ক্যারিয়ারে যখন বইছে বসন্তের বাতাস, তখনই উধাও অপু বিশ্বাস। কেন ডুব মেরেছিলেন তিনি? এ প্রশ্নের উত্তরসহ এক ঝলকে অপুর ভুবন ঘুরে এসে চিনে নিন নতুন এক অপু বিশ্বাসকে...
তাঁর গাড়িটি ছুটে চলেছে হাতিরঝিলের রাস্তা ধরে। সামনে-পেছনে আমাদের মোটরসাইকেলও চলছে। হঠাৎ গাড়িটি থেমে যায়। গাড়ি থেকে নামেন তিনি।
সবুজ, নীল আর গোলাপি রঙের মিশেলে তাঁর যে টপস, তাতে বিকেলের মায়াবী আলোর ছাট। সে আলো রং ছড়ায় তাঁর মুখেও। এরপর ক্যামেরায় বন্দী হতে থাকেন তিনি। মুখে হাসি। চলচ্চিত্র তারকা অপু বিশ্বাসের সেই স্নিগ্ধ হাসিমুখ দেখে ততক্ষণে জড়ো হয়েছেন তাঁর অনুরাগীরা।
এই তারকার সঙ্গে আড্ডা হবে। তার আগে হাতিরঝিলের রাস্তায় একচোট ফটোসেশন ভক্তদের ভিড়ে শেষ হতে গিয়েও যেন হলো না। একসময় অপু বললেন, ‘আজ এইটুকুই থাক। বাকি ছবি আবার কাল। ’
আমাদের গন্তব্য এবার আড়ংয়ের কফিশপ।
আড্ডায় অপুর কণ্ঠ ভারী। প্রশ্ন করার আগেই বললেন, ‘এই দেশে এত মানুষ আমায় ভালোবাসেন!’
বিগত আট মাসে অপু কোনো নতুন চলচ্চিত্রে কাজ করেননি। এর মধ্যে শরীরের ওজন ৭০ থেকে নামিয়েছেন ৫৬ কেজিতে। নিজেকে তৈরি করেছেন নতুন অপু হিসেবে। গত দুই মাসে চুক্তিবদ্ধ হয়েছেন ছয়টি ছবিতে।
নতুন এই অপুর গল্প এখান থেকেই শুরু হবে, কিন্তু তা হলো না। কেননা, অপু তখন তাঁর ছোটবেলাকে ডাকছেন।
বগুড়া শহরের কাটনার পাড়ার ছোটবেলার দিনগুলো ছিল তাঁর কাছে স্বপ্নের মতো—সিমিম, বৃষ্টি ও রিক্তা মিলে ছিল একটি দল। ‘ওহ, আমরা খুব জানেমন দোস্ত ছিলাম। কেউ কাউকে না দেখে থাকতে পারতাম না।
আর আমরা এতই বোকা ছিলাম, মুরগি জবাইয়ের পর পরিষ্কার করে পাখনাগুলো বাড়ির পেছলে জঙ্গলে ফেলে রেখেছিলাম। তারপর মার হাতে কী যে বেদম মার!’
গল্প এবার তাঁর কলেজজীবনে। তত দিনে কোটি টাকার কাবিন ছবিতে অভিনয় করে ফেলেছেন। কিন্তু অভিনয় নিয়ে কোনো উত্তেজনা নেই। ‘শুটিং শেষ করেই আমি বগুড়া ফিরে যাই।
আগের মতোই কলেজে ক্লাস করি, ঘুরিফিরি, বন্ধুদের নিয়ে আড্ডা, হইচই করেই পার করি দিন। ’
পাঠক, এর আগে অপু একজন ভালো চিকিৎসক কিংবা উকিল হওয়ার স্বপ্ন দেখেছিলেন। কিন্তু তাঁর জীবনের গল্প চলে গেল সোজা রুপালি পর্দার ঝলমলে ভুবনে। প্রথম ছবি মুক্তির পরই বাজিমাত। একের পর এক নতুন ছবিতে অভিনয়ের ডাক আসতে থাকে।
পাল্টে যায় জীবনচিত্র।
‘২০০৮ থেকে ২০১২ পর্যন্ত প্রায় ৭০টি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছি। ’ সর্বশেষ তাঁর অভিনীত মাই নেম ইজ খান ও প্রেমিক নাম্বার ওয়ান ছবিতে দর্শক যখন হলমুখী তখনই চলচ্চিত্র থেকে অপু উধাও। ঘটনা কী?
আমরা এবার সেই কাহিনি শুনতে পারি।
‘দেখুন, আমি চলচ্চিত্র থেকে হারিয়ে যেতে চাইনি।
দর্শকেরা আমাকে পর্দায় দেখতে চান একজন মানানসই নায়িকার মতো। আমার কাজ ও একাগ্রতা দর্শকেরা চিরকাল মনে রাখবেন—এটা বিশ্বাস করি। তাই জায়গাটি ধরে রাখতে নিজেকে আরেকবার প্রস্তুত করে নিতেই এই বিরতি। ’
একটু দম নিয়ে এরপর বললেন, ‘এই সময় নিজের সঙ্গে যুদ্ধ করেছি। নিয়ম মেনে খাওয়া-দাওয়া, শরীরের ওজন সঠিক জায়গায় আনা এবং ঘরে বসে প্রচুর দেশ-বিদেশের ছবি দেখেছি।
অবশেষে আমি সফল হয়েছি। এবার আবার নতুন করে সবকিছু শুরু করতে চাই। ’
টানা অনেক কাজ করেছেন। তবে এখন না বুঝে আর কোনো কাজ করতে চান না অপু। ‘হ্যাঁ, বুঝেশুনে দেবদাস, ভালোবেসে ঘর বাঁধা যায় না কিংবা নিঃশ্বাস আমার তুমি—এ ধরনের ছবিই এখন করতে চাই আমি।
মধুমিতা সিনেমা হলে ভালোবেসে ঘর বাঁধা যায় না দেখতে বসে নিজেই কেঁদেছি। এক দেবদাস-এর পার্বতী আমাকে অনেক কাল বাঁচিয়ে রাখবে। ’
চলচ্চিত্রের বর্তমান অবস্থা এখন কেমন?—কথার পিঠে কথা আসে।
‘এখন চলচ্চিত্রের অবস্থা বেশ ভালো। কারিগরি দিকে আমরা অনেক এগিয়েছি।
অনেকগুলো প্রেক্ষাগৃহ ডিজিটাল করা হয়েছে। খুব কম সময়ে চলচ্চিত্রের সোনালি দিন আবার ফিরে আসবে। ’
চলচ্চিত্রের সোনালি দিনের কথা বলতে গিয়ে আরেকবার নিজের শৈশবে হারালেন অপু বিশ্বাস। তারপর বললেন তাঁর এখনকার দিনযাপনের গল্প, ‘আমার জীবনটা সাদামাটা। শুটিং শেষ তো সোজা ঘরে ফিরি।
পরিবারের সবার সঙ্গে দারুণ সময় কাটে আমার। ’
আড্ডা শেষ। গাড়িতে উঠে বসেন অপু। পৌঁছে হয়তো সোজা নিজের ঘরে ঢুকে যাবেন তিনি। এরপর কি ‘অন্য এক অপু’র, সেই ‘ছোট্ট অপু’র উপস্থিতিতে জেগে উঠবে পুরো বাড়ি? পাঠক, তারকাদের সব গল্প জানতে নেই!
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।