আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

দিনাজপুরের উন্নয়ন, সমস্যা ও সম্ভাবনা

৪ অক্টোবর ২০১৩, প্রথম আলোর আয়োজনে ‘দিনাজপুরের উন্নয়ন, সমস্যা ও সম্ভাবনা’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। দিনাজপুর প্রেসক্লাবে আয়োজিত এ বৈঠকের আলোচনা সংক্ষিপ্ত আকারে ছাপা হলো এই ক্রোড়পত্রে

যাঁরা অংশ নিলেন


মো. রফিকুল ইসলাম : সভাপতি, চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ, দিনাজপুর
মোফাজ্জল হোসেন : সদর উপজেলা চেয়ারম্যান, বিএনপি নেতা
মো. আনোয়ারুল ইসলাম : দিনাজপুর শহর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও দিনাজপুর চেম্বারের সহসভাপতি
হামিদুল ইসলাম : সাধারণ সম্পাদক, দিনাজপুর আইনজীবী সমিতি এবং সরকারি কৌঁসুলি দিনাজপুর জেলা ও দায়রা জজ আদালত।
মো. আমিনুল ইসলাম : উপজেলা চেয়ারম্যান, ফুলবাড়ী
বলরাম রায় : রেজিস্ট্রার, হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়
চিত্ত ঘোষ : সভাপতি, দিনাজপুর প্রেসক্লাব
বি কে বোস : সহসভাপতি, বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন, দিনাজপুর জেলা কমিটি এবং পরিচালক, পরমাণু চিকিৎসা ও আলট্রা সাউন্ড সেন্টার, দিনাজপুর
কানিজ রহমান : সভানেত্রী, মহিলা পরিষদ, দিনাজপুর
সন্ধ্যা রানী বাগচী : জেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা, নারী উন্নয়ন ও ক্ষমতায়ন
রবীন্দ্রনাথ সরেন : সভাপতি, জাতীয় আদিবাসী পরিষদ
শাহজাহান শাহ : নাট্য ব্যক্তিত্ব
মো. হাবিবুল ইসলাম : অধ্যক্ষ, কলেজিয়েট বালিকা উচ্চবিদ্যালয় ও কলেজ এবং সভাপতি, সচেতন নাগরিক কমিটি
মাসুদুল হক : অধ্যাপক, দর্শন বিভাগ, দিনাজপুর সরকারি কলেজ
রেজাউর রহমান : সহসভাপতি, উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী, দিনাজপুর জেলা সংসদ
মো. তারেকুজ্জামান : সাধারণ সম্পাদক, আমাদের থিয়েটার, দিনাজপুর
আসাদুল্লা সরকার : দিনাজপুর প্রতিনিধি
সঞ্চালক
আব্দুল কাইয়ুম, সহযোগী সম্পাদক, প্রথম আলো

আলোচনা
আব্দুল কাইয়ুম: প্রথম আলোর প্রধান শক্তি তার বস্তুনিষ্ঠ ও পেশাদারি সাংবাদিকতা। কাগজটি দলনিরপেক্ষতা ও বস্তুনিষ্ঠ নীতিমালা অনুসরণ করে। সাংবাদিকতার পাশাপাশি অ্যাসিডদগ্ধ ব্যক্তিদের চিকিৎসা ও পুনর্বাসন, মাদক ও এইডসবিরোধী কর্মসূচি পালন, বন্যা, সিডর, আইলাদুর্গত ব্যক্তি ও শীতার্ত মানুষের পাশে থাকে।

গণিত অলিম্পিয়াড, ভাষা প্রতিযোগ, মেধাবীদের সংবর্ধনা, ইন্টারনেট উৎসবের মতো অনেক সামাজিক ও শিক্ষামূলক কাজ করে প্রথম আলো। প্রথম আলোর উদ্যোগে আজ আমরা দিনাজপুরের উন্নয়ন, সমস্যা ও সম্ভাবনার বিষয়ে আলোচনা করব। আমাদের কথা দেশবাসীর কাছে পৌঁছে দেব। এখন আলোচনা করবেন মোফাজ্জল হোসেন।

