অরিত্রা ‘অ আ ক খ’ লিখতে পারে না, ‘এ বি সি ডি’ তো আরও না। রুপালি, কেয়া, সানজিদা, অথৈ-- ওর যত বন্ধু আছে, তাদের কেউও লিখতে পারে না। এত কম বয়সে কেউ লেখা শেখে না। তাদের কারও সবুজ কলম দূরে থাক, কোনো কলমই নেই। তার মানে বন্ধুদের মধ্যে সেই প্রথম এমন একটা কলম পেল।
খুশিতে অরিত্রা তাই ডগমগ হয়ে উঠল।
তবে মামা আবার অন্যরকম-- সে ভাবল, অরিত্রা এখনও লেখা শেখেনি, লেখার চেষ্টা করতে গিয়ে বলপেন এত জোরে চেপে ধরে যে সেটা নষ্ট হয়ে যায়। লিডপেন্সিলে এত জোরে ঠেস দেয় যে তার নিব ভেঙে যায়। বলপেনের কিংবা লিডপেন্সিলের বদলে ওকে বরং এখন পেন্সিল দেয়াই ভালো। পেন্সিলগুলো ভাঙতে ভাঙতে ‘অ আ ক খ’ ‘১ ২ ৩ ৪’ লিখতে শিখবে ও।
তবে একেবারে সাদামাটা পেন্সিল দিলে কেমন দেখায়! সে তাই এমন একটা পেন্সিল বক্স নিয়ে এল, যেটার পেন্সিলগুলো লম্বা অনেক; কিন্তু একদিকে তার নীল, আরেকদিকে লাল।
হোক পেন্সিল, অরিত্রার কিন্তু সেটা পেয়েও ভাল লাগল। খালা তাকে একটা ব্রেসলেট দিয়েছিল, সেটা বাম হাতে পরে লাল-নীল পেন্সিলটা ডান হাতে নিয়ে সে এমনভাবে তাকাল! পাশের বাড়ির নিতা আপুর নাকি মনে হল যে, এক্কেবারে স্কুলের বড় আপা। পরীক্ষার খাতা দেখতে দেখতে হঠাৎ মুখ তুলেছে, সামনের দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে মনে মনে আসলে চিন্তা করছে, কত নম্বর দেওয়া যেতে পারে এই খাতাতে। সব উত্তরের নাম্বার যোগ করে ৩৩-এর ওপরে গেলেই নীল পেন্সিলে খাতার উপরের দিকে লিখবে সেটা।
আর মার্কস যদি হয় ৩৩ এর নিচে, তাহলে লিখবে লাল কালিতে। লাল কালি মানে ফেল করেছে, নীল কালি মানে পাস করেছে।
এমন একটা পেন্সিল, আহ্, নীলও আছে, লালও আছে। ওদিকে আবার কলমটা সবুজ রংয়ের, ঠিক দীপিতা খালার শাড়ির মতো। অক্ষর লেখা শিখতে আর কয়দিন লাগবে! ভাবল অরিত্রা, কয়েকদিন পরেই সে ওই সবুজ কালি দিয়ে বাবার কাছে চিঠি লিখবে।
তারপর সন্ধ্যা হওয়ার পর সবাই চলে গেল। কিন্তু অরিত্রার চোখ আর কলম-পেন্সিলের ওপর থেকে সরতেই চায় না। একবার কলম হাতে নেয় তো আরেকবার নেয় পেন্সিল। একবার পেন্সিল দেখে তো আরেকবার ফিরে তাকায় কলমের দিকে। একবার পেন্সিলবক্সের মধ্যে থেকে সব পেন্সিল বের করে সেখানে কলম রাখে।
আরেকবার কেবল একটা পেন্সিল বাইরে রেখে সবগুলো পেন্সিলই বক্সের মধ্যে রাখে।
মা একবার বলল, “কলমটা দাও তো, দেখি কেমন লেখে!”
সঙ্গে সঙ্গে অরিত্রা কলমটা সরিয়ে নিল, “হ্যাঁ, আমি তোমাকে লিখতে দিই, আর তুমি কলমটা ভেঙে ফেল আরকি। রান্নাঘরে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দা দিয়ে অত শক্ত নারকেল ভাঙতে থাক তুমি! তোমার গায়ে কত জোর, জানি না আমি?”
