মফিজ ভাই সোফার উপর বসা। পা এর
পা তুলে কোন এক টি গান এর কলি গুনগুন
করে গেয়ে চলছেন আপন মনে! হঠাৎ পকেট
থেকে সিগারেট বের করে ধরালেন।
আমরা আতকে উঠলাম! মফিজ ভাইয়ের বাবা মুখ
টি কোথায় লুকাবেন জায়গা পাচ্ছিলেন না।
ছেলেকে ধমকে উঠলেন। এত বড় বেয়াদবির!!
নিজের বাপ তো বটেই, হবু শশুরের
সামনে সিগারেট!! কড়া গলায় বললেন,
তোকে আমি এই শিখিয়েছি!
মফিজ ভাই ভাবলেশহীন
ভাবে ধোয়া ছেড়ে চলছেন।
তার হবু শশুর বিশিষ্ট
ব্যবসায়ী রহিম চৌধুরী কে মোটেও বিরক্ত
মনে হল না! মুখে একটি শুকনো হাসি ফুটালেন।
হাসি বলতে পান খাওয়া দাত গুলো দেখালেন আর
কি। তারপর বললেন, "আর এ এই বয়সে একটু
আকটু সিগারেট খাওয়ার অভ্যাস তো থাকবেই।
পুলিশের এ, এস পি হয়েছে। যেমন তেমন
তো ব্যাপার নয়।
পাবলিক প্লেসে সিগারেট
না খেলে কি আর মাথা খুলবে! আর
আমরা তো এখন একটা পরিবার হতে চলেছি।
খাও বাবা। আরাম করে যত
টা খেতে ইচ্ছে করে খাও!! " বলেই গদগদ
একটা হাসি দিলেন!
মফিজ ভাই একটা বাকা হাসি দিয়ে সিগারেট
টি নিভিয়ে দিলেন। দুই পরিবার মিলে মফিজ ভাই
এবং কনা আপুর বিয়ের দিন পাকা করে ফেললেন।
নিজ হাতে রফিক ভাই
কনা আপুকে আংটি পড়ালো।
এর মাধ্যমে তাদের
দীর্ঘ সাত বছরের লম্বা প্রেম পূর্ণতা লাভ
করল! আমরা সবাই খুশি। এরপর চিরাচরিত
মিষ্টি পর্ব। হবু শশুর খুব আগ্রহ নিয়ে মফিজ
ভাই কে মিষ্টি খাওয়ালেন। সোনার
টুকরো জামাই!!
আমার মন কিন্তু উসখুস করছিল! মফিজ আমার
খালাতো ভাই। ছোটবেলা থেকেই তার
সাথে আমার বন্ধু র মত খুনসুটির সম্পর্ক।
আমার থেকে বছর পাচেক বড় সে। এরকম ভদ্র
এবং সুইট টাইপ ছেলে আমি আর দেখি নি।
বড়দের যথেষ্ট সম্মান করে সে। আজ সে এমন
টা কেন করলো!!
গাড়িতে উঠে মফিজ ভাই কে জিজ্ঞেস করলাম,
কি হলো আজ কে তোমার?মফিজ ভাই দিলীপ
কুমারের মত দুষ্ট এক চিলতে হাসি ফুটিয়ে বলল,
একটা এক্সপেরিমেন্ট করলাম। আজ থেকে এক
বছর পূর্বে আমি কনার বাসায় যাই।
ওর বাবার
সাথে দেখা করার জন্য। খুব ভদ্র সেজেছিলাম।
আমার শার্ট এর একদম উপরের বোতাম টি ও
আটকানো ছিল!তাকে পায়ে ধরে সালাম
করেছিলাম। কিন্তু যখন শুনলেন আমি বেকার
তখন আর তিনি আমাকে একরকম
পাত্তা না দিয়ে ভিতরে চলে গেলেন।
কনা কে পরে সাফ বলে দিয়েছিলেন, বেকার কোন
ছেলের সাথে তার মেয়ের বিয়ে দিবেন না।
আর
আমাকে দিয়ে নাকি কিছু হবে না।
এখন তো চাকুরী হল। তাই একটু অভদ্র
সেজে দেখলাম কোনটার দাম বেশী!
আমি ও মনে মনে ভাবতে লাগলাম
আসলে কোনটার দাম বেশী!! আমাদের
সমাজে কি মানবীয় আচরনের চেয়ে তার
অবস্থানের কাছেই আমরা বেশি মাথা নত
করি না?? আমরা কি অন্ধ হয়ে গেলাম!!!
নাকি হৃদয় ভোতা হয়ে গেছে! মানবীয় ব্যবহার
আমাদের স্পর্শ করে না এখন আর!!!
(জেনারেল হওয়ার পরে প্রথম লেখা! ধন্যবাদ সামু!)
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।