আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

দু’নেত্রীর ফোনালাপ ও রাজনীতির গতিপথ

কবি হওয়ার ভান করি, উদাস হই; ভালোবাসার মাহাত্ব খূঁজি

:: রাশেদুল হাসান :: দেশ ও দেশের রাজনীতি সম্পর্কে এক আধটু চিন্তা করেন না এমন মানুষ খুব কমই আছে। টেলিভিশন টক শো ছাড়াও খবরের কাগজে চিন্তাশীলরা সব সময় রাজনীতির ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কার কথা জানান। রাজনীতির মঞ্চ, পাড়া-মহল্লার চায়ের দেকানে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে প্রধানমন্ত্রী ও বিরোধী দলীয় নেত্রীর ফোনালাপ। সংলাপ, সমাধান নিয়ে খেটে খাওয়া মানুষের চিন্তা দেখে অবাক হই। এ কথা অস্বীকার করার জো নেই বিগত বছরগুলোতে সরকারী দল বিরোধী দমনে সর্বদা সচেষ্ট থেকেছে পুরনো স্মৃতিকে আকড়ে ধরে।

মামলা, হামলা, জেল, জুলুম, নির্যাতন রেকর্ড ছাড়িয়েছে। গুম নামক শব্দটি মানুষের ঘুম হারাম করে দিয়েছে। লাখ লাখ বিরোধী নেতাদের জেলে পুরে রাষ্ট্রপতি কর্তৃক নিজদলীয় চিহ্নিত সন্ত্রাসীদের ক্ষমা করে সরকার ক্ষমার অসাধারণ নজির সৃষ্টি করেছে। তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল, গণজাগরণ মঞ্চের মত নাটক, হেফাজত সৃষ্টির মত সংবাদপত্রের স্বাধীনতা কেড়ে নিয়ে বারবারই চমক সৃষ্টি করেছে সরকার। দশ মিনিটে দশ লাখ মানুষ (কতিপয় সরকারদলীয় মতাদর্শী মিডিয়ার মতে) হটানো, পাখির মত গুলি করে মানুষ হত্যার মত মহাজোট সরকারের অসংখ্য চমক, চমক সৃষ্টি করেছে।

এ নিবন্ধে মহাজোট সরকারের আর কোন চমক আমার মত অর্বাচীনের পক্ষে তুলে ধরা সমীচিন মনে করি না। আমার কেন জানি মনে হয়, রাজনৈতিক নেতারা সাধারণ মানুষকে বোকা ভাবে। কিন্তু তাদের এ বোধটুকু নেই এ সাধারণ মানুষের ভোটেই ক্ষমতার উত্থান-পতন ঘটে। এ লেখকের সাথে বোদ্ধা পাঠকসহ অনেকেই একমত হবেন যে, দেশের রাজনৈতিক অস্থিরতা ধৈর্যের সীমানা অতিক্রম করছে। কিন্তু আজকের লেখার বিষয়বস্তু এটা নয়।

দেশের চলমান বর্তমান পরিস্থিতির সার্বিক দিক বিবেচনা করে দেশের রাজনীতির গতিপথ নির্ণয়ে সচেষ্ট থাকবো। দেশে চলমান অস্থিতিশীল অবস্থার একটা সমাধান চায় মানুষ। অনেকের মতে এ সংকট নিরসনে একটা সংলাপ জরুরী। কিন্তু কার সাথে কার সংলাপ। দু’জোটের সংলাপ, নাকি আওয়ামীলীগ-বিএনপি সংলাপ।

যেহেতু, দু’জোটেই একাধিক রাজনৈতিক দলের সমন্বয়ে গঠিত এবং তাদের নিজস্ব রাজনৈতিক মতাদর্শ রয়েছে সেহেতু তাদের নিয়েই সংলাপ হওয়াটা অত্যাবশ্যকীয়। কিন্তু বিরোধীদলীয় নেত্রীর আলটিমেটাম ও হরতালের ডাক এবং প্রধানমন্ত্রীর খাওয়ার দাওয়াত তেমন চমক সৃষ্টি করতে পারেনি। সাইত্রিশ মিনিটের ফোনালাপে দেশ ও দেশের জনগণের কথা না বলে একে অন্যকে দোষারোপ করে উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় সাধারণ মানুষকে হতাশ করেছে। আমাদের মতে রাখা দরকার, সংলাপ মানুষের স্বার্থে কারো জন্মদিন বা মৃত্যু দিন পালনের জন্য নয়। সংলাপ সহিংসতা বন্ধের জন্য রাতের ডিনারের জন্য নয়।

