আল্লাহ মহান, যাহা বলিব সত্য বলিব।
সম্প্রতি বাংলাদেশ ইতিহাস সম্মিলনী আয়োজিত 'ধর্ম ও রাজনীতি : দক্ষিণ এশিয়া' শীর্ষক আন্তর্জাতিক গণবক্তৃতা ও সম্মেলন উপলক্ষে ৩ দিনের সফরে ঢাকায় এসেছিলেন জামায়াতে ইসলামীর প্রতিষ্ঠাতা সাইয়েদ আবুল আলা মওদুদীর ছেলে পাকিস্তানের জনপ্রিয় কলামিস্ট সাইয়েদ হায়দার ফারুক মওদুদী। ৩ দিনের এ সফরে তিনি মিডিয়ার সামনে জামায়াতের অবস্থান স্পষ্টভাবে তুলে ধরেছেন। জামায়াত এবং হেফাজতে ইসলামের সঙ্গে প্রকৃত ইসলামের যে কোন সম্পর্ক নেই তাও তিনি উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, ১৯৪৭ সালে জামায়াতে ইসলামী পাকিস্তান রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার বিরোধিতা করেছে।
১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরোধিতা করেছে এ দেশের জামায়াতে ইসলামী এ অপরাধেই ২ রাষ্ট্রে জামায়াতের রাজনীতি নিষিদ্ধ করা দরকার। জামায়াতের রাজনীতি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমার বাবা তার সন্তানদের, মানে আমাদের কাউকে ধর্মভিত্তিক রাজনীতি কিংবা জামায়াতের রাজনীতি করতে বলেননি। তিনি আমাদের ৯ ভাইবোনকে পড়াশোনা করিয়েছেন দেশের বাইরে। আমার ভাইবোনদের প্রত্যেকেই দেশে-বিদেশে বিভিন্ন পেশায় খুব ভালো অবস্থানে আছে। এর কারণ কি জানতে চাইলে তিনি বলেন, বাবা আমাদের জামায়াত এবং জমিয়ত উভয় দল থেকে দূরে সরিয়ে রাখতেন।
বিষয়টিকে তিনি মাদকব্যবসার সঙ্গে তুলনা করেন। তিনি বলেন, একজন মাদকব্যবসায়ী যেমন চায় না তা সন্তানরা কেউ মাদক সেবন করুক, তেমনি বাবাও আমাদের জামায়াতের কর্মকা- থেকে দূরে রাখতেন। এমনকি দূর থেকে দাঁড়িয়ে যদি কখনও ভাইবোনরা জামায়াতের সমাবেশ দেখতে চাইত কিংবা দেখতাম, তাও হতে দিতেন না। জামায়াত রাজনৈতিক দল, ফ্যাসিস্টদের দল। দেশের অস্তিত্বে যারা বিশ্বাস করে না, তাদের রাজনীতি করার অধিকার থাকতে পারে না।
তিনি এদেশের রাজনীতির ঘোরতর অসঙ্গতি চিহ্নিত করে যে প্রশ্ন রেখেছেন তা এদেশের স্বাধীনতাকামী মানুষদের আরও একবার আত্মজিজ্ঞাসার মুখোমুখি করেছে। পৃথিবীর ইতিহাসে বাংলাদেশই সম্ভবত বিরলতম সেই দেশ যে দেশের জন্মের সরাসরি বিরোধিতাকারী দল স্বাধীনতার পর শাসন ক্ষমতার অংশীদার হয়ে দেশ পরিচালনা করেছে। সত্য চিরকালেই সত্য। সত্যকে কখনও চাপিয়ে রাখা যায় না। মওদুদীপুত্র দেশের কয়েকটি পত্রিকায় দেয়া সাক্ষাৎকারে জামায়াত সম্পর্কে এমনই সত্য বক্তব্য রেখে জামায়াতের মুখোশ আবারাও দেশবাসীর কাছে উন্মোচন করেছেন।
