আমি ইহার মত, তাহার মত, তাহাদের মত নই। আমি আমার মত। আমার মাঝে ইহাকে/উহাকে/তাহাকে খুঁজে লাভ নাই। **************************************** মানুষ নিজেকে লুকিয়ে রাখতে পছন্দ করে... সে চায় তাঁকে খুজেঁ বের করুক... আর নিজের সম্পর্কে নিজে বলা বোকামি ...... আম
আবহাওয়া অফিসের বার্তা ছাড়াই শীতকাল ( Winter season ) শুরু হয়েছে। দেখতে না দেখতেই ঋতু পরিবর্তনের পরিক্রমায় শরতের শেষে হেমন্তের হাওয়া আমাদেরকে শীতের আগমনী বার্তা মনে করিয়ে দেয়।
শীতের হিমেল হাওয়া, খেজুরের রস আর পিঠাপুলির উৎসবের কারণে শীতকালটা অনেকের কাছে খুবই আনন্দের একটা ঋতু।
কিন্তু এই আনন্দের পাশাপাশি কফ, সর্দি-কাশি, জ্বর, হাঁপানি ও নিউমোনিয়ার ( In winter season, most of the common ailments include asthma, pneumonia, cough, flu, cold, sinus, fever, arthritis and various kinds of allergies.) মতো কিছু ঠান্ডাজনিত স্বাস্থ্য সমস্যার কারনে শিশু থেকে বৃদ্ধ অনেকেই শীতকালের দিনগুলি খুব কষ্টে অতিবাহিত করেন। তাই শীতকালীন রোগ থেকে নিজেকে রক্ষা করতে নিন্মে কিছু নিয়ম উল্লেখ করা হল।
সর্দি-কাশি ও ইনফ্লুয়েঞ্জার লক্ষণ
শীতের অসুখের কথা বলতে গেলে প্রথমেই চলে আসে ঠান্ডাজনিত সর্দি-কাশির সমস্যা। এই সর্দি-কাশির শুরুতেই সাথে গলা ব্যথা, গলায় খুশখুশ ভাব, নাক বন্ধ, নাক দিয়ে পানি ঝরা এবং ঘন ঘন হাঁচি ।
এই সব উপসর্গের সাথে হালকা জ্বর, মাথাব্যথা, মাংসপেশিতে ব্যথা, মাথা ভার ভার লাগা, শরীর ম্যাজ ম্যাজ করা, দুর্বল লাগা ও ক্ষুধামন্দা দেখা দেয়। এটা মূলত শীতকালের শরীরের সাধারণ সমস্যা যা কিনা ৭-১০ দিনের মধ্যে নিজ থেকেই ভালো হয়ে যায়।
তবে ইনফ্লুয়েঞ্জার ক্ষেত্রে জ্বর ও কাশিটা খুব বেশি হয় যা থেকে শ্বাসকষ্ট হতে পারে এবং এটা অনেক দিন ধরে স্থায়ী হয়। বলা যায় যে, শীতের অসুখের মূল অংশটাই জুড়ে থাকে শ্বাসতন্ত্রের ওপর, যা থেকে শ্বাসকষ্টের উৎপত্তি হয়ে থাকে। শীতে শ্বাসতন্ত্রজনিত ফুসফুসের প্রদাহ সংক্রান্ত অসুখ নিউমোনিয়া শিশুদের জন্য একটি প্রাণঘাতী রোগ।
দ্রুত চিকিত্সা এবং সচেতনতার অভাবে প্রতি বছর নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে অনেক শিশু মারা যায়।
এ ছাড়া শীতকালে সাইনাস, কান ও টনসিলের ব্যাধাও বাড়ে। যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম বিশেষকরে নবজাতক, শিশু, বৃদ্ধ ও ধূমপায়ীরা শীতকালে এই সব রোগ দ্বারা খুব বেশি আক্রান্ত হয়ে থাকে।
শীতে শ্বাসকষ্ট বাড়ে কেন ?
