আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বেশির ভাগ নতুন মুখ, দলের মনোযোগ পাওয়াই লক্ষ্য

আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ নেতা-মন্ত্রীদের সবাই মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ ও জমা দিয়েছেন। তবে এবার আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশীদের একটা বড় অংশ তরুণ ও নতুন মুখ, যাঁরা ছাত্রলীগের সাবেক নেতা কিংবা যুবলীগসহ সহযোগী সংগঠনের সঙ্গে জড়িত। এঁদের অনেকের মূল লক্ষ্য দলের মনোযোগ আকর্ষণ।

এ ছাড়া নারায়ণগঞ্জের শামীম ওসমান ও লক্ষ্মীপুরের আবু তাহেরের মতো ‘গডফাদারের’ তকমা পাওয়া ব্যক্তিরাও মনোনয়ন পাওয়ার লক্ষ্যে তৎপর আছেন।

 আসন্ন দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ১০ থেকে ১৭ নভেম্বর পর্যন্ত আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন ফরম বিক্রি হয়।

মোট দুই হাজার ৬০৪ জন মনোনয়ন ফরম কিনে জমা দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন দলের সংসদীয় বোর্ড ২৪ নভেম্বর মনোনয়নপ্রত্যাশীদের সাক্ষাৎকার নেবে।

শেখ হাসিনার পক্ষে গোপালগঞ্জ, রংপুর ও নড়াইলের একটি করে আসনের মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করা হয়। সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম কিশোরগঞ্জ-১ এবং রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের আসনে তাঁর ছেলে মনোনয়ন ফরম নিয়েছেন। অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের সঙ্গে সিলেট-১ আসনের মনোনয়ন ফরম কেনেন সিলেটের সাবেক মেয়র বদরউদ্দিন আহমদ কামরান ও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মেসবাহউদ্দিন সিরাজ।

প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারীর পদ থেকে অব্যাহতি পাওয়া দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ কুষ্টিয়া-১ ও কুষ্টিয়া-৩ আসনের মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেন। অবশ্য এ দুটি আসনের বর্তমান সাংসদ যথাক্রমে আফাজউদ্দিন ও কে এইচ রশিদুজ্জামান একই দলের। আফাজউদ্দিন তাঁর আসনের জন্য এবারও মনোনয়নপ্রত্যাশী। রশিদুজ্জামান মনোনয়ন ফরম কেনেননি। তবে তাঁর আসনে হানিফ ছাড়াও দলের আরও চারজন মনোনয়ন ফরম নিয়েছেন।

দুর্নীতির অভিযোগে মন্ত্রিত্ব হারানো সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেন এবারও মাদারীপুর-৩ আসনে দলীয় মনোনয়নপত্র কিনেছেন। ওই আসনে আরও দুজন মনোনয়নপত্র কিনেছেন বলে জানা গেছে।

আওয়ামী লীগ-সমর্থিত অধিকাংশ উপজেলা চেয়ারম্যান ও পৌরসভার মেয়র এবং জেলা পরিষদের প্রশাসকদের অনেকে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম কিনেছেন বলে জানা গেছে।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, এবার মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করা ব্যক্তিদের মধ্যে টেন্ডারবাজ, খুনের মামলার আসামি, এলাকায় সন্ত্রাসী হিসেবে পরিচিতি আছে এমন ব্যক্তিও আছেন। আবার সরাসরি রাজনীতি করেননি, এমন অনেক ব্যবসায়ী, পেশাজীবী ও প্রবাসীর পক্ষেও মনোনয়ন ফরম কিনতে দেখা যায়।

এ জাতীয় মনোনয়নপ্রত্যাশীদের কেউ কেউ বলেছেন, প্রধান বিরোধী দলবিহীন নির্বাচন হলে দলীয় মনোনয়ন পেয়ে ‘ফাঁকা মাঠে গোল’ করার সুযোগ নিতে চান তাঁরা। আবার, মনোনয়ন না পেলেও এলাকায় সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে প্রচার-পরিচিতি পাওয়াটাও তাঁদের আরেকটা লক্ষ্য।