শুনে মা হাসতে হাসতে বলল, “ঠিক আছে, পেন্সিলটা দাও। কাটার দিয়ে ওটার মুখ কেটে দিই। নইলে তো লিখতে পারবে না।
”
“ইস... পেন্সিল চাঁছতে গিয়ে তুমি খালি নিব ভেঙে ফেল, জানি না আমি?”
অতএব অরিত্রা তার সবুজ কলম আর লাল-নীল পেন্সিল মাকে ছুঁতেও দিল না। সেদিন তার ঘুমাতে যেতেও দেরি হল। এমনকি বিছানায় গিয়েও সে কলম আর পেন্সিলটা তার হাতের মধ্যে রেখে দিল।
মজার ব্যাপার হল, কলম আর পেন্সিলটা দেখতে দেখতে কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছে, তা সে নিজেও জানতে পারল না।
তবে পরদিন সকালে ঘুম ভাঙতেই অরিত্রা টের পেল, সবুজ কলমটা ক্যাপের কোণ দিয়ে তার কানের লতিতে এতক্ষণ সুড়সুড়ি দিচ্ছিল।
আর সেজন্যেই এত তাড়াতাড়ি ওর ঘুম ভেঙেছে। নইলে ঘুম তো তার কোনও দিনই নয়টার আগে ভাঙে না! তার ওপর আজ আবার শুক্রবার। আজ তো বাবাও দেরি করে বিছানা ছাড়ে। এই বাসায় মা ছাড়া আর কেউই এত ভোরে ওঠে না। আর মার যে কত ভোরে ঘুম ভাঙে, অরিত্রার জানা নেই তা।
সে শুধু জানে, মা এসে ডাকাডাকি করে বলেই না তার ঘুম ভেঙে যায়। তা না হলে আরও কতক্ষণ যে সে ঘুমিয়ে থাকবে, তাও তার জানা নেই।
তবে আজকের কথা আলাদা। আজকে সবুজ কলম তাকে সুড়সুড়ি দিয়ে জাগিয়ে তুলেছে। অথচ এখন বড় জোর ছয়টা কি সাড়ে ছয়টা বাজে।
এত সকালে ঘুম ভেঙে যাওয়াতে তার কি খুশি হওয়া উচিত? না কি রাগ করা উচিত? সেটা ঠিক করতে না পেরে অরিত্রা একদৃষ্টিতে সবুজ কলমের দিকে তাকিয়ে থাকে। ওদিকে সুড়সুড়ি দিয়ে সবুজ কলমটার বোধহয় ভয় হচ্ছে, অরিত্রা ওকে বিছানা থেকে ছুঁড়ে ফেলে দেবে। তাই এখন মটকা মেরে পড়ে আছে সেটি। দেখেই অরিত্রার হাসি পেয়ে যায়। হাসতে হাসতে সে লাল-নীল পেন্সিলটার দিকে ফিরে তাকায়।
বালিশের একেবারে কিনারে অঘোরে ঘুম দিচ্ছে পেন্সিলটা। ঘুমের মধ্যে বোধহয় সুন্দর স্বপ্নও দেখছে। হাতে নিলেই ওর ঘুম ভেঙে যাবে। সঙ্গে সঙ্গে স্বপ্নটাও ভেঙে যাবে ওর। অরিত্রা তাই মটকা মেরে থাকা সবুজ কলমটাকেই কেবল হাতে তুলে নিল।
তারপর বিছানা থেকে উঠে বারান্দাতে গেল।
এত সকাল অরিত্রা আর কোনও দিনই দেখে নি। কয়েকবার সে গ্রামে গেছে-- গ্রামে তো সবাই ভোরবেলাতেই ওঠে, কিন্তু সেখানেও সে এত সকালে ঘুম থেকে ওঠেনি। বারান্দায় দাঁড়িয়ে সাত-সকালের আকাশ, শহর, গাছগাছালি আর রাস্তাঘাট দেখতে দেখতে সে তাই অবাক হয়ে গেল। পথগুলো একেবারেই ফাঁকা।
রিকশা নিয়ে দুএকজন রিকশাওয়ালা উদ্দেশ্যহীনভাবে এদিক-সেদিক যাচ্ছে বটে, কিন্তু গাড়ি-বাস একদমই নেই। সকালবেলা হাঁটতে বেরুনো ২-৪ জন ছাড়া কোনও মানুষজনও নেই। সকালবেলায় পথ এত ফাঁকা থাকে! অথচ তাকে নিয়ে পথে বেরুলেই মা-বাবা তটস্থ হয়ে ওঠেন, না জানি কখন সে তাড়াতাড়ি হাঁটতে গিয়ে অথবা দৌড় দিয়ে একটা দুর্ঘটনা ঘটিয়ে বসে। আর এখন... আহ্, এখন রাস্তা কী ভীষণ ফাঁকা! ইচ্ছেমতো হাঁটতে, ইচ্ছেমতো দৌড়াতে কোনো ঝামেলা নেই। ওদিকে আবার আকাশ ফর্সা হয়ে উঠেছে।
বোধহয় আকাশটায় বিরাট একটা ফুটো হয়ে গেছে। সেই ফুটো দিয়ে হালকা বাতাস ছড়িয়ে পড়ছে সারা পৃথিবীতে। এরকম সময়ে যেদিকেই তাকানো যাক না কেন, মন ভরে যায়।
“কী, সুন্দর না?”
