লিখে খাই, সবার ভাল চাই
রাজনীতির আকাশ বরাবরই মেঘাচ্ছন্ন। কখনও ঝড়, ঘূর্ণিঝড় আবার কখনও টর্নেডোর পূর্বাভাস। আর এতে আতঙ্কিত দেশের মানুষ। চরম উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা নিয়ে ঘর থেকে বাইরে আসে তারা। আবার ঘরে ফিরে একই উৎকণ্ঠা নিয়ে।
ঘুমুতে গেলেও শান্তি নেই। সকালে উঠে আবার কি শুনতে হয়। এরকম এক গুমোটবাঁধা আকাশে হঠাৎ রোদ। মেঘকে দূরে সরিয়ে রোদেলা আকাশ আলো ছড়িয়ে দেয় ৬৮ হাজার গ্রামে। মানুষ আশ্বস্ত হতে থাকে।
আনন্দে আত্মহারা তারা। নিশ্চিন্তে ঘুমুতে যায়। মাত্র একদিন। ২৬শে অক্টোবর। সন্ধ্যা ৬টা।
প্রধানমন্ত্রী ফোন করেন বিরোধী নেত্রীকে। ৩৭ মিনিট কথা হয় তাদের। ইতিমধ্যে তাদের দু’জনে কি কথা হয়েছে মিডিয়ার কল্যাণে জেনে গেছেন দেশবাসী। দিনের বেলা তথ্যমন্ত্রী বলেছিলেন দুই নেত্রীর কথোপকথন প্রকাশ করা হবে। গভীর রাতে একটি বেসরকারি টেলিভিশন তা প্রচার করে।
পরদিন দেশের সব ক’টি টেলিভিশন তা প্রচার করে। এতে দু’নেত্রীর একান্তে আলোচনা একান্ত আর থাকেনি। তা প্রকাশ হয়ে পড়েছে সর্বত্র। এতে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে বিভিন্ন মহলে। কেউ বলছেন প্রকাশ করা ঠিক হয়নি।
কেউ বলছেন, জনগণের জানার অধিকার আছে। আবার দু’পক্ষই লাভ-ক্ষতি খুঁজছেন এ থেকে। দুই নেত্রীর ফোনালাপের ওই একদিনই আকাশে রোদ হেসেছিল। কিন্তু মেঘের সঙ্গে কুলোতে না পেরে রোদ হার মানে। আড়ালে চলে যায়।
আবার মেঘাচ্ছন্ন হয়ে পড়ে রাজনীতির আকাশ। মানুষ ফের আতঙ্কে রাত কাটায়, দিন কাটায়। অনিশ্চিত এক যাত্রায় বাংলাদেশ। কোথায় গিয়ে ঠেকে এর রেশ কারও জানা নেই। ভাবা হচ্ছিল ফোনের পর দেশ শান্ত হবে।
আলোচনা হবে। সংলাপ হবে। না, কিছুই হয়নি। বরং ফোনালাপ প্রচার হওয়ায় দু’দলের দূরত্ব যেন বেড়েছে যোজন যোজন। এ ক’দিন ধরে ফোনালাপ বিতর্কই চলছে দেশজুড়ে।
বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে একটি প্রশ্নÑ স্বাধীনতার ৪২ বছরে দেশ কতটুকু এগিয়েছে? রাজনীতিতে অন্যদলের প্রতি শ্রদ্ধা কতটুকু বেড়েছে? সহনশীল হতে পেরেছে কি রাজনীতিকরা? সব উত্তরই হবে না। তবে উন্নয়নে বাংলাদেশ এগিয়েছে অনেক। অর্থনীতিতে এগিয়েছে বেশ। গড় আয় বেড়েছে বহু গুণ। গ্রামে গ্রামে আজকাল আর কুঁড়েঘর দেখাই যায় না।
সব জায়গায় স্থান করে নিয়েছে ইট, পাথরের দালান কিংবা টিন। মানুষ এখন আর না খেয়ে মরে না। শিক্ষার উন্নয়নে তো বিপ্লব ঘটেছে। রাজনীতিকদের হাত ধরেই এসব উন্নয়ন হয়েছে। কিন্তু সব উন্নয়নই মার খাচ্ছে রাজনীতিতে উন্নয়ন না হওয়ায়।
সবার আগে তো প্রয়োজন রাজনীতিতে উন্নয়ন। রাজনীতিতে হানাহানি, খুনোখুনি সব উন্নয়নকে ম্লান করে দিচ্ছে। বিশ্বে বাংলাদেশ সংঘাতপূর্ণ জাতি হিসেবে পরিচিতি পাচ্ছে। এবার এসব থেকে মুক্তি পাওয়ার সময় এসেছে। দেশের মানুষ আশা নিয়ে বসে আছে রাজনীতির নীতি পরিবর্তন হবে।
রাজনীতিকরা একে অপরকে শ্রদ্ধা করবেন। জনসভায় দাঁড়িয়ে আর গালাগাল দেবেন না। আক্রমণাত্মক বক্তব্য রাখবেন না। তারা দেশের জন্য, দেশের মানুষের জন্য হাতে হাত রেখে এগিয়ে যাবেন। দেশের গুরুতর সমস্যায় এক টেবিলে বসে সিদ্ধান্ত নেবেন।
একসঙ্গে সমাধানের পথ খুঁজে নেবেন। আর এটা সম্ভব আওয়ামী লীগ সভানেত্রী, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং বিএনপি চেয়ারপারসন, বিরোধী নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মাধ্যমেই। শুধু প্রয়োজন ইচ্ছার। এই ইচ্ছাটুকুই আশা করে দেশবাসী। দেশের মালিক যারা তারা।
তাদের সে আশা পূরণ হবে কি? ‘না’ কথাটি কেউ শুনতে চায় না। এখনই সময় দু’নেত্রীর এগিয়ে আসার। ফোনালাপ চালিয়ে যাওয়ার। তিক্ততা ঝেড়ে ফেলার। প্রধানমন্ত্রী ফের ফোন করুক আর না করুক বিরোধী নেত্রী পাল্টা ফোন করে সময় দিতে পারেন গণভবনে যাওয়ার।
আর দুই নেত্রী এক টেবিলে বসলেই ৯০ ভাগ সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। এটা দেশবাসী বিশ্বাস করেন। আশাও করেন। আশাহত জাতি আর আশাহত হতে চান না। দুই নেত্রীকেই হতে হবে পজিটিভ।
কারও কোন কথায় পাত্তা না দিয়ে নিজেরা ইচ্ছা নিয়ে এগিয়ে আসুন। দেখবেন রাজনীতির আকাশে ফের রোদ দেখা দেবে। মেঘেরা সব পালাবে। তখন হাসবে গোটা দেশ।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।