কানে ধরে মতিঝিল ত্যাগ করার পর ফের হেফাজত ইসলামের মতিঝিলে সমাবেশ করার ঘোষণা প্রতিশোধ না দ্বিতীয় চেষ্টা সেটা সময়ই বলে দিবে, কিন্তু এটা যে বর্হিবিশ্বে বাংলাদেশের মৌলবাদীদের একটা বিজ্ঞাপন হতে যাচ্ছে তাতে কোন সন্দেহ নেই। অনেক আওয়ামীপন্থি ব্লগার, সাংবাদিক, বুদ্ধিজীবী হেফাজতের ১৩ দফা দাবীকে ইসলামসম্মত নয় বলে প্রচার চালানোর চেষ্টা করছেন। ১৩ দফা গণতন্ত্র সম্মত নয় এটা না বলে ইসলাম সম্মত নয় বলছেন কারণ এই দেশের মানুষ ইসলামকে পছন্দ করে, গণতন্ত্রকে নয়। ১৩ দফা গণতন্ত্র পরিপন্থি হোক কিছু যায় আসে না, মৌলিক অধিকার পরিপন্থি হোক কিছু যায় আসে না, কিন্তু ইসলাম সম্মত হলে চুপ করে যেতে হবে। তা যত গণতন্ত্র পরিপন্থিই হোক না কেন।
যত মানবাধিকার পরিপন্থিই হোক না কেন, ইসলাম বলেছে তো সব ঠিক আছে। তাই আওয়ামী ব্লগার থেকে শুরু করে ভ্যাবদা বুদ্ধিজীবী, ভালোমানুষ টাইপের মুসলমান বলা শুরু করেছে ১৩ দফা ইসলাম সম্মত নয়। কিন্তু এই কথা ধোপে টিকবে বলে মনে হয় না। কারণ এসব বলতে হলে আপনার থুতনির নিচে নারকেলের ছোবা থাকতে হবে। মাদ্রাসায় পড়াশোনা করতে হবে।
যারা ১৩ দফা উত্থাপন করেছেন তাদের ছোবা-মাদ্রাসা দুটোই আছে। পাবলিক তাদেরকেই বিশ্বাস করবে, আপনাকে না।
২.
এ দেশের মানুষ ইসলাম খেতে এত ভালবাসে তবু ইসলামের ফেরিওয়ালাদের ভোট দেয় না। এই জন্য সবাই বলে, শরীয়া শাসন এই দেশে কোনদিন সম্ভব না। পাকিস্তান-আফগানস্থান হবার কোন চান্স নেই আমাদের।
বলদ আর কারে কয়? আফগানস্থান-পাকিস্থান হলে লাভের চেয়ে লস বেশি হুজুরদের। বরং লেংড়া একটা গণতন্ত্র আর “ইসলামী সেক্যুলারিজম” বজায় থাকলে বেহেস্তের হুরীর পর দুনিয়াবী “হুজুর জীবন” সার্থক হয়। গণপ্রজাতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থায় রাষ্ট্রীয় নীতি নির্ধারক সকল ব্যাপারে হুজুরদের মতামত বা ফতোয়া নেয়ার আবশ্যিকতা থাকলেই তো পোয়া বারো। হুজুররা ক্ষমতায় যাবে না বরং কারা ক্ষমতায় যাবে তা ঠিক করে দিবে। ভবিষ্যতে কারা ইসলামবান্ধব আর কারা ইসলামের শত্র“ তা আগে হুজুররা চিহ্নিত করে দিবে ভোটারদের।
দেশে ভোট থাকবে, ভোটার থাকবে, নির্বাচন কমিশনার থাকবে, রাজনৈতিক দল থাকবে, কিন্তু অলিখিত এক খগ্ড় “হুজুরদের মনোরঞ্জন” ব্যতিত নির্বাচনি পুলসিরাত পার হওয়া দলগুলোর জন্য সহজ হবে না। মোল্লার শাসন এভাবেই গেঁড়ে বসবে “প্রজাতন্ত্রের” বুকের উপর। পাবলিক ভোট না দিক, মান্য তো করে খুব তাদের। যে পুলিশ আওয়ামী লীগ-বিএনপিকে রাস্তায় বুট দিয়ে থেঁতলে দেয়। ছাত্র-বুদ্ধিজীবীকে লাঠিপেটা করতে হাত কাঁপে না, জাতীয় সম্পদ রক্ষায় দেশের সুনগরিকরা রাস্তায় যখন নেমে আসেন, সাংবাদকর্মী, খোলোয়ার, সর্বজন সম্মানিতজনকেও যে পুলিশের আক্রমন করতে বাঁধে না সেই তারাই হুজুরদের হাতে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে মার খায়! পুলিশকে লক্ষ্য করে হুজুরদের ফ্লাইং কিক্ যারা টিভি পর্দায় দেখেছেন তাদের নিশ্চয় সে দৃশ্য এখনো মনে আছে...।
৩.
