আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আমি কি নরকে আছি?

জানি না কেন লিখি! তবু লিখি মনের খেয়ালে, পরিবর্তন করার মানসে, পরিবর্তিত হওয়ার মানসে। যদিও জানি সব ব্যর্থ হচ্ছে। তবুও আমি আছি সেদিনের সেই আলোকময় প্রত্যুষার আগমনের অপেক্ষায় ভাবিয়া আমি অবাক হইয়া যাই আমি কি দুনিয়ার বুকে আছি, নাকি নরকে আছি! স্রষ্টার কিতাবে স্রষ্টা লিখিয়াছেন নরকের প্রহরীরা নাকি অতিশয় নির্দয় এবং কঠোর। তাহাদের হৃদয়ে নাকি কোন প্রকার দয়া মায়া নাই। তাহারা কালা এবং বধির।

নরকের অধিবাসি কীটদের সাথে নাকি তাহারা নির্দয় নিষ্ঠুর আচরণ করিয়া থাকে। তাহদের আর্ত চিৎকারে নাকি প্রহরীদের হৃদয়ে কোন প্রকার দয়ামায়ার উদ্রেক হয় না। অতিশয় স্বাভাবিক। কেননা যদি তাহাদের হৃদয়ে দয়ামায়ার উদ্রেকই হইতো, তবে তো তাহারা দয়াপরবশ হইয়া তাহাদের উপর স্রষ্টার অর্পিত দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হইয়া যাইতো। তাহারা যেনো তাহা না করিতে পারে সেই জন্য স্রষ্টা তাহাদের হৃদয়ে নরম হওয়ার মতো এই গুণগুলি দান কোরিলেন না।

সুতরাং নরকের অধিবাসীদের কে শাস্তি দানের এই আনুষ্ঠানিকতায় কোন ব্যাঘাত ঘোটিতেছে না। অপরদিকে স্বর্গে পাহারাদারের কোন উপস্থিতি নেই। ঐ স্থানে যাহারা স্বর্গের অধিবাসীদের সেবাকার্র্য্যে নিয়োজিত থাকেন তাহারা নাকি কোন প্রকার উচ্চবাচ্চ কোরিবেন না। বরং তাহারা স্বর্গবাসিদের উদ্দেশ্যে সর্বদা অভিবাদন করিয়া বোলিয়া থাকেন সালাম, সালাম, শান্তি আর শান্তি। তাহাদের সংস্পর্শে গেলে শান্তি অনুভব হোয়ে নিজের যে মর্যাদা আাছে তাহা বুঝা যাইবে এবার আসা যাক কেন আমি এতো উদ্বেগাকুল এবং কেনো এতোটা বিচলিত।

আমাদের মর্ত্যরে বুকে যাহারা আমাদের পাহারা দিয়া থাকেন, তাহাদের আচরণের দিকে লক্ষ্য করা যাক। আমাদের মর্তবাসিদের শান্তি শৃঙ্খলা রক্ষার জন্য সরকারগুলো বিভিন্ন নামে যে সকল আইন শৃঙ্খলা নিয়োগ দিয়াছেন তাহাদের আচার আচরণ দেখিয়া আমার মনে হয় আসলে আমরা নরকে বসবাস করিতেছি। তাহাদের সামনে কোন কথাই বলা যায় না। তাহারা সর্বদা যেনো আমাদের মারিবার জন্য উন্মুখ হইয়া আছেন। আইন অমান্যকারী আর আইন পালনকারীর সাথে ব্যবহারের কোন তারতম্য পরিলক্ষিত হয় না।

তাহাদের কালো চশমার কাচ ভেদ করিয়া মনে হয় সকলকে অপরাধী হিসাবেই দেখিয়া থাকে। কিন্তু আমাদের সরকারগুলোর লিখিত বিধানগুলি পড়িলে মনে হয় আসলে তাহারা আমাদের সেবা দাস। বিধান অনুসারে তাহাদের উচিৎ আমাদের “স্যার” বলা। থানাগুলোতে গেলে বলা উচিৎ ছিলো, “স্যার, আসুন! আসুন!! বলুন, আপনার জন্য কি সেবা দিতে পারি?” কিন্তু বাস্তব চিত্র কি তাহা না বলাই উচিৎ। কেননা প্রত্যেক নাগরিক মাত্রেই জানেন আসলে কি অবস্থা! ঢের ঢের দেখা আছে যে, শুধুমাত্র পুলিসকে স্যার না বোলিয়া কেন “ভাই” সম্বোধন করা হোইলো, তাহা নিয়া কতটা হেস্ত নেস্ত করা হোইলো এই মর্ত্যরে অধিবাসিকে।

