আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

১৯৮১ সালের ৩০শে মে, একটি নক্ষত্রের ঝরে পরা, শোকে মূহ্যমান জাতি - পর্ব ৭

মুক্তিযুদ্ধের সেই উত্তাল দিনুলোতে, অজস্র তরুণ কি অসম সাহসিকতা নিয়ে দেশমাতৃকাকে রক্ষা করেছিল!

১৯৮১ সালের ৩০শে মে, একটি নক্ষত্রের ঝরে পরা, শোকে মূহ্যমান জাতি - পর্ব ৭ -------------------------------------------------- ডঃ রমিত আজাদ গত পর্বে অনেকগুলো প্রশ্ন উত্থাপন করেছিলাম। ৭ই নভেম্বর ১৯৭৫ আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিন। কি ঘটেছিলো ঐ দিন? কারা ঘটিয়েছিলো সেই কাউন্টার ক্যু? সিপাহী বিপ্লব কি? বিপ্লবী সৈনিক পরিষদ কি? কি লেখা ছিলো বারো দফায়? কি ভূমিকা ছিলো কর্নেল তাহেরের? নিরিহ-নিরাপরাধ অফিসারদের কেন হত্যা করা হয়েছিলো? ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের এই চৌকষ অফিসারদের বিরুদ্ধে এতো আক্রোশ কার থাকতে পারে? কারা মুক্ত করেছিলো জিয়াউর রহমানকে? বরাবরের অনুগত সৈনিকদের একটা অংশ হঠাৎ এত উশৃংখল হয়ে উঠলো কেন? সহজ-সরল সৈনিকদের কেউ কি উশকে দিয়েছিলো? উশৃংখল সৈনিকদের কে শান্ত করেছিলো? কি ঘটেছিলো তার পরে? কি কি রাজনৈতিক আদর্শ-মতাদর্শ কাজ করেছিলো সেখানে? আন্তর্জাতিক প্রভাব সেখানে কাজ করেছিলো কি? এমন হাজারটা প্রশ্ন রয়েছে ৭ই নভেম্বর ১৯৭৫-কে ঘিরে। এই পর্বে সেই প্রশ্নগুলোর আংশিক উত্তর দেয়ার চেষ্টা করবো। খন্দকার মোশতাক আহমেদ পদত্যাগ করায় দেশ রাষ্ট্রপতিহীন হয়ে যায়।

এদিকে জিয়াউর রহমানকে বন্দি করায় সেনাপ্রধানের পদটিও একরকম শূণ্য। ৪ঠা নভেম্বর পদত্যাগের আগে খালেদ মোশাররফের মেজর জেনারেল র্যাং ক সহ চীফ অব স্টাফ প্রমোশন ফাইলে খন্দকার মোশতাক ইনিশিয়াল দিয়ে যান। বলা যায় বাধ্য করা হয়। রাত ১১ টায় বাংলাদেশ রেডিও থেকে ঘোষনা করা হয় খালেদ মোশাররফ নতুন সেনা প্রধান হিসেবে জিয়াউর রহমানের স্থলাভিষিক্ত হয়েছেন। সাধারণ সৈনিকদের কাছে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ছিলো আকাশ ছোঁয়া জনপ্রিয়তা।

সেই জনপ্রিয়তাকে চ্যালেন্জ করা ছিলো রীতিমতো বোকামী। খালেদ মোশাররফ সেই বোকামীটিই করেছিলেন। কেবল র্যা ঙ্ক ব্যাজ পরলেই সেনাপ্রধান হওয়া যায়না। সৈনিকদের মধ্যে গ্রহনযোগ্যতা থাকতে হয়। খালেদের সেটা ছিলোনা।

একই ভুল পরবর্তিতে কর্নেল তাহেরও করেছিলো। ৩রা থেকে ৭ই নভেম্বর খালেদ মোশাররফ গুটিকতক অফিসার নিয়ে গান পয়েন্টে সব কিছু করছিলেন। উনার জনসমর্থন ছিলো কি? একদম না। এই তিন দিনে খালেদের স্বপক্ষে মিছিল বেরিয়েছিলো একটি/দুটি। মূলতঃ দেশের জনগণ ছিলো একদিকে খালেদের প্রতি ক্ষুদ্ধ আবার অপরদিকে ভারতীয় আগ্রাসনের ভয়ে ভীত।

