মধ্যপ্রাচ্যের ধনী দেশ ইরানে ১৯৭৯ সালে ইসলামি বিপ্লবের মাধ্যমে শাহদের একচ্ছত্র ক্ষমতার অবসান ঘটার পর ধর্মীয় নেতাদের করতলে চলে আসে রাষ্ট্র পরিচালনার ভার। দেশটির পারমাণবিক কর্মসূচিসহ অন্যান্য উচ্চাকাঙ্ক্ষার পেছনে মূল চালিকাশক্তি হিসেবে কাজ করছেন এসব ধর্মীয় নেতা; বিশেষ করে সর্বোচ্চ নেতার দায়িত্ব পালনকারী ব্যক্তি।
ইরানের বর্তমান সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি। তিনিই দেশটির সবচেয়ে ক্ষমতাধর ব্যক্তি। ইরানের রাজনীতি ও সামরিক বাহিনীর ওপর তাঁর কর্তৃত্বের বিষয়টি সবার জানা।
কিন্তু অজানা হলো—দেশটির অর্থনৈতিক সাম্রাজ্যের নিয়ন্ত্রকও তিনি। বার্তা সংস্থা রয়টার্সের অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে আয়াতুল্লাহ আলি খামেনির অর্থনৈতিক সাম্রাজ্য সম্পর্কে এ দাবি করা হয়েছে। ছয় মাস ধরে এই অনুসন্ধান পরিচালিত হয়।
গতকাল মঙ্গলবার প্রকাশিত প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, ইরানের সাধারণ নাগরিকদের সম্পত্তি জব্দ করার দায়িত্বে রয়েছে ‘হেডকোয়ার্টার্স ফর এক্সিকিউটিং দ্য অর্ডার অব দ্য ইমাম’। কেবল মালিকানাহীন সম্পত্তি ব্যবস্থাপনা ও বিক্রির লক্ষ্যে সংস্থাটি গঠিত হয়েছিল।
সময়ের বিবর্তনে এটি এখন ইরানের অন্যতম ক্ষমতাধর সংস্থা। তারা এখন বিভিন্ন কারণে সাধারণ নাগরিকদের সম্পত্তিও জব্দ করছে বলে প্রতিবেদনে দাবি করা হয়। ইরান বা বাইরের অনেকে বিষয়টি সম্পর্কে খুব কম জানে। ইরানের অর্থনীতির প্রায় সব খাতেই এই সংস্থার খবরদারি রয়েছে।
সংস্থাটির মোট সম্পত্তির পরিমাণ সম্পর্কে বাইরের কারও সুস্পষ্ট ধারণা নেই।
কারণ তা তাদের গোপনীয় বিষয়। তবে রয়টার্সের পাওয়া হিসাব অনুযায়ী, সংস্থাটির সম্পত্তির মূল্য ৯৫ বিলিয়ন ডলার। এই বিপুল অর্থনৈতিক সাম্রাজ্যের নিয়ন্ত্রক দেশটির সর্বোচ্চ নেতা খামেনি। তবে এই অর্থ তিনি যে সরাসরি তাঁর নিজের স্বার্থে ব্যবহার করেন—এমন কোনো তথ্য-প্রমাণ পায়নি রয়টার্স।
২৪ বছর ধরে ইরানের সর্বোচ্চ নেতার পদে আছেন খামেনি।
ওই সংস্থাটি অর্থনৈতিক শক্তি তাঁর ক্ষমতাকে আরও জোরালো করেছে। তিনি স্বাধীনভাবে পার্লামেন্ট পরিচালনা ও বাজেট প্রণয়ন করতে পারছেন।
ইরানের ওই সংস্থার গুরুত্বের বিষয়টি ওয়াশিংটনও স্বীকার করেছে। মার্কিন অর্থ-বিভাগ গত জুনে ওই সংস্থাটির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে।
প্রাথমিকভাবে জব্দ করা সম্পত্তির আয় থেকে প্রবীণ যোদ্ধা, যুদ্ধ-বিধবা ও নিপীড়িতদের সহায়তা করত সংস্থাটি।
এরপর কাজের পরিধি আরও বাড়ে। সংস্থাটি নানা ধরনের উন্নয়ন ও কল্যাণমূলক কাজ করছে। গ্রামীণ এলাকায় স্কুল, সড়ক, ক্লিনিক নির্মাণ করেছে। বিদ্যুত্ ও পানি সরবরাহের ব্যবস্থা করছে। গ্রামীণ উন্নয়নে সহায়তা করছে।
তবে সংস্থাটির কর্মকাণ্ডের এই তালিকা আংশিক।
আয়ের মতো তাদের ব্যয় সম্পর্কেও সুস্পষ্ট কোনো ধারণা পাওয়া যায়নি। সংস্থাটির আয়-ব্যয় ও সম্পত্তির হিসাব নিয়ে কেউ প্রশ্নও করতে পারে না।
সংস্থাটির অর্থনৈতিক সাম্রাজ্য সম্পর্কে রয়টার্সের অনুসন্ধানের বিষয়ে ইরানের প্রেসিডেন্টের দপ্তর ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বক্তব্য নেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছিল। তবে এ বিষয়ে তারা কোনো মন্তব্য করেনি।
সংযুক্ত আরব আমিরাতে অবস্থিত ইরান দূতাবাস এক বিবৃতিতে রয়টার্সের এই পর্যবেক্ষণকে অসম ও ভিত্তিহীন বলে অভিহিত করেছে।
‘হেডকোয়ার্টার্স ফর এক্সিকিউটিং দ্য অর্ডার অব দ্য ইমাম’ সংস্থাটির জনসংযোগ বিভাগের মহাপরিচালক রয়টার্সের পর্যবেক্ষণকে ‘বাস্তবতা থেকে বহুদূর’ ও ‘সঠিক নয়’ বলে মন্তব্য করেছে।
।অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।