প্রথম পর্বের খেলা শেষ হতে পারত গত মাসেই। এত দিনে হয়ে যেত সুপার লিগেরও কিছু ম্যাচ। কিন্তু হরতালের কবলে পড়ে প্রিমিয়ার ক্রিকেট লিগ এবার এতটাই বাধাগ্রস্ত যে এখনো প্রথম পর্বের খেলাই শেষ হয়নি! আজ কলাবাগান ক্রিকেট একাডেমি ও প্রাইম দোলেশ্বরের ম্যাচ দিয়ে প্রথম পর্ব শেষ হওয়ার কথা থাকলেও বিরোধী দলের টানা চার দিনের হরতালে শেষ মুহূর্তে তা আটকে গেল।
হরতালের জালে আটকে যাওয়া প্রিমিয়ার লিগের ভবিষ্যৎ নিয়ে ভীষণ হতাশ সিসিডিএম সদস্যসচিব রাকিব হায়দার। কাল টেলিফোনে দুঃখ করে বলছিলেন, ‘প্রথম পর্বের খেলা কালই (আজ) শেষ করে ফেলতে পারতাম।
কিন্তু এক দল হরতালে খেলতে রাজি হলেও আরেক দল হয়নি। এখন নিরাপত্তার খাতিরে হরতালের মধ্যে দলগুলোকে আমরাও খেলার চাপ দিতে পারি না। ’ এরপর প্রিমিয়ার লিগের খেলা আবার কবে—জানতে চাইলে সব ভাগ্যের হাতে ছেড়ে দিয়ে বললেন, ‘যেদিন হরতাল থাকবে না সেদিন। আমরা চেষ্টা করব ১৫-১৬ নভেম্বরের মধ্যে সুপার লিগ শুরু করতে। ’
প্রিমিয়ার লিগ হরতালের খপ্পরে পড়েছে।
তবে ফেব্রুয়ারি-মার্চের লিগ যে নভেম্বরেও চলছে, সেটার দায় নিতে হবে সিসিডিএম আর বোর্ডকেই। বিসিবির বর্ষপঞ্জি অনুযায়ী গত ফেব্রুয়ারি-মার্চে লিগ শুরুর কথা থাকলেও ক্লাবশক্তির গোঁয়ার্তুমির কাছে আত্মসমর্পণ করে বিসিবি সেটি শুরু করেছে গত ১০ সেপ্টেম্বর।
হরতালের মধ্যে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলা প্রিমিয়ার লিগের প্রথম পর্বের শেষ ম্যাচটি অবশ্য সুপার লিগে ওঠা-নামায় কোনো ভূমিকা রাখবে না। এ ম্যাচের দুই প্রতিদ্বন্দ্বী কলাবাগান ক্রিকেট একাডেমি এবং প্রাইম দোলেশ্বর শেষ ছয়ে উঠে গেছে। মোহামেডান ও গাজী ট্যাংকের সঙ্গে দোলেশ্বর আগেই উঠেছিল, গতকাল সুপার লিগ নিশ্চিত হয়েছে ব্রাদার্স, প্রাইম ব্যাংক ক্লাব এবং কলাবাগান একাডেমির।
শেষ ছয়ে যেতে শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাবের বিপক্ষে জয়ের বিকল্প ছিল না ব্রাদার্সের। বিকেএসপির ম্যাচটা ব্রাদার্স জিতেছেও সহজে। ৮ উইকেট হারিয়ে মাত্র ১৫০ রান করেছিল মুশফিকুর রহিমবিহীন শেখ জামাল। ব্রাদার্স ৬ উইকেটে ম্যাচ জিতে গেছে ১৩ ওভার ৫ বল বাকি থাকতেই। অসুস্থতার কারণে ম্যাচটি খেলেননি মুশফিক।
বল হাতে ২৯ রানে ৩ উইকেট নিয়ে শেখ জামালের সামনে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন ব্রাদার্সের বাঁহাতি স্পিনার মোহাম্মদ সোহরাওয়ার্দী। খেলা শেষে এই সোহরাওয়ার্দীর বিরুদ্ধেই ‘অন্যায়ভাবে’ খেলার অভিযোগ তোলে শেখ জামাল। আবাহনীর বিপক্ষে ব্রাদার্সের আগের ম্যাচে অশোভন আচরণের দায়ে সোহরাওয়ার্দীকে ২০ হাজার টাকা জরিমানার পাশাপাশি এক ম্যাচের জন্য বহিষ্কারও করা হয়েছিল। যদিও কালকের ম্যাচের দুই আম্পায়ার বা সোহরাওয়ার্দী নিজেও জানতেন না শাস্তির কথা। এমনকি খেলা শুরুর আগে আপত্তি তোলেনি শেখ জামালও।
