আমি তো প্রেমে পড়িনি, প্রেম আমার ওপরে পড়েছে...।
কুহুকে ভালো লাগার পর এমনটাই মনে হলো আমার। সে আমার মনে হতেই পারে। ফেসবুকে পরিচয়। ঘন ঘন চ্যাট।
তারপর স্কাইপে ভিডিও চ্যাট। আরও পরে কফিশপে আড্ডা। তারপর মনে হলো কুহুর জন্মই যেন হয়েছে আমার জন্য—মেড ফর ইচ আদার। ওর সবই ভালো লাগে। ভালো লাগার উথালপাতাল ঢেউ আছড়ে পড়ে আমার বুকের ভেতর।
তার প্রকাশও ঘটে কুহুকে ঘিরে। মাঝে মাঝে চন্দ্রালোকিত জ্যোৎস্নায় ডিঙি নৌকায় ভেসেও বেড়ানো হয়। আমি আসলে কুহুর প্রেমেই পড়েছি। তার পরও কেন বলছি ‘প্রেম আমার ওপরে পড়েছে’।
কারণ আমি আর টিন এজে নেই।
সন্তান না থাকলেও ঘরে একজন স্ত্রী আছে। পিয়া নামের সেই নারীকে ভালোবেসেই বিয়ে করেছিলাম। যখন তার সঙ্গে প্রেম হলো তখনো বলেছি, ‘...প্রেম আমার ওপরে পড়েছে’। এখনো তা-ই বলি। আমি প্রেমে পড়ি না।
আর এখন তো প্রেমে পড়ার প্রশ্নই আসে না—সমাজ আছে না! তাই প্রেমটাই আমার ওপর পড়ে। এদিকে মধ্যরাতে বাসায় যখন ফিরি তখন দেখি আধো ঘুমে খাবার সাজিয়ে আমার জন্য অপেক্ষা করছে আমার স্ত্রী পিয়া। তখন আমারও খারাপ লাগা শুরু হতে থাকে। কিন্তু তার পরও মনে হয় পিয়া নয় কুহুই আসলে আমার জন্য পারফেক্ট। কত স্মার্ট একটা মেয়ে! সে তুলনায় পিয়া যেন আটপৌরে।
এমন ঘটনা আশপাশে কম ঘটছে না। নারী বা পুরুষ যে কারও ক্ষেত্রেই হতে পারে। বিবাহিত হওয়ার পরও ভালো লাগতে পারে যে কাউকে। বন্ধুত্বে কোনো সমস্যা নেই। কিন্তু বিবাহিত সঙ্গী থাকতে এমন সম্পর্ক আমি কত দূর টেনে নিয়ে যাব?
নাট্যব্যক্তিত্ব সারা যাকের ‘নকশা’র সুবন্ধু সমীপেষু বিভাগে দীর্ঘদিন ধরে পাঠকের বিভিন্ন সমস্যার সমাধান দিচ্ছেন।
পাশাপাশি টেলিভিশনেও সরাসরি নানা সমস্যার সমাধান দিয়ে থাকেন। এসব অভিজ্ঞতা থেকে তিনি বললেন, অনেক সময় এমন ধারণা হয় যে নতুন একটা ভালো লাগা তৈরি হয়েছে, এটাই সবার ঊর্ধ্বে—রিয়েল লাভ। ‘এই সম্পর্কটাকে সমাজ মানতে চায় না, তাই বিয়ের সম্পর্কটা রাখা হচ্ছে। আবার প্রেমটা আসলে প্রেম। ওটা সে চালিয়ে যায়।
’ অনেক মানুষ নিজেকে বোঝায়, সামাজিকতার কারণে নতুন প্রেম যেটা আসল সেটা চলতে থাকুক, আবার ঘরের যে সম্পর্কটা আছে সেটাও অটুট থাকুক।
এমনটা হলে তা বহুগামিতা হয়ে যায় বলে মনে করেন সারা যাকের। তাঁর মতে, সত্যিই যদি নতুন সম্পর্কটাকে কেউ প্রতিষ্ঠা করতে চায়, তবে তাকে সাহসী হতে হবে। না হলে তার এই সম্পর্ক বহুগামিতার পর্যায়ে পড়বে।
