আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে জাপা

জাতীয় পার্টির (জাপা) চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদ আজ মহাজোট ছাড়ার ঘোষণা দেবেন। এর পাশাপাশি তিনি নতুন জোট গঠন করে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার কথাও বলবেন।

এ জন্য আজ বেলা ১১টায় বনানীর দলীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন ডেকেছেন এরশাদ। গতকাল রোববার সকালে তিনি চট্টগ্রামের হাটহাজারী মাদ্রাসায় হেফাজতে ইসলামের আমির শাহ আহমদ শফীর সঙ্গে দেখা করতে গিয়ে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার কথা নিশ্চিত করেছেন। এরশাদ বলেছেন, নির্বাচনে অংশ নেওয়া ছাড়া তাঁর উপায় নেই।

সর্বদলীয় সরকারেও তাঁর দলের লোক থাকবে।

তবে কয়েক মাস ধরে এরশাদ জোর গলায় বলে আসছিলেন, সব দলের অংশগ্রহণ ছাড়া তিনি নির্বাচনে যাবেন না। কোনো পাতানো নির্বাচনে অংশ নিয়ে ‘দালাল’ হয়ে মরতে চান না। সর্বশেষ গত সোমবার বেসরকারি টেলিভিশন বাংলাভিশনকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এরশাদ বলেন, ‘সর্বদলীয় সরকার’ অসাংবিধানিক। সব দলের অংশগ্রহণ ছাড়া নির্বাচনে গেলে মানুষ তাঁকে থুতু দেবে।

কিন্তু গত শনিবার জাতীয় যুব সংহতির সম্মেলনে নির্বাচনে যাওয়ার আভাস দেন এরশাদ। গতকাল তা আরও খোলাসা করেন।

জাপার সভাপতিমণ্ডলীর দুই সদস্য প্রথম আলোকে জানান, সর্বদলীয় সরকারের মন্ত্রিসভায় অংশ নিতে ইতিমধ্যে এরশাদের পক্ষ থেকে জাপার ছয় নেতার নাম প্রস্তাব করে প্রধানমন্ত্রীর কাছে দেওয়া হয়েছে।

জাপার দলীয় সূত্রগুলো জানায়, নির্বাচনে অংশ নিতে এরশাদের ওপর তাঁর দেশি-বিদেশি মিত্র ও সরকারের উচ্চপর্যায় থেকে চাপ রয়েছে। এর মধ্যে সরকারের উচ্চপর্যায়ের একজন কর্মকর্তা গত শনিবার এরশাদের সঙ্গে দেখা করেন।

সেখানে এরশাদের নামে থাকা মঞ্জুর হত্যা মামলা ও জাপার নির্বাচনী প্রতীক ‘লাঙ্গল’ নিয়ে উচ্চ আদালতে বিচারাধীন মামলা নিয়ে আলোচনা হয়। ২০ নভেম্বর মঞ্জুর হত্যা মামলার শুনানির তারিখ আছে।

এর আগে এরশাদ কিছুদিন চুপ থাকার পর হঠাৎ সিঙ্গাপুর সফরে যান। সেখান থেকে ফিরে ‘সর্বদলীয় সরকার’ সম্পর্কে বিরূপ মন্তব্য করেন। এমনকি সব দল নির্বাচনে অংশ না নিলে নির্বাচন জাতি ও পৃথিবীর কাছে গ্রহণযোগ্য হবে না বলেও মন্তব্য করেন।

হোঁচট খেল জোট: গত বৃহস্পতিবার এরশাদ ঘোষণা দিয়েছিলেন বিকল্পধারা বাংলাদেশ, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি) ও কৃষক শ্রমিক জনতা লীগসহ ইসলামপন্থী আরও কয়েকটি দল নিয়ে অচিরেই একটি নতুন রাজনৈতিক জোট গঠনের।

হাটহাজারী থেকে ফেরার পথে গতকাল বিকেলে চট্টগ্রামের চকবাজারে জাপার সভাপতি সোলায়মান শেঠের বাসায় সাংবাদিকদের এরশাদ বলেন, ‘মহাজোট ও বিএনপির বাইরে যেসব দল আছে, তাদের নিয়ে জোট করব। দু-এক দিনের মধ্যে জোটের ঘোষণা দেব। সেই জোট নিয়ে নির্বাচন করব। আমরাই মেইন (প্রধান) দল হব।