কারও কথা শুনে চমকে সবুজ কলমের দিকে তাকায় অরিত্রা। কলমটাই কথা বলল নাকি? না সে ভুল শুনল? বোধহয় ভুলই শুনেছে! কলম কি আর কথা বলে? সে তাই আবার আকাশের দিকে মুখ তুলে তাকাল।
সূর্যের লালচে আভাস ফুটছে সেখানটায়।
“জানতাম, তোমার ভাল লাগবে। এই জন্যই তো সুড়সুড়ি দিয়ে জাগালাম। ”
ও, তা হলে এই জন্যই সবুজ কলম সুড়সুড়ি দিয়ে তার ঘুম ভাঙিয়েছে! নাহ্, তা হলে তো ওর ওপর রাগ পুষে রাখা ঠিক হবে না। রাস্তার ধারের লিলি ফুলটার সাদা সুন্দর পাপড়ি আর রেণুগুলোর দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে অরিত্রা তার সব রাগ ফিরিয়ে নিতে থাকে।
ঝলমলে রোদ উঠেছে। একটুআধটু শাদা মেঘ ভাসলেও আকাশটা ভারি ফরসা। শেষ রাতে নিশ্চয়ই বৃষ্টি হয়েছে, তাই গাছের পাতাগুলোও ভীষণ সবুজ। এদিকে আবার তার হাতে একটা সবুজ কলম! তা হলে আজকের দিনটা ভালোই কাটবে-- ভাবল অরিত্রা।
ঠিক তখনই তার মনে হল লাল-নীল পেন্সিলগুলোর কথা।
মনে হলো, সেগুলো খুঁজছে তাকে। তাড়াতাড়ি বারান্দা থেকে ঘরের মধ্যে বিছানার কাছাকাছি চলে এল সে। দেখল, সত্যিই তাই, পেন্সিলের বক্সটা তার খোঁজ করতে করতে বালিশের ধার থেকে একেবারে বিছানার কোণে চলে এসেছে। আর একটু এগুলেই গড়িয়ে পড়বে মেঝেতে।
ওদিকে প্রতিদিনকার মতো সেদিনও মা তখন জেগে উঠেছে।
আর বেশ অবাকও হয়ে গেছে, এত সকালে অরিত্রার ঘুম ভেঙেছে বলে। বারান্দা থেকে তাকে ঘরে ঢুকতে দেখে অবাক কণ্ঠে মা বলে ওঠে, “তুমি বারান্দাতে ছিলে?”
“হ্যাঁ। কেন, বল তো? পেন্সিল বক্সটা কি বিছানা থেকে পড়ে গিয়েছিল নাকি?”
বলতে বলতে অরিত্রা বিছানার কোণ থেকে প্রায় ছোঁ মেরে পেন্সিলের বক্সটা হাতে তুলে নেয়। তা দেখে মা হেসে ফেলে। বলে, “ওটা তো আমি তোমার বালিশ গোছাতে গিয়ে একটু সরিয়ে রেখেছি।
আমি তো ভেবেছি, বাথরুমে গেছ তুমি। ”
“বা রে, ঘুম থেকে উঠে আমি আগে তোমাকে চুমু দিই না?”