এর আগের আমার একাধিক লেখায় তুলে ধরার চেষ্টা করেছি, আমাদের রাজনৈতিক নেতাদের দেশ ও মানুষের প্রতি ভালোবাসা নজির। পুরো কথোপকথন পর্যালোচনা করলে হতাশ হতে হয়। মানুষের জন্য কোন ম্যাসেজ নেই। এ কথোপকথনের ঘিরে হার-জিতের হিসেব কষতে দেখা গেছে অনেক মোটা মাথার বুদ্ধিজীবিদের। সংলাপ নয়, হরতাল প্রত্যাহারের জন্যই বিরোধীদলীয় নেতাকে প্রধানমন্ত্রী ফোন করেছিলেন।

সোস্যাল মিডিয়ায় দু’নেত্রীর ফোনালাপ নিয়ে বিতর্কের ঝড় ওঠে। অনেকের মতে, সংলাপের জন্য যে আন্তরিকতার দরকার ছিলো তা ছিলো না ফোনালাপে। এ নিবন্ধে দু’নেত্রীর ফোনালাপের পর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় লেখা-লেখির সুবাধে ঘনিষ্ট কয়েক সহকর্মীর মন্তব্য তুলে ধরার চেষ্টা করবো। কবি ও বহুমাত্রিক লেখক সাযযাদ কাদির তার ফেসবুক স্ট্যটাসে লিখেছেন, ‘আমন্ত্রন না আক্রমন?’। বিতর্কিত ব্লগার আসিফ মহিউদ্দিন লিখেছেন, ‘পুরো আলাপে খালেদা জিয়াকে উত্তেজিত মনে হচ্ছিল এবং সেটা স্বাভাবিক ব্যাপার।

বিরোধী দলে শেখ হাসিনা থাকলে তিনিও হয়তো এরকমই থাকতেন। কারণ পরিস্থিতি এবং চেয়ার মানুষের আচারণ নিয়ন্ত্রন করে। ফোনালাপ শুনে মনে হলো এইচটি ইমাম সাহেব মনের মাধুরী মিশিয়ে একটু বেশিই বলেছেন। খালেদা জিয়া মুক্তিবাহীনীকে গণহত্যাকারী বলেননি, বলেছেন মুক্তিযুদ্ধের পরে তৎকালীন আওয়ামীলীগ সরকারের হত্যাকান্ড সম্পর্কে। এ ধরণের অভিযোগ খালেদা জিয়া করতেই পারেন।

’ ইমাম হাসান রুমী নামের তার ফেসবুকে বলেন, শেখ হাসিনা সাধারণত এত নরম সূরে কথা বলেন না। তাহলে কি উনি জানতেন ফোনালাপ রেকর্ড করা হচ্ছে। দাবার চাল মনে হয় ভূল হয়ে গেল। মানুষ শুনলে অন্তত বলবে খালেদার কথায় যুক্তি ছিলো তাই হাসিনা উত্তর দিতে পারেন নাই। বিতার্কিক আবদুল্লাহ আহম্মেদ শুকরানা বলেছেন, ধৈর্যশীল হাসিনা বনাম উদ্ধত খালেদার মধ্যে যার যা পছন্দ বেচে নেই।

জাবির হাসান নামের ছাত্র ইউনিয়নের এক কর্মীর স্ট্যাটাস ছিল এমন, পুরো ফোনালাপে খালেদা জিয়ার আধিপত্য ছিলো, যেখানে হাসিনা ছিলো অসহায়। সাইয়্যেদ নুর কামাল বলেছেন, বাংলাদেশের মানুষ আক্রমণাত্মকভাবে কথা বলতে পছন্দ করে। সুতরাং এ ফোনালাপে বিএনপিই বেশি লাভবান হবে। মাহবুব মোর্শেদ নামের আরেক ব্লগার বলেছেন, ফোনের ফলটা সরকারী দলের পক্ষেই গিয়েছিলো। কিন্তু কথোপকথনটা ফাঁস হওয়ার পর বোঝা গেল, এই ফোনে আসলে আলোচনা শুরু হওয়া অসম্ভব ছিলো।