মোফাজ্জল হোসেন: এ জেলার মানুষ অত্যন্ত শান্তিপ্রিয়।

রাজনৈতিক প্রতিহিংসা, মারামারি বা খুনখারাবি নেই। দেশের শস্যভান্ডার হিসেবে খ্যাত। জেলার চাহিদা মিটিয়ে বছরে কমপক্ষে ১০ লাখ টন উদ্বৃত্ত খাদ্যশস্য বাইরের জেলাগুলোর চাহিদা মেটায়। কিন্তু জাতীয় উন্নয়নের দিক থেকে দিনাজপুর বরাবরই অবহেলিত থেকেছে। একটি সমাজের উন্নয়নের মূল চালিকাশক্তি হলো স্থানীয় সরকার।

স্থানীয় সরকারব্যবস্থা শক্তিশালী করার লক্ষ্যে ২০০৮ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাত্র এক মাস পর ২০০৯ সালের ২২ জানুয়ারি সারা দেশে উপজেলা পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। দিনাজপুরের মানুষ আমাকে উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত করেন। এর আগে ১৫ বছর আমি ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান ছিলাম। কিন্তু বেদনার বিষয় হলো, বর্তমান সরকার উপজেলা পরিষদকে ‘ঠুনকো প্রতিষ্ঠানে’ পরিণত করেছে। কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা পরিষদের নেই।

অথচ সংবিধানের ৫৯ ও ৬০ ধারা অনুযায়ী জনগণের মাধ্যমে নির্বাচিত প্রতিনিধি দ্বারা এসব প্রতিষ্ঠান পরিচালিত হওয়ার কথা। শুধু তাই নয়, বর্তমান সরকারের আমলে ১৪২ বছরে পুরোনো ইউনিয়ন পরিষদগুলোকে বিগত পাঁচ বছরে ধ্বংসের শেষ প্রান্তে এনে ফেলেছে। গণ্যমান্য ব্যক্তির নামে এসব প্রতিষ্ঠানে দলীয় লোকজন অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। তাঁদের আধিপত্যের কারণে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা কোনো কাজই করতে পারছেন না।

মো. আনোয়ারুল ইসলাম: বর্তমান সরকারের আমলে জেলায় ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে, যা ধারাবাহিকভাবে প্রথম আলোর মাধ্যমে পাঠকদের জানানো উচিত।

তবে শান্তিপূর্ণ দিনাজপুরের মানুষের জীবন অশান্তিতে বিপন্ন করে তুলেছে মাদক। মাদকের করাল থাবা জেলার যুব ও তরুণসমাজকে গ্রাস করে ফেলেছে। প্রশাসন-পুলিশ মাদককে নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না। এই ব্যাধি এমনভাবে বিস্তার লাভ করেছে যে নির্দিষ্ট কোনো দল বা কেবল পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে এটা প্রতিরোধ করা সম্ভব নয়। দল-মত ভুলে মাদক প্রতিরোধে সবাই এগিয়ে না এলে মাদক নির্মূল সম্ভব নয়।

মো. রফিকুল ইসলাম: উন্নয়নের পূর্বশর্ত হচ্ছে জ্বালানি। মুখে যতই উন্নয়নের কথা বলি না কেন, জ্বালানি খাতের উন্নয়ন করতে না পারলে কোনো ফল হবে না। আমদানি-রপ্তানি করতে পরিবহন খাতে সড়কপথের চেয়ে অনেক কম খরচ হয় রেলপথে। কিন্তু ২০০৪ সাল থেকে দিনাজপুরের বিরল স্থলবন্দর দিয়ে আমদানি-রপ্তানি বন্ধ আছে। এটি অবিলম্বে চালু করা দরকার।

এ ছাড়া হিলি স্থলবন্দরে আমদানি-রপ্তানির সুষ্ঠু পরিবেশ নেই। দিনাজপুর-পার্বতীপুর সড়ক একটি গুরুত্বপূর্ণ সড়ক। এই সড়ক দিয়ে প্রচুর পণ্য পরিবহন হয়। এক লেনবিশিষ্ট এই সড়ককে চার লেন করা দরকার। বর্তমানে সরকার যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করতে হিমশিম খাচ্ছে।