দেশে তখন একরকম অচল অবস্থা বিরাজ করছে। দেশের জনগণ উদ্বিগ্ন, সেনা অফিসাররা সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছেন। সৈনিকরা বরাবরই আদেশ মেনে অভ্যস্ত, তারা যে আদেশ খালেদ মোশাররফের কাছ থেকে পেয়েছে তা তাদের মনপুতঃ নয়। আবার ভিন্ন কোন আদেশও তারা পাচ্ছেনা। দেশে এক শ্বাসরুদ্ধকর অনিশ্চিত অবস্থা বিরাজ করছিল।

হুমকির সম্মুখীন হয়ে পড়েছিল স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব। এ ঘটনা সাধারণ জনগণ ও সিপাহীদের মধ্যে ক্ষোভ সৃষ্টি করে। আগেই বলেছি জিয়াউর রহমান ছিলেন মুক্তিযুদ্ধ শুরুর প্রাক্কালে স্বাধীনতার ঘোষক, যুদ্ধ চলাকালে সেক্টর কমান্ডার এবং কিছুদিন পর ‘জেড ফোর্স’ এর সুপরিচিত, সফল ও সাহসী অধিনায়ক। জিয়াউর রহমান সাধারণ সৈনিক ও অফিসারগণের নিকট অন্য সকল জ্যেষ্ঠ অফিসারের তুলনায়, বহুগুণ বেশি জনপ্রিয় ছিলেন। অবশেষে সাধারণ সৈনিকরাই মূল ভূমিকায় এলো।

তারা পাল্টা ব্যবস্থা গ্রহণ করে তাদের প্রধান জিয়াউর রহমানকে মুক্ত করার পরিকল্পনা গ্রহণ করলো। এদিকে বিশেষ এক রাজনৈতিক উদ্দশ্যে নিয়ে কর্ণেল তাহেরও কিছু সৈনিককে সংগঠিত করলো। কিন্তু এই রাজনৈতিক উদ্দেশ্য উনার পক্ষে বাস্তবায়ন করা সম্ভব না এটা তিনি জানতেন, তাই উনার প্রয়োজন ছিলো জিয়াকে। তিনি মতলব করলেন জিয়ার ইমেজ ও জনপ্রিয়তাকে ঢাল হিসাবে ব্যবহার করে তার রাজনৈতিক উদ্দেশ্যকে তিনি হাসিল করবেন। খালেদ মোশাররফের অভ্যুত্থানে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী দ্বিধাবিভক্ত হয়ে পড়ে।

যেটা একটা দেশের নিরাপত্তার জন্য ভয়াবহ। তাছাড়া ৩রা নভেম্বর থেকে ৬ই নভেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশ কার্য্যত সরকারবিহীন ছিলো। সৈনিক অসৈনিক প্রতিটি দেশপ্রেমিক নাগরিকই বুঝতে পারছিলো যে, অবিলম্বে দেশকে এই অভিশাপ মুক্ত করে সেনাবাহিনীতে ঐক্য ফিরিয়ে আনা প্রয়োজন। এর জন্য যেটা সবার আগে করা প্রয়োজন ছিলো তাহলো তাদের মধ্যে সব চাইতে বেশী প্রভাব বিস্তারকারী ও জনপ্রিয় ব্যক্তিত্ব জেনারেল জিয়াউর রহমানকে মুক্ত করা। একমাত্র তিনিই পারবেন দেশে শান্তি ফিরিয়ে আনতে।

তাই ৬ই নভেম্বর রাত বারোটার পর ৭ই নভেম্বর প্রথম প্রহরে বিপ্লব শুরু হয়। এতে তাহেরের সংগঠিত স্বল্প সংখ্যক বিপ্লবী সৈনিক পরিষদের সদস্য ছাড়াও অজস্র নিরপেক্ষ সৈনিক যোগ দেয়। তাদের একমাত্র উদ্দেশ্য ছিলো জেনারেল জিয়াকে মুক্ত করা। অল্প সময়ের মধ্যেই একটি জনসমুদ্র জিয়াউর রহমানের বাসভবনের দিকে এগিয়ে যায়। ৬ ই নভেম্বর রাত বারোটার মধ্যেই সব ঘটিয়ে ফেলার পরিকল্পনা ছিলো কিন্তু কিছু কারণে বিপ্লব শুরু করতে রাত বারোটা পেরিয়ে যায় অতঃপর ৭ নভেম্বরের জওয়ানরা ব্যারাক থেকে বেরিয়ে পড়ল।

