখন ভাবলাম অনেকখানিই তো দেখলাম। এবার এদের নিয়ে লিখে ফেলি।
এখানে সবগুলি উদাহরণই জীববিজ্ঞানের (আমি এগুলিই অল্পস্বল্প বুঝি)। জীববিজ্ঞানের পাঠকেরা উদাহরণগুলি হয়তো ভাল বুঝতে পারবেন।
উদাহরণ দিচ্ছি এক এক করে।
১.
ফেইসবুকের কল্যাণে সম্প্রতি খবরটা শুনেছেন নিশ্চয়ই:
http://www.priyo.com/2013/09/09/30608.html
'আমাদের দেশের মেয়ে কৃত্রিম ফুসফুস তৈরি করে ফেলেছেন'
খবরটা সম্পূর্ণ ভুল। আয়েশা আরেফিন কোন কৃত্রিম ফুসফুস তৈরি করেন নাই।
তাঁর গবেষণাটি হল ফুসফুসে এমন কৃত্রিম অবস্থা তৈরি করা যেটা ফুসফুসে একটি ত্বক তৈরি করতে পারে। এই গবেষণা ফুসফুসের রোগ নিরাময়ে অবদান রাখতে পারে, কিন্তু এটা দিয়ে কৃত্রিম ফুসফুস নির্মানের কোন সম্ভাবনা নাই।
আয়েশা আরেফিন নিজেই তার ফেইসবুক স্ট্যাটাসে এই ভুল খবরের কথা বলেছেন। কিন্তু পত্রিকার কোন বিকার নাই। অনেকেই তাদের এই ভুল খবরের কথা তুলে ধরেছেন, ফেইসবুকের সুবাদে এই পত্রিকার লোকজনও অবশ্যই শুনেছেন বলে মনে করি।
কেন তারা খবরটি এখনও তুলে নেননি বা অন্ততঃ শোধরানোর চেষ্টা করেননি সেটা কে জানে। আবার তাদের এই খবর আরও কিছু পত্রিকা শেয়ার দিয়েছে। অর্থাৎ ভালভাবেই ভুল সংবাদ ছড়িয়েছে।
২.
প্রায়ই পত্রিকাটির কোন লেখার শেয়ার পরছে ১০০'র ও বেশি। চরমভাবে ভুল খবর দেয়ার পরও।
নিচের উদাহরণটি দেখুন:
http://www.priyo.com/2013/09/11/30954.html
এখানে একটা অংশে তারা লিখছেন- 'আর Cryptococcus neoformans এই বৈশিষ্ট্যের কারণেই এটি মানুষের বেশ কিছু ভয়াবহ রোগের কারণ। যেমন-Dawn’s Syndrome হয় এই ইস্টের মাঝে থাকা ক্রোমোসোম ২১ এর কারণে। '
পুরাই ভুল কথা। Dawn’s Syndrome বলে মানুষের কোন রোগ নাই। Down syndrome বোঝাতে চেয়েছেন বুঝতে পেরেছি।
কিন্তু সেটা কখনই ছত্রাকের দ্বারা হয়না, ছত্রাকের ক্রোমোজম দিয়ে তো হওয়ার প্রশ্নই আসেনা। এই রোগ হয় মানুষের ২১ তম ক্রোমজম এর তৃতীয় কপি থাকলে। ছত্রাকেও ক্রোমজমের বাড়তি কপি থাকার ঘটনা ঘটতে পারে সেটা বোঝানো হয়েছে মূল আর্টিকেল এ (যেখান থেকে সম্ভবত লিখেছেনঃ http://www.livescience.com/39541-deadly-fungus-mates-with-clones.html)।
এত শেয়ার কারা করেন সেটা আমার জানতে ইচ্ছা করে। বাংলাতে দারুন ভাল কোন বৈজ্ঞানিক লেখাওতো ২০ টা শেয়ার হলে দারুন ব্যাপার বলে ধারনা করা যায়।
কিন্তু এই অজানা ছত্রাক নিয়ে লেখা, যে যৌণ মিলনে গেলে বা না গেলেও কারও এত উৎসাহ দেখানোর কিছু থাকার কথা না- সেইটা ১০০ বার শেয়ার করা? মানুষের যৌনতা বা নামিদামি মানুষের স্ট্যাটাস বা বাংলাদেশের ক্রিকেট ম্যাচ জয়ের খবরও এত শেয়ার হয় কিনা সন্দেহ। দুনিয়া আসলেই অদ্ভুত।
৩.
