মূর্তি নিয়ে যুক্তি
চোখের সামনে একটা খবর বার বার পাক পাড়ছে, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে একদল ধর্মভণ্ড শিক্ষক মুক্তিযুদ্ধের ভাস্কর্য নির্মাণে বাঁধা দিয়েছে; উপাচার্য বরাবর স্মারকলিপিও দিয়েছে। কারণ সিলেট নাকি শাহজালাল আর শাহপরানের পুণ্যভূমি; সেখানে মূর্তি নির্মাণ করা পাপ অর্থাৎ ইসলামে নাজায়েজ। তাহলে জোর দিয়েই বলতে ইচ্ছে করছে, এই বাংলাদেশ ত্রিশ লক্ষ শহীদের রক্ত, তিন লক্ষ মা-বোনের ইজ্জত আর এক নদী রক্তের বিনিময়ে এসেছে; কোন ধর্ম নিয়ে আসেনি; এখানে ভাস্কর্য হবে না তো কোথাই হবে? একাত্তর সালে কেউ ধর্মের জন্য যুদ্ধ করেনি। সকল মুসলমান-হিন্দু-খ্রিষ্টান-বৌদ্ধ ছিল ভাই ভাই। ইসলাম যদিও বলে সকল মুসলমান ভাই ভাই কিন্তু সেদিন পাকিস্তানিরা মুসলমান হয়েও নারী ধর্ষণ করেছিলো সুতুরাং নির্দ্বিধায় বলা যায় যারা ধর্ম নিয়ে যারা ব্যবসা করে তারা ইসলামের শত্রু, মুসলমানের শত্রু।
ভাবতেই অবাক লাগে এরা চিন্তাচেতনায় শিক্ষক না বলদ। এরা নামকরা বিশ্ববিদ্যালয়ে হাজার হাজার মেধাবী ছাত্রছাত্রীদের কী শিক্ষা দেবে? দেশের জন্য কী সুফল বয়ে আনবে? পাঠ্যপুস্তকের গণ্ডির মধ্যে নিজেদের বন্দী করে রেখেছে, অন্যদের বন্ধী করতে চায় ধর্মান্ধে। তাঁর যেটিকে মূর্তি বলছে এটি আসলে মূর্তি না, তারা তো নিজেরায় বোকার রাজ্যে বাস করছে, বুঝবে কী করে! কারণ তা পূজার জন্য তৈরি হয়নি, তা বহন করবে আমাদের ইতিহাস, ঐতিহ্য, বাঙালীর জাতিসত্ত্বা, মুক্তিযুদ্ধের অমরগাথা গৌরবভাণ্ডার। এরা আসলে মানুষের ধর্মীও অনুভূতিতে আঘাত করে পুরো জাতিকে মুক্তিযুদ্ধ চেতনার বাইরে রাখতে চায়; যে কাজটি করে জামাতি, শিবির, মৌলবাদী; এখনো করে আসছে। একজন বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া ছাত্র হিসাবে আমি হতভম্ব! কী করে এই শিক্ষিত সমাজ এতো মূর্খ হতে পারে? আমরা যাই ভাবি না কেন ওরা মূর্খ না, ওদের অন্তঃরে গাঁথা আছে মৌলবাদের কালো থাবা, মস্তিষ্কে আসে অন্ধবাসনা।
এক সালের নির্বাচনের আগে মাওলানা নজরুল ইসলাম বলেছিলেন,( লোকমুখে শুনেছি) আওয়ামীলীগকে ভোট দিলে তার জন্য জান্নাত হারাম হয়ে যাবে( নাউজুবিল্লাহ)। অন্য একজন বলেছিলেন, যে আওয়ামীলীগকে ভোট দেবে আমি তার জানাজা নামাজ পড়াব না। এভাবেই তারা এক সালের নির্বাচনে সফল হয়েছিলো। সাইদির অশিক্ষিত অন্ধ ভক্ত জন্মেছিল। ধর্মের তো কোন হাত পা নেই যে ওদের লাথি মারবে, যে যার ইচ্ছা সেভাবেই ধর্ম নিয়ে খেলে যাচ্ছে।
এখন শিক্ষিত জাতি সচেতন হয়েছে বটে কিন্তু ভণ্ডপণ্ডিতেরা থেমে নেই। এরা এদেশে বাস করেও পাকিস্তান ভুলতে পারেনা, কি করে ভুলবে? বঙ্গবাণী কবিতায় কবি আবদুল হাকিম কি স্বাদে বলেছিলেন, তাহার জন্ম নিন্নয় ন জানি! জাহাঙ্গীরনগর, বুয়েট সব শিক্ষক আন্দোলনে জামাত শিবিরের প্রত্যক্ষ সম্পৃক্ততা পাওয়া যায়; নিচ্ছয় এখানেও বাদ যাবে না। একাত্তরের দালাল, রাজাকার, যুদ্ধাপরাধী, নারীধর্ষক, সম্পদলুণ্ঠনকারীদের যখন বিচার কাজ চলছে ঠিক তখন তাদের সবখানে স্বকীয় হয়ে এদেশের মুক্তিচেতনাকে বাঁধা দেওয়া মনভাব দেখা যাচ্ছে। তাই চুপ করে থাকলে একদিন ওরা এদেশকে পাকিস্তানের হাতেই তুলে দিবে অর্থাৎ জঙ্গিতে ছেয়ে দিবে। আশা করি সরকার তাদের কঠোর হস্তে দমন করবে।
এই স্বারকলিপি প্রদানকারী শিক্ষকেরা দেশের শত্রু, জাতির শত্রু, মুক্তিযুদ্ধের শত্রু, ধর্মের শত্রু। এরা তা নিজ স্বাক্ষরেই প্রমাণ দিয়েছে, এদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া জরুরী যাতে কেউ যেন মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে আঘাত হানার দূরসাহস না পায়। শেষ কথাটা অনেকক্ষণ ধরে মাথার মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছে, ধর্মান্ধরাই ভাঙছে মসজিদ-মন্দির-উপাসনালয়; যে কেবল ধর্মের লাগি সাজিয়েছে কাজী (অপধর্ম! কোন ধর্মই অন্যায় সমর্থন করে না) সে তো বিবেক ঘাতক।
১০ জানুয়ারি ২০০১৩ মোরশেদ আনাম
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।