পিলখানায় বিডিআর হত্যাকাণ্ডের মামলার রায় ঘোষণার সময় বিএনপির নেতা সাবেক সংসদ সদস্য নাসির উদ্দিন আহমেদ পিন্টু ও স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা তোরাব আলী এজলাসে ছিলেন বিমর্ষ। এই হত্যাকাণ্ডের দীর্ঘ চার বছর ৯ মাস পর গতকাল রায় ঘোষণা করেন হত্যা মামলার বিচারে গঠিত বিশেষ আদালতের বিচারক ড. মো. আখতারুজ্জামান।
বিচারক রায় ঘোষণার আগে নাসির উদ্দিন আহমেদ পিন্টু ও তোরাব আলীর নাম উল্লেখ করেন। এ সময় এজলাসে আগে থেকেই এই দুজনকে হাজির রাখা হয়। সাদা পায়জামা-পাঞ্জাবি ও মাথায় টুপি পরে আদালতে একটি চেয়ারে বসেছিলেন নাসির উদ্দিন আহমেদ পিন্টু।
পরে এজলাসে হাজির করা হয় তোরাব আলীকে। তিনিও সাদা পায়জামা-পাঞ্জাবি ও মাথায় টুপি পরেছিলেন। বিচারক তার রায়ে পিন্টু ও তোরাব আলীকে হত্যাকাণ্ডে দোষী সাব্যস্ত করে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের রায় দেন। আদালত পিন্টু ও তোরাবকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের পাশাপাশি পাঁচ লাখ টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরও পাঁচ বছরের কারাদণ্ডের আদেশ দেন। রায় ঘোষণার পর পিন্টু তার প্রতিক্রিয়ায় শুধু বলেন, সাক্ষ্য-প্রমাণে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হয়নি।
এই রায় উদ্দেশ্যমূলক। রায় ঘোষণার পর পিন্টু ও তোরাবকে একটি প্রিজন ভ্যানে করে কারাগারে নেওয়া হয়। পিন্টু গাড়িতে উঠার সময় তার অনুসারীরা পিন্টু ভাই, পিন্টু ভাই বলে স্লোগান দিলে পিন্টু তাদের উদ্দেশে হাত নাড়েন। একই গাড়িতে নেওয়া হয় তোরাব আলীকেও। তিনি প্রিজন ভ্যানে উঠার সময় কান্নায় ভেঙে পড়েন।
রায় ঘোষণা উপলক্ষে পুরান ঢাকার বকশীবাজারে আলিয়া মাদ্রাসা সংলগ্ন মাঠে স্থাপিত বিশেষ আদালত ঘিরে নেওয়া হয় কড়া নিরাপত্তাব্যবস্থা। পুলিশ, র্যাব ও এপিবিএনের পাশাপাশি ফায়ার সার্ভিসের একাধিক টিম ওই এলাকায় উপস্থিত ছিল। ২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি পিলখানা ট্র্যাজেডিতে বিডিআর মহাপরিচালক মেজর জেনারেল শাকিল আহমেদসহ ৫৭ সেনা কর্মকর্তা নির্মম হত্যাকাণ্ডের শিকার হন। এ ছাড়া ওই রক্তাক্ত ঘটনায় সেনা কর্মকর্তাদের পরিবারের সদস্যসহ সামরিক-বেসামরিক ১৭ জন নাগরিক নিহত হন।
আনন্দ উল্লাস : রায়ে বেকসুর খালাস পাওয়ার পর অনেকেই দুই হাত তুলে মোনাজাতের মাধ্যমে আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করেন।
পরস্পরকে জড়িয়ে ধরেন পরম আবেগে। উল্লাস করে উঠেন আনন্দের আতিশয্যে। অনেকের চোখ ভিজে যায় আনন্দ অশ্রুতে। বিডিআর হত্যা মামলায় আদালত গতকাল ২৭১ জনকে দায় থেকে অব্যাহতি দেন।
রায়ে সরব প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন অনেক আসামিই।
দণ্ডিত অনেকে মন্তব্য করেন, 'এ সাজা দেওয়া হয়েছে অন্যায়ভাবে। আপনাদের বিচার করবেন আল্লাহ। আমি বাইরে ছিলাম। একটি অপরাধও করিনি। ' তালিকা থেকে নাম উল্লেখ করে দণ্ড ঘোষণার আগেই কেউ কেউ রায় সম্পর্কে নেতিবাচক মন্তব্য করেন।
১৬১ জনকে যাবজ্জীবন দণ্ড দেওয়া হয় একটু পরেই। এ দণ্ড শোনার পর কেউ কেউ বলেন, 'বিচার হবে আল্লাহর দরবারে। ' কারও কারও মন্তব্য ছিল, 'কোনো বিচার নেই এ দেশে। ' কেউ আবার বলে উঠেন, 'যাবজ্জীবন লাগবে না। ফাঁসি দেন, এক সপ্তাহের মধ্যে।
ফাঁসি দেন। ' এর পরে মৃত্যুদণ্ড পাওয়া অনেকে ডুকরে কেঁদে উঠেন। আর্তনাদ করে উঠেন কেউ কেউ।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।