তাদের সাইটে সাধারন কিছু ভুলের কথা আমি উল্লেখও করেছিলাম। যেমন উত্তর আমেরিকার ব্যাঙকে বলছেন উত্তর মেরুর ব্যাঙ, বা শুক্রাশয়ের আকার বড় হওয়াকে বলছেন ‘শুক্রাশয়ের আকৃতির উপর নির্ভর করে.. ' ইত্যাদি। এগুলো পাত্তা দিতাম না যদি না তারা ভুলগুলি শুধরে নিতেন।
কিন্তু কে কার কথা শোনে।
ক.
http://www.priyo.com/2013/08/27/28605.html
খ.
http://www.priyo.com/2013/09/12/31046.html
৪.
এরপরে আছে কিছু ক্লাসিক ভুল।
ক.
http://www.priyo.com/2013/10/01/33878.html
প্রিয়.কম লিখছে:
'তিনজন মানুষের থেকে নেওয়া ডিএনএ ব্যবহার করে সন্তান জন্মদানের এই পদ্ধতি কিভাবে কাজ করে? পিতা এবং মাতা অর্থাৎ দুইজন মানুষের জিনের সমন্বয়ে প্রাকৃতিকভাবে যে শিশু জন্ম নেয় তার সাথে এই পদ্ধতিতে জন্ম নেওয়া শিশুর বাহ্যিক কোনও পার্থক্য থাকবে না। আমাদের দেহকোষের নিউক্লিয়াসে যে ডিএনএ থাকে তার অর্ধেক জিন আসে আমাদের মায়ের থেকে এবং বাকি অর্ধেক আসে আমাদের বাবার থেকে। এই জিন কিন্তু এটা ছাড়াও আরেকটা জিন আছে, আর সেটা থাকে আমাদের কোষের মাইটোকন্ড্রিয়ায়।
'
পুরাই কনফিউজিং কথাবার্তা। লেখক জিন এবং ডিএনএ একই অর্থে ব্যবহার করছেন যে কি মনে করে কে জানে। 'আরেকটা জিন মাইটোকন্ড্রিয়ায় থাকে' বলতে কি কিছু বোঝায়? কোন জিন থাকে? মাইটোকন্ড্রিয়াল ডিএনএ তে তো একাধিক জিন থাকে। সবচেয়ে জরুরী ছিল এটা বলা যে- মাইটোকন্ড্রিয়াটি আসে শুধুমাত্র মায়ের কাছে থেকে, বাবার কাছ থেকে নয়। সেজন্য তৃতীয় ব্যক্তিটি মেয়ে হতে হবে।
খ.
http://www.priyo.com/2013/08/19/27437.html
এই লেখার মধ্যে এতগুলা ভুল যে আলাদাভাবে সংশোধন প্রায় অসম্ভব। কয়েকটা অংশ তুলে দিচ্ছিঃ
‘মানবদেহে যত কোষ আছে,সবগুলোর নিউক্লিয়াসে আছে একটি করে ডিএনএ। ’ - ভুল (২৩ ধরনের ক্রোমোজম থাকে, প্রতিটার এক জোড়া)
‘মইয়ের দুই পাশের লম্বা অংশটিকে ডাবল হেলিক্স বলা হয়। ’ - ভুল (পুরো গঠনকেই ডাবল হেলিক্স বলে)
‘মৃত্যু পর্যন্ত মানবদেহের সমস্ত কার্যক্রম কিভাবে পরিচালিত হবে,তাও সব ডিএনএ কোডে লেখা আছে। ’ - বিভ্রান্তিকর
‘এভাবে দেহের লক্ষ লক্ষ কার্যাদি অনায়াসে সম্পন্ন হয় একমাত্র ডিএনএ কোডের তথ্য অনুযায়ী।
’ - আংশিক সত্য
গ.