মহান মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ যেন কিছুতেই লুণ্ঠিত না হয়, এর জন্য গণমাধ্যমগুলোর উচিত হবে সরকারের পাশে দাঁড়ানো। দিনাজপুরের ৫০০ শয্যাবিশিষ্ট মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বিষয়ে কিছু বলতে চাই। হাসপাতালের পরিবেশ এত নোংরা যে সুস্থ মানুষ হাসপাতালে গেলে অসুস্থ বোধ করে। তিন বছর হলো দিনাজপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে কোনো লোকবল নিয়োগ দেওয়া হয়নি। চাকরির আশায় ৪০০ চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারী বিনা বেতনে সেবা দিচ্ছেন।

চাকরি-বেতন কোনোটাই না পেয়ে তাঁরা অমানবিক জীবন যাপন করছেন। সরকারের উচিত অবিলম্বে তাঁদের স্থায়ী নিয়োগ দিয়ে হাসপাতালের চিকিৎসার পরিবেশ সৃষ্টি করা।

কানিজ রহমান: সার্বিকভাবে দিনাজপুরে নারী ও শিশু নির্যাতন কমলেও বাল্যবিবাহ বন্ধ হচ্ছে না। আপাতদৃষ্টিতে নারী নির্যাতন কমলেও ভেতরে ভেতরে নির্যাতন চলছেই। তবে নির্যাতনের ধরন পাল্টেছে।

গত এক বছরে দিনাজপুর নারী ও শিশু আদালতে কী পরিমাণ মামলা হয়েছে, কয়টা মামলা বিচারাধীন আছে, কয়টার বিচার শেষ হয়েছে, কতজন আসামি খালাস বা শাস্তি পেয়েছে, এর একটা পরিসংখ্যান আছে। সেই পরিসংখ্যান অনুযায়ী পূর্ববর্তী বছরগুলোর চেয়ে গত এক বছরে নারী ও শিশু আদালতে মামলার সংখ্যা কমেছে। কিন্তু দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন ছাড়া সমাজে নারীর প্রতি সহিংসতা বা নির্যাতন কমবে না। কারণ, যে সমাজ নারীকে মানুষ হিসেবে ভাবার মূল্যবোধ শেখায় না, সেই সমাজে নারী নির্যাতন বন্ধ হওয়ার কারণ নেই।

সন্ধ্যা রানী বাগচী: জেলার নারী ও শিশুচিত্র অনেক ভালো।

তবে উদ্বেগের বিষয় হলো, জেলায় মাদক সেবনে নারীদের সংখ্যা বাড়ছে। সমাজে নৈতিক শিক্ষা নেই। শিশুশিক্ষা বা বাল্যপাঠের মতো নৈতিক শিক্ষাসমৃদ্ধ বই বা পাঠ্যক্রম প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষায় সংযুক্ত করা জরুরি হয়ে পড়েছে। মাদকাসক্তের সংখ্যা ও মাদক ব্যবসার প্রবণতা বাড়ছে। এসব প্রতিরোধের জন্য নৈতিক শিক্ষা প্রয়োজন।

আগে পরিবারে, সমাজে সর্বত্র নৈতিক শিক্ষা ছিল। খুব সন্তান ছিল যারা বাব-মায়ের কথা শুনত না। খুব কম শিক্ষার্থী ছিল যারা শিক্ষকের কথা শুনত না। এখকন সর্বক্ষেত্রে নৈতিকতার চরম অবক্ষয় হয়েছে। সবক্ষেত্রে নৈতিকতা ও মূল্যবোধকে ফিরিয়ে আনতে হবে।

হামিদুল ইসলাম: বাংলাদেশে ভালো ভালো আইন আছে, কিন্তু প্রয়োগ নেই। এর জন্য চাই জনসচেতনতা। আদালতে শাস্তি বিধানের জন্য নারী নির্যাতন কমেছে। মাদককে প্রতিরোধ করা না গেলে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম ধ্বংস হবে। আইন দিয়ে মাদক সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়।

