আসেন দুর্নীতি করি। আর এই দুনিয়াটাকেই খুচাই!
সারাদিন বসে দিন কাটাতে কাটাতে ফুলে যাচ্ছি। গাল দুটো পটকা মাছের মতো ফুলতে ফুলতে এমন অবস্হা যে হাসতে গেলে চোখের ভ্রুর সাথে গালের সূচাগ্র ফোলা অংশ বাড়ী খায়। তবে অনেক গুলো কাজ সম্পন্ন করেছি ঘুম থেকে উঠে যার তালিকা নিম্নে দেয়া হলো:
১) ঘুম ভেঙ্গে চোখ দুটো মেলেছি।
২) বা দিকে চিৎ হয়ে শুয়েছিলাম এর পর সোজা হয়ে চিৎ হয়ে শুয়ে আইফোনে প্রথম আলু পড়েছি।
৩) তারপর আবার ঘুম দিয়েছি।
৪) ঘুম থেকে উঠে বৌ এর সাথে হেড ফোন কানে লাগিয়ে কথা বলেছি।
অনেকগুলো কাজ করেছি এবং তাতে কিছু গুরুত্বপূর্ন তথ্য পেলাম, পেয়াজের কেজি দেশে ১২৭ টাকা। আমি রান্না বান্না যতটুকু শিখেছি তার মধ্যে পেয়াজ ছাড়া কোনো দিন কিছু রাধিনি, মূলত পিয়াজ ছাড়া কিভাবে রাধে সেটাও জানা নাই। সে হিসেবে দেশের গরীব মানুষেরা তরকারী ছাড়া ভাত খাচ্ছে।
দেশে যখন ছিলাম তখন কোনো হোটেলে খেতে গেলে একটা পেয়াজের টুকরা আর মরিচ সাথে শসার একটা গোল টুকরো। এখন মনে হয় হোটেলে খেতে গেলে শুধু একটা মরিচ ধরিয়ে দেবে।
দেশের জনসংখ্যা বাড়ছে, খাদ্যোর প্রয়োজনীয়তাও বাড়ছে। তা নিয়ে মানুষের তেমন চিন্তা নাই। কিছুদিন আগে আমার এক পরিচিত মিস্টি বিলালেন তার ভাইগ্না হবার উপলক্ষে।
ভাইগ্না কয়টা হলো জিজ্ঞেস করতে আধা ঘন্টা আনমনে প্রথমে বাম হাতের কড় গুনে পরে বা হাত থাকা মিস্টির প্যাকেট রেখে সেটাও গুনতে শুরু করলো। আমি ততক্ষনে মনে করলাম নিশ্চয়ই তাদের পরিবারে পুরো আবাহনী মোহামেডান ব্রাদার্স ইউনিয়নের জন্য ফুটবল টিম তৈরী করেছে। কিন্তু আধা ঘন্টা পর হিসেব করে বললো তার ভাইগ্নার সংখ্যা তিনটা।
আমি টাস্কি খেয়ে খেলাম কারন তিনটি বৃহৎ ফুটবল টিমের হিসাবের বিপরীতে মাত্র তিনটা ভাইগ্না: এ দিয়ে তো বেন্চে বসে এক্সট্রা পিলিয়ারের সংখ্যাও যোগান দেয়া সম্ভব না। যদিও তার পরের কথায় হিসাব মিললো।
তার ভাইগ্নার হিসাব গুনতে দেরী হলো কারন তার বোন কাজিনদের সংখ্যা ২ সর্বমোট ২২ জন যার মধ্যে এই ঘর ঐ ঘরের সবাই বিদ্যমান। মানুষ যে তার জ্ঞাতি গুষ্ঠির হিসাব এত পুংখানুপুংখ রাখে সেটাই আমার কাছে অবাক লাগে। কারন আমি খুব বেশী হলে মামা চাচার বাইরে অন্যান্য জ্ঞতি গুষ্ঠির সংখ্যা গুলিয়ে ফেলি। দেখা গেলো হিসাবে আমার মামা হলে তাকে ভাই ডাকা শুরু করি অথবা হিসাবে ভাইগ্না হলে তারে চাচা ডাকা শুরু করি।
সে যাই হোক, আমার পাশের রুমে এক ইটালী থেকে আগত ভদ্রলোক এসেছেন।
সকাল বেলা বৌ এর সাথে কথা বলা শেষ করেই দেখি ভদ্রলোক লুঙ্গি পড়ে হাজির।
: ভাইজান কি ঘুমান? কাম কাইজ নাই?
