আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মহামান্য রাষ্ট্রপতিকে হারিয়ে আসলেই দেশের অপূরনীয় ক্ষতির শিকার আমরা সবাই-

দলমত নির্বিশেষে আমরা সবাই রাষ্ট্রপতি কে হারিয়ে এক অপূরনীয় ক্ষতির শিকার হয়েছি। কারন রাষ্ট্রপতিকে আমি কখনোই দেখিনি ওনি কোন দলে র উপর আক্রমনাত্নক কথা বার্তা বলতে। আসলে ওনার কাছ থেকে রাজনিতীক দলগুলোর কিছু শিক্ষা নেয়া দরকার। বিশেষ করে আম্লীগ বিম্পি আর জামাতদের। তাই ওনার জন্য আমার ব্যাক্তিগত ভাবে রইল দোয়া - ওনি যেন জান্নাত বাসী হোক।

আমীন!!! রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান আর নেই রাষ্ট্রপতি মো. জিল্লুর রহমান আর নেই। সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে আজ বাংলাদেশ সময় বিকেল চারটা ৪৭ মিনিটে তিনি ইন্তেকাল করেছেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। হাসপাতালের একটি দায়িত্বশীল সূত্র প্রথম আলো ডটকমকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। জিল্লুর রহমানের মৃত্যুতে আগামী তিন দিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করা হয়েছে। আগামীকাল বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টার দিকে বিশেষ বিমানযোগে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে তাঁর মরদেহ পৌঁছাবে।

জিল্লুর রহমান ২০০৯ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব নেন। দায়িত্ব পালনকালে অসুস্থতার জন্য কয়েকবার হাসপাতালে ভর্তি হন তিনি। গত ডিসেম্বরে যুক্তরাজ্যে তাঁর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয়। সর্বশেষ জিল্লুর রহমান শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যায় ৯ মার্চ রাতে ঢাকা সেনানিবাসের সম্মিলিত সামরিক (সিএমএইচ) হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। কিন্তু চিকিত্সকদের পরামর্শ অনুযায়ী উন্নত চিকিত্সার জন্য তাঁকে ১০ মার্চ রাতে সিঙ্গাপুরে পাঠানো হয়।

১১ মার্চ সকালে সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে তাঁকে ভর্তি করা হয়। জিল্লুর রহমানকে সিঙ্গাপুরে নেওয়ার পর সংবিধান অনুযায়ী স্পিকার আবদুল হামিদ ১৪ মার্চ থেকে রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করছেন। রাষ্ট্রপতির মৃত্যুতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, রাষ্ট্রপতির দায়িত্বে থাকা স্পিকার আবদুল হামিদ, গভীর শোক প্রকাশ করে শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন। আরও শোক প্রকাশ করেছেন বিরোধীদলীয় নেতা ও বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া, জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদ, ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন, সংসদ উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী দীপু মনি, আইনমন্ত্রী শফিক আহমেদ, শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ, যোগাযোগমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু প্রমুখ। জিল্লুর রহমান ১৯২৯ সালের ৯ মার্চ কিশোরগঞ্জ জেলার ভৈরব থানার এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন।

তাঁর পিতা মরহুম মেহের আলী মিঞা ছিলেন প্রখ্যাত আইনজীবী ও তত্কালীন ময়মনসিংহ লোকাল বোর্ডের চেয়ারম্যান এবং জেলা বোর্ডের সদস্য। জিল্লুর রহমান ময়মনসিংহ জেলা শহরে তাঁর শিক্ষাজীবন শুরু করেন। ১৯৪৫ সালে ভৈরব কেবি হাইস্কুল থেকে তিনি মেট্রিক এবং ঢাকা ইন্টারমিডিয়েট কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট (আইএ) পাস করেন। ১৯৪৬ সালে ঢাকা ইন্টারমিডিয়েট কলেজের ছাত্র থাকাকালে সিলেটে গণভোটের কাজ করার সময় তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সান্নিধ্যে আসেন। ১৯৫৪ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইতিহাসে অনার্সসহ মাস্টার্স ডিগ্রি লাভ করেন।

একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি আইন বিষয়ে স্নাতক ডিগ্রিও অর্জন করেন। ১৯৫২ সালের ভাষা-আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন জিল্লুর রহমান। বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ঐতিহাসিক আমতলায় ১৯৫২ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি এক ছাত্র সমাবেশে জিল্লুর রহমান সভাপতিত্ব করেন। সেখানেই ২১ ফেব্রুয়ারির কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়। ২০ ফেব্রুয়ারিতে ফজলুল হক ও ঢাকা হলের পুকুর পাড়ে যে ১১ জন নেতার নেতৃত্বে ২১ ফেব্রুয়ারির ১৪৪ ধারা ভঙ্গের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, সেখানে জিল্লুর রহমান অন্যতম নেতা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।

