মানবিক দায় ও বোধহীন শিক্ষা মানুষকে প্রশিক্ষিত কুকুরে পরিণত করে....আইস্ট্যাইন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে বিশ্ব শান্তির মডেল উপস্থাপন করেছেন এবং এটি বাস্তবায়নে জাতিসংঘের কার্যকর ভূমিকা দাবি করেছেন। তিনি জাতিসংঘের ভূমিকার প্রশংসা করে বলেন, আন্তর্জাতিক শান্তি এবং নিরাপত্তা রক্ষাই এখন জাতিসংঘের প্রধান কাজ নয়। এরসঙ্গে যুক্ত হয়েছে আন্তঃরাষ্ট্র জাতিগত সংঘাত নিরসন, সন্ত্রাসবাদ দমন, আন্তঃসীমানা অপরাধ দমন, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত সমস্যা মোকাবিলা, দারিদ্র্য বিমোচন, পানি ও জ্বালানি নিরাপত্তা তৈরি এবং ধনী ও গরীবের মধ্যে ক্রমবর্ধমান বৈষম্য বিলোপ। এসব বিষয়ে জাতিসংঘের সাফল্যে আমাদের এই বিশ্বাসই জন্মেছে যে, একবিংশ শতাব্দীতে মধ্যস্থতার মাধ্যমে বিরোধ নিষ্পত্তিতে সকলের সম্মিলিত ইচ্ছাকে আরও জোরদার করার মত সক্ষমতা সর্বজনীনভাবে স্বীকৃত ও বৈধ একমাত্র আন্তর্জাতিক সংস্থা জাতিসংঘেরই রয়েছে শুক্রবার সাধারণ পরিষদে ভাষণদানকালে তিনি আরো বলেন, জনগণের ক্ষমতায়ন এবং শান্তি-কেন্দ্রিক উন্নয়নই পারে বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠা করতে।
বিশ্বনেতৃবৃন্দের সামনে তিনি আগামী শতকের শান্তিময় বিশ্বের জন্য ক্ষুধা, দারিদ্র্য ও সন্ত্রাসবাদের মূলোত্পাটনে শান্তির মডেল উপস্থাপন করেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘জনগণের ক্ষমতায়ন এবং শান্তি-কেন্দ্রিক উন্নয়ন মডেল’ শিরোনামের এই মডেল বাস্তবায়নের মাধ্যমে বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠা সম্ভব এবং এই মডেল তিনি জাতিসংঘের মাধ্যমে সারা বিশ্ববাসীর সামনে তুলে ধরেন। একই সঙ্গে বাংলাকে জাতিসংঘের দাপ্তরিক ভাষার মর্যাদা দেয়ার জন্য আবেদন জানান তিনি।
জাতিসংঘের ৬৬তম সাধারণ অধিবেশনে বাংলাভাষায় দেয়া বক্তৃতায় প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিশ্বের প্রায় তিনশ’ মিলিয়ন মানুষ বাংলা ভাষায় কথা বলে। আমি বাংলাভাষাকে জাতিসংঘের দাপ্তরিক ভাষার মর্যাদা দিতে আমাদের আবেদনের প্রতি সকলের সমর্থন কামনা করছি।
আজকে আবারও সেই প্রস্তাবের পক্ষে আপনাদের সমর্থন কামনা করছি। শান্তির মডেল উপস্থাপন করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমার সারাজীবনের অভিজ্ঞতার আলোকে আমি আপনাদের সামনে একটি শান্তির মডেল উপস্থাপন করতে চাই। এটি একটি বহুমাত্রিক ধারণা, যেখানে গণতন্ত্র এবং উন্নয়নকে সর্বাগ্রে স্থান দেয়া হয়েছে। এতে আছে ছয়টি পরস্পর ক্রিয়াশীল বিষয় যা শান্তি প্রতিষ্ঠায় সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। এগুলো হচ্ছে (১) ক্ষুধা এবং দারিদ্র্য দূরীকরণ (২) বৈষম্য দূরীকরণ, (৩) বঞ্চনার লাঘব, (৪) ঝরেপড়া মানুষদের সমাজের মূলধারায় অন্তর্ভুক্তি, (৫) মানবসম্পদ উন্নয়ন ত্বরান্বিত করা এবং (৬) সন্ত্রাসবাদের মূলোত্পাটন।