জামায়াতে ইসলামীর প্রতিষ্ঠাতা মাওলানা আবুল আলা মওদুদী মিসরের ইসলামিক ব্রাদারহুডের তাত্তি্বক হাসান বান্নার মডেলে গত শতকের তিরিশের দশক থেকে ভারতে যে ইসলাম প্রচার করেছেন তার সঙ্গে ধর্মের আধ্যাত্মিকতার কোন সম্পর্ক নেই। মওদুদীর ইসলাম আক্ষরিক অর্থেই ওহাবিদের রাজনৈতিক ইসলাম এবং তার দলও অন্যান্য রাজনৈতিক দলের মতোই একটি। দলের আদর্শ হিসেবে মওদুদী গণতন্ত্রকে নাকচ করে হিটলার ও মুসোলিনির নাৎসিবাদ ও ফ্যাসিবাদকে আদর্শ হিসেবে গ্রহণ করেছেন এবং এ বিষয়ে অনেক যুক্তি ও ব্যাখ্যা তার রচনাবলীতে পাওয়া যায়। আর এ কথাটি স্বয়ং তারপুত্রও স্বীকার করলেন। মওদুদী তার 'সিয়াসী কাশমকাশ'- এ গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে এবং নাৎসিবাদ ও ফ্যাসিবাদের পক্ষে অনেক কথাই বলেছেন।
মওদুদী বলেছেন- 'যেসব জামায়াত কোন শক্তিশালী আদর্শ ও সজিব সামগ্রিক (ইজতেমায়ী) দর্শন নিয়ে আত্মপ্রকাশ করে তারা সবসময়ই লঘিষ্ঠ হয় এবং সংখ্যালঘিষ্ঠতা সত্ত্বেও বিরাট বিরাট সংখ্যাগরিষ্ঠকে শাসন করে থাকে। মুসোলিনির ফ্যাসি পার্টির সদস্য হলো মাত্র চার লাখ এবং রোমে মার্চ করার সময় ছিল মাত্র তিন লাখ। কিন্তু এ সংখ্যালঘিষ্ঠরা সাড়ে চার কোটি ইটালিয়ের ওপর ছেয়ে গেছে। এ অবস্থা জার্মানির নাজি পার্টিরও। একটি মজবুদ ও সুসংহত দল শুধু বিশ্বাস ও শৃঙ্খলার জোরে ক্ষমতায় আসতে পারে।
তার সদস্য সংখ্যা দেশের অধিবাসীদের মধ্যে প্রতি হাজারে একজন হোক না কেন। জনগণের সরকার, জনগণের দ্বারা, জনগণের জন্য- এ মতাদর্শের আমি সমর্থক নই। এজন্যই আমি বলি, যেসব পরিষদ কিংবা পার্লামেন্ট বর্তমান যুগের গণতান্ত্রিক নীতির ওপর প্রতিষ্ঠিত, সেসবের সদস্য হওয়া হারাম এবং তার জন্য ভোট দেওয়াও হারাম। ' ( জামায়াতের আসল চেহারা)। জামায়াতে ইসলামীর প্রতিষ্ঠাতা মাওলানা মওদুদী ১৯৪১ সালে লাহোরে জামায়াতে ইসলামী নামে একটি অরাজনৈতিক সংগঠন কায়েম করেন।
এর প্রধান কেন্দ্র স্থাপিত হয় পাঠানকোটে। ওয়াজ এবং নসিহতের মাধ্যমে মুসলমানদের সংশোধন করাই প্রথমে ছিল এই সংগঠনের প্রধান কারণ। পাঠানকোটে প্রদত্ত মাওলানা মওদুদীর খুতবাগুলোতে সংশোধনমূলক বক্তব্য দেখতে পাওয়া যায়। কিন্তু কিছুদিন যেতে না যেতেই এ জামায়াতটি রাজনৈতিক ব্যাপারে নাক গলাতে শুরু করে। মাওলানা মওদুদী পাকিস্তান এবং মুসলিম লীগের সমালোচনায় মুখর হয়ে উঠেন।
তিনি পাকিস্তানকে আহ্মকের বেহেশ্ত এবং মুসলমানের কাফেরানা রাষ্ট্র বলে আখ্যা দেন (তরজুমানুল কুরআন, ফেব্রুয়ারি ১৯৪৩)। মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ সম্বন্ধে তিনি বলতেন, এ ব্যক্তিটির ত্রুটি বর্ণনা করে শেষ করা যায় না (তরজুমানুল কুরআন, পৃঃ ৭০, জুন ১৯৪৮)। এক কথায় মাওলানা মওদুদী মুসলিম লীগ, পাকিস্তান এবং জিন্নাহ সাহেবের কট্টর সমালোচক হিসেবে নিজেকে এবং তার দল জামায়াতে ইসলামীকে ওয়াকফ করে দিলেন। ইসলাম আর মুসলিমের নেতৃত্ব দিবে কোট স্যুট এবং টাই পরা কোন ব্যক্তি তা হতে পারে না। তার মতে ইসলামী আন্দোলনের নেতা হওয়ার যোগ্য একমাত্র তিনিই।