সারা ঢাকা শহরে এই ‘সিপাহী বিপ্লব’ দ্রুত ছড়িয়ে পড়ল। বর্তমানে ঢাকা সেনানিবাসের জাহাঙ্গীর গেট থেকে একটি চওড়া সুন্দর রাস্তা সোজা ছুটে গেছে বালুঘাট (আই, এস, এস, বি) পর্যন্ত। ৩ থেকে ৭ ই নভেম্বর পর্যন্ত যা কিছু ঘটেছিলো তা মোটামুটি এই সড়কটির দুপাশেই ঘটেছিলো। ৪৬ পদাতিক ডিভিশন এই রাস্তার পাশেই, টু ফিল্ড আর্টিলারীও এই সড়কের পাশেই। জিয়াউর রহমান যেই কোর্টে টেনিস খেলতেন সেটাও এই সড়কের পাশেই, খালেদ মোশাররফের বাসভবনও ছিলো এই সড়কের পাশেই।

জিয়াউর রহমান বাসভবনও ছিলো এই সড়কটি থেকে বের হয়ে যাওয়া একটি শাখা সড়কে। তখন রাস্তাটি এখনকার চাইতে সরু ছিলো ৭ই নভেম্বর রাতে এই সড়কের উপর মেশিনগান বসিয়ে সৈনিকরা উপরের দিকে সমানে গুলি ছুঁড়ছিলো। অনেকের কাছে এটা উদ্দেশ্যহীন হলেও আসলে তারা চাইছিলো অপশক্তিকে ভড়কে দিয়ে বিপ্লব সফল করতে। রাত ১টার মধ্যেই সিপাহীরা পুরো ক্যান্টনমেন্ট দখল করে নিল। একদল জওয়ান গেল জেনারেল জিয়ার বাসভবনে।

সেখানে তখন ডিউটি দিচ্ছিলো ১ম বেঙ্গলের সৈনিকরা। হুকুমের গোলাম এই সৈনিকরা আদেশ পালন করছিলো মাত্র। কিন্তু ভিতরে ভিতরে তারাও অসন্তুষ্ট ছিলো জিয়াকে বন্দি রাখতে। অজস্র সৈনিককে এগিয়ে আসতে দেখে প্রথমে তারা ভড়কে যায় তারপর যখন বুঝতে পারলো যে ঐ সৈনিকরা জিয়াকে মুক্ত করতে এসেছে তখন ১ম বেঙ্গলের সৈনিকরাও যোগ দিয়ে দিলো তাদের সাথে। সৈনিকদের চাপে জিয়ার বাড়ীর বিশাল ফটক ভেঙে যায়।

মুহূর্তের মধ্যে তাঁর বাড়ীর আঙিনা একটি জনসমুদ্রে পরিণত হয়। বেশ কয়েকজন সৈনিক ড্রয়িংরূমে ঢুকে বলে, "স্যার কোথায়? আমরা স্যারকে মুক্ত করতে এসেছি। " ইতিমধ্যে জিয়াও বেরিয়ে আসেন ড্রয়িংরূমে। উদ্বিগ্ন হয়ে খালেদা জিয়া জিয়াকে আগলে ফেলেন। সৈনিকরা হাসিমুখে বলে, "স্যার আমরা আপনাকে মুক্ত করতে এসেছি।

" এসময় জিয়ার বাসার ভিতরে অবস্থানরত জিয়াকে বন্দি করে রাখা অফিসাররা ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে পড়ে। জিয়া তাদের আশ্বস্ত করেন। চারদিন বন্দি থাকার পর মুক্তি পেলেন জেনারেল জিয়া। নৈশ পোশাক পরা অবস্থাতেই জিয়াকে উল্লসিত জওয়ানরা কাঁধে করে নিয়ে গেল ২ ফিল্ড আর্টিলারির হেডকোয়ার্টারে। ঘটনার আকস্মিকতায় তখন বিহ্বল হয়ে পড়েন জিয়া।

