Shams
সোশ্যাল নেটওয়ার্কিংয়ের যুগে বাস করা এমন মনিষ্যি কি আছে, যার ফেসবুকে অ্যাকাউন্ট নেই? মানে হয় না। ফেসবুক ছাড়া চলবে কী করে। কীভাবে লন্ডনে হায়ার স্টাডি করতে যাওয়া বন্ধুর সঙ্গে যোগাযোগ করব? কী করেই বা সিডনিতে থাকা ভাইয়ার ছবিগুলো দেখব? আর আমি? আমার আপডেট স্ট্যাটাস যদি বন্ধুরা দেখতেই না পেল, ছবিগুলো যদি লাইক করতেই না পারল, তাহলে আর এতসবের মানে কী। সেলিব্রেটিদের লেটেস্ট ট্যুইট না দেখলে বন্ধুরা যে ছি ছি করবে। সুতরাং ফেসবুক, ট্যুইটার মাস্ট।
যত ব্যস্ততাই থাকুক সোশ্যাল নেটওয়ার্ক থেকে ভ্যানিশ হলে চলবে না। আমরা সবাই এমনটাই ভাবি। বেড়াতে গিয়েছি তো সঙ্গে সঙ্গে ছবি আপলোড করতেই হবে। ফিরে আসা অবধি অপেক্ষা করা চলবে না।
কখন ঘুম থেকে উঠলাম, ব্রেকফাস্টে কী খেলাম, কী রঙের পোশাক পরলাম, ক্রমাগত ট্যুইট না করা গেলে চলবে? যে বন্ধুদের সঙ্গে কখনও স্কুল-কলেজে কোনও সম্পর্ক ছিল না, সব ক’টা ছবি তাদের পছন্দসই হওয়া চাই।
আসলে মনুষ্য চরিত্র বড়ই অদ্ভুত। বিশেষত মানুষের মন। অন্যের সম্বন্ধে জানতে যেমন আগ্রহী, তেমনই আগ্রহী নিজের সম্বন্ধে জানাতে। বন্ধুর বিয়েতে কিরকম সাজলাম, কোথায় হলিডেতে গেলাম বন্ধুদের না জানালে মান থাকে? বিদেশে এত টাকা খরচ করে হলিডে ডেসটিনেশন পছন্দ করা কি আর এমনি এমনি? কিন্তু আমরা কখনোই ভেবে দেখি না এর ফল কত গুরুতর হতে পারে। অতিরিক্ত মাত্রায় ভার্চ্যুয়াল ওয়ার্ল্ডে মনোনিবেশ করলে মানুষ বাস্তব থেকে ক্রমশ দূরে চলে যেতে থাকে।
পুরো জীবনটাই ‘লাইক’, ‘ফলো’ আর ‘কমেন্ট’-এর মধ্যেই সীমাবদ্ধ হয়ে পড়ে। আটকা পড়ছেন সোশ্যাল নেটওয়ার্কের ভার্চ্যুয়াল দুনিয়ায়। ফেসবুকে ছবিতে বা কমেন্টে লাইক না পেলে মন খারাপ হয়ে যায়? ট্যুইটারে বন্ধুরা আপনার পোস্ট ফলো না করলে তাদের ওপর বেজায় চটে যান? নিজের জীবনের সব খুঁটিনাটি সোশ্যাল নেটওয়ার্কে শেয়ার করতে ভালোবাসেন? তাহলে এখনই সাবধান হন। কারণ আপনি আক্রান্ত হয়ে পড়েন ফ্যাড (ফেসবুক অ্যাডিকশন ডিসঅর্ডার) এবং ট্যাডে (ট্যুইটার অ্যাডিকশন ডিসঅর্ডার)। ভাববেন না এটা একবারের সামান্য সমস্যা।
এর থেকে জš§ নেয় গভীর হতাশা, নিরাশা। প্রয়োজন পড়ে ডাক্তারি সাহায্যের। কেননা, দিনমান কাজ ফেলে ফেসবুক কিংবা ট্যুইটার অ্যাকাউন্ট খুলে বসে থাকবেন, তা তো হতে পারে না। এতে যেমন আপনার কাজের ক্ষতি, তেমনই মনেরও। আর মনের দরজা-জানালা খোলা থাকতেই পারে; কিন্তু আপনার ব্যক্তিগত জীবন, পছন্দ-অপছন্দ সাইবার দুনিয়ার মাধ্যমে ক্রমাগত প্রকাশ্যে আসতে থাকবেÑ তাও তো বাঞ্ছিত নয়।
সবমিলিয়ে সতর্ক হতেই হবে।
কী করে বুঝবেন আপনি আক্রান্ত
দিনে এক ঘণ্টার বেশি সময় সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটে কাটালে।
শুধুমাত্র ভার্চ্যুয়াল ওয়াল্ডেই বন্ধুদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখলে।
সারাদিন ধরে প্রোফাইল পিকচার বদলাতে থাকলে।
ক্রমশ খিটখিটে হয়ে পড়লে।
কারও সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে ইচ্ছা না করলে।
ঘুমের সমস্যা দেখা দিলে।
কী করবেন
পরিবারের সঙ্গে বেশি করে সময় কাটান। যারা কাছে আছে তাদের সময় দিন।
ফেসবুক, ট্যুইটারকে জীবন করে ফেলবেন না।
জীবনের একটা অংশ হিসেবে দেখুন।
কোনও শখ করুন। বই পড়-ন, গান শুনুন। নিজের সঙ্গে কিছুটা সময় কাটান।
সব সময় পজিটিভ চিন্তা করুন।
চিকিৎসা
ফ্যাড, ট্যাড বাড়াবাড়ি পর্যায়ে চলে গেলে মনোবিদদের সঙ্গে অবিলম্বে যোগাযোগ করুন। নিয়মিত কাউন্সেলিং করাতে থাকুন। এটা কোনও সমস্যাই নয়, নিজে থেকেই সেরে যাবে- এ ধরনের মানসিকতা রাখবেন না। বেশি বাড়াবাড়ি হলে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ খান। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।