বাংলাদেশে ছবির বাজারে সস্তা কমার্সিয়াল ফিল্মের জোয়ারে আর্ট মুভি!! চিন্তা করাটাই যেন অনেক বড় একটা ব্যাপার, যেন আমি অলরেডি একটা মুভি বানিয়ে ফেলেছি... প্যারামিটার দিয়ে এটা বোঝানো দুষ্কর, বোঝানোর সাহসও নেই। এবং উলটো দিকে একটা কমার্সিয়াল ফিল্ম দেখার পর সেটা নিয়ে "মাইন্ডব্লোয়িং", "ফাটিয়ে দিয়েছে", "অসাধারণ"- এমনটা লেখারও জো নেই, যেখানে মুভি থিয়েটারে মুভি দেখার জন্যই থাকেন জনাদশেক। দোষটা কার?? আমাদেরই! আমরা দক্ষ না একটি "পারফেক্ট" মুভি বানানোর জন্য এবং সেই মুভিটি দেখার দর্শক তৈরি করার জন্য!
আর্ট ফিল্ম, তাও আবার অমিত আশরাফের ডেবিয়্যু মুভি- অনেক বেশিই রিস্কি ছিল ফল করার। অনেক বড় বড় পরিচালকই তাদের মুভি দিয়ে দর্শকের কাছে ছবির মূল থিমটা বোঝাতে পারেন না শুরুর দিকে! অমিত আশরাফের ব্যাপারে বলবো, "হি অলমোস্ট নেইলড ইট!" গল্প, সিকুয়েন্স বেইজড ডিরেকসন, ফ্ল্যাসব্যাকস- এককথায় অসাধারণ কাজ দেখিয়েছেন এই জায়গাগুলোতে। অলমোস্ট বলার কারণটাও বলছি!
ছবির গল্প, প্লট এমন আহামরী কিছু নয়... দৈনন্দিন ভ্যান চালানোর পাশাপাশি বাবু মিয়ার দুঃসাহসিক কীর্তিকলাপ এবং আকবরের সমান্তরাল এবং বিপরীতমুখী চরিত্র- এই দুটি ক্যারেকটারের সাধারণ ক্ল্যাসটা ফুটে ওঠে খুব স্বাভাবিক এবং সাবলীল ভঙ্গিতে... পারিবারিক জীবনের সকল নীতি, দায়িত্ব থেকে উধাও হয়ে যেয়ে আবার একসময় সেই গণ্ডির ভিতর জোর করে প্রবেশ করানো- আকবরের গলায় স্ল্যাবের সাথে লাগানো থিয়েট্রিক্যাল পোস্টারের সহজবোধ্য ব্যাখা!
অবশ্যই ক্রেডিট যাবে থিয়েট্রিক্যাল পোস্টারের জন্য, যেটি মানুষের মনে একটা সরল কিন্তু জোরদার ইম্প্রেসন তৈরি করবে এবং এটা বোঝাতে সক্ষম হবে যে, মুভিটা তাকে কিছু বোঝাতে চাইছে।
শুধু এবার তার সাড়া দেয়ার পালা!
যে জায়গাটি এই ছবিটাকে বাস্তবের চেয়ে বেশি কিছু হিসেবে এস্টাব্লিসড করেছে, সেটা হলো কাইল হেসলপের মাইন্ডব্লোয়িং সিনেমাটোগ্রাফি! পুরো লোকেসন গুলোকে তিনি ফুটিয়ে তুলেছেন এমনভাবে, ঠিক যেন মনে হয় খুব স্বাভাবিক জীবন যাত্রার ফাঁকেই এরকম ঘটনা গুলো ঘটা খুবই স্বাভাবিক... নদীর পাড়ে মাছ ধরে বসে থাকার দৃশ্য, হাইওয়ে দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময় আশেপাশের সবকিছু ব্লার হয়ে আসে কিংবা অতীতের সাথে বর্তমানের একটা ক্যামোফ্লাজ তৈরি করা- পুরো ছবিটাকে তিনি বের করে নিয়ে এসেছেন তার ফ্রেমে!
ছবির ভায়োলেন্সটাও ছিল জীবন্ত, মুভির থ্রিলটা বের হয়ে আসে এখান থেকেই! একটা দৃশ্য ছিল পুরোপুরি ডেভিড ফিঞ্চার থেকে ইন্সপায়ার্ড, এবং সট টা এতটাই দুর্দান্ত ছিল- এটা মেনে নিতেই হবে অমিত আশরাফ তাকে অনুকরণ করেছেন, তবে নিজের স্টাইলে। অন্ধ ভাবে না!
