রাজশাহী পার হতেই গাড়ি খালি হয়ে গেলো। এর আগে নেমে গেলো নাটোরের বনলতা সেন-নাটোরে। আর উপশহরে এসে রাজশাহীর আহ্লাদী মেয়েটা নেমে গেলো তার ছেলে বন্ধুর সাথে। এরা আমার সামনের সিটে বসেছিলো। হঠাৎ করেই গাড়িটা পুরো খালি হয়ে গেলো।
গোদাগাড়িতে একজন যাত্রী নামার পর শুধু রইলাম আমি। ড্রাইভার কন্ডাক্টর চেষ্টা করেছিলো আমাকে পেছনের গাড়িতে দিয়ে তারা রাজশাহীতেই থেকে যাবে কিন্ত চেকিং বাঁধ সাধলো। নির্দেশ, চাঁপাই যেতেই হবে হোক না একজন যাত্রী। হানিফ সার্ভিসের প্রতি কৃতজ্ঞতায় আমার মনটা ভরে গেলো। বিশাল হিনো লাক্সারী কোচ, নতুন একেবারে, আমাকে নিয়ে যাচ্ছে।
এতো রাতে গাড়ি বদল করতে গেলে কার না খারাপ লাগে। তবে হঠাৎ করে চোখ কান সজাগ হয়ে গেলো। চাপাঁই যাচ্ছি! অনেকদিনের ইচ্ছা এদিকটায় আসার। চাঁপাইর ভাষা যে কীরকমভাবে আলাদা সেতো জানেনই। গাড়ির হেড লাইটের আলোয় দেখলাম রাস্তা উঁচুতে উঠছে।
সমতল ভুমিতে থেকে উঁচু জায়গা দেখলেই আমি উচ্চকিত হয়ে পড়ি কারণ আমার বেড়ে উঠা পাহাড়ের গায়ে গায়ে।
এসে পড়েছি বাস স্ট্যান্ডে। কে যেন বলে উঠলো,” কি গো ড্রাইভার ছাহেব অমুকের ছার্ভিস খারাপ হয়ে যাচ্ছে ক্যান?”
সেই বহুল আকাঙ্খিত কথোপোকথন। এশিযাটিক সোসাইটির বাংলাদেশ লোকসঙ্গীত উৎসবের গম্ভিড়ার কথা মনে পড়ে গেলো। চাঁপাইয়ের ভাষা লিখতে গিয়ে মনে হলো এ ভাষাকে লেখার মাধ্যমে কোনভাবেই উচ্চারণকে ছোঁয়া যায় না।
লিখতে গেলে তা প্রায় শুদ্ধ বাংলার মতোই আসে।
পাশেরই একটা হোটেলে উঠে পড়লাম। ছোট একটা রুম একশ আশি টাকা ভাড়া। এতো দূরের এলাকা অথচ ভাড়াটা বেশিই মনে হলো। তারপর আবার ওয়ার্নিং দিয়ে দিলো দুপুর ১২টার আগে রুম খালি করে দিতে হবে।
আমি বললাম, ”কোই আমি দেশের কত হোটেলেই থেকেছি ৪/৫টার দিকে হোটেল ছাড়লেও কেউতো কিছু বলে নাই”
“আমাদের এখানে এমনি ছলছে দাদা। ওই ছময় গাড়ির ড্রাইভাররা আছবে তাদের ৩/৪ ঘন্টা রুম দিয়ে ৪০টাকা পাই। ”
চাঁপাইয়ের লোকদের সম্পর্কে যতটুকু শুনেছি এরা নাকি খুবই কিপটুস স্বাভাবের। টাকাপয়সার ধান্ধায় নোয়াখাইল্যাদের চেয়েও এককাঠি উপরে। রাজশাহীতে যারা ধনী তাদের অনেকেই চাঁপাইয়ের।
অফিসের এক সহকর্মী বলেছিলো চাঁপাই এলে কালাই রুটি খেতে। বেরিয়ে পড়লাম রাত ১১টায় কালাই রুটির খোঁজে। পাশেই একটা দোকানে পেয়ে গেলাম। বড় কালাই রুটির সাথে আলাদা পিরিচে বেগুন ভর্তা, মরিচ, লবণ, তেল ইত্যাদি। প্রয়োজন মতো মিশিয়ে নিলেই হলো।
দুটি রুটি খেলাম। বেশ স্বাদের। বিল ৩০টাকা। রুমে ফিরে ঘুমিয়ে পড়লাম।
সকাল ৭টায় বেড়িয়ে গেলাম নাস্তা করতে।
ব্রড গেজ রেল লাইন পার হতেই সামনে পড়লো বিরাট গাবদাগোবদা এক শুকর। ব্রড গেজ রেল লাইন খুব একটা দেখি নি। যাও দেখেছি মাঝখানে মিটার গেজ থাকে। এখানে শুধু ব্রড গেজ। লাইনে পাশে পাটালি গুড় বিক্রি হচ্ছে।
কেজি ৬৫টাকা। খেয়ে এসেই ব্যাগ গুছিয়ে বেরিয়ে পড়লাম নাচোলের পথে। নাচোল, গোদাগাড়ি, নওগাঁর কিছুটা এলাকা হলো বরেন্দ্র অঞ্চল। এখানে বন্যা হয় না। চাঁপাই আমের জন্য বিখ্যাত।
কিন্তু আম বাগান দেখার সুযোগ হলো না। আম বাগানগুলো নাকি শিবগঞ্জ উপজেলায় পড়েছে। আমের বিখ্যাত হাট কানসাট। নাচোলে রাস্তার দুধারে আম গাছ চোখে পড়ে। আবার অনেকে দেখলাম ধান ক্ষেতের মাঝখানেও আমগাছ লাগিয়েছে।
নাচোল থেকে ফিরে সদরের কাজ সারতে সারতে বিকাল তিনটা ।
এরপর গন্তব্য ঠাকুরগাঁও। হোটেলে খেয়ে গাড়িতে উঠতে উঠতে বেলা সাড়ে ৪টা। (চলবে)
আমি হিসেব করে দেখেছি দীর্ঘ ব্লগ পোস্ট পড়তে বিরক্ত লাগে তাই ইচ্ছে করেই এখানেই ইতি টানলাম। শেষ করছি রুড ইয়ার্ড কিপলিং এর একটা কথা দিয়ে:
He travels the fastest who travels alone.
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।