আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আশায় আছি...

মফিজের আশাবাদ নিয়ে রূপকথা প্রচলিত আছে। সে পক্ষ এবং বিপক্ষ দলের একসঙ্গে চায়ের টেবিলে দেখার আশাবাদ ব্যক্ত করে। সে বাংলাদেশ পরের ম্যাচে জিতবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করে। সকালে অফিসে যাওয়ার আগে সাধারণত মফিজ গোসল করে বের হয়। গরমের দিনে ঠাণ্ডাভাব আনার বিকল্প নেই।

কল ছেড়ে দেখে পানি নাই। সে হতাশ হয় না। আশাবাদী মফিজ ভাবে, কী করা উচিত, বাড়িওয়ালার কাছে যাবে? একবার যাওয়া যায়। বাড়িওয়ালা দোতলায় থাকেন। খুব কড়া মানুষ।

যাব? ধমক দেবে না তো? এগুলো ভাবতে ভাবতে আনমনে সে রওনা দিল দোতলায়।

দরজা খুলল তাদের এক মাত্র মেয়ে।

'ইয়ে, গোসলখানায় পানি...' কথা শেষ করার আগেই খিল খিল করে হেসে উঠল বাড়িওয়ালার মেয়ে। মফিজ খেয়াল করল অবশেষে, সে খালি গায়ে লুঙ্গি পরে দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছে।

নিজেকে খুব অসহায় মনে হলো তার।

এদিকে খিল খিল হাসি থামছেই না। হাসির শব্দে বাড়িওয়ালা মফিজকে দেখে হতবাক হয়ে গেলেন। সে আবার বলে ওঠে, 'আঙ্কেল পানি...' বাড়িওয়ালা প্রতি-উত্তর দেন, 'আগে বাবা কিছু গায়ে দিয়ে আস। গরম পড়ছে ঠিক আছে, তাই বলে আমরা আমাদের মান-ইজ্জত তো আর লুটিয়ে দিতে পারি না মাটিতে'। মন খারাপ করে সে রুমে ফিরল।

ঠিক করল আজ গোসল না। শার্ট-প্যান্ট পরে রওনা দিল অফিসের জন্য। এমনিতেই আজ দেরি হয়ে গেছে। প্রচণ্ড কষ্টে বাসে উঠল। সকালের রোদে ঘেমে-নেয়ে অফিসে ঢুকল ২০ মিনিট লেট করে।

চেয়ারে বসে লক্ষ্য করল তার মাথার ওপরের ফ্যান ঘুরছে না। পিয়নকে ডেকে জানল। ফ্যানের কী যেন নষ্ট। ঘামে হাবুডুবু খাওয়া ছাড়া গতি নাই। বিকাল ৫টা পর্যন্ত এই খুপড়িতে সে ফ্যান ছাড়া কাজ করবে।

শার্ট ভিজে চুপচুপে হয়ে গেছে। দুপুর নাগাদ কী হবে তা ভাবতে চাইল না। তবুও সে আশাবাদী, আজ না হোক, ফ্যান কাল তো ঠিক হবে। দুপুর দুটো। মফিজের রুমের সামনে বস এসে দাঁড়ালেন।

মফিজ সাহেব, ইদানীং গোসল কি অফিসেই করছেন? মফিজ অবাক হয়ে বলল, 'না তো স্যার!' বস কটমট করে বলে, 'আপনার শার্টের পকেট ছাড়া আর সবই তো ভেজা। গোসলখানায় পিছলা খেয়ে পড়েছিলেন নাকি? কেউ গায়ে ঘর মোছার পানি ফেলছে নাকি মফিজ সাহেব? কলিগদের এই জাতীয় টিপ্পনী হাসিমুখেই হজম করছে সে। বিকাল ৫টা। বাসে ওঠে ভাবল, আর যাই হোক, বাসায় গিয়ে গোসল করে ফ্যানের নিচে তো বসা যাবে। মগবাজারের জ্যামে দুই ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থেকেও মনে প্রশান্তি অনুভব করে সে।

জীবনে বাঁচতে হলে আশার অনেক দরকার। বাসায় ঢুকে গামছা নিয়ে গোসলখানায় ঢুকে কল ছাড়ে প্রচণ্ড খুশিতে। কল দিয়ে এক ফোঁটা পানি পড়ার পর আর পানি পড়ে না। কল মোচড়া-মুচড়ি এবং পরে দুটো বাড়িও দেয়। কাজ হয় না।

পানি নাই লাইনে। গোসল করা হয় না তার। কোনোমতে খাবার পানি দিয়ে হাত-মুখ ধুয়ে খেতে বসে সে। খেয়ে শুয়ে পড়বে, খুব ধকল গেছে আজ গরমে কাজ করে। ফ্যানটা জোরে ছেড়ে, বিছানা পরিপাটি করে শুয়ে চোখ বন্ধ করল মফিজ।

এমন সময় দ্রিম করে আওয়াজ হলো এবং সঙ্গে সঙ্গে কারেন্ট চলে গেল। ট্রান্সফর্মার চলে গেছে। আজ রাতে আর কারেন্ট আসবে না। ওঠে বসে সে। উদাস মনে কিছু ভাবতে থাকে।

কী ভাবছে মফিজ? আমার জীবনটা এমন কেন? আমার কপাল এত খারাপ কেন?- এসব ভাবছে সে? না। মফিজ ভাবছে হাতপাখাটা কোথায়। ওটা ছাড়া গতি নেই। নয়তো এই বয়সেও বিছানা ভেজাতে হবে, অবশ্যই ঘামে!

হাতপাখা নাড়াতে নাড়াতে মফিজ আশাবাদী হয়, কারেন্ট আসবেই, ফ্যান ঘুরবেই।

 



সোর্স: http://www.bd-pratidin.com

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।