Click This Link
দীর্ঘ প্রায় ১০ বছর পর অনুষ্ঠিত হলো ১২তম জাতীয় যুব রেড ক্রিসেন্ট সমাবেশ। অনেক আকাঙ্ক্ষা আনন্দ আর উচ্ছাস নিয়ে গত ২১ ডিসেম্বর চট্রগ্রামের শারীরিক শিক্ষা কলেজ মাঠে শুরু হয় এই ক্যাম্প। ক্যাম্প মানেই এক অন্য রকম উত্তেজনা। ঠাণ্ডার মধ্যে তাবুতে থাকা, সীমাবদ্ধ চলাফেরা, খাবারের লম্বা লাইন, ইউনিফর্ম এর বাদ্ধবাদকতা, নানা রকম কাজ এর চাপ, মোবাইল এর চার্জ না থাকা, নির্দিষ্ট সময়ে মাঠে উপস্থিত থাকা সহ এমনি আরও নানা কিছু উঠে আসে ক্যাম্প এর কথা ভাবলেই।
এসব যেন এক অন্য রকম আনন্দ, অন্য রকম অনুভুতি।
যারা কখনও ক্যাম্প করেনি তারা এটা বুঝবে না।
২১ তারিখ থেকে ২৬ তারিখ ছিলো আমাদের ক্যাম্প এর স্থায়িত্ব। মাত্র কয়েকটা দিন। সারা দেশের প্রায় সবগুলো জেলা থেকেই এসেছে যুবরা। যেন এক টুকরো বাংলাদেশ।
সবাই মিলে যেন একটা পরিবার হয়ে গিয়েছিলাম আমরা।
মজা, রাগ, হাসি, কান্না, ঝগড়া, বন্ধুত্ব, গানবাজনা, নাচ কবিতা, নাটক, তামাসা, শিক্ষা, খাওয়া, ফুর্তি, অসুস্থতা, গালবাজি, চাপাবাজি, প্রেম ভালবাসা, ধমক, চমক, ভোজ, অগ্নিখেলা, আড্ডা, জন্মোৎসব পালন, অগ্নি খেলা, আতসবাজি............কি ছিলো না এখানে?
খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠেই কুয়াশা আর শীতের মধ্যে লাইনে দাড়াতে হতো পানি আর টয়লেটের জন্য। তারপর মহড়ার জন্য মাঠে আসা, নাস্তা খাওয়া,পতাকা উত্তোলন, নাস্তার বিরতি, প্রশিক্ষন, সুইমিংপুল এবং ড্রাম এর পানি দিয়ে গোসল, ফাকে ফুকে ক্যামেরার দু একটা ক্লিক এবং দুপুরের খাবারের জন্য লাইন। তারপর আবার প্রশিক্ষন, পতাকা নামানো চা বিরতি...............। এই রকম নানা ব্যস্ততার মধ্য দিয়েই এক সময় বেলা পড়ে আসে।
এরই মাঝে কমলা রঙের সূর্যটা একটু খানি লালচে আভা রেখে ডুব দিয়েছে। এখন সন্ধ্যা। পুরো ক্যাম্প ব্যাস্ত হয়ে পড়েছে। একেক জন একেক দিকে ব্যাস্ত। কেউ সাজছে, কেউ মাথা গলায় মাফলার পেঁচিয়ে গরম পানি আদা এই সব খুঁজছে, কেউ বা একাকি এক কোনে আনমনে বিড়বিড় করে কি যেন পড়ছে।
কারন একটাই, এখন সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা শুরু হবে। গান, কবিতা, নাচ।
ভাগে ভাগে চলছে বাছাই পর্ব। কিছুক্ষন পর পর মাইকে ভেসে আসছে নানা রকম ঘোষণা। যাদের কোন প্রতিযোগিতা নেই তারাও ভিড় করছে, তাদের ইউনিট এর অবস্থা জানতে।
কেউবা ব্যস্ত মুল মঞ্চের অনুষ্ঠান দেখতে। কেউ বা এদিক সেদিক ঘুরছে বন্ধু খুঁজছে, আলাপ জমানোর চেষ্টা করছে নতুন কার সাথে। অনেক অনেক প্রতিযোগি। তাই প্রতিযোগীদের দীর্ঘ অপেক্ষা.........। ভলেযারন্টিয়াররা আছে দৌড়ের উপর যার যার দায়িত্ব নিয়ে।
এই করতে করতে সময় এগিয়ে যায়।
রাত বেড়েছে। ঘোষণা এলো রাতের খাবার গ্রহন করার। খুব ঠাণ্ডা; সাথে আছে কুয়াশা। সবাই নিজ নিজ সাবক্যাম্পে ফিরে গেছে।