এর মূল বিষয় হচ্ছে সকল মানুষকে সমান চোখে দেখা এবং মানবিক সামর্থ্য উন্নয়নের কাজে লাগানো। একমাত্র শান্তি প্রতিষ্ঠার মাধ্যমেই এসব বাস্তবায়ন করা সম্ভব। শান্তিপূর্ণ পরিবেশ নিশ্চিত করে সমাজ থেকে অবিচার দূর করতে পারলেই সমৃদ্ধি অর্জন সম্ভব। এজন্য প্রতিটি রাষ্ট্রকে আন্তরিকভাবে সঠিক ভূমিকা পালন করতে হবে। জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানেও এটা বাস্তবায়ন করা সম্ভব।
আসুন, আমরা শান্তির এ মডেলটি প্রয়োগ করে দেখি। আমার দৃঢ় বিশ্বাস এর মাধ্যমে সাত বিলিয়ন মানুষের এই বিশ্বকে আমরা পাল্টে দিতে পারব। এমন একটি বিশ্ব গড়তে সক্ষম হব যেখানে আমাদের ভবিষ্যত্ প্রজন্ম সুখে-শান্তিতে বসবাস করতে পারবে।
বিশ্ব মানচিত্রে নতুন রাষ্ট্র দক্ষিণ সুদানকে জাতিসংঘের ১৯৩তম সদস্য হিসেবে স্বাগত জানান প্রধানমন্ত্রী। একই সঙ্গে স্বাধীনতা ও মুক্তি অর্জনের জন্য এই নতুন রাষ্ট্রের জনগণকে অভিনন্দন জানান।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, শান্তিই হচ্ছে উন্নয়নের সোপান। আর শান্তি তখনই বিরাজ করে, যখন ন্যায়বিচার নিশ্চিত হয়। এজন্য আমি মনে করি শান্তিপূর্ণ মধ্যস্থতার মাধ্যমে বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য স্বদেশে এবং বিদেশে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করা অত্যন্ত জরুরি। বাংলাদেশে অসাম্প্রদায়িক, গণতান্ত্রিক এবং প্রগতিশীল আদর্শ শক্ত ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। আইনের শাসনের প্রতি দৃঢ় অঙ্গীকার প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে বিরোধ নিষ্পত্তিতে আমাদের সাহায্য করেছে।
জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে আমাদের অংশগ্রহণও একই নীতির উপর প্রতিষ্ঠিত। এজন্য বাংলাদেশ জাতিসংঘের মধ্যস্থতা সম্পর্কিত সনদের যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে মি. বান কি মুনের ‘মধ্যস্থতা এবং সহায়ক কার্যক্রম বৃদ্ধি’ শীর্ষক প্রতিবেদনের ভূয়সী প্রশংসা করছে। পাশাপাশি আমরা সাধারণ অধিবেশনের ‘বিরোধের শান্তিপূর্ণ নিষ্পত্তিতে মধ্যস্থতার ভূমিকাকে শক্তিশালীকরণ’ শীর্ষক সিদ্ধান্তের সহ-উদ্যোক্তা হয়েছি। জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী বাহিনীতে বাংলাদেশ বিশেষ অবদান রাখছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ছত্রিশটি দেশের বায়ান্নটি মিশনে বাংলাদেশ এ পর্যন্ত এক লাখ বাইশ হাজার চুরানব্বই জন শান্তিরক্ষী প্রেরণ করেছে। এসব মিশনে দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে বাংলাদেশের ১০৩ জন শান্তিরক্ষী শহীদ হয়েছেন।
তিনি বলেন, আমার বর্তমান মেয়াদে এই চলতি মাসেই ভারতের সাথে সীমান্ত বিরোধ নিয়ে আলোচনার মাধ্যমে আমরা চূড়ান্ত সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষর করেছি। এই অমীমাংসিত বিষয়টি বিগত ৬৪ বছর ধরে আমার জনগণের দৈনন্দিন ভোগান্তির কারণ হয়েছিল। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমার দায়িত্ব গ্রহণের শুরুতেই সীমান্তরক্ষী বাহিনীতে বিদ্রোহের ঘটনা ঘটে। এতে বাহাত্তর জন সেনা অফিসার নিহত হন। আমি আলোচনার মাধ্যমে এ সমস্যা সমাধান করি।
