মৃত্যুর শীতল ছায়ায় মানুষটি বিলীন হয়েছেন ৫০ বছর আগে, কিন্তু অনেকের কাছে এখনো তিনি অনুসরণীয় আদর্শ। অনেক কথা অনেক গুঞ্জনের সূত্র ধরে তিনি এখন পৌরাণিক কাহিনিসম ব্যক্তি, ইতিহাসের সবচেয়ে নমনীয় চরিত্রগুলোর একজন, যাঁকে নিয়ে গল্পের কোনো শেষ নেই।
তিনি আততায়ীর গুলিতে নিহত মার্কিন প্রেসিডেন্ট, নাম জন এফ কেনেডি। ১৯৬৩ সালের ২২ নভেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের ডালাসে এক মোটরশোভাযাত্রায় নিহত হন ৪৬ বছর বয়সী এই প্রেসিডেন্ট। তাঁর মৃত্যুর ৫০তম বার্ষিকীতে তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েছেন বর্তমান মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা, তাঁর স্ত্রী মিশেল ওবামা, সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন, তাঁর স্ত্রী ও সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটনসহ অনেকে।
যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে বহু প্রেসিডেন্ট ক্ষমতায় এসেছেন, আবার চলেও গেছেন। খুব কমসংখ্যক প্রেসিডেন্টকেই মানুষ মনে রেখেছে। মনে রাখা প্রেসিডেন্টদের তালিকায় বেশ ওপরের দিকেই ঠাঁই করে নিয়েছেন ৩৫তম প্রেসিডেন্ট জন এফ কেনেডি। তাঁকে নিয়ে লেখা হয়েছে অনেক বই, বানানো হয়েছে চলচ্চিত্র—এর পরও যেন তাঁকে নিয়ে জানার তৃষ্ণা মানুষের শেষ হয় না। বেঁচে থাকতে যতটা জনপ্রিয় ছিলেন, মৃত্যুর পরও ততটাই শ্রদ্ধার আসনে আসীন তিনি।
কেমন ছিলেন জন এফ কেনেডি? তাঁকে নিয়ে প্রচলিত ধারণাগুলোর কতটুকু সত্য আর কতটুকু কাল্পনিক, এ নিয়ে আজ শনিবার বিবিসি অনলাইনে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, কেনেডির গুণমুগ্ধদের কাছে তিনি ছিলেন অনেক গুণের অধিকারী। ক্যারিশম্যাটিক নেতা বলতে যা বোঝায়, তা-ই। তিনি যুক্তরাষ্ট্রকে ভিয়েতনাম যুদ্ধের বিভীষিকা থেকে বাঁচিয়েছেন। বর্ণবাদে বিভক্ত যুক্তরাষ্ট্রকে এক সুতোয় গাঁথতে তিনি কাজ করেছেন।
ওয়াটারগেট কেলেঙ্কারির হোতা রিচার্ড নিক্সনকে তিনি ১৯৬০ সালের নির্বাচনে পরাজিত করে মার্কিনিদের দুঃস্বপ্নের ইতি টেনেছিলেন। এমন একজন রাষ্ট্রনায়কের মৃত্যুর ক্ষত তাঁর গুণমুগ্ধরা এখনো শুকাতে পারেননি।
তবে নিন্দুকদের কাছে কেনেডি প্লেবয়, যিনি হলিউড তারকা মেরিলিন মনরোর সঙ্গে গোপন প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়েছিলেন। তিনি ভিয়েতনাম যুদ্ধে আমেরিকার সংশ্লিষ্টতাকে দীর্ঘায়িত করেছেন। নাগরিক অধিকারকে তিনি রাজনৈতিক সমস্যা নয়, বরং নৈতিক সংকটের দৃষ্টি থেকে দেখে সমস্যার প্রকৃত কারণ অনুধাবনে ব্যর্থ হয়েছিলেন।
এসব নিন্দুক মনে করেন, কেনেডির মৃত্যু তাঁকে ট্যাবলয়েড পত্রিকার রসাল শিরোনামের যাতনা থেকে রক্ষা করেছে। তারকা মনরো বা মাফিয়া জুডিথ ক্যাম্পবেলের সঙ্গে দহরম-মহরম তাঁকে এমন অবস্থায় ফেলতেই পারত।
আবার কেনেডির সঙ্গে তোলা ছবি পরবর্তী সময়ে কিছু ব্যক্তিকে বিখ্যাতও বানিয়েছে। যেমন, ১৯৯২ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রচারণায় ডেমোক্র্যাট প্রার্থী বিল ক্লিনটন বহু বছর আগে কেনেডির সঙ্গে তোলা তাঁর একটি ছবি ব্যবহার করেছিলেন। আকর্ষণীয় ব্যক্তিত্বের ক্লিনটনের মধ্যে সেদিন অনেকেই প্রয়াত কেনেডির ছায়া দেখতে পেয়েছিলেন।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, কেনেডি তাঁর আড়াই বছরের শাসনামলে নাগরিক অধিকার নিয়ে নানা কাজ করলেও ওই বয়সে বড় ধরনের কোনো সামাজিক পরিবর্তন তিনি চাননি। কারণ তাঁর মনে ভয় ছিল, ওই বয়সে এত বড় একটি কাজ করতে গেলে তাঁর দল ডেমোক্রেটিক পার্টি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। নারীর প্রতি দুর্বলতা তাঁকে রাষ্ট্রের প্রতি আসক্তি থেকে দূরে সরিয়ে দিচ্ছিল। ভিয়েতনাম যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র যখন সর্বতোভাবে জড়িয়ে পড়েছে, তখন কেনেডি তাঁর সামরিক উপদেষ্টা কমিয়ে ফেলেন। এটা ওই যুদ্ধ থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে সরিয়ে নেওয়ার অংশ ছিল, না পালিয়ে আসার উদ্দেশ্যে ছিল, তা স্পষ্ট নয়।
সুবক্তা হিসেবে পরিচিত ছিলেন কেনেডি। প্রেসিডেন্ট হিসেবে তিনি তাঁর প্রথম ভাষণে বলেছিলেন, দেশ কী দিয়েছে—মার্কিনিরা তা জানতে চায় না, দেশের জন্য কী করতে হবে, মার্কিনিরা তা ভাবে।
তবে কেনেডি প্রকৃত অর্থে কেমন ছিলেন, তা নিয়ে সংশয় আছে খোদ তাঁর বন্ধুদেরও। তাঁর ঘনিষ্ঠজন কেনি ওডোনেল ও ডেভ পাওয়াস ‘জনি, উই হার্ডলি নিউ ইউ’ বইয়ে এ সংশয়ের কথা প্রকাশ করেছেন।
কেনেডির ইতিহাসভিত্তিক জীবনী নিয়ে পরিচালিত এক জরিপে নিউইয়র্ক টাইমসের সম্পাদক জিল আব্রামসন বলেন, কেনেডিকে নিয়ে যত বই লেখা হয়েছে, এর কোনোটাই তাঁর সেরা জীবনী নয়।
এখনো তাঁর জীবনের অনেক কিছু অজানা রয়ে গেছে।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।