“কিন্তু আজকে তো দাওনি!”
“আজকে তো আমার তোমার আগেই ঘুম ভেঙে গিয়েছে। সবুজ কলম সুড়সুড়ি দিয়ে আমার ঘুম ভাঙিয়েছে। ”
“তা হলে তো দেখছি সবুজ কলমটা ভারি দুষ্ট। ”
অরিত্রা বিছানার কোণে বসে পা দোলাচ্ছিল।
মার কথা শুনে লাফ দিয়ে ওঠে সে, “না, না। দুষ্ট কেন হবে? সবুজ কলম আমাকে সকালবেলা দেখানোর জন্য ঘুম ভাঙিয়েছে। ”
“তাই? আর আমি ঘুম ভাঙালে তুমি যে আমাকে দুষ্ট বল? তার কী হবে?”
অরিত্রা তখন কুটকুটিয়ে হাসে। হাসতে মাকে জড়িয়ে ধরে বলে, “সে তো আমি দুষ্টুমি করে বলি!”
“ও রে পাজি, তুমি তা হলে দুষ্টুমিও জানো?”
মা দুম একটা শব্দ করে, কিন্তু একেবারেই আস্তে অরিত্রার পিঠে কিল দিয়ে বলে, “তা হলে তো তোমার সাথে থাকতে থাকতে সবুজ কলম আর লাল-নীল পেন্সিলগুলোও দুষ্ট হয়ে যাবে। ”
অরিত্রা দোমনা ভঙ্গিতে ঘাড়টা নাড়ায়, “না-আ- তা কেন হবে? সবুজ কলম তো ভালো... পেন্সিলগুলো অবশ্য একটু দুষ্ট মনে হয়।
আমি ঘুম থেকে উঠলাম, তারপরও ঘুমাচ্ছিল!”
“তুমিও তো সকালে ঘুমাও। ”
“সে তো গতকাল ঘুমিয়েছি। আজ কি ঘুমিয়েছি নাকি? আজ ঘুমাচ্ছে পেন্সিলগুলো। বক্সের মধ্যে সবগুলো ঘুম দিচ্ছে। একটাকে বক্স থেকে বের করেছিলাম, সেটাও ঘুমাচ্ছে।
”
“তা হলে এক কাজ করি চল। শার্পনার দিয়ে দুষ্টু একটা পেন্সিলের মুখ চেঁছে দেই। তা হলে অন্য পেন্সিলগুলো আর ঘুমাবে না। ”
“না- না- কী যে বলো না! আচ্ছা, তুমি সেই কাল থেকেই বার বার এই পেন্সিলগুলোকে কাটতে চাইছ কেন?” অরিত্রা প্রায় রেগে ওঠে, “বাবাও তো খালি ঘুমায়, আমরা কি সে জন্য বাবার গলা কাটি?”
“ছিঃ! তা কেন হবে? তোমার বাবা কি আর পেন্সিল নাকি? কিন্তু মা-মণি, পেন্সিলের মাথা না কাটলে তুমি তো লিখতে পারবে না। ”
“তা না পারি।
দরকার নেই আমার অত লেখার,” বলে অরিত্রা মুখ ঘুরিয়ে নেয়।
“ঠিক আছে, দরকার নেই। পরে যেন আবার বল না, মা, পেন্সিল কেটে দাও। বুঝলে তো?” মা হাল ছেড়ে দিয়ে নিজের কাজে চলে যান।
সারাদিন অরিত্রা তার সবুজ কলম আর লাল-নীল পেন্সিলগুলো নিয়ে মেতে থাকে।
তারপর রাতে ঘুমানোর জন্য বিছানায় যেতেই শুনতে পায়, সবুজ কলমটা তাকে বলছে, “এত বড় একটা দিন গেল, তুমি আমাকে দিয়ে একবারও লিখলে না? একটুও লিখলে না?”
“বাহ্, তোমাকে দিয়ে লিখলেই তো তুমি ফুরিয়ে যাবে!”