নাম না জানা অনেক জওয়ানের সঙ্গে আলিঙ্গন, করমর্দন করেন তিনি। এর পরের রাত ও পুরো দিনটি ছিলো ঘটনাবহুল ও বাংলাদেশের ইতিহাসে অতীব তাৎপর্যপূর্ণ। ৭ নভেম্বর রাত তিনটায় এক ঘোষণা হলো বেতারে। ঘোষণায় বলা হলো, আজ মধ্যরাত থেকে সারা দেশে সিপাহী – জনতার অভ্যুত্থান অনুষ্ঠিত হয়েছে। দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনী, বিডিআর, পুলিশ, বিপ্লবী সৈনিক সংস্থা ও বিপ্লবী গণবাহিনী ও ছাত্র, যুবক.শ্রমিক সম্মিলিতভাবে দেশে ষড়যন্ত্রকারীদের রুখে বিপ্লবী অভ্যুত্থান অনুষ্ঠিত করেছে।

বাংলাদেশের সকল সেনানিবাসের সৈন্য, বিডিআর, পুলিশ, ছাত্র.জনতা এবং সকল স্তরের মেহনতি মানুষের প্রতি আমাদের আহ্বান – প্রত্যেকে স্ব স্ব এলাকায় শান্তি – শৃঙ্খলা রক্ষা করুন। এবং নিকটস্থ গণবাহিনীর সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করুন। সকাল সাত-টার দিকে মেজর (পরবর্তিতে মেজর জেনারেল) সৈয়দ মুহাম্মদ ইব্রাহীম ও ক্যাপ্টেন এনাম একটি জীপে চড়ে টু ফিল্ড আর্টিলারির দিকে গেলেন। তিনি তখনও জানতেন না যে জিয়া মুক্ত হয়েছেন। শুধু অনুমানের উপর ভিত্তি করে তারা টু ফিল্ড আর্টিলারির দিকে গিয়েছিলেন।

১৫ই আগস্টের পর থেকে টু ফিল্ড আর্টিলারি ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট-এর অনেকটা সেন্টারের মতো হয়ে গিয়েছিলো। ওখানে গিয়ে সংবাদ পাওয়া যেতে পারে পরিস্থিতি বোঝা যেতে পারে এই ধারণা থেকেই তারা সেখানে গিয়েছিলেন। সেখানে গিয়ে দেখলেন লোকে লোকারণ্য, সৈনিকে সৈনিকে ভরপুর, মাঝে মাঝে অফিসারদের দেখা যাচ্ছে। ১৯৭৫ যারা জিয়াকে উদ্ধারে দেশপ্রেমিক সাধারণ সৈনিকদের ভূমিকা ছিলো সর্বাধিক। তারপরেও অফিসারদের কেউ কেউও ঐ সাহসী ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছিলেন।

কয়েকজনের নাম নিচে উল্লেখ করা হলো। ৪ ই বেংগল রেজিমেন্ট কমান্ডিং অফিসার কর্ণেল আমিনুল হক বীরবিক্রম........... ৪ ই বেংগল রেজিমেন্ট অ্যাডজুটেন্ট মেজর মুনীর........ ২ ফিল্ড আর্টিলারীর মেজর মহিউদ্দিন ২ ফিল্ড আর্টিলারীর সুবেদার মেজর আনিস প্রমুখ এদিকে খালেদ মোশাররফ অবস্থান করছিলেন শেরে বাংলা নগরে অবস্থিত ১০ম বেঙ্গল রেজিমেন্টে। এই ইস্ট বেঙ্গল ইউনিটকে তিনি তার নিরাপত্তা বিধানের জন্য বগুড়া ক্যান্টনমেন্ট থেকে ৩ নভেম্বরের পর ঢাকায় এনেছিলেন। ভোরবেলা দেখতে দেখতে সিপাহী বিদ্রোহের প্রবল ঢেউ ১০ম বেঙ্গলে এসে পড়ে । পরিস্থিতি ১০ম বেঙ্গলের কমান্ডিং অফিসার কর্নেল নওয়াজিসের নিয়ন্ত্রনের বাইরে চলে যায় ।