http://www.priyo.com/2013/09/03/29725.html
এই লেখাটিতে কথা বলছেন ডিএনএ খাঁচা নিয়ে, কিন্তু ছবি দিয়েছেন প্রোটিন খাঁচার (শেষ ছবি)।
৫.
আবার কেউ কেউ অনুবাদ করতে গিয়ে এমন কিছু বাংলা করছেন যেটা থেকে আসল নাম বোঝার কোন উপায় নাই।
ক.
যেমন, এখানে একটা উদাহরণ দেখুন:
http://www.priyo.com/2012/05/25/4100.html
কাটানাল ১ জিন কি জিনিস? catanal, katanul, katanale, katanal, catanale, catanul ইত্যাদি লিখে খুঁজে দেখলাম। কিছুতেই পাচ্ছিনা। বরং গুগল আমাকে মাঝে মাঝে আপত্তিকর সাইটে নিয়ে যাচ্ছে, শব্দের শেষের অংশটার কারনে।
এখন কাটানাল ১ কি জিনিস এটা কি খুব সহজেই বের করা যেতনা যদি তারা ইংরেজীতে লিখে দিতেন আসলেই কি নাম বোঝাচ্ছেন? তবে ইংরেজী নামকে ভুলভাবে লেখাটা খুব অস্বাভাবিক না। কিন্তু সঙ্গে ইংরেজীটা দিয়ে দিলে আমাদের বুঝতে সুবিধা হয়। আর এরকম খবরের জন্য আমি বারবার বলি যে, আপনারা যেখান থেকে অনুবাদ করছেন সেটার লিংকটা অন্তত দিয়ে দিন।
খ.
বাংলায় নাম ব্যবহারের আরেকটা উদাহরণ:
http://www.priyo.com/2013/08/27/28495.html
এক জায়গাতে লিখছেন-
‘এক্ষেত্রে ডেসিটাবিন ওষুধ 'প্রোটিন কিনাসে ডি১' (পিআরকেডি১) নামে একধরনের এনজাইমের জন্য জিন কোডিং হিসেবে কাজ করে। ’
‘কিনাসে’ যে আসলে কাইনেজ এনজাইম সেইটা কেমনে বুঝবো? মানুষের দেহের সবচেয়ে বড় প্রোটিন পরিবারগুলির একটা হল কাইনেজ পরিবার।
নাম দেখে কেমনে চিনবো যে এই পরিবারের সদস্যের কথা বলা হচ্ছে? তারপর লিখছেন-
‘এনজাইমের জন্য জিন কোডিং হিসেবে কাজ করে। ’
ক্যামনে কি? এই ওষুধ কিভাবে এনজাইমের জন্য ‘জিন কোডিং’ হিসেবে কাজ করে? ওষুধটা কি ডিএনএ’র অংশ?
৬.