মাওলানা মওদুদী সমগ্র মুসলিম উম্মাহর মধ্যে হাজারে নয়শ ৯৯ জনকে ইসলাম সম্বন্ধে জাহেল বা অজ্ঞ জ্ঞান করতেন (সিয়াসী কাশমকাশ, ৬ষ্ঠ সংস্করণ, পৃঃ ১১৫,১১৬)। তিনি আহলে হাদিস, হানাফি, দেওবন্দি, বেরেলি, শিয়া, সুনি্ন প্রভৃতি ফিরকাকে জাহেলিয়াতের উৎপাদন বলে উল্লেখ করেছেন (খোতবাত, পৃঃ ৭৬)। মাওলানা মওদুদী মনে করেন, জন্মগত মুসলমানরা আহলে কিতাব অর্থাৎ ইহুদি খ্রিস্টানদের অনুরূপ (সিয়াসী কাশমকাশ, ৩য় খ-, পৃঃ ১৩৩)। তিনি তার জামায়াত থেকে বের হয়ে যাওয়ার অর্থ জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হওয়ার নামান্তর বলেছেন (রোয়েদাদ জামায়াতে ইসলামী, ১ম খ-, পৃঃ ৮)। এই জন্যই নিজ দল ছাড়া অপর সবাই সেই সময় মাওলানা মওদুদীকে ভ্রান্ত জ্ঞান করতেন।
জামায়াতে ইসলামী ঝোপ বুঝে কোপ মারতে উস্তাদ। কেননা তাদের পক্ষে নীতি পরিবর্তন যেমন সহজ তেমনি মিথ্যা বলাও গুনাহর কাজ নয়। তারা এ রীতিতে আগেও যেমন চলত এখনও তেমনই চলছে বরং এখন আরও বেশি। পাকিস্তান আন্দোলনের বিরোধিতা করেও মাওলানা মওদুদী পরবর্তীতে যেভাবে পাকিস্তানের দরদি সেজে পাকিস্তানের প্রেমিক হয়ে গিয়েছিলেন ঠিক সেই পদ্ধতিতে অধ্যাপক গোলাম আযম, মতিউর রহমান নিজামী, দেলাওয়ার হোসাইন সাইদী, আলী হাসান মুজাহিদ ও অন্যান্য জামায়াতে ইসলামীর যুদ্ধাপরাধীরা বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরুদ্ধাচরণ করেও, একাত্তরে গণহত্যা করেও তারা এদেশের ক্ষমতার স্বাদ পর্যন্ত ভোগ করেছিল। তারা কখনও গণতন্ত্রের নামে, কখনও ধর্মের নামে মাঠে নেমে পরিবেশকে নিয়ন্ত্রণে আনার নানা রকম প্রচেষ্টা করেছে।
জামায়াতে ইসলামীর প্রতিষ্ঠাতা মাওলানা মওদুদীর নির্দেশ হলো, 'সম্মুখে অগ্রসর হও, লড়াই করে খোদাদ্রোহীদের ক্ষমতাচ্যুত কর' (খুতবা, পৃঃ ২০৫)। জামায়াতে ইসলামীর আসল চেহারা মানুষের সামনে আজ স্পষ্ট। তারা এদেশে ধর্মের নামে এতো দিন যা করেছে এখন সবই প্রতিদিন পত্রিকার পাতা খুললেই দেখা যায়। ইসলামের নামে এ ফ্যাসিস্ট দর্শনের ধারক ও বাহকদের এদেশের পবিত্র মাটিতে তাদের অন্যায় কর্মকা- পরিচালনার অনুমতি আর দেয়া যায় না। জামায়াতের রাজনীতিসহ সব ধর্মভিত্তিক রাজনীতি এদেশে নিষিদ্ধ হবে এটাই সবার প্রাণের দাবি।
যার যার ধর্ম তার নিজস্ব রীতি অনুযায়ী পালন করবে এটাই আমাদের প্রত্যাশা।
সুত্র