থানায় গেলে স্যার বোলা তো দুরে থাকুক, টাকা পয়সা দিয়েও কাজ হয়না। কথিত আছে থানা, কোর্ট-কাচারীর মাটিও নাকি ঘুস খাইয়া থাকে। টাকা পঁয়সা আদায় করার পরেও মর্ত্যরে অধিবাসিদের সাথে এমন আচরণ করা হয় যেনো তাহারা মনুষ্য সন্তান নহে, তাহারা গরু-ছাগল কিংবা ইতর প্রাণির অন্তর্ভুক্ত। সুতরাং এই রকম দৃশ্য দেখিয়া আমার শুধুই মনে হয় আসলে আমরা কি নরকে বসবাস করিতেছি? আর আমাদের মধ্যে শান্তি শৃঙ্খলার জন্য যাহারা নিয়োজিত আছেন তাহারা কি এই নরকের প্রহরী? আমার তো মনে হয় প্রকৃতই নরকের সাথে বিলকুল মিল রহিয়াছে। নতুবা একটা পার্থক্য তো থাকার প্রয়োজন ছিলো! কেননা, নরকের প্রহরীদের বেতন তো আর নরকের অধিবাসীরা দিয়ে থাকে না, কিংবা তাহাদের বেতনের প্রয়োজনও হয় না।

তাহাদের বেতন স্রষ্টাই দিয়া থাকেন। সুতরাং নরকের পাহারদাররা নরকের অধিবাসিদের কোন ব্যাপারে মুখাপেক্ষী নহে। কিন্তু মর্ত্যরে প্রহরীদের বেলায় তাহা নহে। তাহারা মর্ত্যের বাসিন্দাদের পরিশ্রমে অর্জিত অর্থের ভেট, কর, সম্পদের খাজনা ইত্যাদি সরকারের কোষাগারে জমা করিয়া তাহা হইতে বেতন নিয়া থাকেন। বুঝলাম, নরকের প্রহরীরা কোন ব্যাপারে নরকের অধিবাসিদের কাছে দায়বদ্ধ নহে, কিন্তু মর্ত্যরে পাহাদারদের ক্ষেত্রে তো তাহা নহে, তাহারা তো মর্ত্যের বাসিন্দাদের নিকট সরাসরি মুখাপেক্ষী।

সুতরাং অন্ততপক্ষে এই দিকটি বিবেচনা করিয়া তাহাদের উচিৎ মর্ত্যের জনতার সাথে এতটা কাহ্হার না হইয়া কিছুটা রহমদীল হওয়া। মানুষকে সামান্য হোলেও মানুষ মনে করা উচিৎ। অপরাধিদের সহিত না হয় খারাপ ব্যবহার করা হোইলো। যদিও অপরাধীরাও মানুষ। যেহেতু এই ভু-মণ্ডল স্বর্গভুমি নয়, আমাদের শাসকেরা এ ধরাকে স্বর্গভুমি গড়িতে ব্যর্থ্য হইয়াছেন, সেহেতু মানুষ চোর বাটপার হইতে বাধ্য হইতেছে।

সুতরাং আমাদের মর্ত্যের প্রভূরা যতদিন আমাদেরকে একটি স্বর্গধরা উপহার না দিতে পারিতেছেন, ততদিন অন্ততপক্ষে সরকারের প্রহরীদের একটু নসিহত করিয়া দেওয়া উচিৎ যেনো তাহারা আদম সন্তানদের প্রতি কিছুটা দয়ামায়াশীল হোন, তাহাদের ব্যথায় ব্যথিত হোন, তাহাদের আনন্দে আনন্দিত হোন। নচেৎ আমার মতো কোন হতভাগা ট্যাক্সদানকারী আদমী যদি মর্ত্যকে নরক বোলিয়া আখ্যায়িত করিয়া বোসে তাহলে আপত্তি করিবার কিছু থাকিবে না। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.