উত্তেজিত সৈনিকরা একজন হাবিলদারের নেতৃত্বে মেসের ভিতর প্রবেশ করে, এখানে সকালের নাস্তা করছিলেন খালেদ মোশাররফ, হাবিলদার চিৎকার দিয়ে জেনারেল খালেদকে বলল-"আমরা আপনার বিচার চাই "! খালেদ জবাব দিলেন ," ঠিক আছে , তোমরা আমার বিচার করো । " স্বয়ংক্রিয় রাইফেল বাগিয়ে হাবিলদার চিৎকার করে বললো-"আমরা এখানেই আপনার বিচার করবো। " খালেদ মোশাররফ বললেন, "ঠিক আছে, তোমরা আমার বিচার করো । " খালেদ দু’হাত দিয়ে তার মুখ ঢাকলেন । ট্যারর-র-র-র ! একটি ব্রাস ফায়ার ।

লেঃ কর্নেল এটিএম হায়দার ও কর্নেল খোন্দকার নাজমুল হুদাও নিহত হন। তার কিছুক্ষণ পর একটি হিনো ট্রাকে করে তাদের মৃতদেহ টু ফিল্ড আর্টিলারিতে প্রবেশ করে। ইতোমধ্যে রেডিওতে প্রচারিত হয় জিয়ার জাতি উদ্দীপক ভাষন............ সকাল ৮ টার দিকে তাহের আসেন টু ফিল্ড আর্টিলারীতে.......... ৩ বাহিনী চিফ , জেনারেল ওসমানি, মেঃ জেঃ খলিলুর রহমান এবং তাহের সহ সবাই মিটিং এ বসেন কে হবেন প্রেসিডেন্ট, কে হবেন সি এম এল এ তা ঠিক করতে............ ওসমানি চেয়েছিলেন খোন্দকার মোশতাক কে প্রেসিডেন্ট রাখতে........ কিন্তু মেঃ জেঃ খলিল এবং তাহেরের আপত্তির কারনে হয়নি....... সিদ্ধান্ত হয় সায়েমই হবেন প্রেসিডেন্ট এবং সি এম এল এ, আর ৩ বাহিনী চিফ হবেন ডেপুটি সি এম এল এ....... ৮ই নভেম্বর , ১৯৭৫ / নিউইয়র্ক টাইমস ৩-রা নভেম্বরের অভ্যুত্থানের আরেক হোতা ছিলেন কর্ণেল শাফায়াত জামিল, উনার ভাগ্যে কি ঘটেছিলো ৭ ই নভেম্বরে? ৭ ই নভেম্বরের সিপাহী বিপ্লবের ইমপালসে মুক্তি পাওয়ার পর জিয়া তার বন্দিত্বের মুল কুশলী শাফায়াত জামিলকে ফোন করে বলেছিলেনঃ “ফরগিভ অ্যান্ড ফরগেট / লেটস ইউনাইট দা আর্মি................” জবাবে শাফায়াত জামিল রুক্ষ রূঢ় ভাবে জিয়ার সেই উদার আহ্বান ছুড়ে ফেলেন............ অথচ প্রাণ নিয়ে পালানোর সময় ভাঙ্গা পা নিয়ে অনেক চড়াই উতরাই পেরিয়ে নারায়নগঞ্জ থানা থেকে টু ফিল্ড রেজিমেন্টে জিয়ার কাছেই তাকে উদ্ধারের জন্য ফোন করলেন শাফায়াত জামিল............ শাফায়াত জামিল নিজেই বলেছেন, "নারায়নগন্জ থেকে দ্বিতীয় ফিল্ড রেজমেন্টে জিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ করলাম। জিয়ার পক্ষে মীর শওকত আমাকে বললেন, তুমি ওখানেই থাকো, আমি লে, কর্ণেল আমিনুল হককে পাঠাচ্ছি। সে তোমাকে নিয়ে আসবে।