http://www.priyo.com/2013/10/08/35046.html
এই লেখাটি শেষ করেছেন এভাবে-
‘২০১০ সালে ক্রেইগ ও তার দল একটি কৃত্রিম DNA থেকে টেস্ট টিউবের ভেতর নতুন ক্রোমোসম তৈরি করতে সক্ষম হন। এরপর একটি কোষের ভেতর ক্রোমোসমটিকে স্থানান্তরিত করা হয়, যেখানে এটি সংখ্যায় বৃদ্ধি পেতে থাকে, অর্থাৎ এটি জীবন্ত স্বত্বার মতোই আচরণ করতে থাকে। ’
প্রশ্ন হল, ক্রোমোজটিকে স্থানান্তরিত করার পরে কিভাবে সংখ্যায় বৃদ্ধি পায় সেইটা কি কোনভাবে সম্ভব? ভেন্টার কাজটি করেছিলেন ব্যাকটেরিয়ার উপর। অল্পকিছু ব্যাকটেরিয়াতে শুধুমাত্র একাধিক ক্রোমোজম থাকতে দেখা যায়, তাও একই ক্রোমোজমের একাধিক কপি নাই।
ভেন্টার এমন কোন ফলাফলও পান নাই।
আবার বলছেন-
‘এটি জীবন্ত স্বত্বার মতোই আচরণ করে’ ?? ক্রোমজমটি? নাকি কোষটি? যেভাবে লিখেছেন তাতে মনে হচ্ছে ক্রোমোজমটির কথা বলছেন লেখক। ক্রোমোজমের জীবন্ত স্বত্বার মত আচরণ করা কল্পকাহিনীতেও সম্ভব না।
৭.
এইবার আসি শেষ উদাহরণে:
http://www.priyo.com/2013/10/07/34875.html
গত সাত তারিখে (অক্টোবর, ২০১৩) চিকিৎসা বিজ্ঞানে নোবেল পুরষ্কার দেয়া হয় তিনজন বিজ্ঞানীকে যাঁরা কোষে ভেতরে এক জায়গা থেকে আরেকজায়গায়, এবং সঠিক স্থানে জৈব অণু একধরনেভ থলির দ্বারফ পরিবাহিত হয় সেটা নিয়ে গবেষণা করেছেন। আবার বলছি, ‘কোষের ভেতরে পরিবহন’ নিয়ে গবেষণা করেছেন।
এবার দেখি প্রিয়.কম কি লিখেছে-
'প্রতিটি কোষ একেকটি ফ্যাক্টরি বা কারখানার মতো কাজ করে, যেটি কিনা বিভিন্ন জৈব-রাসায়নিক অণু তৈরি করে দেহের বিভিন্ন প্রান্তে পাঠিয়ে দেয়। আর এই অণুগুলো কিছু vescicle এর মাধ্যমে স্থানান্তরিত হয়। পুরস্কার বিজয়ীরা এটিই আবিষ্কার করেছেন যে, কিভাবে এই ভেসিকলগুলো বিভিন্ন অণুকে শরীরের নির্দিষ্ট স্থানে সঠিকভাবে পৌঁছে দেয়ার কাজটি সম্পন্ন করে। '
‘কোষ’কে ‘দেহ’র সাথে কিভাবে গুলিয়ে ফেলছেন সেটা বুঝছিনা। দুইটা তো ইংরেজীতে স্পষ্টতঃই আলাদা দুইটা শব্দ।
অনুবাদের কারনে ভুল নিশ্চয়ই হওয়ার কথা না। এমন ভুল কিভাবে সম্ভব? অবহেলার উদাহরণ সম্ভবত।
যাই হোক, আমি প্রিয়.কম এর সাইট টাতে লেখাগুলোয় ফেইসবুক থেকে একের পর এক কমেন্ট করেই যাচ্ছি। তাদের বা লেখকের কাছ থেকে কোনধরনের উত্তর বা ভুল শোধরানোর উদাহরণ এখনও পাইনাই। আমি এখানে ১১ টা উদাহরণ দিলাম বাজে বিজ্ঞান লেখার উদাহরণ হিসেবে।
আমি শুধু আমার কৌতুহলে বিষয়গুলির ভুল ধরেছি। কিন্তু লেখাপ্রতি ভুলের হারটা আশঙ্কাজনক বলেই ধারনা করছি অন্যান্য লেখাগুলিতেও ভুল হচ্ছে। প্রিয়.কম এর টনক নড়লে হয়। নাহলে মানুষকে ভুলই শিখিয়ে যাবেন। এত দূর্বল রিভিউ ব্যবস্থায় কোন পত্রিকা খুব একটা দেখা যায়না।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।