ভাষা-আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করায় তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কৃত হন। একই সঙ্গে তাঁর মাস্টার্স ডিগ্রি কেড়ে নেওয়া হয়। কিন্তু প্রবল আন্দোলনের মুখে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আবার তাঁর মাস্টার্স ডিগ্রি ফিরিয়ে দেয়। ১৯৫৩ সালে তিনি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক হল ছাত্র সংসদের সহসভাপতি নির্বাচিত হন। জিল্লুর রহমান ১৯৫৪ সালে যুক্তফ্রন্টের নির্বাচনে বৃহত্তর ময়মনসিংহ জেলা নির্বাচন পরিচালনা কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান ছিলেন।

তত্কালীন পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন তিনি। ১৯৫৬ সালে তিনি কিশোরগঞ্জ আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি নির্বাচিত হন। ষাটের দশকে তিনি ঢাকা জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ১৯৬২ সালের সামরিক শাসনবিরোধী আন্দোলন, ১৯৬৬ সালের ছয় দফা আন্দোলন, ১৯৬৯ সালের গণ-অভ্যুত্থানসহ প্রতিটি গণ-আন্দোলনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পাশে থেকে তিনি অংশগ্রহণ করেন। ১৯৭০ সালে তিনি পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের সদস্য (এমএনএ) নির্বাচিত হন।

জিল্লুর রহমান ছিলেন মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক। তিনি মুজিবনগর সরকার পরিচালিত স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র পরিচালনা এবং ‘জয় বাংলা’ পত্রিকার প্রকাশনার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। সেই সময় দখলদার পাকিস্তান সরকার তাঁর সংসদ সদস্য পদ বাতিল করে ২০ বছর কারাদণ্ড দেয় এবং তাঁর সব সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করে। ১৯৭২ সালে তিনি বাংলাদেশ গণপরিষদের সদস্য হিসেবে সংবিধান প্রণয়নে অংশ নেন। ২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনসহ ১৯৭৩, ১৯৮৬, ১৯৯৬ ও ২০০১ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কিশোরগঞ্জের কুলিয়ারচর-ভৈরব আসন থেকে জিল্লুর রহমান সাংসদ নির্বাচিত হন।

১৯৯৬ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করলে তিনি স্থানীয় সরকারমন্ত্রী (এলজিআরডি) হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারি দেশে জরুরি আইন জারি হয়। ফখরুদ্দীন আহমদের তত্ত্বাবধায়ক সরকার দায়িত্ব নিলে ওই বছরের ১৬ জুলাই রাতে আওয়ামী লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনা গ্রেপ্তার হন। তখন আওয়ামী লীগের হাল ধরেন জিল্লুর রহমান। দীর্ঘ ১১ মাস শেখ হাসিনার জেলজীবন এবং চিকিত্সার জন্য আরও প্রায় ছয় মাস দেশের বাইরে অবস্থানকালে আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি জিল্লুর রহমান দলকে ঐক্যবদ্ধ রাখেন।

২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বরের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন মহাজোট সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে। এই নির্বাচনে ষষ্ঠবারের মতো সাংসদ নির্বাচিত হন জিল্লুর রহমান। নবম জাতীয় সংসদে জিল্লুর রহমান প্রথমে সংসদ উপনেতা নির্বাচিত হন। পরে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ তাঁকে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন দেয়। তিনি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ২০০৯ সালে বাংলাদেশের ১৯তম রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন।

ওই বছরের ১২ ফেব্রুয়ারি শপথ গ্রহণের মাধ্যমে রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব গ্রহণ করেন তিনি। কিশোরগঞ্জ আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ছাড়াও জিল্লুর রহমান আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্যসহ বিভিন্ন সময় দলের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে ছিলেন। স্বাধীন বাংলাদেশে ১৯৭২ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আওয়ামী লীগের সভাপতি এবং জিল্লুর রহমান বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ১৯৮৪ সালে তিনি পুনরায় দলের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ১৯৭৫ সালে বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক আওয়ামী লীগের (বাকশাল) প্রথম সম্পাদক ছিলেন।

১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুর হত্যার পর প্রায় চার বছর জিল্লুর রহমান বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৮৬ সালে সাংসদ থাকাকালে জিল্লুর রহমান আবারও কারাবরণ করেন। ১৯৯২ এবং ১৯৯৭ সালে দলীয় কাউন্সিলে জিল্লুর রহমান পর পর দুবার বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট রাজধানী ঢাকার বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের সমাবেশে গ্রেনেড হামলায় জিল্লুর রহমান তাঁর সহধর্মিণী ও মহিলা আওয়ামী লীগের তত্কালীন সভানেত্রী আইভি রহমানকে হারান। পারিবারিক জীবনে তিনি এক ছেলে ও দুই মেয়ের বাবা।

তিন দিনের রাষ্ট্রীয় শোক জিল্লুর রহমানের মৃত্যুতে আগামী তিন দিন রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করা হয়েছে। রাষ্ট্রপতির দায়িত্বে থাকা স্পিকার আবদুল হামিদ আজ বুধবার এ শোক ঘোষণা করেছেন। বঙ্গভবনের একজন মুখপাত্র বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থাকে (বাসস) এ তথ্য জানিয়েছেন। লিংকু ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.