আসামি হিসেবে কেবল মাদক বহনকারীরাই ধরা পড়ছে। মূল হোতারা ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যাচ্ছে। বর্তমান বংলাদেশে মাকক কেবল দিনাজপুরের সমস্যা নয়। দেশব্যাপী মাদকের ছড়াছড়ি চলছে। এ ব্যাপারে গণমাধ্যমকে এগগিয়ে আসতে বলব।

এ ব্যাপারে গণমাধ্যমগুলোর ভূমিকা রাখা দরকার। সারাদেশে গণমাধ্যম ব্যাপক ভূমিকা রাখছে।

বলরাম রায়: রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের পর হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় উত্তরবঙ্গের সবচেয়ে বড় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। ১৯৯৯ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে এর শিক্ষার পরিবেশ, মান সন্তোষজনক। আটটি অনুষদের ৪০টি বিষয়ে মোট শিক্ষার্থীসংখ্যা চার হাজার ৫০০।

দিনে দিনে শিক্ষার্থীর চাপ বাড়ছে। প্রতিবছর ২৫ হাজারের বেশি শিক্ষার্থী প্রথম বর্ষে ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছেন। বিজ্ঞান, কলা, প্রকৌশলসহ বিভিন্ন অনুষদে নতুন নতুন বিষয় খোলা দরকার। তবে নতুন অনুষদ খোলার জন্য তহবিল দরকার। বিশ্ববিদ্যালয়ের এসব সমস্যা প্রথম আলোয় তুলে ধরার জন্য অনুরোধ করছি।

এখানে গবেষণা করার প্রচুর সুযোগ রয়েছে। জার্নাল বের হয়। কিন্তু গবেষণা করতে গিয়ে তহবিলের সমস্যায় ভুগতে হচ্ছে। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভালো গবেষণাগার নেই। অতীতে অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা এই বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।

কিন্তু এবার আমরা আমাদের নিজের পরিবারের (নিজ বিশ্ববিদ্যালয়) ভিসি পেয়েছি। অনলাইনের মাধ্যমে ভর্তির আবেদন নেওয়া হয়। এ ছাড়াও এখানে বিদেশি শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে ৫০টি কোটা রয়েছে। সার্কভুক্ত দেশগুলোর শিক্ষার্থীদের আকৃষ্ট করার জন্য বিভিন্ন কর্মসূচি হাতে নেওয়া হয়েছে।

বি কে বোস: দিনাজপুরে একটি মেডিকেল কলেজ আছে।

কলেজের পাশে রয়েছে ৫০০ শয্যার দিনাজপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। শহরে রয়েছে ২৫০ শয্যার একটি জেনারেল হাসপাতাল। এ ছাড়া দুটি উপজেলায় রয়েছে ৫০ শয্যার হাসপাতাল এবং বাকি ১০টি উপজেলায় ৩০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতাল ছাড়াও অনেক ইউনিয়নে স্বাস্থ্যকেন্দ্র আছে। দিনাজপুরে ৩১৩টি কমিউনিটি ক্লিনিক চালু আছে। এ জন্য সরকার এডহক ভিত্তিতে চিকিৎসক নিয়োগ দিয়েছিল।

কিন্তু বাস্তব সত্য হলো, চিকিৎসকেরা গ্রামে থাকতে চান না। ক্যানসার প্রতিরোধে অনেক ভালো উদ্যোগ আছে। সরকারের পাইলট প্রকল্প আছে। কিন্তু তা মানুষ জানতে পারে না। এগুলো প্রচারে গণমাধ্যমের ভূমিকা পালন করা দরকার।

কমিউনিটি ক্লিনিকের বিষয়ে আমরা পিছিয়ে আছি। তবে স্বাস্থ্য সচেতনতায় অনেক এগিয়ে আছি।

