ফিলিপাইনে ভয়াবহ শক্তিশালী টাইফুন ‘হাইয়ানের’ আঘাতে এক হাজার ২০০ জন নিহত হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। গতকাল শনিবার রাত পর্যন্ত ১৩৮ জনের মৃত্যু নিশ্চিত করা হয়েছে। ঝড়ে অসংখ্য ঘরবাড়ি ধ্বংস হয়েছে। যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে বহু এলাকা। গতকাল দেশটির একজন জ্যেষ্ঠ সরকারি কর্মকর্তা এ তথ্য জানান।
সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, টাইফুন হাইয়ানের আঘাতে ফিলিপাইনের ৩৬টি প্রদেশের ৪০ লাখেরও বেশি মানুষ ক্ষয়ক্ষতির শিকার হয়েছে।
প্রশান্ত মহাসাগরের পশ্চিম অংশে সৃষ্ট সামুদ্রিক ঝড় টাইফুন হিসেবে পরিচিত।
হাইয়ানের আঘাতে শুধু ফিলিপাইনের পূর্বাঞ্চলীয় লেইতি দ্বীপের রাজধানী তাকলোবানেই এক শর বেশি লোকের মৃত্যু হয়েছে। গত শুক্রবার ভোরে আঘাত হানা এ ঝড়ে শহরটি লন্ডভন্ড হয়ে যায়। শহরের বিভিন্ন সড়কে এক শর বেশি লাশ পড়ে থাকতে দেখা যায় বলে সরকারি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
এ ছাড়া শহরের শতাধিক বাসিন্দা আহত হয়।
ফিলিপাইন রেডক্রস কর্তৃপক্ষ জানায়, উপকূলীয় তাকলোবান শহরে ঘূর্ণিঝড়ের আঘাতের সময় ১০ ফুট উঁচু সুনামি আছড়ে পড়ে। বহু ঘরবাড়ি পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে মাটিতে মিশে গেছে। অনেক ঘরবাড়ির কংক্রিট ও পাথরের কাঠামো শুধু টিকে আছে। প্রায় সব গাছ উপড়ে পড়েছে।
অনেক গাড়ি দুমড়ে-মুচড়ে গেছে। তাকলোবানের বিমানবন্দরটি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
স্থানীয় সাংবাদিকেরা জানিয়েছেন, উপকূলীয় পালাও শহরের একটি গির্জায় আশ্রয় গ্রহণকারী ব্যক্তিদের মধ্যে আরও অন্তত ২০ জনের মৃত্যু হয়। পালাও শহরটি তাকলোবান শহর থেকে প্রায় ১০ কিলোমিটার দক্ষিণে।
হাইয়ান আঘাত হানার সময় বাতাসের সর্বোচ্চ গতি ছিল ঘণ্টায় ৩৭৯ কিলোমিটার।
এটি চলতি বছরে এ পর্যন্ত সারা বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী টাইফুন এবং ফিলিপাইনে স্মরণকালের সবচেয়ে শক্তিশালী টাইফুনের একটি।
ঝড়ে বিভিন্ন প্রদেশের বিদ্যুৎ ও যোগাযোগব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। সেনাবাহিনী উদ্ধার ও ত্রাণ তৎপরতা অব্যাহত রেখেছে। উদ্ধার তৎপরতায় বিমান ও হেলিকপ্টার ব্যবহার করা হচ্ছে। সাহায্য সংস্থার কর্মীরা দুর্গত এলাকায় পৌঁছাতে বেগ পাচ্ছেন।
হাইয়ানের তাণ্ডবে লন্ডভন্ড বেশ কিছু এলাকা যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। এ কারণে হতাহতের মোট সংখ্যা জানতে আরও কয়েক দিন লেগে যেতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
ফিলিপাইনের রেডক্রসের প্রধান জিওয়েনডোলিন প্যাং বলেন, ‘হাইয়ানের আঘাতে দেশের বিভিন্ন এলাকায় ভয়াবহ ক্ষয়ক্ষতির খবর আমাদের কাছে এসেছে। তবে এ সম্পর্কে এখনই নিশ্চিত করে কিছু বলা মুশকিল। আজ (গতকাল) ক্ষয়ক্ষতি সম্পর্কে আরও তথ্য ও পরিষ্কার ধারণা পাওয়া যেতে পারে।
’ তিনি আরও বলেন, সামার দ্বীপের গুইয়ান এলাকায়ও ভয়াবহ ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া গেছে। সেখানে অন্তত ৪০ হাজার মানুষের বাস। তাদের বেশির ভাগই মৎস্যজীবী। তাদের ভাগ্যে কী ঘটেছে, এখনো জানা যায়নি।
জিওয়েনডোলিন প্যাং জানান, ত্রাণকর্মীরা কাপিজ প্রদেশে পৌঁছার চেষ্টা করছেন।
পানা দ্বীপের এই প্রদেশেও ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির প্রাথমিক তথ্য পাওয়া গেছে।
সেনাবাহিনীর মুখপাত্র লে. কর্নেল রামন জাগালা বলেছেন, উদ্ধারকাজে হেলিকপ্টার ব্যবহার করা হচ্ছে। বিভিন্ন এলাকায় ত্রাণ ও যোগাযোগের যন্ত্রপাতি পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে।
সরকারি কর্মকর্তারা জানান, ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানার আগেই বিপজ্জনক এলাকা থেকে অন্তত আট লাখ মানুষকে আশ্রয়শিবিরে সরিয়ে নেওয়া হয়েছিল।
ঘূর্ণিঝড়টি ক্রমেই দুর্বল হয়ে ভিয়েতনামের দিকে এগিয়ে যাচ্ছিল।
আজ রোববার তা দেশটিতে আঘাত হানতে পারে। বিবিসি ও এএফপি।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।