ঘন্টা দুয়েক পরে আমিনুল হক এলো। তার সঙ্গে দুই তিনটি গাড়ীতে ৪র্থ বেঙ্গলের কিছু সৈন্য। ঢাকার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হলাম আমরা। ঢাকা পৌছে আমাকে সি,এম,এইচ-এ ভর্তি করা হলো। এখানে এসে শুনি খালেদ হায়দার ও হুদার নির্মম হত্যাকান্ডের খবর।

পরে শুনি মুক্তি পেয়ে দ্বিতীয় ফিল্ড রেজিমেন্টে আসার পর জিয়া নিজে বলেছিলেন, There should not be bloodshed. No retribution, nobody will be punished……………………” শাফায়াত জামিল আরো বলেছেন, "৬ই নভেম্বর রাতে খালেদ মোশাররফ চলে যাওয়ার পরও আমি বঙ্গভবনে থেকে যাই তারই নির্দেশে। খালেদের সঙ্গে আর যোগাযোগ হয়নি তারপরতো সিপাহী বিপ্লব ঘটে গেলো। রাত তিনটার দিকে (৭ই নভেম্বর) জিয়া ফোন করলেন আমাকে, বললেন, "Forgive and forget, lets unite the army.” জিয়াও তাকে উদ্ধার করে এনে সিএমএইচে ভর্তি করেন............ ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর তদানীন্তন দৈনিক বাংলার রিপোর্টে বিপ্লব সম্পর্কে বলা হয়, ‘সিপাহী ও জনতার মিলিত বিপ্লবে চারদিনের দুঃস্বপ্ন শেষ হয়েছে। মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান বন্দিদশা থেকে মুক্ত হয়েছেন। বৃহস্পতিবার রাত প্রায় ১টায় সশস্ত্র বাহিনীর প্রতিক্রিয়াশীল চক্রের বিরুদ্ধে সেনাবাহিনী, বিমানবাহিনী, নৌবাহিনীর সিপাহী-জওয়ানরা বিপ্লবী অভ্যুত্থান ঘটিয়েছেন।

ষড়যন্ত্রের নাগপাশ ছিন্ন করে মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমানকে উদ্ধার করেছেন বিপ্লবী সিপাহীরা। ৭ নভেম্বর শুক্রবার ভোরে রেডিওতে ভেসে আসে, ‘আমি মেজর জেনারেল জিয়া বলছি। ’ জেনারেল জিয়া জাতির উদ্দেশে ঐতিহাসিক ভাষণ দিয়ে শান্তিপূর্ণভাবে যথাস্থানে নিজ নিজ দায়িত্ব পালনের জন্য সবার প্রতি আহ্বান জানান। ওইদিন রাজধানী ঢাকা ছিল মিছিলের নগরী। পথে পথে সিপাহী-জনতা আলিঙ্গন করেছে একে অপরকে।

নারায়ে তাকবির আল্লাহ আকবর, বাংলাদেশ জিন্দাবাদ ধ্বনিতে ফেটে পড়েন তারা। সিপাহী-জনতার মিলিত বিপ্লবে ভণ্ডুল হয়ে যায় স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ববিরোধী সব ষড়যন্ত্র। আনন্দে উদ্বেলিত হাজার হাজার মানুষ নেমে আসেন রাজপথে। সাধারণ মানুষ ট্যাঙ্কের নলে পরিয়ে দেন ফুলের মালা। এই আনন্দের ঢেউ রাজধানী ছাড়িয়ে দেশের সব শহর-নগর-গ্রামেও পৌঁছে যায়।

’ অনেকের ধারণা ছিলো ঘটনা এখানেই শেষ হয়ে যাবে, কিন্তু ঘটনা ওখানে শেষ হয়নি ঘটনার পর শুরু হলো নতুন ঘটনা। ঘটনাটির আরও বিস্তারিত জানিয়েছেন কর্ণেল এম এ হামিদঃ তাহের জিয়াকে টু ফিল্ড থেকে বের করে শাহবাগে রেডিও স্টেশনে নিয়ে যেতে চাইছিলো। রেডিও স্টেশনে তার লোকজন উপস্থিত ছিলো.........উপস্থিত কর্ণেল আমিন , মুনির , সুবেদার মেজর আনিস তারা জিয়ার পাশে থেকে বলেন রেডিওতে ভাষন দিতে হলে রেকর্ডিং যন্ত্র এখানে আনা হবে। তাকে এখন বাইরে যেতে দেয়া যাবেনা । ভেস্তে যায় তাহেরের প্ল্যান......... সুবেদার মেজর আনিস কর্ণেল তাহেরকে বললেন , আপনি এখন দয়া করে আসুন।

