আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

প্রসঙ্গ উধাও ! ! !



গতকাল বলাকায় উধাও দেখে এলাম। আমার কয়েকটি অবজারভেশন আছে। ১. অসাধারণ একটি ছবি হওয়ার মতো অসাধারণ একটা প্লট ছিল। ছবিটা বাংলা ভাষাভাষিদের কাছে কয়েকটি প্রাসঙ্গিক কারণে অতটা অসাধরণ নাও লাগতে পারে। ২. সিনেমাটোগ্রাফি মাইন্ডব্লোয়িং।

বাংলাদেশের সবুজ যে একটু অন্যরকম সুন্দর, সেটা অনেকেই ঘন্টার পর ঘন্টা দেখিয়েও ফোটাতে পারেন নাই, এ ছবিতে অল্পকটি শটেই সেটা সম্ভব হয়েছে। ৩. এমন অসাধারণ এন্ডিং পৃথিবীর খুব বেশি ছবিতে নেই। শেষ দশ মিনিট দেখার ছবির বাকিসময়ের সবকিছু ছাপিয়ে একটা কথায়ই মাথায় কাজ করে, ব্রিলিয়ান্ট এন্ডিং। এবার বলছি, কেনো বাংলা ভাষাভাষিদের কাছে ছবিটা একটু খাপছাড়া লাগবে? কারণ আমরা সাধারণত পেরালার লাইফের গল্পে অভ্যস্ত না। আমাদের বেশিরভাগ ছবির গল্প হয় এক লাইনের, লিনিয়ার।

গল্প বলার ঢংটা বিদেশী, খুবই স্বাভাবিকভাবে। উপমাগুলোও। যেমন, বিগ ফিশের উমপাটা সাধারণত আমেরিকায় আগত সিসিলি দ্বীপের গডফাদারদের গল্পে বেশি পাওয়া যায়। ছবিতে সবাই অনেক চিৎকার করে কথা বলে। ডিরেক্টরের জন্য এই অবজারভেশনটা স্বাভাবিক।

আমরা যারা ঘটনার একটি অংশ তারা অনেকসময় বুঝতে পারিনা আমরা কিভাবে কথা বলি, মুখের এক্সপ্রেশান তখন কেমন হয়। একজন বিদেশীর কাছে বিষয়টা সম্পূর্ণ নতুন, ফলে সে আমাদের ওভাবে দেখে। আমার সবচেয়ে যেটা খারাপ লেগেছে সেটা হচ্ছে ডায়ালগ। এতে আমি ডিরেক্টরের বিন্দুমাত্র দোষ দেখি না। কারণ, যদি আমার ভুল না হয়, সে নিজেই ভালো বাংলা জানার কথা না।

আমার ধারণা, স্ক্রিপ্টটা প্রথমে ইংরেজিতেই লেখা হয়েছে। তারপর বাংলাদেশের কোন আবুল টাইপের অনুবাদক কে দিয়ে অনুবাদ করা হয়েছে যে নিজে একটা বড় ছাগল। আমাদের বাজারে সবসময় বিদেশী বেস্টসেলার বইয়ের বাংলা ভার্সন বের হয়ে যায়। অত্যন্ত বাজে অনুবাদের এইসব বইগুলো কিনে পড়তে গেলে যেমন হয় ঠিক তেমনি এই ছবির ডায়ালগগুলো শুনতে লেগেছে। সেবা প্রকাশনির অনুবাদ এখনো আমার কাছে সেরা মনে হয়, কারণ সেবার অনুবদা পড়ে আমার কখনো মনে হয়নি সেগুলো অনুবাদ।

মনে হয়েছে লেখক বুঝি বইগুলো নিজেই বাংলায় লিখেছেন, এতটাই সাবলিল। যাইহোক, উধাও প্রসঙ্গে আসি। ডায়ালগের দুর্বলতা, গল্পের কিছু অংশ নিয়ে তর্ক করলে করা যাবে। কিন্তু শেষ দশমিনিট দেখার পর আমার মনে হয় না কেউই এসব নিয়ে আর মাথা ঘামাবেন। ছবির পোস্টারে একটা কথা লেখা আছে ইংরেজিতে।

এসকেপ ইজ নট এন অপশান। কথাটা আমাদের দেশের মানুষের জন্য খুবই যথার্থ । আমরা আসলে সবসময় পালিয়ে বেড়াতে পছন্দ করি। সেটা আমাদের নেতা-নেত্রী থেকে শুরু করে সবার মধ্যে এই প্রবণতা আছে। আমি দায়িত্ব নিতে একটু ভয় পাই।

কিন্তু আঙ্গুল তুলে আরেকজনের কাঁদে দায়িত্ব চাপাতে আমরা খুব পারদর্শী। সবকিছু মিলিয়ে আমি বলব, অন্তত শেষ দশ মিনিটের চমক/টুইস্টটা দেখার জন্য হলেও ছবিটা দেখুন। শুরু থেকে একটু ধৈর্য্য ধরেই দেখুন।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।