সাদা এক প্রস্থ কাপড় জড়িয়ে সমগ্র ভারতবর্ষকে তাড়িত করেছিলেন মহাত্দা গান্ধী। নতুন শতকে এসে গান্ধীর মতোই আরও একজন কেবল ভারত বর্ষকেই নয়, পুরো দুনিয়াকে নাড়িয়ে দিলেন। ওয়াশিংটন পোস্ট থেকে শুরু করে নিউইয়র্ক টাইমস, টাইম ম্যাগাজিন, দি ইকোনমিস্ট, যাদের সঙ্গে ক্রিকেটের আদৌ কোনো মিল নেই সেই অচেনারাও এই তরঙ্গকে অস্বীকার করতে পারল না। কিভাবে উপেক্ষা করবে! রাজকে কি অস্বীকার করা যায়! শচীন রমেশ টেন্ডুলকার। ক্রিকেটরাজ তার অপর নাম।
একটি অধ্যায়ের সমাপ্তি হয়েছে গত শনিবারেই। কিন্তু শেষ হয়েও কি শেষ হয়! পুরো বিশ্বকে কাঁপিয়ে দিতে পারেন যিনি, তাকে নিয়ে একদিন তো নয়ই, বছরের পর বছরেও শেষ হয় না আলোচনা। শচীন তো তাই করেছেন। কিন্তু 'আফটার শচীন' যুগের সারথি হবেন কে? ক্রিকেটরাজের বিদায়ে উত্তাল সমুদ্র বক্ষে চলমান ভারতীয় ক্রিকেট জাহাজের মাস্তুলে পাঞ্জেরির দায়িত্ব পালন করবেন কে? প্রশ্নটা এবার জোরেশোরেই দেখা দিবে।
কিছুদিন আগে বিরাট কোহলিকে একান্তে নিজের কক্ষে ডেকেছিলেন শচীন।
কি বলেছিলেন তিনি! শূন্য মাস্তুলে কি তবে কোহলিকেই তুলে দিলেন ক্রিকেটরাজ! এটা কেবল আন্দাজের বিষয়ই নয়, কিছুটা প্রমাণও তো আছে। একজন শচীনের অভাব পুরো ক্রিকেট দুনিয়া মিলেও পূরণ করতে পারবে না। কিন্তু তাই বলে সময় তো থেমে নেই। থাকবেও না। আবার আগের মতোই ভারত-ওয়েস্ট ইন্ডিজ ম্যাচ হবে।
আগের মতোই ভারত হয়ত কোনো ম্যাচে ইনিংস ব্যবধানে জয় তুলে নিবে। এই চলার পথের পথিকদের মধ্যে কেউ শচীনের শূন্য স্থানে আসবে। অমন সাবলীল ভঙ্গিমায় হয়ত চার-ছক্কা হবে না। দেখা যাবে না ক্ল্যাসিক্যাল ক্রিকেট। কিন্তু দলের প্রয়োজনে রান তো আসবেই।
বিরাট কোহলি ইতোমধ্যেই ভারতীয় ক্রিকেটে 'পোস্টার বয়' খেতাব পেয়ে গেছেন। রোহিত শর্মাও দলের প্রয়োজনে জ্বলে উঠার প্রমাণ দিয়েছেন বহুবার। শচীনের কাজটা হয়ত তারাই করে দিবেন। জাহাজ তো মাঝ সমুদ্রে থেমে থাকতে পারে না। তাকে চলতেই হবে।
নতুন গন্তব্যে। নতুন উদ্দেশ্যে। কনিষ্ঠ ভারতরত্ন শচীন টেন্ডুলকার। এই পুরস্কারের যোগ্যতা কেবল তারই আছে। প্রমাণ মিলতে পারে নিউইয়র্ক টাইমসের লেখনিতে।
আমেরিকায় বেসবল কিংবদন্তী বেবে রুথ কিংবা মার্টিন লুথার কিংয়ের জনপ্রিয়তাকে ছাড়িয়ে গেছেন শচীন। নিউইয়র্ক টাইমস তাই বলছে। আর ইকোনমিস্ট! যারা ক্রিকেটের আঙ্গিনায় পা মাড়াতে আসে না কখনোই সেই তারাই লিখলো, ফেয়ারওয়েল টু ইন্ডিয়া'স ডারলিং। ওয়াশিংটন পোস্ট লিখল, ফ্যানস সে ফেয়ারওয়েল টু ইন্ডিয়া'স ক্রিকেট গড, শচীন টেন্ডুলকার। এমন করে শত বছর পর কোনো এক কিংবদন্তি হয়ত আবারও বিশ্বকে নাড়িয়ে দিতে আসবেন।
কিন্তু সেই সময়ের দর্শকরা শচীন টেন্ডুলকার কি ছিলেন, তার কতটা বুঝবে! আর বর্তমানের দর্শকদের শত বছর পরের সেই ঘটনা জানার সুযোগই বা কোথায়! বর্তমানটা তাই চরম বাস্তবতা হয়েই ধরা দিয়েছে। চারদিকে কেবল শূন্যতা। নাই, নাই, নাই! এই শূন্যতা বিরাট কোহলিরা কতটা পূরণ করতে পারবেন! ভবিষ্যতের হাতেই তোলা রইল এই বিস্ময়মাখা প্রশ্নের উত্তর। এবার কেবল আশা করা যেতে পারে, গত ষোল বছরে অঞ্জলি, সারা এবং অর্জুন যতটা মিস করেছেন শচীনকে, তার চেয়েও বেশি অনুভব করবেন আগামী ষোল বছর। শচীন তো বলেই দিলেন, আগামী ষোলটা বছর কেবল তোমাদের!
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।