তাহের কটমট করে তার দিকে তাকালো । বলল , আমাকে চেনেন ? আনিস বললো জ্বি স্যার আপনাকে চিনি , তবে আপনি এখন আমার সাথে আসুন। এভাবেই ব্যর্থ হয় তাহেরের ২য় দফা জিয়াকে নিয়ন্ত্রনে নেয়ার চেষ্টা যেটি ছিলো আসলে জিয়াকে ২য় বার বন্দী করার কুটিল পরিকল্পনা । যাইহোক ২ ফিল্ডে বসেই জিয়ার ভাষন রেকর্ড করা হলো । আর সেখানেই তাহেরের খেলার ৩য় দফা ' হান্ট জিয়া মিশন ' শুরু হয় যেটিকে কর্ণেল হামিদ বলেছেনঃ সুবেদার মেজর আনিস বললো আমাদের উপস্থিত সবাইকে ছেড়ে তাহেরের সাথে জিয়া সাহেবের এত লম্বা গরম আলোচনা দেখে আমার নিজেরই মাথা গুলিয়ে যায়...............সাধারন সৈনিকদের ধারনা ছিল জিয়াকে মুক্ত করার পরই সেপাই বিদ্রোহ শেষ হয়ে যাবে........... কিন্তু ৭ই নভেম্বর সন্ধ্যা থেকে শুরু হলো আরো একটি ঘটনা।

রাষ্ট্রবিজ্ঞানে একটি কথা আছে, 'বিপ্লবের পর প্রতি বিপ্লব আসে'। (চলবে) সাহায্যকারী সূত্রঃ ১। মিশ্র কথন - মেজর জেনারেল (অবঃ) সৈয়দ মুহাম্মদ ইব্রাহীম বীর প্রতীক। ২। দাসত্ব-এর ব্লগ ৩।

সাতই নভেম্বর, জেনারেল জিয়া ও কর্নেল তাহের : নির্মল সেন ৪। ইন্টারনেটে প্রাপ্ত বিভিন্ন আর্টিকেল (সাধারণ সৈনিকদের কাছে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ছিলো আকাশ ছোঁয়া জনপ্রিয়তা। সেই জনপ্রিয়তাকে চ্যালেন্জ করা ছিলো রীতিমতো বোকামী। খালেদ মোশাররফ সেই বোকামীটিই করেছিলেন। গান পয়েন্টে রাষ্ট্রপতিকে দিয়ে স্বাক্ষর করিয়ে নিয়ে, র্যাঙ্ক ব্যাজ পরলেই সেনাপ্রধান হওয়া যায়না।

সৈনিকদের মধ্যে গ্রহনযোগ্যতা থাকতে হয়। খালেদের সেটা ছিলোনা। নির্বোধ খালেদ সেটা বুঝতে পারেনি। একই ভুল পরবর্তিতে কর্নেল তাহেরও করেছিলো। তারও একই পরিনতি হয়েছে।

তার কয়েক বছর পর জেনারেল মন্জুরও একই ভুল করেছিলো। তবে মন্জুরের নির্বুদ্ধিতায় আমরা একজন সৎ ও যোগ্য রাষ্ট্রনায়ককে হারিয়েছি। নির্বোধ মন্জুর বুঝতে পারলো না ১৯৭৫-এর জিয়ার চাইতে ১৯৮১-র জিয়া আরো বেশী শক্তিশালী, সাধারণ সৈনিকদের গন্ডি পেরিয়ে জিয়ার জনপ্রিয়তা তখন সারা দেশব্যাপী, আকাশ ছোঁয়া। নিজের সততা, নিষ্ঠা ও দেশপ্রেম দিয়ে জিয়া স্থান করে নিয়েছেন কোটি মানুষের হৃদয়ে। )


সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ২০ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.