অনেকের প্রশ্ন শীতে শ্বাসকষ্ট বাড়ে কেন ? বিশেষজ্ঞরা মতে, তাপমাত্রার পরিবর্তন আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধক শক্তি বা ইমিউন সিস্টেম আক্রান্ত করে এবং দেহের রোগ প্রতিরোধক্ষমতা কমিয়ে দেয়। শীতকালে বাতাস অত্যন্ত শুষ্ক থাকে, ফলে প্রশ্বাসের বায়ু প্রয়োজনীয় পরিমাণে আর্দ্র হতে পারে না।
এর ফলে জীবাণু শ্বাসতন্ত্রের ভেতরে ঢোকে ও বিস্তার লাভ করে।
এ সময় পানি খাওয়া কম হয় বলে শরীরে পানিশূন্যতা থাকে এবং শ্বসনতন্ত্র থেকে যে প্রতিরোধক ব্রংকিয়াল নিঃসরণ হয়, যা শ্বাসনালির ভেতরের জীবাণুকে বের করে দেয়, তা শুকিয়ে যায়। ফলে জীবাণু বের হতে পারে না এবং সহজেই বিস্তার লাভ করে। শুষ্ক আবহাওয়া বাতাসে ভাইরাস ছড়াতে সাহায্য করে। এ ছাড়া শীতকালে ধুলাবালির পরিমাণ বেড়ে যায়।
ঠান্ডা, শুষ্ক বাতাস হাঁপানি রোগীর শ্বাসনালিকে সরু করে দেয়, ফলে হাঁপানির টান বাড়ে।
শীতে ত্বকের রোগ
শ্বাসকষ্টের পাশাপাশি শীতের শুষ্কতায় অনেকের ত্বক ফেটে যায় এবং চর্মরোগ দেখা দেয়। বিশেষ করে শিশুদের ত্বকে চুলকানি,
খোসপাঁচড়া, একজিমাসহ নানা ধরণের সমস্যা দেখা দেয়। আর বড়দের সমস্যার মধ্যে হাত পা ফেটে যাওয়া, মুখ ও ঠোঁটের শুষ্কতা বেড়ে যায়। শীতে প্রতিদিন শিশুকে হালকা গরম পানি দিয়ে গোসল করানোর পর যেকোন ধরণের ময়েশ্চারাইজিং লোশন শরীরে ব্যবহার করতে পারেন।
তবে যাদের ময়েশ্চারাইজার লোশন ব্যবহারের ক্ষমতা নেই তারা স্বাভাবিক যে কোন তেল ব্যবহার করতে পারেন। পাশাপাশি মুখ ও ঠোটে ভ্যাসলিন ক্রিম ব্যবহার করা যেতে পারে। ছোট-বড় যাদের ঠোঁট ফেটে যায় তারা যে কোন ধরণের লিপজেল বা লিপবাম ব্যবহার করতে পারেন। বড়দেরও প্রতিদিন ময়েশ্চরাইজার লোশন ব্যবহার করা ভালো। এছাড়া অনেকের শীতকালে হাত-পা ফেটে যায়।
সেক্ষেত্রে শুধু ভ্যাসলিন বা ময়েশ্চরাইজার লোশন ব্যবহার করলে চলবেনা। যেকোন ডার্মাটোলজিষ্ট বা স্কিন বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে হতে পারে।
স্কিন বিশেষজ্ঞ আপনার হাত-পায়ের ফাটা ক্ষতস্থানের তীব্রতা অনুযায়ী হালকা, মধ্যম বা তীব্রমাত্রার ষ্টেরয়েড জাতীয় মলম বা ক্রিম ব্যবহার করতে দেবেন। দিনে ২ বার এ ধরণের ক্রিম ২ সপ্তাহ থেকে ৪ সপ্তাহ পর্যন- ব্যবহার করতে হবে। তবে চর্মরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ ব্যতীত ষ্টেরয়েড ব্যবহার করা উচিত নয়।
এ ছাড়া শীতে মহিলারা ত্বক নিয়ে বেশী সংবেদনশীল থাকেন। মহিলারাও একই ধরণের ত্বক পরিচর্যা করতে পারেন। তবে মহিলাদের শীতে অয়েল বেজড কসমেটিকস ব্যবহার করা ভালো। এরপরও যদি আপনার ত্বকের সমস্যা থেকে যায় তাহলে আপনার নিকটস্থ কোন চর্মরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে পারেন।
শীতে করণীয়ঃ
Ø শীতের তীব্রতা অনুযায়ী গরম কাপড় ও কান-ঢাকা টুপি পরা এবং গলায় মাফলার ব্যবহার করা।
Ø ভিটামিন সি-যুক্ত ফল যেমন_লেবু, কমলা ইত্যাদি খেতে হবে।
Ø তাজা, পুষ্টিকর খাদ্য এবং পর্যাপ্ত পানি পান করা
Ø মাঝেমধ্যে হালকা গরম পানি দিয়ে গড়গড়া করা।
Ø হাত ভালভাবে সাবান দিয়ে ধোয়ার অভ্যাস করা
Ø হাঁচি-কাশির সময় রুমাল ব্যবহার করুন।
Ø ধূমপান পরিহার করা। Ø মুক্ত ও নির্মল বাতাসে হাটার অভ্যাস করা।
Ø প্রয়োজনে ইনফ্লুয়েঞ্জার টিকা নেওয়া
Ø অ্যাজমা বা শ্বাসকষ্ট রোগীরা সব সময় ইনহেলার সঙ্গে রাখুন।
Ø ধুলাবালি এড়িয়ে চলা। ধুলাতে সমস্যা হলে বাইরে যাওয়ার সময় মাস্ক বা স্কার্ফ ব্যবহার করুন
পরামর্শঃ