খাওয়া দাওয়া শেষ। চলছে নিজ তাঁবুতে ঘুমানোর প্রস্তুতি এবং এর মাঝেই কিছু আড্ডা, মজা অবশেষে ক্লান্ত শরীরটার ঘুমের রাজ্যে হারিয়ে যাওয়া.........। । সব স্বেচ্ছাসেবকদের এতো তাড়াতাড়ি ঘুমানোর সুযোগ নেই। তারা তাদের নিজ নিজ দায়িত্ব পালনে ব্যাস্ত।
আবার নতুন এক সকালের শুরু। মহড়া,নাস্তা,প্রশিক্ষন তো আছেই, প্রতিদিনি আসছে দেশের বিখ্যাত লোকেরা অতিথি হয়ে। তাদের জন্য আমাদের যুব পাইলটরা প্রস্তুত সব সময়। কুচকাওয়াজ এর জন্য তৈরি সকল অংশগ্রহণকারীরা।
কেউ বা সলফেরিনো যুদ্ধের ফিল্ড ড্রামার প্রস্তুতি নিচ্ছে।
জিয়া ভাইতো আছেই। কেউবা নিচ্ছে শরীরচর্চার প্রশিক্ষণ। আরেক দিকে অডিটরিয়ামের ছাদে চলছে তুহিন ভাই এর নেতৃত্বে দড়ি, গ্লাবস, গিট্টু, হ্যালম্যাট, কপিকল সহ নানা কিছু নিয়ে সার্চ এন্ড রেস্কিউ এর মহড়ার প্রস্তুতি। ছাদ থেকে দড়ি দিয়ে নামানো হচ্ছে কয়েক জনকে। নামানো হচ্ছে তাদেরই যারা তাল পাতার সৈন্যদলে নাম লিখিয়েছে।
হা হা হা
আমাদের সবার পরিচিত এবং প্রিয় মারটিন ভাই ও আছেন। এদিক সেদিক ঘুরে একটা হ্যান্ডিক্যাম দিয়ে ভিডিও করছেন নানা কিছু। তাকে দাড়ি গোঁফ ছাড়া দেখে প্রথমে চিন্তেই পারছিলাম না। তিনি আমাদের সারা বাংলাদেশের জন্য তাঁবু গুরু (আন্তর্জাতিক খ্যতিসম্পন্ন)। ১০ বছর পর জাতীয় ক্যাম্প হচ্ছে শুনে লোভ সামলাতে না পেরে চলে এসেছেন বিদেশ থেকে যদিও তিনি কিছুটা অসুস্থ।
মারাত্মক রকমের কাজ পাগল লোক তিনি।
শাফকাত আপু সহ অন্বেষণ টিম কে দেখলাম ভাগে ভাগে অংশগ্রহনকারীদেরি সী-বিচে নিয়ে যেতে। আর নিবন্ধনে যারা ছিলেন তাদের ব্যাস্ততা যেন কাটেই না। নানা রকমের কাজ এসে চেপে বসছে তাদের উপর। তাদের জন্য সবচেয়ে কঠিন কাজ সম্ভবতো সবার নানা প্রশ্নের উত্তর দেওয়া।
অন্যদিকে ক্যাম্প শুরু হওয়ার আগে থেকেই ব্যাস্ত বাসস্থানের দায়িত্ব প্রাপ্তরা। তাদের দৌড়াদৌড়ি যেন আর শেষই হবে না। তাও তাদের জন্য অভাব, অভিযোগ আছেই। আসলে সব ক্যাম্পেই এটা হয়। ক্যাম্প তো ক্যাম্পই বাসা না।
আর যে কথা না বললেই নয়, শ্রেষ্ঠ ভলেন্টিয়ার কিন্তু এই ডিপার্টমেন্টই পেয়েছে।
পুরো ক্যাম্প জুড়ে শুধু একটা জায়গায় আটকে থাকতে হয়েছে যাদের তারা হল খাদ্য বিভাগ। সারাটা দিন টেনশন নিয়ে ব্যাস্ত থাকতে হয়েছে তাদের। এতো গুলো মানুষের খাবারের ব্যবস্থা করা এবং তা সুষ্ঠুভাবে বন্টন করা চাট্টিখানি কথা না। আর গুদামের যারা তারা সারা দিন তো ব্যাস্ত থাকতই, তা আরও বেড়ে যেত রাতে, যখন সবাই কম্বল এর জন্য ভীড় করত।
অন্যদিকে, কোন কাজ না থাকলেও চোখ কান খোলা রাখতে হতো প্রাথমিক চিকিৎসা যারা দিত তাদের। তবে তারা ভালই রুগী পেয়েছে দেখলাম।