সম্প্রতি বাংলাদেশ ইতিহাস সম্মিলনী আয়োজিত 'ধর্ম ও রাজনীতি : দক্ষিণ এশিয়া' শীর্ষক আন্তর্জাতিক গণবক্তৃতা ও সম্মেলন উপলক্ষে ৩ দিনের সফরে ঢাকায় এসেছিলেন জামায়াতে ইসলামীর প্রতিষ্ঠাতা সাইয়েদ আবুল আলা মওদুদীর ছেলে পাকিস্তানের জনপ্রিয় কলামিস্ট সাইয়েদ হায়দার ফারুক মওদুদী। ৩ দিনের এ সফরে তিনি মিডিয়ার সামনে জামায়াতের অবস্থান স্পষ্টভাবে তুলে ধরেছেন। জামায়াত এবং হেফাজতে ইসলামের সঙ্গে প্রকৃত ইসলামের যে কোন সম্পর্ক নেই তাও তিনি উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, ১৯৪৭ সালে জামায়াতে ইসলামী পাকিস্তান রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার বিরোধিতা করেছে।
১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরোধিতা করেছে এ দেশের জামায়াতে ইসলামী এ অপরাধেই ২ রাষ্ট্রে জামায়াতের রাজনীতি নিষিদ্ধ করা দরকার। জামায়াতের রাজনীতি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমার বাবা তার সন্তানদের, মানে আমাদের কাউকে ধর্মভিত্তিক রাজনীতি কিংবা জামায়াতের রাজনীতি করতে বলেননি। তিনি আমাদের ৯ ভাইবোনকে পড়াশোনা করিয়েছেন দেশের বাইরে। আমার ভাইবোনদের প্রত্যেকেই দেশে-বিদেশে বিভিন্ন পেশায় খুব ভালো অবস্থানে আছে। এর কারণ কি জানতে চাইলে তিনি বলেন, বাবা আমাদের জামায়াত এবং জমিয়ত উভয় দল থেকে দূরে সরিয়ে রাখতেন।
বিষয়টিকে তিনি মাদকব্যবসার সঙ্গে তুলনা করেন। তিনি বলেন, একজন মাদকব্যবসায়ী যেমন চায় না তা সন্তানরা কেউ মাদক সেবন করুক, তেমনি বাবাও আমাদের জামায়াতের কর্মকা- থেকে দূরে রাখতেন। এমনকি দূর থেকে দাঁড়িয়ে যদি কখনও ভাইবোনরা জামায়াতের সমাবেশ দেখতে চাইত কিংবা দেখতাম, তাও হতে দিতেন না। জামায়াত রাজনৈতিক দল, ফ্যাসিস্টদের দল। দেশের অস্তিত্বে যারা বিশ্বাস করে না, তাদের রাজনীতি করার অধিকার থাকতে পারে না।
তিনি এদেশের রাজনীতির ঘোরতর অসঙ্গতি চিহ্নিত করে যে প্রশ্ন রেখেছেন তা এদেশের স্বাধীনতাকামী মানুষদের আরও একবার আত্মজিজ্ঞাসার মুখোমুখি করেছে। পৃথিবীর ইতিহাসে বাংলাদেশই সম্ভবত বিরলতম সেই দেশ যে দেশের জন্মের সরাসরি বিরোধিতাকারী দল স্বাধীনতার পর শাসন ক্ষমতার অংশীদার হয়ে দেশ পরিচালনা করেছে। সত্য চিরকালেই সত্য। সত্যকে কখনও চাপিয়ে রাখা যায় না। মওদুদীপুত্র দেশের কয়েকটি পত্রিকায় দেয়া সাক্ষাৎকারে জামায়াত সম্পর্কে এমনই সত্য বক্তব্য রেখে জামায়াতের মুখোশ আবারাও দেশবাসীর কাছে উন্মোচন করেছেন।