উপরে উল্লেখিত করণীয় গূলি যথাযথ ভাবে পালন করার চেষ্টা করতে হবে। তারপর ও যদি কোন অশুখ তীব্র আকার ধারণ করে, তাহলে দেরি না করে অবশ্যই রোগের ধরণ অনুযায়ী বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে এবং তাঁর পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ খেতে হবে।
শীতকালে যাতে ঠাণ্ডা না লাগে সে জন্য গরম কাপড় পরতে হবে।
বিশেষ করে শিশু ও প্রবীণদের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত যত্ন নিতে হবে। শীতকালে গলায় ব্যথা হলে টনসিলের তীব্র প্রদাহ হতে পারে। তীব্র প্রদাহের জন্য গলাব্যথা, জ্বর এবং ঢোক গিলতে অসুবিধা হয়। যদি ভাইরাসজনিত হয় তাহলে লবণ-পানি দিয়ে গড়গড়া করলে এবং প্যারাসিটামল খেলে ভালো হয়ে যায়। ব্যাকটেরিয়াজনিত টনসিল প্রদাহ হয় তাহলে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী পরিমাণমতো সঠিক সময় ও সঠিক মাত্রায় অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ গ্রহণ করতে হবে।
অনেক সময় ঠাণ্ডা লেগে কণ্ঠনালিতে ইনফেকশন হতে পারে বা গলার স্বর পরিবর্তন হতে পারে। সে ক্ষেত্রে অ্যান্টিহিস্টামিন এবং মেন্থলের ভাব নেওয়া যেতে পারে।
অতিরিক্ত ঠাণ্ডা লাগলে শিশুদের শ্বাসনালিতে ইনফেকশন হয়ে যেতে পারে এমনকি নিউমোনিয়া হতে পারে। তাই শিশুদের অতিরিক্ত ঠাণ্ডা লাগলে সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসা নেওয়া উচিত। শিশুদের নাকের পেছনে এক ধরনের টনসিল থাকে, যাকে এডিনয়েড বলা হয়।
এডিনয়েড বড় হয়ে গেলে নাক বন্ধ হয়ে যায়। নাক বন্ধ হয়ে গেলে নাক দিয়ে নিঃশ্বাস নিতে পারে না। তাই রাতে শিশুরা মুখ হা করে নিঃশ্বাস নেয়। এডিনয়েড অতিরিক্ত বড় হয়ে গেলে শিশুদের ঘুমের ব্যাঘাত ঘটে এবং রাতে ঘুমের সময় নাক ডাকে। এতে শিশুদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশ ব্যাহত হতে পারে।
এডিনয়েডজনিত কারণে শিশুদের মধ্যকর্ণে পানি জমে যেতে পারে। তখন শিশুরা কম শুনতে পায়। ফলে দেখা যায় শিশুরা পড়ালেখায় অমনোযোগী হয়ে পড়ে এবং রেডিও-টেলিভিশনের ভলিউম বাড়িয়ে দেয়। এ ধরনের সমস্যা হলে নিকটস্থ নাক, কান ও গলা বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
কোনো রকম এলার্জেন যেমন_ ধুলাবলি, গাড়ির ধুয়া, নাকে ঢুকে যায় তাহলে নাকে অ্যালার্জিজনিত প্রদাহ হতে পারে।
এতে নাকে হাঁচি, নাক দিয়ে পানি পড়া, নাক বন্ধ ইত্যাদি উপসর্গ হতে পারে। বিভিন্ন ওষুধের মাধ্যমে এবং যে কারণে নাকে সর্দি অ্যালার্জি হয় তা থেকে দূরে থাকলে এ রোগ নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়। সাধারণত দীর্ঘদিন নাকে অ্যালার্জি থাকলে নাকে পলিপ হতে পারে। পলিপ দেখতে আঙুর ফলের মতো দেখায়। নাকের পলিপে নাক বন্ধ হয়ে যায় এবং সঙ্গে সাইনাসের ইনফেকশন হয়ে মাথাব্যথা হতে পারে।
এ সমস্যার চিকিৎসা হলো অপারেশন। প্রচলিত নিয়মে অপারেশনে আবার পলিপ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। কিন্তু আধুনিক এন্ডোস্কপিক সাইনাস সার্জারির মাধ্যমে সফলভাবে অপারেশন করা যায়। বর্তমানে আমাদের দেশে বড় বড় হাসপাতালে এন্ডোস্কপিক সাইনাস সার্জারি নিয়মিত হচ্ছে। শীতকালে নাকের দুই পাশের সাইনাসে ইনফেকশন দেখা দেয়, যাকে সাইনুসাইটিস বলা হয়।
সাইনুসাইটিস এর জন্য নাকের দু'পাশে ব্যথা এবং মাথাব্যথা হতে পারে। সাইনাসের এক্স-রে করলে রোগ নির্ণয় করা যায়। তীব্র অবস্থায় ওষুধের মাধ্যমে চিকিৎসা করা যায়। দীর্ঘমেয়াদি সাইনাস প্রদাহে ওয়াশ এবং শেষ পর্যায়ে এন্ডোস্কপিক সাইনাস সার্জারি লাগতে পারে। তাই প্রাথমিক পর্যায়ে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা নেওয়া ভালো।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।