“কে বলেছে, আমি ফুরিয়ে যাব? আর ফুরিয়ে গেলেই বা কী! তখন আবারও কালি ভরে নেবে। তোমার বাবাকে বলবে সবুজ কালির একটা দোয়াত কিনে দিতে। ”
“আর লিখতে গিয়ে যদি তোমার নিব ভেঙে যায়?”
“গেলে যাবে। নতুন নিব কিনে নেবে। ”
সবুজ কলমের সঙ্গে কথায় না পেরে অরিত্রা শুধু বলে, সে দেখা যাবে সময় এলে।
তারপর লাল-নীল পেন্সিলের দিকে মুখ ঘুরিয়ে তাকায়, যেন তার সঙ্গে কথা বলা খুবই দরকার। তবে সেটা বুঝতে না দিয়ে বেশ কড়া গলায় সে লাল-নীল পেন্সিলকে বলে, “তুমি তো আজ সারাদিনই ঘুমালে! আবার সন্ধ্যা না হতেই ঘুমাই-ঘুমাই তাল ধরেছ! এত ঘুমাও কেন তুমি?”
“ঘুমাব না তো কী করব?” লাল-নীল পেন্সিলের মেজাজ বেশ চড়ে আছে মনে হয়, “তুমি যদি আমাকে দিয়ে না লেখ, তা হলে তো আমাকে খালি ঘুমাতেই হবে, না কি?”
বলে কী লাল-নীল পেন্সিল? অরিত্রার ভারি অবাক লাগে! না লিখলে লাল-নীল পেন্সিল এত ঘুম দেবে? আবার লিখতে গেলেও তো ঝামেলা, এত সুন্দর লাল-নীল পেন্সিলগুলো তখন শেষ হয়ে যাবে। সে তাই বলে, “তোমাকে দিয়ে আবার লিখব কেমন করে?”
“বাহ্, শার্পনার দিয়ে আমাকে চোখা করে নেবে!”
“সেটা করতে গেলে তুমি তো কষ্ট পাবে। ”
“তা কেন হবে? এই যে তুমি যখন হাঁটা শেখনি, হাঁটতে গেলে আছাড় খেয়ে পড়ে যেতে, তখন কি তুমি কষ্ট পেতে?”
“সেসব কি আমার মনে আছে নাকি? সেসব কত আগের কথা!”
কিন্তু লাল-নীল পেন্সিলও কম যায় না। সঙ্গে সঙ্গে অরিত্রাকে উত্তর দেয় সে, “এইসবও মনে থাকবে না, বুঝলে? খাতায় যখন আমাকে দিয়ে লিখবে, তখন দেখবে এইসব কথা একদম ভুলে গেছ।
আর যদি না লেখ, তা হলে দেখবে একদিন আমার রংটং সব নষ্ট হয়ে গেছে। বুঝতে পেরেছ?”
লাল-নীল পেন্সিলের দিকে তাকিয়ে অরিত্রা মাথা নাড়ে। তবে মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ বোঝায় নাকি না বোঝায়, সেটা মোটেও টের পাওয়া যায় না।
তবে পরদিনও অরিত্রার খুব ভোরে ঘুম ভাঙে। আর আজকে সে নিজেই মার ঘরে গিয়ে পেছন থেকে তাকে জড়িয়ে ধরে চুমু দিয়ে তার ঘুম ভাঙাতে থাকে।
তারপর লাজুক লাজুক কণ্ঠে বলে, “আমাকে একটা পেন্সিল চোখা করে দাও না মা। ”
“পেন্সিল চোখা করতে হবে?” মা আকাশ থেকে পড়ে।
“বাহ্, লিখতে হবে না? পেন্সিল দিয়ে লেখা শিখব, তারপর সবুজ কলম দিয়ে দৈনিক বাবার মতো ডায়েরি লিখব। না লিখলে তো এগুলো এমনি-এমনিই নষ্ট হয়ে যাবে। এমনি-এমনি নষ্ট হয়ে গেলে ওদের কষ্ট হবে না?”
“তা ঠিক, তা ঠিক।
যে জিনিস যে কাজের জন্য, সে জিনিস দিয়ে তো সে কাজই করা উচিত। দাও মা-মণি, আমি তোমাকে এখখুনি পেন্সিল কেটে দিচ্ছি। ”
বলে মা শার্পনার এনে অরিত্রাকে একটা লাল-নীল পেন্সিল চেঁছে দিতে থাকে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।