এইরকম ড্রাম্যাটিক থ্রিলারে যেটা সবচেয়ে দরকার সেটা হলো অভিনয়... এবং এটার দিকেও কোন ছাড় দেন নি কেউই! শাহেদ আলী এককথায় বোধ হয় তার জীবনের সেরা অভিনয় করেছেন... ক্যামেরার স্পটলাইটে দুর্দান্ত ছিলেন অনিমেষ আইচ। যতক্ষণ পর্দার সামনে ছিলেন, তখন স্পটলাইট নিয়ে নিয়েছেন নওশাবা। তুলনামূলক তাদের থেকে কিছুটা পিছিয়ে ছবির মূল চরিত্র শাকিল আহমেদ, তার মঞ্চভিত্তিক অভিনয়ের আশ্রয় এবং ডায়লগ গুলোর জন্য। কিন্তু ছবি যত এগিয়েছে, তার পারফরম্যান্সটা আস্তে আস্তে অনবদ্য হয়ে উঠেছে... এবং ছবির মূল পাঞ্চ লাইনটা আসে তার মুখ থেকেই!
ছবির মিউজিক এবং ব্যাকগ্রাউনড স্কোর- অন স্পট!!
নেগেটিভ কিছু বলতে ইচ্ছে হয় না, তবুও বলি! ছবির শুরুর দিকে ক্রেডিটে ফুটে ওঠে "পযরিচালনায়"...... এটা খুবই হাস্যকর এবং বিব্রুতকর, ঠিক তেমনি এটার সাবটাইটেলটাও অনেকটা কাঁচা হাতের কাজ... অনেক ডায়লগ অস্পষ্ট, দুর্বল।
এবং গল্পের মূল থিমটাও বেশ কিছুটা নড়বড়ে। কারণ অমিত আশরাফ কয়েকটি থিম একসাথে মুভিতে দেখাতে চেয়েছেন, দেখিয়েছেন ঠিক ই। তবে সবগুলোকে পরিপূর্ণতা দিতে পারেন নি। আকবরকে যেভাবে কিডন্যাপ করে নিয়ে যাওয়া হয়েছে, সেটা কেন জানি মনে হচ্ছিল বেশ অসম্ভব একটা ব্যাপার... বোঝা যায় নি রাজ আর সুস্মিতার সম্পর্কটুকু... এবং যারা বেশি এরোগেন্স এবং এডিকসন পছন্দ করেন না- প্রতিটা সিকুয়েন্স এ ধুমপানের ব্যাপার টা কিছুটা হলেও অস্বস্তিকর ঠেকবে!
যেটা না বললেই না, সেটা হলো ছবির সাসপেন্স এবং ক্লাইম্যাক্স! অনেক প্রশ্ন ও সাসপেন্সের ভিড়ে একসময় বের হয়ে আসে শেষ অঙ্ক! যেখানে অমিত আশরাফ পারদর্শী ছিলেন শেষ পর্যন্ত এই আকর্ষণটি ধরে রাখার ক্ষেত্রে... আবার এলোমেলোও হয়ে গেছে অনেকগুলো গল্প একসাথে নিয়ে আসায়!
প্রতিটা আর্ট ফিল্মেরই কিছু পাঞ্চ লাইন থাকে, মুভির থিয়েট্রিকাল পোস্টারের "Escape is not an option" পুরো মুভিটা জুড়েই এরকম ইঙ্গিত দিচ্ছিল! কিন্তু শেষ মূহুর্তে সিগারেটের ছাই চাপা দিয়ে পরের দৃশ্যটি আপনাকে মনে করিয়ে দিবে, ছবির আরেকটি পাঞ্চ লাইন আপনি পার করে এসেছেন... এন্ডিং টা হবে আপনাকে স্তব্ধ করে দিয়েই...
উধাও এর মতো মুভি আরও আসবে, এবং আসাটা প্রয়োজন... এবং এটাই আশা করবো! হয়তো সময় লাগবে, তবুও ক্ষতি কোথায়! এরকম একটা ছবি পুরো ইউরোপ-ইউএসএ এর কিছু ফেস্টিভ্যাল কাঁপানোর এক বছর পর যখন জানা যায়, যে এই ছবিটা বাংলাদেশের- বলতে কিছুটা হলেও গর্ব হয়!
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।