ক্যাম্পের অন্যতম আকর্ষণ প্রশিক্ষন বিভাগ। তারা সফল ভাবে ব্যস্ত থাকত প্রশিক্ষক, শিডিউল, মার্কার, খাতা, কলম, ইজেল, সময়, স্থান, প্রশ্ন, সাবক্যাম্প ইত্যাদি নিয়েই। অংশগ্রহণকারীদের মূল্যায়ন ও পরীক্ষা সহজ ও সুন্দর ভাবে সম্পন্ন করে এই বিভাগ সকলের প্রশংশা কুড়িয়েছে।
যে লাল বাহিনির দাপট ছিলো পুরো ক্যাম্প জুড়ে তারা হল লাল জ্যাকেট পরিহিতি নিরাপত্তা বিভাগ। শীতের মধ্যেও সারা রাত সবার নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছে এই বিভাগ। পুরো ক্যাম্প এর শৃঙ্খলা ঠিক রাখতে এদের সত্যি অনেক কষ্ট করতে হয়েছে। ক্যাম্প এর স্বার্থে অনেকের বিরাগভাজন হতে হয়েছে এদের। আসলে সবারই বোঝা উচিৎ ক্যাম্প ইজ ক্যাম্প।
কড়া কড়ি, বিধি নিষেধ না থাকলে ক্যাম্পের মজাই পাওয়া যায় না। যাই হোক আমাদের ক্যাম্পটা কিন্তু সফল।
ক্যাম্পে এসে শুনেছিলাম লুঙ্গি পরে বের হওয়া নাকি নিষেধ। তখন মনে পড়ল গত ২০০৩ এর মৌচাক জাতীয় ক্যাম্পে আমার স্পেশাল গেটআপ এর একটা অংশ ছিলো লুঙ্গি। আমি সারাদিন লুঙ্গি পরেই ঘুরে বেড়াতাম।
ভাগ্য ভাল এবার আমার স্পেশাল গেট আপ ছিল 'হ্যাট-ক্যাপ' যা নিয়ে কোন নিষেধাজ্ঞা ছিল না।
সবার সহযোগিতা না পেলে আমাদের ক্যাম্পটা সফল হতে পারতনা। আমাদের সবাই এখানে একেকটা একক। আমরা ছোট বড় সবাই মজা করেছি, খেলেছি, ঘুরেছি, কথা বলেছি, কাজ করেছি, দেখা হয়েছে পুরনো বড় ভাইদের সাথে। করেছি স্মৃতিচারণ, তৈরি হয়েছে নতুন নতুন স্মৃতি।
জীবনে অনেক বছর আসে। আসে অনেক মাস, অনেক সপ্তাহ। আসে বহু দিন, ঘন্টা, মুহূর্ত। এর বেশিরভাগি আমরা মনে রাখি না। আর কিছু কিছু মুহুরত,দিন, অথবা বছর কখনই ভোলা যায় না।
গত ২১ থেকে ২৬ ডিসেম্বর এর দিন গুলো তেমনি কিছু দিন। ২০০৩ এর জাতীয় ক্যাম্পের পর এমন স্মৃতির জন্য দীর্ঘ অপেক্ষা করেছি। এবার ক্যাম্প হল। শেষ ও হয়ে গেলো। রয়ে গেলো শুধু স্মৃতি।
সারা বাংলাদেশের যুব রেড ক্রিসেন্টের এক মহামিলন ছিলও আমাদের এই ক্যাম্প। ২৫ তারিখ রাতের ক্যাম্প ফায়ার যেন আমাদের এই মিলন মেলার অগ্নি সাক্ষী। শান্তির দূতেরা শান্তির আলোকবর্তিকা হাতে নিয়ে এগিয়ে এলেন আলোকিত পৃথিবী গড়ার লক্ষ নিয়ে। তারা তাদের শান্তির অগ্নি ছড়িয়ে দিলেন বাংলাদেশের প্রতিটি কোন থেকে আসা হাজারো যুবর মাঝে। গাড় অন্ধকারের মাঝে জ্বলে উঠলো হাজারো মোমবাতি।
এর মাঝেই ভাঙবে এই ক্যাম্প। ভাঙবে মিলন মেলা। এই কয়টি দিনের সকল অর্জন সকল অনুপ্রেরণা নিয়ে সারা দেশে ছড়িয়ে পড়বে সাহসী, পরোপকারী, মেধাবী, উজ্জ্বল এই তরুনেরা। সেবার আলোয় আলোকিত হবে সারা বাংলাদেশ।
(কি এক মায়াবি আচ্ছন্নতার মাঝে কেটে গেলো দিন গুলো।
আমার মতো অদক্ষ লেখক দ্বারা লিখে প্রকাশ করা সম্ভব নয়। ভুলত্রুটি তে ভরা লেখার জন্য চেয়ে নিচ্ছি ক্ষমা। )
::muaz::
[img|http://ciu.somewherein.net/ciu/image/83954/small/?token_id=02262ae7c2655b43082d1cf123cb18c1
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।