আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বাতাসে যেন আবারও সেই সুবাস!

চার বলে প্রয়োজন চার। রুবেল হোসেনের ইয়র্কারে উপড়ে গেল কাইল মিলসের স্টাম্প। গ্যালারিতে তখন গর্জন, মাঠে উদ্বেল ক্রিকেটাররা, ঘরে ঘরে টিভি সেটের সামনে চিৎকার আর আতহার আলী খানের কণ্ঠে উচ্চারণ—‘বাংলাওয়াশ’। ২২ গজে স্তব্ধ দাঁড়িয়ে মিলস। সেটি তিন বছর আগের অক্টোবর।

আজ আরেকটি বাংলাওয়াশ এড়ানোর ম্যাচে নিউজিল্যান্ডকে নেতৃত্ব দেবেন সেই মিলস। কী বলবেন এটিকে? দৈব বিড়ম্বনা!
মিলস এটিকে বেদনার ক্ষতে প্রলেপ দেওয়ার সুযোগ হিসেবেও নিতে পারেন। তবে বাস্তবতা বলছে, বিড়ম্বনা হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। বাতাসে যে আরেকটি বাংলাওয়াশের গন্ধ! দু-দুটি ধবলধোলাইয়ের সঙ্গে নিজের নাম এভাবে জুড়ে যেতে দেখতে কার-ই বা ভালো লাগবে।
এই গন্ধ ছিল তিন বছর আগের এই সময়টাতেও।

এই সময় মানে, শেষ ম্যাচের আগে। তবে সেই গন্ধে মিশে ছিল রোমাঞ্চ। সত্যিই হবে কি না বা হয়ে গেলে কী দারুণ একটা ব্যাপার হবে, এমন ভাবনা। সেই সময়ের অধিনায়ক ও সেই সিরিজের মহানায়ক সাকিব আল হাসানের প্রথম আলোতে লেখা কলামেও ছিল সেই রোমাঞ্চ, ‘আগে আমরা হুটহাট দু-একটি জয় পেতাম, এখন আমরা জয়ের গন্ধ পেতে শুরু করেছি। ৩-০ যখন হয়ে গেছে, ৪-০ কেন নয়!’ এবার ধবলধোলাইয়ের গন্ধে যতটা আছে রোমাঞ্চ, তার চেয়েও অনেক বেশি মিশে আছে প্রত্যাশা।

গতবারের ধবলধোলাই ছিল অভাবনীয় কিছু, এবার শেষ ম্যাচের আগে সেটিকেই মনে হচ্ছে সবচেয়ে সম্ভাব্য ফল!
সবচেয়ে বড় পার্থক্য হলো, গতবারের শেষ ম্যাচ ছিল ধবলধোলাইয়ের ম্যাচ, এবার শুধুই আরেকটি ম্যাচ! হ্যাঁ, অন্তত বাংলাদেশ দলের কাছে। অধিনায়ক হিসেবে শুরু করেও চোটের কারণে সেই সিরিজের ধবলধোলাই ড্রেসিংরুমের বাইরে বসে দেখতে হয়েছিল যাঁকে, সেই মাশরাফি বিন মুর্তজা কিন্তু কাল দলের প্রতিনিধি হয়ে এমনটাই বলে গেলেন। ‘হোয়াইটওয়াশ’ শব্দটিই উচ্চারণ করতে চান না, দলের কাছে এই ম্যাচ শুধুই আরেকটি ম্যাচ, যেটি তাঁরা জিততে চান। অথচ রস টেলর সংবাদ সম্মেলনে এসে জোর গলায় বলতে পারলেন না ‘হোয়াইটওয়াশ এড়াবই’, এমনকি ‘জিততে চাই’ কথাটিও বলতে পারলেন না সরাসরি।
এমনিতে সেই সিরিজ থেকে দুই দলে পরিবর্তন আছে যথেষ্টই।

সেবার ধবলধোলাইয়ের স্বাদ পাওয়া মাত্র পাঁচজন থাকছেন আজ বাংলাদেশের ড্রেসিংরুমে—মুশফিকুর রহিম, মাহমুদউল্লাহ, আবদুর রাজ্জাক, নাঈম ইসলাম ও রুবেল হোসেন। সেই তিক্ত স্বাদ আবার পাওয়ার শঙ্কায় নিউজিল্যান্ডের ড্রেসিংরুমেও আছেন পাঁচজন—রস টেলর, কাইল মিলস, গ্রান্ট এলিয়ট, টিম সাউদি ও নাথান ম্যাককালাম। তবে চেহারায় নয়, সবচেয়ে বড় পার্থক্যটা ভেতরে। মানসিকতায়। ভাগ্যের ফেরে গতবার ধবলধোলাইয়ের স্বাদবঞ্চিত মাশরাফির কাছেও এটির হাতছানি বাড়তি রোমাঞ্চ জাগায় না।

এই দলের মন্ত্রই যে প্রতিটি ম্যাচ জয়!
আর নিউজিল্যান্ড? সম্প্রতি দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারিয়ে, ইংল্যান্ডে গিয়ে ইংলিশদের হারিয়ে আসা নিউজিল্যান্ড, বাংলাদেশ সফরের জন্য শ্রীলঙ্কায় নয় দিন ক্যাম্প করে আসা নিউজিল্যান্ড, অধিনায়কের ভাষায় ‘প্রস্তুতিতে কোনো ঘাটতি না রাখা’ নিউজিল্যান্ড বাংলাদেশে এসে জয়ের পথই পাচ্ছে না। আজ ম্যাচটি নিশ্চয় জিততেই চাইবে তারা। কিন্তু মানসিকতায় সেটার ছাপ কোথায়? প্রথম ওয়ানডেতে হারের পরদিন অনুশীলন করেনি তারা, করেনি দ্বিতীয় ম্যাচ হারের পরদিনও। কথায়-আচরণে যেন পরাজয় মেনে নেওয়ার অসহায়ত্ব। গতবার বাংলাদেশে ধোলাই হয়ে যাওয়ার পর তোলপাড় পড়ে গিয়েছিল নিউজিল্যান্ডের ক্রিকেটে।

তদন্ত কমিটি-টমিটি হয়েছিল, বোর্ডে হয়েছিল রদবদল। এবার ধবলধোলাই হলে হয়তো তেমন কিছুই হবে না। ‘প্রকল্প ২০১৫ বিশ্বকাপ’ সামনে রেখে বহাল তবিয়তে টিকে থাকতে পারে ম্যাককালামের নেতৃত্ব।
এটাও কিন্তু বদলে যাওয়া বাংলাদেশেরই অবদান। নিউজিল্যান্ডকে ধবলধোলাই করা এই বাংলাদেশের কাছে প্রত্যাশিত।

আর এই বাংলাদেশের কাছে ধোলাই হওয়াও নিউজিল্যান্ডের কাছে স্বাভাবিক!

সোর্স: http://www.prothom-alo.com

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।