জামায়াতে ইসলামীর প্রতিষ্ঠাতা মাওলানা আবুল আলা মওদুদী মিসরের ইসলামিক ব্রাদারহুডের তাত্তি্বক হাসান বান্নার মডেলে গত শতকের তিরিশের দশক থেকে ভারতে যে ইসলাম প্রচার করেছেন তার সঙ্গে ধর্মের আধ্যাত্মিকতার কোন সম্পর্ক নেই। মওদুদীর ইসলাম আক্ষরিক অর্থেই ওহাবিদের রাজনৈতিক ইসলাম এবং তার দলও অন্যান্য রাজনৈতিক দলের মতোই একটি। দলের আদর্শ হিসেবে মওদুদী গণতন্ত্রকে নাকচ করে হিটলার ও মুসোলিনির নাৎসিবাদ ও ফ্যাসিবাদকে আদর্শ হিসেবে গ্রহণ করেছেন এবং এ বিষয়ে অনেক যুক্তি ও ব্যাখ্যা তার রচনাবলীতে পাওয়া যায়। আর এ কথাটি স্বয়ং তারপুত্রও স্বীকার করলেন। মওদুদী তার 'সিয়াসী কাশমকাশ'- এ গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে এবং নাৎসিবাদ ও ফ্যাসিবাদের পক্ষে অনেক কথাই বলেছেন।
মওদুদী বলেছেন- 'যেসব জামায়াত কোন শক্তিশালী আদর্শ ও সজিব সামগ্রিক (ইজতেমায়ী) দর্শন নিয়ে আত্মপ্রকাশ করে তারা সবসময়ই লঘিষ্ঠ হয় এবং সংখ্যালঘিষ্ঠতা সত্ত্বেও বিরাট বিরাট সংখ্যাগরিষ্ঠকে শাসন করে থাকে। মুসোলিনির ফ্যাসি পার্টির সদস্য হলো মাত্র চার লাখ এবং রোমে মার্চ করার সময় ছিল মাত্র তিন লাখ। কিন্তু এ সংখ্যালঘিষ্ঠরা সাড়ে চার কোটি ইটালিয়ের ওপর ছেয়ে গেছে। এ অবস্থা জার্মানির নাজি পার্টিরও। একটি মজবুদ ও সুসংহত দল শুধু বিশ্বাস ও শৃঙ্খলার জোরে ক্ষমতায় আসতে পারে।
তার সদস্য সংখ্যা দেশের অধিবাসীদের মধ্যে প্রতি হাজারে একজন হোক না কেন। জনগণের সরকার, জনগণের দ্বারা, জনগণের জন্য- এ মতাদর্শের আমি সমর্থক নই। এজন্যই আমি বলি, যেসব পরিষদ কিংবা পার্লামেন্ট বর্তমান যুগের গণতান্ত্রিক নীতির ওপর প্রতিষ্ঠিত, সেসবের সদস্য হওয়া হারাম এবং তার জন্য ভোট দেওয়াও হারাম। ' ( জামায়াতের আসল চেহারা)। জামায়াতে ইসলামীর প্রতিষ্ঠাতা মাওলানা মওদুদী ১৯৪১ সালে লাহোরে জামায়াতে ইসলামী নামে একটি অরাজনৈতিক সংগঠন কায়েম করেন।
এর প্রধান কেন্দ্র স্থাপিত হয় পাঠানকোটে। ওয়াজ এবং নসিহতের মাধ্যমে মুসলমানদের সংশোধন করাই প্রথমে ছিল এই সংগঠনের প্রধান কারণ। পাঠানকোটে প্রদত্ত মাওলানা মওদুদীর খুতবাগুলোতে সংশোধনমূলক বক্তব্য দেখতে পাওয়া যায়। কিন্তু কিছুদিন যেতে না যেতেই এ জামায়াতটি রাজনৈতিক ব্যাপারে নাক গলাতে শুরু করে। মাওলানা মওদুদী পাকিস্তান এবং মুসলিম লীগের সমালোচনায় মুখর হয়ে উঠেন।
তিনি পাকিস্তানকে আহ্মকের বেহেশ্ত এবং মুসলমানের কাফেরানা রাষ্ট্র বলে আখ্যা দেন (তরজুমানুল কুরআন, ফেব্রুয়ারি ১৯৪৩)। মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ সম্বন্ধে তিনি বলতেন, এ ব্যক্তিটির ত্রুটি বর্ণনা করে শেষ করা যায় না (তরজুমানুল কুরআন, পৃঃ ৭০, জুন ১৯৪৮)। এক কথায় মাওলানা মওদুদী মুসলিম লীগ, পাকিস্তান এবং জিন্নাহ সাহেবের কট্টর সমালোচক হিসেবে নিজেকে এবং তার দল জামায়াতে ইসলামীকে ওয়াকফ করে দিলেন। ইসলাম আর মুসলিমের নেতৃত্ব দিবে কোট স্যুট এবং টাই পরা কোন ব্যক্তি তা হতে পারে না। তার মতে ইসলামী আন্দোলনের নেতা হওয়ার যোগ্য একমাত্র তিনিই।