এতে আরও প্রাণহানি এড়ানো সম্ভব হয়। আমি বিশ্বাস করি ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা ছাড়া শান্তি প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয়। এজন্যই ১৯৭১ সালে আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধে সংঘটিত যুদ্ধাপরাধ ও মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের বিচারের জন্য একটি স্বাধীন আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনাল গঠন করেছি। যুদ্ধাপরাধীদের শাস্তি নিশ্চিত করার মাধ্যমে আমাদের গণতন্ত্র আরও শক্তিশালী হবে।
আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের রোম সনদের অনুস্বাক্ষরকারী দেশ হিসেবে আমরা অপরাধীকে বিচারের আওতায় আনার ব্যাপারে অঙ্গীকারাবদ্ধ।
অতীত ভুলের সংশোধনের এটিই একমাত্র পথ। এর মাধ্যমে জাতীয় ঐক্য সুসংহত হবে।
নাইন-ইলেভেনসহ অন্যান্য সন্ত্রাসী হামলার যারা শিকার তাদের কথা মনে হলে আমি ব্যথিত হয়ে পড়ি। শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য অবশ্যই এ সন্ত্রাসী কার্যকলাপের বিচার হওয়া প্রয়োজন। শান্তির জন্য ন্যায়বিচার প্রয়োজন, আর শান্তি হচ্ছে উন্নয়নের পূর্বশর্ত।
এজন্য আমাদের সকল নীতিতে জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার বিষয়টি সুনিশ্চিত করা হয়েছে। এমডিজি অর্জনে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের লক্ষ্যে আমরা জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষার বাস্তবায়ন করছি। এমডিজি-৪ অর্জনে আমাদের সাফল্যের জন্য জাতিসংঘ গত বছর আমাদের পুরস্কৃত করেছে। দারিদ্র্য বিমোচন সংক্রান্ত এমডিজি-১, সার্বজনীন প্রাথমিক শিক্ষায় এমডিজি-২, লিঙ্গ বৈষম্য হ্রাসে এমডিজি-৩ এবং মাতৃমৃত্যু হার হ্রাসে এমডিজি-৫ অর্জনে আমরা যথেষ্ট অগ্রগতি অর্জন করেছি।
আমাদের স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীর বছর ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে একটি মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করার জন্য আমরা কাজ করছি।
আর এ কাজে আমাদের নির্বাচনী ওয়াদা অনুযায়ী “ডিজিটাল বাংলাদেশ” গড়ার কাজ শুরু করেছি। এর মাধ্যমে আমরা তথ্যপ্রযুক্তিকে সারাদেশে ছড়িয়ে দিচ্ছি।
শেখ হাসিনা বলেন, গত অর্ধ শতাব্দী ধরে আমি রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত রয়েছি। পুরো সময় জুড়ে আমি ছিলাম শান্তির পক্ষে একজন অগ্রণী ও নির্ভীক যোদ্ধা। আমি মনে করি জবরদস্তি এবং আইনের শাসনের অনুপস্থিতির মত অবিচার নিরসনের মাধ্যমে সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব।
অসাম্য, অর্থনৈতিক বৈষম্য, বঞ্চনা, দারিদ্র্য, সাম্প্রদায়িকতা, নারী এবং ক্ষুদ্র জনগোষ্ঠীর অধিকারহীনতা এবং সরকারি কাজে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার অভাব মানুষের ন্যায়বিচার প্রাপ্তির ক্ষেত্রে বাধা হিসেবে কাজ করে।
মিছা কতা যে কত রকম হইতে পারে, দ্যাখেন তার নমুনা!
বিনুদন....ব্যাপক বিনুদন। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।