’ প্রায় ২৭২ আসনে প্রার্থী চূড়ান্ত করা আছে বলেও জানান তিনি। কিন্তু জোট গঠনে এরশাদের উদ্যোগ শুরুতেই হোঁচট খেয়েছে। কারণ সম্ভাব্য এ জোটের তিন শরিক দলের নেতারা এরশাদের উদ্দেশ্য নিয়ে ‘সন্দেহ’ করছেন। নেতারা বলছেন, এরশাদের জোট গঠনের উদ্দেশ্য দলীয় সরকারের অধীন নির্বাচনে যাওয়া, নাকি নির্বাচন সামনে রেখে আওয়ামী লীগের সঙ্গে দর-কষাকষি করা, তা তাদের কাছে পরিষ্কার নয়।

কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি কাদের সিদ্দিকী গত শুক্রবার টাঙ্গাইলে দলের এক সমাবেশে বলেন, ‘মহাজোট ও মহাচোরের সঙ্গে এরশাদ থাকায় আমি তাঁকে (সমাবেশে) দাওয়াত দিইনি।

এরশাদ ওই মহাজোট না ছাড়লে তাঁর সঙ্গে আমি নেই। ’

জাপার পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, সম্ভাব্য জোটে চরমোনাই পীরের ইসলামী আন্দোলন ও বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস থাকবে।

যোগাযোগ করা হলে ইসলামী আন্দোলনের মহাসচিব ইউনূছ আহমাদ গত রাতে প্রথম আলোকে বলেন, ‘এমন কোনো যোগাযোগ আমাদের সঙ্গে হয়নি। এ ছাড়া আমাদের দলের সিদ্ধান্ত আছে কোনো জোট নয়, এককভাবে নির্বাচন করার। ’

আর বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের কেন্দ্রীয় বায়তুল মাল সম্পাদক আতাউল্লাহ জানান, এরশাদের সঙ্গে জোট করার কোনো সিদ্ধান্ত বা আলোচনা হয়নি।

হেফাজতের আমিরের সঙ্গে বৈঠক: হেফাজতে ইসলামের আমির আহমদ শফীর সঙ্গে প্রায় পৌনে এক ঘণ্টা কথা বলেন এরশাদ। বৈঠকের আলোচনা সম্পর্কে হেফাজতের পক্ষ থেকে বিবৃতি আকারে গণমাধ্যমকে জানানো হয়। বিবৃতিতে বলা হয়, দুই নেতার কথাবার্তার একপর্যায়ে হেফাজতে ইসলামের একজন নেতা এরশাদের কাছে জানতে চান, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া সর্বদলীয় সরকারের অধীনে জাতীয় পার্টি নির্বাচনে অংশ নেবে কি না। জবাবে এরশাদ বলেন, এ ছাড়া তো উপায় নেই। নির্বাচনে অংশ নিতেই হবে।

না হয় গণতন্ত্র রক্ষা পাবে না এবং তৃতীয় শক্তি চলে আসতে পারে।

বিবৃতিতে দাবি করা হয়, বৈঠকে এরশাদ বলেন, বর্তমান সরকার সংবিধান থেকে আল্লাহর ওপর আস্থা ও বিশ্বাসের ধারা বাদ দিয়েছে। কিন্তু তিনি রাষ্ট্রধর্ম ইসলামকে বাদ দিতে দেননি। এরশাদ বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার যা করেছে, তাতে তারা ১০ ভাগ ভোটও পাবে না। বৈঠক শেষে এরশাদ সাংবাদিকদের বলেন, ‘দোয়া নিতে এসেছিলাম।

হুজুর রাজনৈতিক কথা বলেননি। হুজুর বলেছেন, যে মনোবাসনা নিয়ে এসেছি, আল্লাহ তা পূরণ করুন। ’

হেফাজতের মহাসচিব জুনায়েদ বাবুনগরী সাংবাদিকদের বলেন, হেফাজতে ইসলাম সম্পূর্ণ অরাজনৈতিক ঈমান-আকিদাভিত্তিক একটি সংগঠন। কোনো সুনির্দিষ্ট রাজনৈতিক দল বা জোটের প্রতি তাঁদের সমর্থন নেই।

এদিকে গতকাল রাতে বারিধারায় এরশাদের বাসভবনে তাঁর সঙ্গে দেখা করেন বিকল্পধারা বাংলাদেশের মহাসচিব মেজর (অব.) আবদুল মান্নান ও যুগ্ম মহাসচিব মাহী বি চৌধুরী।

তাঁরা চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে কথা বলেন জানা গেছে।

 

সোর্স: http://www.prothom-alo.com

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.