মাওলানা, মুফতি, আল্লামা, ক্বারি, হাফেজ, ইমাম-মুয়াজ্জিন, হযরত... মাত্রই মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পরিপন্থি। এই ইসলামিস্টরা কেউ বাংলাদেশ চায়নি। বাংলাদেশকে তারা চায় পাকিস্তানী ভাবাদর্শে। দেশের প্রখ্যাত আলেম ও তারা চ্যালারা ঢাকার রাজপথে মিছিল করেছে, “আমরা সবাই তালেবান, বাংলা হবে আফগান”। তালেবান যে ইসলামের আদর্শ মেনে চলে এটা একজন আলেম ব্যতিত কে ভাল বুঝবে? সেদিন একটা বলদমার্কা কাগজে তারচেয়েও বড় বলদমার্কা সম্পাদকীয় পড়লাম, সাঁথিয়ায় হিন্দুদের উপর হামলার নিন্দা জানিয়ে লিখেছে, ইসলাম ধর্ম শান্তির কথা বলে।
অন্য ধর্ম ও সম্প্রদায়ের উপর হামলা আক্রমনকে ইসলাম নিরুৎসাহিত করে। ... সারাদিন সাংবাদিকতা করে রাতে ঢাকা ক্লাবে মদ গিলে যারা ইসলাম ধর্মের ছবক দিতে আসে তাদের কথা শুনলে রাগে আমার গা জ্বলে! ইসলাম কি তারা সাঈদী-গো. আযমদের চেয়ে বেশি বুঝে? একাত্তরে হিন্দু মেয়েদের পাইকারীভাবে গণিমতের মাল বানিয়ে তারা আলেম, কোরআন ব্যাখ্যাকারী, কেউ বলুক এরা আলেম নন? গণিমতের মাল বলতে ইসলামে কোন শব্দ নেই? নারী যে “মাল” অন্যসব মালের মত, যেমন বাসতবাড়ি, গরু-ছাগল-ভেড়া-উট, ইসলামে নারীও গণিমতের মালের মধ্যে পড়ে। কোন ইসলামিস্ট প্রমাণ দেখাক এসব মিথ্যা!
৪.
সেই আলেম ওলামারা ফের মতিঝিলে তছরিফ রাখতে আসছে শুনছি। আসবেনই ধরে নিয়ে ভাবছি, এবার কি হবে? গতবার কানে ধরিয়ে ছেড়ে দিয়ে “আলেমের রক্তে মতিঝিল ভেসে গিয়েছিল” শুনতে হয়েছে। দুই-আড়াই হাজার আল্লার সেবককে খুন করা হয়েছে বলে দেশব্যাপী প্রচারণা চালানো হয়েছিল।
পাবলিক খুব খেয়েছে এই গন্ধম। সরকার পড়বে এবারও ব্যাপক ফাঁপড়ে। অনুমতি দিলে সমস্যা, না দিলে আন্দোলন ভিন্নমাত্রায় চলে যাবার আশংকা। আবার দিলে মতিঝিল দখলের পুরোনো খেলা। সামনে ইলেকশান, এই মওসুমে পাবলিকের ইসলামীনুভূতি খাড়া হয়ে থাকে।
একটু এদিক-ওদিক হলে রাডার সাড়া দেয়। হাসিনার এমনিতে অনেক গন্ধ। সে মন্দিরে গিয়ে শাঁখা পরে ঘন্টা বাজায়! তার দলের নাম “নাস্তিক লীগ”। বেচারা করবেটা কি দেখার বিষয়। আমার আওয়ামী ব্লগাররা কিভাবে এবার ইসলামকে ডিফেন্স করেন দেখার অপেক্ষায় রইলাম।
ওদিকে ইসলামিস্টদের প্রিয় পাতলা জর্জেটের গোলাপী বেগম শিয়ালের মত হাঁ করে আছে কখন গাছ থেকে মাংসের টুকরাটা পড়বে! কথায় বলে, আশায় থাকিছ কাউয়া, পাকলে খাইছ ডেউয়া...। কার আশা যে ফুরাবে আর মাত্র কয়েকটা দিন পরই পরিস্কার হয়ে যাবে!
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।