ফোনালাপ ফাঁস হওয়ার পর সাধারণ মানুষেরই লাভ হলো। তারা বুঝতে পারলেন, আসল ঘটনা। দুটি ক্ষতি হলো আওয়ামীলীগের। ১. দলটির বিরুদ্ধে ব্যক্তিগত গোপনীয়তা, সভ্যতা, ভব্যতা ও সামাজিক চুক্তিভঙ্গের অভিযোগ উত্থাপন করা যাবে। ২. গত দু’-তিনদিন যাবত সবাই বিরোধীদলকে দায়ী করেছিলো দাওয়াতে না যাওয়া ও হরতাল অব্যাহত রাখার কারণে।

এখন সবাই বুঝতে পারলো সরকারের অবস্থারও ঠিক দাওয়াত ছিলো না। সাংবাদিক খোমেনী ইহসান বলেছেন, ‘পৃথিবীর ইতিহাসে কোন প্রধানমন্ত্রী কোনদিনই বিরোধী দলীয় নেতার কাছে এভাবে অপমানিত হননি। ’ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ছাড়াও ভার্স্যুয়াল মিডিয়ায় এভাবেই বিতর্কের শুরু হয়। সংকট সমাধানে দু’নেত্রীর ফোনালাপ কতটা ফলপ্রসু হবে তা আর বুঝতে বাকি নেই বোদ্ধা পাঠকদের। হরতাল প্রত্যাহার আর তত্ত্বাবধায়ক সরকার পূনর্বহাল আর সর্বদলীয় মানার যে কষরত আমরা দেখেছি তাতে মনে হয়না রাজনীতি তার আপন গতিতে চলবে।

খালেদার তত্ত্বাবধায়কে আসক্তি অন্যদিকে ফের ক্ষমতা দখলে হাসিনার সর্বদলীয় সরকার পদ্ধতিতে বিরোধীদলকে নির্বাচনের অংশনেয়ার জন্য কূটকৌশল দেশের রাজনীতির জন্য অশনি সংকেত। অনেকের মতে চলমান পরিস্থিতি চলতে থাকলে ফখরুদ্দিন- মঈনউদ্দিনের মত তৃতীয় শক্তির উত্থান হবে, সহিংসতা বৃদ্ধি পবে। এর দায় নেবে কে? বিরোধীদলীয় নেত্রী না প্রধানমন্ত্রী। আসলে কোন সংলাপ হবে কিনা এ বিষয়টি সংশয়ের মধ্যেই রয়ে গেছে। প্রধানমন্ত্রী বিরোধীদলের নেত্রীকে ডেকেছেন সকল দলের নেতাদের সাথে সর্বদলীয় সরকার নিয়ে কথা বলছেন এজন্য।

সংকট সমাধানের জন্য নয়। আবার বিরোধী দল সংলাপের জন্য প্রস্তুত হলেও তারা কথা তুলবেন জামায়াতকে নিয়ে। জামায়াত যুদ্ধাপরাধী তারা সংলাপে আসতে পারবে না। অন্যদিকে আঠার দলের শরীকদের অন্যতম জামায়াতে ইসলামী। তাদের ছাড়া বিএনপি সংলাপে বসার সম্ভাবনা একেবারেই ক্ষীণ।

ফলে সহিংসতার মধ্য দিয়ে সংলাপ সংলাপ খেলা আর কত দিন দেখতে হবে জানিনা। তবে সাধারণ মানুষ চায় যে পদ্ধতিতেই হোক সকল দলের অংশগ্রহণে একটি অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন। লেখক : সহ-সম্পাদক, দৈনিক ফেনীর সময় ও ফেনী সংবাদদাতা, দৈনিক বর্তমান।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.