আওয়ামী লীগের একাধিক জ্যেষ্ঠ নেতার সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, বিরোধী দল নির্বাচন বর্জন করলে কিছু আসনে একাধিক দলীয় প্রার্থীও বিবেচনা করা হবে। এ ছাড়া মনোনয়নপ্রত্যাশীদের তৎপরতায় একদিকে দেশে নির্বাচনী আবহ সৃষ্টি হবে, অন্যদিকে নেতা-কর্মীরা মাঠে থাকলে বিরোধী দল মাঠ নিয়ন্ত্রণে নিতে পারবে না। এসব লক্ষ্য সামনে রেখে এবার কেন্দ্র থেকেই তরুণদের মনোনয়নপত্র কেনার জন্য উৎসাহ দেওয়া হয়েছে।

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর একজন সদস্য প্রথম আলোকে বলেন, দলীয় মনোনয়নপত্র কেনার মাধ্যমে দায়বদ্ধতাও বেড়ে যাবে। বিরোধী দলের আন্দোলন-সংগ্রাম মোকাবিলায় নতুনদের ব্যবহার করা যাবে।

পরিচিতি পাওয়াই মুখ্য: মনোনয়ন ফরম বিক্রির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানিয়েছেন, এবার মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করা নতুন মুখের বেশির ভাগই ছাত্রলীগের সাবেক নেতা কিংবা যুবলীগসহ সহযোগী সংগঠনের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। কেন্দ্রীয় উপকমিটির ১৪৯ সহসম্পাদকের মধ্যে ৫০ জনের বেশি মনোনয়নপত্র কিনেছেন। ১৯৯০ সালের পর ছাত্রলীগের যেসব কেন্দ্রীয় কমিটি হয়েছে, তার প্রায় সব কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ বিভিন্ন পদের নেতারা এবার মনোনয়ন ফরম নিয়েছেন।

সিরাজগঞ্জ-২ আসনের জন্য মনোনয়ন ফরম তুলেছেন জেদ্দা পারভীন। ইডেন কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক এই সভাপতি বর্তমানে আওয়ামী লীগ বা সহযোগী সংগঠনের কোনো পদেই নেই। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘জানি না নেত্রী আমাকে মনোনয়ন দেবেন কি না। তবে এলাকায় পরিচিতি পেতে এটা ভালো মাধ্যম। ’

মাগুরা-১ আসনে বর্তমানে আওয়ামী লীগের সাংসদ এম এস আকবর।

আবারও তিনি মনোনয়ন ফরম কিনেছেন। জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতিসহ আরও অনেকের সঙ্গে মনোনয়নপ্রত্যাশী দলের কেন্দ্রীয় উপকমিটির সহসম্পাদক পঙ্কজ সাহাও। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘এর আগে উপজেলা পরিষদের নির্বাচনে চেষ্টা করে দলের সমর্থন পাইনি। আশা করি, এবার পাওয়া যাবে। তা ছাড়া মনোনয়নপত্র কেনা পরিচিতি পাওয়ার একটা মাধ্যম।

আছেন যুবলীগের বিতর্কিত নেতারাও: ঢাকা-১৫ আসনের জন্য মনোনয়ন ফরম কিনেছেন যুবলীগের ঢাকা মহানগর কমিটির নেতা মাইনুল হাসান খান। তিনি মনোনয়ন ফরম ক্রয়ের সময় বিশাল মহড়া দেন। তাঁর বিরুদ্ধেই টেন্ডারবাজির অভিযোগ রয়েছে। ঢাকা-১২ আসনের জন্য মনোনয়ন ফরম কেনা রফিকুল ইসলাম আলোচিত হন যুবলীগ ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সাংগঠনিক সম্পাদক রিয়াজুল হক খান মিল্কী হত্যার কারণে। র‌্যাবের তদন্তে এই হত্যার ঘটনায় রফিককে অন্যতম সন্দেহভাজন হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।

ঢাকা-৬ আসনের মনোনয়নপ্রত্যাশী যুবলীগের নেতা মহিউদ্দিন মহির বিরুদ্ধে সায়েদাবাদ বাস টার্মিনাল-সংলগ্ন এলাকায় রেলের জমি দখল করে মার্কেট নির্মাণের অভিযোগ রয়েছে।

জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সংসদীয় বোর্ডের সদস্য কাজী জাফর উল্যাহ প্রথম আলোকে বলেন, মনোনয়ন ফরম যে কেউ কিনতে পারেন। তবে সব যোগ্যতা বিবেচনা করে মনোনয়ন দেওয়া হবে। মনোনয়ন ফরম কেনার ক্ষেত্রে তরুণদের আধিক্যকে তিনি ইতিবাচক বলে মনে করেন। এতে দল যে মাঠপর্যায়ে চাঙা আছে, তা প্রমাণ করে।

 

সোর্স: http://www.prothom-alo.com

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.