: আছে, টয়লেট করুম, খাওন পাকামু, খামু, আবারও ঘুম দিমু, কত কাম। আপনের কি খবর?
: আমার আর খবর! সকাল বেলা উইঠা কাজ খুজতে আসছিলাম।
: পাইলেন কিছু?
: কাজ তো পাই, কিন্তু এই ছোটলোকী কাজ করতে ভালো লাগে না।
: কেন ভাই? কাজের জায়গায় কি ৪ ফুটি লোক চাইছে?
: আরে না ভাই।
বাসন ধোয়া, ডিসকা মাজা, ঘর ধোয়া। এইসব কাজ মাইনসে করে! আমরা ইটালীতে কত ভালো ভালো কাজ করছি।
: কি কাজ করছেন শুনি? (ভাব শুইনা মনে হইলো ইতালীর গ্রামীন ফুনের সিইও আছিলো)
: আমি যেইখানে কাজ করতাম সেইখানে ১০ বৎসর ম্যানেজার আছিলাম, তার আগে ৮ বৎসর একটা ফ্যাক্টরীর শিফট ইন চার্জ আছিলাম।
: কন কি? ম্যানেজার? ভালা পোস্ট ভাই। কোম্পানীর নাম কি?
: ভাই অত বড় কিছু না।
১০-১২ জনের একটা গ্রুপ আছিলো যারা ধরেন ডালার মধ্যে ফুল নিয়া যাইতো আর সন্ধ্যা হইলে ডালা দিয়া যাইতো।
: ও আইচ্ছা। বুঝছি। কিন্তু এইখানে তো ঠান্ডায় ফুল লইয়া খাড়াইলে আর ফুল বেচতে হবে না। -৩০ ফুল আইসক্রিম হইয়া পরে ফ্লাওয়ার আইসক্রিম বেচতে হইবো।
দেশে থাকতে পড়া লেখা কতদূর করছেন?
: আমি তো ভাই ঢাকা ইউনিভার্সিটি পাশ কইরা কমিশনার পদে চান্স পাইছিলাম। কিন্তু আমি পড়ে ইটালী আইসা পড়ি।
: আপনের বয়স কত হইবো?৩৬-৩৭?
: সামনের মাসে ৩৮ এ পড়বো।
: কুন হলে থাকতেন....শামসুন্নাহার না রোকেয়া হল?
: মানে....ইয়ে...মানে রোকেয়া হলের পাশের হলটা ঐযে লাল বিল্ডিং...
: কার্জন হল না কবি সুফিয়া কামাল হল?
: হ হ হ ...কামাল হলে থাকতাম।
: বুঝছি।
মন মেজাজ খিচে গেলো তার কথা শুনে। বুঝতে চেষ্টা করলাম ভদ্রলোকের উদ্দেশ্য কি। কালকের কিছু তারকারী আর ভাত গরম করে বললাম, ভদ্রলোক গোগ্রাসে গিললো। মনটা কিছুটা খারাপ হলো। রুমে কেউ নাই বলে থেকে যেতে বললাম সারা দিনের জন্য।
ভদ্রলোক আর বসলেন না, বললেন কাজ খুজতে যাবেন আবার।
বাইরে বৃষ্টি পড়ছে গতকাল থেকে। দেশের বৃষ্টি অনেক মজাদার। একবারে ঝুম বৃষ্টি, বাতাস থাকে না। প্রচন্ড গরমে এমন ঝুম বৃষ্টিতে ভেজার মজাই আলাদা।
কিন্তু এখন এখানকার তাপমাত্রা ২ এর কাছাকাছি তার উপর হু হু করে বাতাস। বৃষ্টি এখানে ঝুম ভাবে পড়ে না, মেঘের গর্জনও নেই। বিরক্তিকর এক ঘেয়ে বৃষ্টি। সবুজ বনানী কুয়াশায় ঢেকে গেছে। আজ থেকে ৩ বছর আগে যেমনটি ছিলো এখনও ঠিক তেমনটিই আছে।
অনবরত সংগ্রামে লিপ্ত সবাই, তবু সুখটা যেন কোথাও নেই। সবখানেই আছে টানপোড়েন, কষ্ট হতাশা।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।