রাত ২টা পর্যন্ত অপেক্ষা করে মোবাইল বন্ধ করে বিছানার অন্য পাশে ছুড়ে ফেলে দিল অর্পা। বুঝে গেছে যে এবারো ওর জন্মদিন ভুলে গেছে রাফি। যদিও প্রত্যেক বছর ভুলে যায় রাফি, তবুও অর্পা ওর ম্যাসেজ বা কলের অপেক্ষা করে প্রতিবার। এবারো অপেক্ষা করতে করতে মেজাজ খারাপ হয়ে গেলো। আর কোনো কারণে মেজাজ খাপার হলে, সেই খারাপ মেজেজ এমনি এমনি মেজাজকে আরো খারাপ করতে থাকে।
অর্পা জানে এভাবে আর কিছুক্ষন পর এই খারাপ মেজাজ মনে ক্ষোভ সৃষ্টি করবে, ক্ষোভ থেকে হবে জিদ। সেই জিদ অর্পাকে বলবে রাফিকে কল দিতে, কল দিয়ে ইচ্ছা মত ঝাড়ি দিতে। কিন্তু অর্পা আজকের দিনে রাফির সাথে খারাপ ব্যাবহার করতে চায় না।
কোনো কারণে মন খারাপ হলে অর্পা বারান্দায় চলে আসে। বারান্দাটা অর্পার মন ভালো করার মেশিন।
খারাপ মন নিয়ে এখানে এসে কিছুক্ষণ আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকলে মন ভালো হয়ে যায় আপনা আপনি। বারান্দায় দাড়িয়ে বাইরের অন্ধকারের দিকে তাকিয়ে গতবছরের কথা মনে পরে গেলো অর্পার। সেবার জন্মদিনেও রাফির কোনো খবর ছিল না সারাদিন। অর্পা সারাদিন মোবাইলে কল দেওয়ার চেষ্টা করে কন্তু রাফির মোবাইল বন্ধ ছিল। রাত এগারোটার দিকে অর্পা মেজাজ খারাপ করে এমনি বারান্দায় দাড়িয়ে ছিল, ঠিক তখনি মোবাইল বেজে উঠলো।
-হ্যালো...
-দরজা খোল।
-দরজা খুলবো মানে?
-আহা... খোল না। আমি তোদের গেটের বাইরে দাড়িয়ে আছি।
-ক্যান এসছিস?
-খুলেই দেখ না...
দরজার বাইরে রাফিকে বড়সড় একটা কিছু নিয়ে দাড়িয়ে থাকতে দেখে অর্পা চোখ কুচকে জিজ্ঞেশ করল,
-এটা কি?
-তোর জন্মদিনের গিফট। ... হহা করে দাড়িয়ে আছিস ক্যান? ধর না...
অর্পা গিফট টা হাতে নিতেই রাফি বলল অনেক রাত হয়েগেছেরে, আমি বাসায় যাই।
আম্মু কান্নাকাটি শুরু করতে পারেন। বলেই উলটো দিকে হাটা দিল।
অর্পা ঘরে এসে প্যাকেট টা খুলে দেখে ভেতরে একটা পেইন্টিং। একটা মেয়ের পোরট্রেইট। অর্পার চোখগুলো আনন্দে ঝিলিক দিয়ে উঠলো, যখন দেখল ছবির মেয়েটি ও নিজেই।
সাথে ছোট একটা চিরকুটে লিখা, "ছবিটা ভালো না লাগলে ফেলে দিস। যদিও সারাদিন বসে বসে একেছি। শুভেচ্ছা অর্পা..."
অপেক্ষা করতে করতে মানুষ যখন আশা ছেড়ে দেয় প্রায়, সেই মুহূর্তে যদি ইচ্ছে পূরণ হয়, তখন এর চাইতে মানসিক শান্তি আর অন্য কিছুতে নেই। অর্পা সেদিন খুশি মনে ঘুমাতে গিয়েছিলো।
অর্পার মন ভালো হয়ে গেছে।
সেদিনের সেই গিফটের জন্য বার বার রাফিকে মাফ করে দেওয়া যায় ওর জন্মদিন ভোলার জন্য...
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।