তারেকুজ্জামান: অন্যান্য জেলার চেয়ে সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোর ঐক্য এখানে অনেক ভালো। যেকোনো আন্দোলন-সংগ্রামে একসঙ্গে ঝাঁপিয়ে পড়ি। তবে সমস্যা হলো, সবাই এবং সবকিছু যেন ঢাকামুখী।

একটি সংগঠনের সঙ্গে থেকে একজন তরুণ বা তরুণী জেলায় নিজেকে তৈরির পর ঢাকায় চলে যাচ্ছে। ফলে ঘুরেফিরে সংগঠনগুলোকে পুরোনো লোকজন নিয়ে কাজ করতে হচ্ছে। ঢাকায় পণ্যের দাম কমলে যেমন জেলায় কৃষকদের বারোটা বাজে; সবকিছু ঢাকামুখী হওয়ার কারণে জেলায় সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোর ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। দিনাজপুরের কৃষি ও কৃষকদের উন্নয়নে পণ্যের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতে জেলায় পণ্য সংরক্ষণাগার নির্মাণ করা প্রয়োজন। আলু, রসুন, ফুলকপি, ঢ্যাঁড়সসহ বিভিন্ন সবজি ও মাছ-মুরগি চাষ করে কৃষক।

কিন্তু সঠিক রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে চষিরা বিপুল আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়ছেন।

রবীন্দ্রনাথ সরেন: দিনাজপুর অঞ্চলে ১৫ থেকে ১৮টি আদিবাসী জনগোষ্ঠী আছে। দেশের স্বাধীনতা আন্দোলনসহ সব গণতান্ত্রিক আন্দোলনে আদিবাসীদের সক্রিয় ভূমিকা আছে। কিন্তু আদিবাসীদের অস্তিত্ব আজ বিপন্ন। ১৯৪৭, ১৯৬২, ১৯৬৫, ১৯৭১, ১৯৭৫সহ বিভিন্ন সময়ে আদিবাসীরা তাদের ভিটেমাটি ছেড়ে যেতে বাধ্য হয়েছে।

সরকার এখন আদিবাসী বলতে চায় না। সরকার আদিবাসী বলতে না চাইলে জাতি হিসেবে স্বীকৃতি দিক। আদিবাসীদের জমিজমা থেকে উচ্ছেদ করা হচ্ছে। এসিল্যান্ড, সরকারি কর্মকর্তা, সমাজপতি, প্রভাবশালী সমাজের অনেক গণ্যমান্য ব্যক্তি এসবের সঙ্গে জড়িত। এলাকায় উন্নয়নের কথা শুনলে আদিবাসীদের মনে আতঙ্ক জাগে।

আদিবাসীদের জমি দখল ছাড়া সরকারের উন্নয়নকাজ হয় না। দিনাজপুরের নশিপুর পাটবীজ খামার, তুলা উন্নয়ন বোর্ড, পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি আদিবাসীদের জমি দখল করে হয়েছে। ভূমি রক্ষা করতে গিয়ে এ অঞ্চলে ৪০ জন আদিবাসী খুন হয়েছে। একটিরও সুবিচার পাওয়া যায়নি।

চিত্ত ঘোষ: জেলা থেকে ১১টি দৈনিক এবং অনিয়মিতভাবে তিন-চারটি সাপ্তাহিক কাগজ বের হয়।

এসব কাগজে জেলা ও আঞ্চলিক খবরের প্রাধান্য বেশি থাকে। জেলার মানুষের সমস্যা, উন্নয়ন, সংগঠন, নারী-শিশু ইত্যাদি বিষয়ে খবরের প্রাধান্য থাকে। দিনাজপুরে সাংবাদিকতার নৈতিক দায়িত্ববোধ তুলনামূলক ভালো, তবে ব্যর্থতাও আছে। জাতীয় গণমাধ্যমগুলো দেশের অপরাপর জেলার চেয়ে দিনাজপুরের খবর গুরুত্ব দিয়ে প্রকাশ ও প্রচার করে থাকে। এ জন্য তাদের ধন্যবাদ।