মাওলানা মওদুদী সমগ্র মুসলিম উম্মাহর মধ্যে হাজারে নয়শ ৯৯ জনকে ইসলাম সম্বন্ধে জাহেল বা অজ্ঞ জ্ঞান করতেন (সিয়াসী কাশমকাশ, ৬ষ্ঠ সংস্করণ, পৃঃ ১১৫,১১৬)। তিনি আহলে হাদিস, হানাফি, দেওবন্দি, বেরেলি, শিয়া, সুনি্ন প্রভৃতি ফিরকাকে জাহেলিয়াতের উৎপাদন বলে উল্লেখ করেছেন (খোতবাত, পৃঃ ৭৬)। মাওলানা মওদুদী মনে করেন, জন্মগত মুসলমানরা আহলে কিতাব অর্থাৎ ইহুদি খ্রিস্টানদের অনুরূপ (সিয়াসী কাশমকাশ, ৩য় খ-, পৃঃ ১৩৩)। তিনি তার জামায়াত থেকে বের হয়ে যাওয়ার অর্থ জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হওয়ার নামান্তর বলেছেন (রোয়েদাদ জামায়াতে ইসলামী, ১ম খ-, পৃঃ ৮)। এই জন্যই নিজ দল ছাড়া অপর সবাই সেই সময় মাওলানা মওদুদীকে ভ্রান্ত জ্ঞান করতেন।
জামায়াতে ইসলামী ঝোপ বুঝে কোপ মারতে উস্তাদ। কেননা তাদের পক্ষে নীতি পরিবর্তন যেমন সহজ তেমনি মিথ্যা বলাও গুনাহর কাজ নয়। তারা এ রীতিতে আগেও যেমন চলত এখনও তেমনই চলছে বরং এখন আরও বেশি। পাকিস্তান আন্দোলনের বিরোধিতা করেও মাওলানা মওদুদী পরবর্তীতে যেভাবে পাকিস্তানের দরদি সেজে পাকিস্তানের প্রেমিক হয়ে গিয়েছিলেন ঠিক সেই পদ্ধতিতে অধ্যাপক গোলাম আযম, মতিউর রহমান নিজামী, দেলাওয়ার হোসাইন সাইদী, আলী হাসান মুজাহিদ ও অন্যান্য জামায়াতে ইসলামীর যুদ্ধাপরাধীরা বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরুদ্ধাচরণ করেও, একাত্তরে গণহত্যা করেও তারা এদেশের ক্ষমতার স্বাদ পর্যন্ত ভোগ করেছিল। তারা কখনও গণতন্ত্রের নামে, কখনও ধর্মের নামে মাঠে নেমে পরিবেশকে নিয়ন্ত্রণে আনার নানা রকম প্রচেষ্টা করেছে।
জামায়াতে ইসলামীর প্রতিষ্ঠাতা মাওলানা মওদুদীর নির্দেশ হলো, 'সম্মুখে অগ্রসর হও, লড়াই করে খোদাদ্রোহীদের ক্ষমতাচ্যুত কর' (খুতবা, পৃঃ ২০৫)। জামায়াতে ইসলামীর আসল চেহারা মানুষের সামনে আজ স্পষ্ট। তারা এদেশে ধর্মের নামে এতো দিন যা করেছে এখন সবই প্রতিদিন পত্রিকার পাতা খুললেই দেখা যায়। ইসলামের নামে এ ফ্যাসিস্ট দর্শনের ধারক ও বাহকদের এদেশের পবিত্র মাটিতে তাদের অন্যায় কর্মকা- পরিচালনার অনুমতি আর দেয়া যায় না। জামায়াতের রাজনীতিসহ সব ধর্মভিত্তিক রাজনীতি এদেশে নিষিদ্ধ হবে এটাই সবার প্রাণের দাবি।
যার যার ধর্ম তার নিজস্ব রীতি অনুযায়ী পালন করবে এটাই আমাদের প্রত্যাশা।
সুত্র
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।