দুটো সম্পর্ক একসঙ্গে চললে তিনজন মানুষ তো বটেই, তাদের সন্তানেরা মিথ্যার ওপর বড় হয়।
এতে পরিবার ও আশপাশের অনেকেরই বড় ক্ষতি হয়ে যায়। সারা যাকের বলেন, যদি পরের প্রেমটা সত্যিই হয় তবে আগের সম্পর্ক থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। ‘দুই নৌকায় পা দিয়ে চললে অনেকের ক্ষতি হয়। বিশেষ করে সন্তানদের, যারা মিথ্যার ওপর বড় হতে থাকবে। ’
আইনজীবী তারানা হালিম এ ব্যাপারে বললেন, ‘এটা বিশ্বাসঘাতকতা।
যাকে বিয়ে করেছে এবং যার সঙ্গে নতুন সম্পর্কে জড়াচ্ছে—দুজনের সঙ্গেই বিশ্বাসভঙ্গের ঘটনা ঘটছে। ’
বিয়ে শুধু আইনি, সামাজিক বা ধর্মীয় বন্ধনই নয়—এটা একটা কমিটমেন্ট। তাই বিবাহিত থেকে অন্য সম্পর্কে জড়ানো যাবে না। সামাজিক মূল্যবোধ থাকতে হবে। এটুকু সংযম না থাকলে মানুষ তো আর মানুষ থাকে না।
সে ক্ষেত্রে তার মনোরোগ চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। আইনের দৃষ্টিতে তালাক দিলে ৯০ দিনের ইদ্দতকাল পার করতে হয়। এর মধ্যে আরেকটি বিয়ে করা আইনত অপরাধ। একেবারেই বোঝাপড়া না হলে তালাকের মাধ্যমে বেরিয়ে আসা উচিত।
বিয়ের মতো সামাজিক, মানবিক ও কমিটমেন্টের সম্পর্কে থেকেও নতুন কোনো সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ার প্রবণতা কারো মধ্যে থাকলে তার বিয়ের মধ্যে না যাওয়াই ভালো।
তারানা হালিমের মতে, বিপত্নীক, তালাকপ্রাপ্তা বা বিধবার ক্ষেত্রে এটা সমস্যা নয়। কিন্তু বিবাহিতদের ক্ষেত্রে আবেগের চেয়ে বিবেককে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে, নৈতিক ও মূল্যবোধের দিকটি ভাবতে হবে।
আশপাশে তাকালে দেখা যায় আগের চেয়ে এখন তালাকের সংখ্যা বাড়ছে। এর কারণ হিসেবে অনেকে ফেসবুককে দায়ী করেন। আবার ফেসবুক বা অন্য কোনো ওয়েবসাইট, মোবাইল ফোনের মাধ্যমে যাঁরা সম্পর্ক গড়ে তোলেন, নিয়মিত পরিচর্যায় সম্পর্কটাকে এগিয়ে নিয়ে যান তাঁরা মনে করেন এ তো ‘ভার্চুয়াল’।
বাস্তবে তো কোনো সমস্যা হচ্ছে না। কিন্তু আবার এটাও ঠিক সম্পর্কের চর্চাটা ‘ভার্চুয়াল’ হলেও অনুভূতিটা তো ‘রিয়াল’। তাই এমন সম্পর্কও বিয়ে নামের কমিটমেন্টকে ভঙ্গ করে।
স্ত্রী বা স্বামীর সঙ্গে একেবারেই বোঝাপড়া না হলে তালাকের মাধ্যমে বেরিয়ে আসা উচিত। তারপর অন্য চিন্তা।
বিষয়টা এমন—কারও হাত ধরে বের হয়ো না, বের হয়ে হাত ধরো। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।