মাসুদুল হক: দিনাজপুর সরকারি কলেজে ১৫টি বিভাগে সম্মান ও মাস্টার্স কোর্স চালু আছে। কিন্তু শিক্ষক-সংকট চরমে। কোনো কোনো বিভাগ মাত্র দুই বা তিনজন শিক্ষক দিয়ে চলে। অন্যদিকে প্রতি বছর শিক্ষার্থীর সংখ্যা বড়ছে। শিক্ষরের অভাবে যদি এসব শিক্ষার্থী উপযুক্ত শিক্ষা না পায় তা হলে তাদের ভষিস্যত অন্ধকার হবে।

এসব কারণেই কোচিং ব্যবসা জমজমাট হয়ে ওঠে। ফলে উচ্চমাধ্যমিক শ্রেণীর শিক্ষার্থীরা কলেজের চেয়ে কোচিং সেন্টারে যেতে বেশি উৎসাহ দেখায়। ভর্তির সময় ছাত্রসংগঠনগুলোর প্রচণ্ড চাপ থাকে। শহরের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে মাদকের ব্যাপক বিস্তার।

মো. আমিনুল ইসলাম বাবলু: ফুলবাড়ী, বিরামপুর, নবাবগঞ্জ ও পার্বতীপুর উপজেলার অংশ নিয়ে ফুলবাড়ী কয়লাখনি এলাকা।

উত্তর ও দক্ষিণে আট কিলোমিটার এবং প্রস্থে তিন কিলোমিটার। ১৩৫ বর্গকিলোমিটার ব্যাসার্ধজুড়ে আছে কয়লাখনি। সরকারের সঙ্গে এশিয়া এনার্জির চুক্তি অনুযায়ী ৯৪ শতাংশ বিদেশি কোম্পানি আর সরকার পাবে মাত্র ৬ শতাংশ। এভাবেই কয়লার মালিকানা নির্ধারণ করা হয়েছে। কিন্তু খনিতে কয়লা ছাড়াও রয়েছে গ্রানাইট, নুড়ি পাথর, সিলিকন, চায়না ক্লে, মিনারেল ওয়াটারসহ বিভিন্ন ধরনের মূল্যবান খনিজ পদার্থ।

অথচ চুক্তিতে এসব মূল্যবান খনিজ পদার্থের মালিকানা সম্পর্কে কোনো কথা নেই। প্রাণ-প্রকৃতি, পরিবেশ এবং তিন ফসলি জমি ঠিক রেখে উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করে কয়লা উত্তোলন করা হলে এলাকার মানুষের আপত্তি থাকবে না।

হাবিবুল ইসলাম: বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থা অনুযায়ী মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোতে মাত্র ১২ জন শিক্ষক নিয়োগের বিধান রয়েছে, যা প্রয়োজনের তুলনায় অত্যন্ত কম। কোচিংনির্ভরতার কারণে শিক্ষার্থীদের মধ্যে মাদকের প্রবণতা ও ইভ টিজিং সমস্যা বাড়ছে। দিনাজপুরে কয়লা, গ্রানাইট ও লোহার আকরিকের খনি রয়েছে।

হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি ‘খনি’বিষয়ক বিভাগ খোলা উচিত। তাহলে আমাদের বিশ্ববিদ্যঅলয়ের শিক্ষার্থীরা এ বিষয়ে জ্ঞান অর্জন করতে পারবে।

শাহজাহান শাহ: বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থা এবং অভিভাবকদের বাণিজ্যিক মনোভাবের কারণে সন্তানেরা সংস্কৃতিচর্চা করতে পারছে না। আকাশ সংস্কৃতির করাণে দেশীয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে ছেলেমেয়েদের আকর্ষণ কমে গেছে। মূল্যবোধের অবক্ষয় লক্ষণীয়।

এর পরও জেলায় নাট্য সমিতি, নবরূপী, উদীচী, আমাদের থিয়েটার, রবীন্দ্রসংগীত সম্মিলন পরিষদ, ভৈরবী, আবৃত্তি কাননসহ অনেক ।

সোর্স: http://www.prothom-alo.com

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.