কাল রাতে এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত আনুষ্ঠানিক কোনো অভিযোগ পায়নি সিসিডিএমও।
শেষ ছয় নিশ্চিত করতে ফতুল্লায় খেলাঘরের বিপক্ষে প্রাইম ব্যাংক ক্লাবকেও কাল জিততেই হতো। ৫৯ রানের জয়ে সেই শর্ত পূরণ করেছে তারা। ১০ ম্যাচে মাত্র ২ পয়েন্ট পাওয়া খেলাঘরের প্রথম বিভাগে নেমে যাওয়াটাও একরকম নিশ্চিত। পয়েন্ট তালিকায় ১১তম দল খেলাঘর।
১০ নম্বরে থাকা কলাবাগানের (৫) সঙ্গে পয়েন্টের ব্যবধান ৩ হওয়ায় রেলিগেশন লিগটাও হয়ে দাঁড়িয়েছে একটা আনুষ্ঠানিকতা। প্রথম বিভাগে নেমে যাওয়া অন্য দলটি সিসিএস। ব্রাদার্সের বিপক্ষে ম্যাচে সময়মতো মাঠে না পৌঁছানোয় প্রিমিয়ার লিগ থেকে আগেই নামিয়ে দেওয়া হয়েছে তাদের।
লিগে শুরু থেকেই লেজেগোবরে অবস্থা আবাহনীর। কাল বিকেএসপিতে কলাবাগানের বিপক্ষে হারলে তাদের অবস্থান হতো দশম।
শেষ পর্যন্ত ম্যাচটা ৬ উইকেটে জিতে গেছে আবাহনী। আগেই সুপার লিগ নিশ্চিত হয়ে যাওয়া গাজী ট্যাংক মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে ভিক্টোরিয়াকে ১১৪ রানে হারিয়েছে। এই ম্যাচ জিতলে সুযোগ থাকত ভিক্টোরিয়ারও।
সং ক্ষি প্ত স্কো র
প্রাইম ব্যাংক: ৫০ ওভারে ২২৫/৮ (তায়েবুর ৬৪, সৈকত ২৯, টেলর ২৮, ডসন ২৬, রুম্মন ২৫, বোপারা ২২; ফোরকান ২/৩৪, হাসান ২/৪০, রাজিবুল ২/৫২, মাসুম ১/১৯, নিজামউদ্দিন ১/২৯)। খেলাঘর: ৪৩.১ ওভারে ১৬৬ (শুভাগত ৫১, আরিফুল ৩৬, সালাউদ্দিন ৩৫; বোপারা ৩/৪০, তায়েবুর ২/৮, জিয়া ২/১৫, তাপস ১/১৪, ডসন ১/২৬, এনামুল জুনিয়র ১/৩২)।
ফল: প্রাইম ব্যাংক ৫৯ রানে জয়ী।
ম্যান অব দ্য ম্যাচ: তায়েবুর পারভেজ (প্রাইম ব্যাংক)।
কলাবাগান কেসি: ৫০ ওভারে ২৪০/৮ (নাঈম ৮৬*, তাসামুল ৫০, নাসিরুদ্দিন ৪৮; আল আমিন-২ ২/২৯, নাবিল ২/৩৯, শাহাজাদা ২/৫০, আলাউদ্দিন ১/৩৩)। আবাহনী: ৪৩.৫ ওভারে ২৪৪ (স্মিথ ৮৯, মোসাদ্দেক ৫৩*, শাহরিয়ার ৪২, ইয়াসির ৩৭; আঞ্জুম ৩/৪০, মুবারক ১/৫৭)। ফল: আবাহনী ৬ উইকেটে জয়ী।
ম্যান অব দ্য ম্যাচ: গ্রেগরি স্মিথ (আবাহনী)।
শেখ জামাল: ৫০ ওভারে ১৫০/৮ (জুনায়েদ ৪৫, তানভীর ৩৬*, জহুরুল ২৫; সোহরাওয়ার্দী ৩/২৯ সানজামুল ২/১৪, ইমতিয়াজ ১/১৩, আরভিন ১/১৯, ইফতেখার ১/২৮)। ব্রাদার্স: ৩৬.১ ওভারে ১৫১/৪ (নাফিস ৪৪, মেহরাব জুনিয়র ৪২, অলক ২৫*, ইমতিয়াজ ২২; নাহিদুল ২/২৩, শুভাশিস ১/৩২, সানি ১/৩৪)। ফল: ব্রাদার্স ৬ উইকেটে জয়ী।
ম্যান অব দ্য ম্যাচ: সানজামুল ইসলাম (ব্রাদার্স)।
গাজী ট্যাংক: ৫০ ওভারে ২৫১/৮ (ওরাম ৫৪, ইমরুল ৪৭, রকিবুল ৪৭, মাহমুদউল্লাহ ২৭, রিয়াজুল ২৬; করুনানায়েকে ৩/৫৫, শরীফ ২/৪০, রবিউল ১/১৪, মারজান ১/২৫)। ভিক্টোরিয়া: ৪১ ওভারে ১৩৭ (শরীফ ৫৮*; আরাফাত ৪/১৩, জাইদি ৩/১৯, মাহমুদউল্লাহ ১/৯, নাঈম ১/১৬, ওরাম ১/৩৪)। ফল: গাজী ট্যাংক ১১৪ রানে জয়ী।
ম্যান অব দ্য ম্যাচ: জ্যাকব ওরাম (গাজী ট্যাংক)।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।